Wednesday, August 17, 2016

উত্তরের অপেক্ষায়...



বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম । 

সেদিন  আমার মরে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না । এত্ত আনন্দ এত্ত আনন্দ । 
বয়সটা মনে রঙ লাগার ।  চোখে রঙিন চশমা ।সেই রঙিন চশমা দিয়ে  সব কিছুই ভালো লাগে । রবি ঠাকুরের ভাষায় ' ফুলের বনে যারেই দেখি তারেই লাগে ভালো'  । কালো চোখের এক
বালিকাকে একটু বেশি ভালো লেগে গেল । আড়ালে আবডালে থেকে  চুরি করে বালিকাকে দেখি ।  বাম বুকে সুখের মতো ব্যাথা লাগে । বালিকাও মাঝে মাঝে চেরা চাহনি হানে আমার দিকে ।  মনে হয় বুকের মধ্যে কে যেন   ছুরি মেরে দিল । উফফফ কি অসহ্য সুন্দর সেই দিনগুলা ......

সেইদিন বালিকা আমার দিকে সোজাসুজি অনেকক্ষণ চেয়ে ছিল । সেই বিশেষ কথাটি বলব বলব করেও বলা আর হয়ে উঠলো না ,  কিন্তু আমার দিকে তাকিয়ে ছিল এই খুশিতেই আমি ধরাশয়ী । 
 অঙ্কে ঘাপলা হতে লাগলো , ক্লাসে মন থাকতো না । শুধুই সেই বালিকার কালো দু'চোখ, আমার ঘোলা  চোখের সামনে ভাসতো । আকাশে ,বাতাসে, জলে ডাঙ্গায়, অন্তরীক্ষে শুধু সেই বালিকার কালো দু'চোখ ।  
মসজিদে নিয়মিত  হয়ে গেলাম । নামাজ পড়া আর কিসের কি , শুধু দু'আ করা । ইয়া আল্লাহ্‌ বালিকার সঙ্গে আমার 'ইয়ে'টা ঘটিয়ে দাও আল্লাহ্‌ । আমি একেবারে ভালো হয়ে যাব আল্লাহ্‌ । একেবারে । আর নামাজ মিস দিব না , আম্মুর কথা শুনবো , মাসুদ রানা পড়বো না আর । আল্লাহ্‌ 'ইয়ে' টা ঘটিয়ে দাও আল্লাহ্‌ । 



 দু' কবুল হলোনা । আরো অনেক  কারনে জল আর বেশিদূর গড়ালো না । ভুলে যেতে থাকলাম সেই বালিকাকে । একেবারে নয় যদিও । বয়ঃসন্ধিকালের সেই ভালোবাসার  কথা মনে হলে (মোহ'ই বলা ভালো) মাঝে মাঝেই একটু ইমোশনাল হয়ে যেতাম ।       
হেমন্তের আগুনঝরা রুপালী নক্ষত্রের রাত যখন আসতো , যখন পরিযায়ী পাখিরা ডানা মেলতো আকাশে চাঁদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ,   বালিকার রাঙ্গা রাজকন্যার মতো মুখটা  মনে পড়ে যেত । সেই কালো চোখদুটো চেরা চোখে তাকিয়ে থাকতো আমার দিকে । হৃদয় খুঁড়ে এক এক করে বেদনাগুলো জাগিয়ে দিত।
কিছুটা অভিমান হতো কুদরতের ওপর । কেন আল্লাহ্‌ আমার সঙ্গে এমন করলো? 'ইয়ে'টা হয়ে গেলে ভালোই তো হতো। আমার সঙ্গেই কেন আল্লাহ্‌ এমন করলো? কি এমন পাপ করেছিলাম আমি ? 
আমার জীবনে  অনেক পরিবর্তন  এসে গেল একটা সময়ে , আলহামদুলিল্লাহ । নতুন অনেক কিছুই বুঝতে শিখলাম (যদিও মানতে পারিনা তেমন কিছুই)। বুকের অনেক ভেতরে বহু কষ্টে চাপা দেওয়া বালিকার মুখটা মাঝে মাঝে  উঁকি দেওয়ার চেষ্টা এখনো করে । কিন্তু আগে যেমন মন খারাপ হতো, কিছুটা অভিমান হতো আল্লাহ্‌র উপর (ক্ষমা করো প্রভু এই তুচ্ছ গুনাহগারকে)  তেমন কিছুই আর  হয় না এখন । আল্লাহ্‌ (সুবঃ) যে আমার দু'আ কবুল করেননি , বালিকার সঙ্গে আমার 'ইয়ে'টা ঘটিয়ে দেননি সেকারণে  ইচ্ছে করে  শহরের সব বিলবোর্ড , দেয়াল সবখানে  আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ লিখে ভরিয়ে দেই । আল্লাহ্‌ (সুবঃ) এর ওপর অভিমান করা, তাঁর পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অপরাধে কেঁদে বুক ভাসাতে ইচ্ছে করে । 
...... তোমরা যা পছন্দ কর না সম্ভবত তা তোমাদের জন্য ভালো। আর তোমরা যা পছন্দ কর সম্ভবত তা তোমাদের জন্য মন্দ। আল্লাহ্‌ জানেন, তোমরা তো জান না।[১]
সেই বালিকার সঙ্গে প্রেম হয়ে গেলে  কি হাল যে হতো আমার,  কি  মাইনাকার চিপায় যে ফেঁসে যেতাম সেটাতো আর তখন বুঝতাম না । দু'আ কবুল হচ্ছে না দেখে   অবুঝের মতো অভিমান করতাম , আল্লাহ্‌র  সিদ্ধান্তে মন খারাপ করতাম ।  কিন্তু আল্লাহ্‌ , আমার রব , আমার মালিক তো জানতেন কোনটা আমার জন্য ভালো ,তাই তিনি আমার জন্য ভালোটাই বেছে দিয়েছিলেন । সকল প্রশংসা আমার রবের , সাত আসমানের মালিকের , যিনি কোনরকম স্তম্ভ ছাড়াই সেগুলো উঁচু করে রেখেছেন । 

