Monday, November 2, 2015

নীল রঙের অন্ধকার (দ্বিতীয় কিস্তি)




আমার নাম গ্যাব্রিয়েল    
আমি একজন পর্ন  আসক্ত ।
  বয়স যখন ১৩ চলছিল তখন একদিন হুট করেই আমি  পর্ন  মুভি দেখা শুরু করেছিলাম ।  প্রথমবার পর্ন  মুভি দেখার অভিজ্ঞতা আমার কাছে খুব সুখকর ছিলনা ।  আমার এখনো মনে আছে ,   প্রথম দিন পর্ন  মুভি দেখার সময় আমার গা গুলিয়ে উঠেছিল । পেটের ভেতরের নাড়ী ভুঁড়িগুলো দলা পাকিয়ে উপরে উঠে আসতে চাচ্ছিল । বমি করতে পারলে যেন আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচবো এরকম মনে  হচ্ছিল   আসলে , ঐ পর্ন  মুভিটাতে আমি দেখেছিলাম একজন পুরুষ তার সঙ্গিনীর গলা চেপে ধরে তাকে পাশবিক ভাবে নির্যাতন করছে । আমার বয়স যেহেতু অনেক কম ছিল এবং আমি কখনোই এরকম দৃশ্য আগে দেখিনি এজন্য এটা আমি ঠিক হজম করতে পারছিলাম না ।  সেই ভয়াবহ দৃশ্য আমার  মস্তিষ্কে একেবারে চিরস্থায়ী যায়গা দখল করে নিল । আজকেও, এত বছর পরেও আমি সেই দৃশ্যগুলো চোখের সামনে  স্পষ্ট দেখতে পাই ।

প্রথমবার পর্ন  মুভি দেখার পর আমি বেশ কয়েকদিন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম । সব সময় কেমন জানি অস্বস্তি লাগতো । ঠিকমতো খেতে বা ঘুমাতে পারতাম না ।  গা গুলাতো সবসময়    কিন্তু তারপরেও আমার ভেতর থেকে  সবসময় একটা তাড়না অনুভব করতাম পর্ন  দেখার । কে জানি আমাকে বলতো  , “ যা গ্যাব্রিয়েল যা  ল্যাপটপ টা অন করে পর্ন  দেখ”।   প্রথমবার পর্ন  মুভি দেখার দুঃসহ অভিজ্ঞতার পর  আমি চাচ্ছিলাম না আবার পর্ন  মুভি  দেখতে ।   কিন্তু ভেতরের তাড়নাটার কাছে , নগ্ন নারীদেহ দেখার লোভের কাছে কয়েকদিনের মধ্যেই আমি  পরাজিত হয়ে গেলাম ।   একদিন ল্যাপটপের কাছে আমাকে ছুটে যেতে হল , ব্রাউজার অন করে  পর্ন  ওয়েবসাইটে লগইন করে পর্ন  দেখতে হল । সেইদিন  থেকেই শুরু হল আমার জীবনের  অন্ধকার পর্ব ।          

আমার কিশোর বয়সের এই আদিম প্রবৃত্তির আগুনে কেরেসিন ঢেলেছিল আমার বাবার পর্ন  আসক্তি । আমার বাবার কোন চাকুরী ছিল না । আমার মায়ের চাকুরীর উপরেই আমাদের পুরো সংসার নির্ভরশীল ছিল   মা যখন অফিসে চলে যেত,তখন আমার বাবা  ড্রয়িংরুমের সোফাতে বসে টিভিতে ঘন্টার পর ঘন্টা পর্ন  মুভি  দেখত   গ্রীষ্মের স্কুল ছুটির দিনগুলোতে আমাকে  বাড়িতেই থাকতে হত । আমার ভেতরে এমনিতেই সবসময় ছিল  পর্ন  দেখার তাড়না , তারওপর নিজের বাবাই যখন এভাবে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে  কোনরকম রাখঢাক না রেখেই খোলামেলা  ভাবে পর্নমুভি দেখত তখন আমি আর কীভাবে নিজেকে আটকাবো ? 
আর বাবাও আমাকে কিছু বলতনা ।  বুঝতেই পারছেন পরিস্থিতি কেমন ছিল ।

দিনগুলো এভাবেই চলতে থাকলো ।  স্কুল শেষ করে কলেজে উঠলাম । আমার পর্ন  আসক্তিও আগের মতোই রইলো , কিছুটা বাড়লো বরং ।  আমি তখনো ঠিক বুঝতে পারি নি পর্ন  মুভির আসক্তি আমার কী ক্ষতি করে ফেলেছে ।  যখন বুঝলাম তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে ।

জীবনের বেশ কয়েকটি বসন্ত  একাকী পার হবার  পর আমি পেলাম  ভালবাসার মানুষের   খোঁজ ।   প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গিয়েছিল দুজনকে দুজনার । এরপর    বিয়েটা সেরে ফেলতে খুব বেশি দেরী করিনি । কিন্তু আমাদের সংসারটা বেশি দিন টিকলো না ।  প্রথম দিকে  ভালোবাসার কোন কমতি ছিলনা । পাগলের মতো আমি  ভালোবাসতাম ওকে , সেও আমাকে পাগলের মতো ভালবাসতো  । কিন্তু সমস্যাটা ছিল অন্য যায়গায় । 

 আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে  দৈহিকমিলনের সময়  সম্পূর্ণ অন্য এক মানুষে পরিণত হয়ে যেতাম  । প্রথম বার  পর্ন মুভিতে দেখা দৃশ্য গুলো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতো বারবার ।   ক্ষুধার্ত বাঘকে   একটুকরো মাংসের সামনে ফেলে  দিলে বাঘ যেমন হয়ে যায় আমার অবস্থাও অনেকটা তেমন হয়ে যেত । আমি যেন একটা পশু হয়ে যেতাম  , যে শুধু   নিজেকেই  তৃপ্ত করতে জানে , যার মন বলে কিছু নেই , যে কখনো  কাউকে ভালোবাসেনি , জানেও না  ভালবাসা কাকে বলে । দৈহিক মিলনের ব্যাপারটা আমার জন্য প্রচন্ড অস্বস্তিকর হয়ে যায় । পুরোটা সময় আমার  ভালবাসার মানুষটাকে  ভোগ করার  একটা মাংসপিন্ড ছাড়া আর কিছুই মনে করতে পারতাম না । আমার স্ত্রী সব  সহ্য করত । কিচ্ছু বলতনা আমাকে । ছলছল চোখে মাঝে মাঝে তাকাতো আমার দিকে। সেই কান্নাভেজা চোখে লেগে থাকতো  অজস্র নীরব দীর্ঘশ্বাস আর বুক ভাঙ্গা চাপা আর্তনাদ ।

নিজেকে ধিক্কার দিতাম বারবার । গ্যাব্রিয়েল , তুমি না তোমার স্ত্রীকে ভালবাসো ? তুমি না তার  নীল চোখের তারায়   খুঁজে  পাও সাত রাজার ধন ? তুমি না একদিন সমুদ্রের পাড়ে সূর্যাস্তের সময় হাঁটতে হাঁটতে  তাকে  স্বপ্ন দেখিয়েছিলে সাদা কালো জঞ্জালে ভরা মিথ্যে কথার এই পৃথিবীটাতে  লাল নীল সংসার পাতার ? তোমার কথা শুনে তাঁর দুচোখের  খুশির  সেই ঝিলিক তুমি ভুলে গেছো । ভুলে গেছো সেই সময়  কিভাবে পরমনির্ভরতায় সে তোমার কাঁধে মাথা রেখেছিল । তোমাকে ঘিরে সেও একটা স্বপ্ন দেখেছিল । সেও চেয়েছিল একটা  ছোট্ট সুখের সংসার ।   আজ তার সঙ্গেই তুমি এমন করছো ?  গ্যাব্রিয়েল তুমি খুব খারাপ মানুষ , গ্যাব্রিয়েল তুমি খুবই  খারাপ মানুষ ।

মানসিকভাবে আমি ভেঙ্গে পড়তে শুরু করলাম । আমার হৃদয়টা সবসময়  খাঁ খাঁ করত ।  আমি চাইতাম আমার স্ত্রীকে ভালবাসতে , পশুর মতো আচরণ না করতে । কিন্তু আমার পর্ন  আসক্তি আমার অন্তরের ভেতরে একটা বিরাট শুন্যতার সৃষ্টি করেছিল,   আমার সমস্ত স্বত্তা থেকে  শুষে নিয়েছিল স্বামী-স্ত্রীর “একান্ত” মুহূর্তে  ভালবাসতে পারার  ক্ষমতা  

আমি আর এই ভয়ঙ্কর মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছিলাম না  কিছুদিনের ভেতরেই আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল ।আমার এখন বারবার  মনে হয় , ঈশ! আমি যদি কোনদিন পর্ন মুভি না দেখতাম । আমার বাবা যদি পর্ন  আসক্ত না হতো । আমি যদি এমন কোন সমাজে বেড়ে উঠতাম যেখানে  নারীদেহকে স্ক্রিনে এভাবে   ভোগ্যপন্য বানিয়ে  ফেলা হয়নি – তাহলে  পছন্দের মানুষটিকে নিয়ে দেখা আমার স্বপ্নগুলো এভাবে মিথ্যে হয়ে যেত না , ছারখার হয়ে যেত না আমার পৃথিবীটা ।

বৃষ্টি খুব পছন্দ ছিল আমার ।   মাঝে মাঝেই  বৃষ্টিতে   ভিজতাম আমি । একটু বেশিক্ষণ ভিজলেই  আমার  স্ত্রী  ছাতা আর তোয়ালে নিয়ে  হাজির হয়ে যেত । জোরাজুরি করতো মাথা মুছে ছাতার নীচে চলে আসার । আমার যদি জ্বর চলে আসে !
এখনো আকাশ কালো করে বৃষ্টি আসে । আমি সেই বৃষ্টিতে ভিজি ।  এখন আর ছাতা নিয়ে কেউ আসে না আমার জন্য । 
আমি কাঁদি 
আমার চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় । আমার কানে বাজতে  থাকে একটা মিষ্টি কন্ঠ - এইযে সাহেব, আর  ঢং করতে হবে না । ঠান্ডা লেগে যাবে তো ।  তাড়াতাড়ি মাথা মুছে ছাতার নিচে চলে আসুন তো, কুইক ।

(মূল লিখাটি https://fightthenewdrug.org/ সাইট থেকে সংগৃহীত)
 
(লস্ট মডেস্টি অনুবাদ টিম কর্তৃক অনূদিত এবং পরিমার্জিত) 

প্রথম পর্ব পড়ুন  এখানে

তৃতীয় পর্ব পড়ুন এখানে

চতুর্থ পর্ব পড়ুন এখানে

No comments:

Post a Comment