Monday, November 9, 2015

নীল রঙের অন্ধকার (তৃতীয় কিস্তি)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম । 

বাবা,
প্রথমেই বলে নি আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি আর তোমার জন্য আমার জীবনে যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি। তোমার পর্ন দেখার কারণে আমার কি সমস্যা হয়েছে তা তোমার জানা উচিত। তুমি ভাবো এটা শুধু তোমার কিংবা তোমার আর আম্মার সম্পর্কে প্রভাব ফেলে।তুমি বুঝতেও পারোনি এটা কি গভীর সংকটে ফেলেছে তোমার সন্তানদের।

বয়স আমার ১২
, সদ্য কিশোরী বয়সে পা দিচ্ছি, এমন সময়ই আমি তোমার কম্পিউটারে পর্ন আবিষ্কার করি।প্রথমত আমার খুব অবাক লাগতো, কারণ তুমি একদিকে আমাকে বলছ মুভি থেকে এটা ওটা না করতে আর নিজেই দিনের পর দিন এসব আবর্জনা গিলে চলেছ।আমি কি দেখব আর কি দেখব না এসব যখন তুমি বলতে আসতে তখন আমি এক কান দিয়ে শুনে আর এক কান দিয়ে বের করে দিতাম, কারণ আমি জানতাম তুমি একটা ভন্ড!
আমি জানতাম, আম্মা একমাত্র নারী না যাকে তুমি চাও।তুমি যে আড় চোখে আমাদের দেখতে আমার সেটা নজর এড়ায়নি। তোমাকে দেখে পুরুষ জাতির প্রতি আমার প্রবল বিতৃষ্ণা তৈরি হয়।ভেবে বসি, সব পুরুষই বোধহয় তোমার মতো বিকৃত মানসিকতার হয়!


তুমি আমাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলে কীভাবে আমার পোশাক আশে পাশের মানুষকে উদ্দীপ্ত করে আর কীভাবে আমার নিজের অন্তরাত্মাকে আরো সুন্দর করা উচিত।কিন্তু তোমার কাজে কর্মে আমি বুঝেছিলাম আমি তখনি সুন্দর হতে পারব যখন আমি ম্যাগাজিনের কভারের মেয়েটির মত বা তোমার পর্নের মেয়েটির মত হতে পারব। তোমার কথার কোন মূল্যই তাই আমার কাছে ছিল না,বরং তোমার ‘লেকচার’ শুনতে খুব বিরক্ত লাগতো।

যত দিন যাচ্ছিল, এই পচে যাওয়া সমাজ শুধু আমার কানের কাছে শুধু ভ্যান ভ্যান করে যাচ্ছিল, আমি তখনই নিজেকে সুন্দর ভাবতে পারব যখন আমি “তাদের” মত হব।তোমার প্রতি বিশ্বাসটা দিন দিন শূন্যের কোঠায় নেমে আসছিল, কারণ তুমি যা বলতে  ঠিক তার উল্টোটা করতে।আমি হন্যে হয়ে এমন একজনকে খুঁজে বেড়িয়েছি যে শুধু আমার অঙ্গসৌষ্ঠব এর জন্য আমাকে ভালবাসবেনা,আমি মানুষটার জন্য ভালবাসবে।
বাসায় আমার বান্ধবীরা এলে আমি ভাবতাম তুমি কী চোখে তাদের দেখতে! আমার বান্ধবীর মত দেখতে নাকি তোমার নষ্ট কল্পনার কোন এক অংশ হিসেবে?
আমি বিয়ে করলাম  এমন একজন পুরুষকে যার জীবনে পর্নোগ্রাফি ছোবল দিতে পারে নি।আমি এখনো আমার ভেতর থেকে পুরুষ জাতির প্রতি অবিশ্বাস ঝেড়ে ফেলতে পারিনি।হ্যাঁ বাবা, তোমার পর্ন দেখা আমার স্বামীর সাথে আমার সম্পর্কে বছরের পর বছর প্রভাব রেখে গেছে।

আমি তোমাকে শুধু একটা কথাই বলতে চাই
, হয়তো তুমি এখনো বুঝবে না, তোমার পর্নআসক্তি শুধু তোমার জীবন ধ্বংস করে নি, আমাদের সবার জীবন নষ্টের বিষাক্ত বীজ বপন করেছে।আমি যখনি চিন্তা করি আমাদের সমাজে কি গভীর শিকড় গেড়ে বসে গেছে এই ভয়ংকর নেশা, আমি অসুস্থবোধ করি।আমার প্রচন্ড খারাপ লাগে যখন আমার ছোট্ট ছেলের সাথে পর্ণের ভয়াবহতা নিয়ে কথা কথা বলতে হয়।আমি তাকে বুঝাই পর্ন আর দশটা পাপাচারের মতই শুধু নিজেকে না, শে পাশের সবাইকে আঘাত করে।
আমি তো তোমাকে ক্ষমা করেই দিয়েছিঈশ্বর আমাকে এই কুপ্রভাব থেকে যেভাবে সরিয়ে এনেছেন সে জন্য আমি তার প্রতি সত্যি কৃতজ্ঞ।এখনো মাঝে মাঝে শিউরে উঠি। আমি প্রার্থনা করি যেন তুমি এই নোংরা নেশা থেকে বের হয়ে আসতে পারো, আরও অসংখ্য পুরুষ যেন এর করালগ্রাস থেকে মুক্তি পায়।

-তোমার আদরের মেয়ে















No comments:

Post a Comment