ভাই আমার , তুমি , আমি আমরা সবাই কেন জানি বড় অস্থির । আমাদের বড় বেশি তাড়াহুড়ো । আল্লাহ্‌র সিদ্ধান্তে আমরা রাজিখুশি থাকতে পারি না ,মুখে বার বার বলি 'আমরা আল্লাহ্‌র উপরই ভরসা করি , কিন্তু আমাদের তাঁরওপর কোন ভরসায় নেই ।  

তোমার চেহারা খারাপ,বেশি মোটা বা শুকনা, মাথায় চুল নেই , ভালো জায়গায় পড়োনা, হাতের স্মার্টফোনটা তেমন দামী না  । মন খারাপ থাকে তোমার  । অশ্লীলতা বেহায়াপনা থেকে বাঁচার জন্য তুমি বারবার দু'আ করে যাচ্ছো আল্লাহ্‌র কাছে । তোমার রবের কাছে  করুন মিনতি জানাচ্ছো  বিয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য । কিন্তু আল্লাহ্‌ তোমার দু'আ কবুল করছেন না । স্বপ্নের সেই মানুষটা স্বপ্নেই থেকে যাচ্ছে , ছুঁতে পারছোনা হাত দিয়ে । এদিকে নফসের সঙ্গে লড়াইয়ে তুমি পরাজিত , বিদ্ধস্ত ।  মন খারাপ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না । আল্লাহ্‌ বলেছেন আল্লাহ্‌র সাহায্য অতি নিকটে  - কোথায় আল্লাহ্‌র সাহায্য ? , আল্লাহ্‌ দু'আ কারীর দু'আ কবুল করেন- কই , আমার দু'আ তো কবুল হচ্ছে না?  

ভাই  আমার , তুমি আমার অভিনন্দন গ্রহন কর , তুমি আল্লাহ্‌র প্রিয় বান্দা । আল্লাহ্‌ তাঁর প্রিয় বান্দাদের সবচেয়ে বেশি ফিতনা ফ্যাসাদে ফেলেন । আগুনে পুড়িয়ে সোনাকে যেমন খাটি করা হয় , তেমনি আল্লাহ্‌ (সুবঃ)  তোমাকে ফিতনা ফ্যাসাদে ফেলে , বালা মুসিবত দিয়ে খাটি বানিয়ে নিচ্ছেন । তাঁর জান্নাতে যায়গা দিবেন বলে । আহ! জান্নাত - কোন চোখ কখনো যা দেখেনি , কোন হৃদয় যা কল্পনা করে নি । সেই জান্নাত ।

ভাই , আল্লাহ্‌র সাহায্য অতি নিকটে, আল্লাহ্‌ দু'আ কারীর দু'আ কবুল করেন এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই । কোন সন্দেহ নেই । কিন্তু তাঁর সাহায্য , তাঁর দু'আ কবুল করার ধরন যে  আলাদা ।    
তিনি তোমাকে তখনই সেটা দেবেন যখন তোমার জন্য সেটা সবচেয়ে ভালো হবে ।
সেটা এখন হতে পারে, দশ বছর পরে হতে পারে আবার শেষ বিচারের দিনও হতে পারে  [২] আল্লাহ্‌ (সুবঃ) তোমার দু’আর জবাব দেবেনই ।

তোমার বউ না থাকা, চেহারা খারাপ  হওয়াটাই হয়তো আল্লাহ্‌’র(সুবঃ) খুব বড় নিয়ামত কিন্তু তুমি বুঝতে পারছোনা । আল্লাহ্‌ (সুবঃ) তোমাকে যদি এখনই ওসব  দিয়ে দেন তাহলে হয়তো তোমার জীবনটা আরো বেশি বিভীষিকাময় হয়ে যাবে । আরো বেশি ফিতনা ফ্যাসাদে ভরে যাবে তোমার জীবন । [দেখা যেতে পারে এই ছোট্ট ভিডিওটি- https://www.youtube.com/watch?v=To_95hHpods ]


একটা লেকচারে শুনেছিলাম (লিংকটা পাচ্ছিনা খুঁজে) শেষ বিচারের দিন আল্লাহ্‌র এক বান্দার সামনে পুরষ্কারের বিশাল এক পাহাড় নিয়ে আসা হবে । বান্দা বলবে , “ইয়া আল্লাহ্‌! এগুলো কার”?
আল্লাহ্‌ বলবেন , “এগুলো তোমার”। 
বান্দা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইবেনা  এতগুলো পুরষ্কার তার , কারণ সে জানে  দুনিয়াতে থাকতে এগুলো পাওয়ার মতো আমল সে করেনি । 
আল্লাহ্‌ বান্দাকে বলবেন ,“ তোমার মনে আছে তুমি আমার কাছে অনেক দু’আ করতে দুনিয়াতে। সেই দু’আগুলোর কিছু জবাব আমি দিয়েছিলাম , কিছু  দিয়েছিলাম না । সে জবাব না দেওয়া দু’আ গুলোর বদলে আমি তোমাকে এই পুরষ্কার দিচ্ছি”।
বান্দা আফসোস করে বলবে , “ইয়া আল্লাহ্‌! কেন আপনি দুনিয়াতে আমার কিছু দু’আ কবুল করেছিলেন । আপনি যদি একটা দু’আও কবুল না করতেন তাহলে আমি আজ কতগুলো পুরষ্কার পেতাম! 
ভাই , মন খারাপ করোনা ,হতাশ হয়োনা ,দু’আ করতেই থাকো । একদিন জবাব পাবেই । 

অনেক দিন আগে একটা লিখা পড়েছিলাম দু’আ নিয়ে । খুব ভালো লেগে গিয়েছিল । সেই লিখার কিছু অংশ এখানে তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারছি না ।

...... আমরা দু’আকে যেকোন বিপদের সময়, কঠিন মূহুর্তে প্যানিক বাটনের মতো ব্যবহার করার চেষ্টা করি। আপনি একটা কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, আল্লাহ্‌ বারবার কুরআনে বলেছেন যে দরকারের সময় তাঁকে ডাকবে তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দেবেন। সুতরাং, আপনি মনে করলেন যদি ঠিকঠাক মতো দু’আ করতে পারেন (রাতের শেষ তৃতীয়াংশে, মনোযোগের সাথে ইত্যাদি) তাহলে ঠিক পরদিন সকালেই আপনি আপনার দু’আর “জবাব” পেয়ে যাবেন। আর যদি না পান, তাহলেই আপনি ভিতরে ভিতরে আল্লাহ্‌র অঙ্গীকারকে সন্দেহ করা শুরু করবেন!
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) একটি হাদীসে এই বিষয়ে বলেছেন। যদিও বুখারী ও মুসলিম – দু জায়গাতেই এই হাদীসটি আছে, তবে আমাদের আলোচনার জন্য মুসলিমের বর্ণনাটি অধিকতর উপযুক্তঃ
একজন ব্যক্তির দু’আর জবাব দেওয়া হতে থাকে – যদি সে অন্যায় অথবা হারাম কিছুর জন্য দু’আ না করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করে – এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সে তাড়াহুড়া না করে এবং অধৈর্য না হয়”।
 রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো -“কিসের দ্বারা ব্যক্তি অধৈর্য হয়ে যাবে?”
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জবাব দিলেন – “সে বলবে আমি দু’আ করছি এবং করতেই থাকছি কিন্তু আমি দেখছি আমার দু’আর কোন জবাব দেওয়া হচ্ছে না। এভাবে সে আশা হারিয়ে ফেলবে এবং আল্লাহ্‌-কে স্মরণ করা ছেড়ে দেবে”।
এই হাদীসটি বেশ কৌতূহলজনক এবং আমরা যদি গভীরভাবে হাদীসটি বুঝার চেষ্টা করি, তাহলে কীভাবে দু’আ কাজ করে এবং কীভাবে কাজ করে না – সে বিষয়ে আমরা অনেক কিছুই জানতে পারবো। একটু খেয়াল করুন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কি ধরনের শব্দ এখানে ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেছেনঃ “… তাঁর দুআর জবাব দেওয়া হতে থাকবে”। একবার অধৈর্য ব্যক্তির অভিযোগের সাথে তুলনা করুন তো “আমি দেখছি আমার দু’আর কোন জবাব দেওয়া হচ্ছে না”। আপাত দৃষ্টিতে এই ব্যাপার দু’টো পরস্পর সাংঘর্ষিক মনে হতে পারে। এটা কীভাবে সম্ভব যে একজন ব্যক্তির দু’আর জবাব দেওয়া হতে থাকছে কিন্তু তাঁর কাছে মনে হচ্ছে সে কোন ফল পাচ্ছে না? দু’আর উত্তর কোথায়?
ব্যাপারটা হলো, অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের দু’আর জবাব একসাথে না এসে, ধাপে ধাপে আমাদের কাছে আসে। যেমন এমন কিছু হয়তো ঘটবে যার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছে যাবেন । কিন্তু আপনার কাছে মনে হচ্ছে আপনার দু’আর জবাব আসছে না।
মনে করুন আপনি একটা কক্ষে বন্দী। মুক্তির একমাত্র উপায় জানালা ভেঙ্গে বের হওয়া, কিন্তু আপনার সম্বল শুধুমাত্র ছোট কিছু পাথরের টুকরো। আপনি জানালায় একটা ছোট পাথর ছুড়লেন। তাতে জানাল ভাঙ্গলো না, কিন্তু খুব সুক্ষ্ম একটা ফাটল ধরলো। আপনি আরেকটা পাথর ছুড়লেন। আরেকটা ছোট ফাটল। আপনি আবার একটা পাথর ছুড়ে দিলেন, তারপর আরেকটি। তারপর আরেকটি। যতক্ষণ না পর্যন্ত পুরো জানালা অসংখ্য সুক্ষ্ম ফাটলে ভরে গেছে।
শেষবারের মতো আপনি একটা পাথর ছুড়ে দিলেন এবং জানালার কাঁচ ভেঙ্গে গেলো। এবং আপনি বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেলেন। দু’আও এভাবেই কাজ করে। আপনি প্রতিটি দু’আর মাধ্যমে আংশিক জবাব পেতে থাকেন এবং আপনি ধৈর্য ও অবিচলতার সাথে একই দু’আ বারবার করার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে শেষ পর্যন্ত দু’আর পরিপূর্ণ জবাব পাবেন।
এজন্যই গুহায় আটকে পড়া তিনজন ব্যক্তিকে নিয়ে যে অতি পরিচিত হাদীসটি আছে, সেখানে আমরা দেখতে পাই যে, প্রথম ব্যক্তির দু’আর ফলে গুহামুখের পাথরটি সামান্যই সরেছিলো। দ্বিতীয় ব্যক্তির দু’আর পর পাথরটি আর একটু সরলো। এবং তৃতীয় ব্যক্তির দু’আর পরই তাঁরা তিনজন তাঁদের কাঙ্ক্ষিত ফল পেলেন – পাথরটি ওই পরিমাণে সরলো যার ফলে তাঁরা গুহা থেকে মুক্তি পেলেন।
মনে রাখবেন প্রথম পাথরটি শুধু একটি ফাটলই ধরাবে। কিন্তু যদি আপনি পাথর ছুড়তে থাকেন তাহলে এক সময় জানাল ভেঙ্গে যাবে এবং আপনি মুক্ত হবেন। এর জন্য সময়ের প্রয়োজন। এই জন্যই হাদিসটিতে আমাদের বলা হচ্ছে – “…যতক্ষণ পর্যন্ত সে অধৈর্য না হচ্ছে” 
আপনি যখন কোন চারাগাছে পানি দেন, তখন নিশ্চয় আপনি একসাথে ত্রিশ গ্যালন পানি ঢেলে দিয়ে, কেন মাটি থেকে বিশাল মহীরুহ বের হচ্ছে না, সেটা নিয়ে চিন্তা করে বসেন না। বরং আপনি ধৈর্য সহকারে প্রতিদিন একটু একটু করে পানি দিতে থাকেন এটা জেনে যে, যত সময়ই লাগুক না কেন, শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ফুলটি পাবেন।
একইভাবে আপনি জানেন, আল্লাহ্‌ আপনার প্রতি তাঁর অঙ্গীকার পূর্ণ করবেন এবং আপনার দু’আর জবাব দেবেন – এটা সত্য। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে অলৌকিকভাবে দু’আর উত্তর পাওয়া নিয়মের ব্যাতিক্রম, নিয়ম না। নিয়ম হলো আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাওয়া এবং তাঁর কাছ থেকে এর উত্তর পাওয়ার প্রক্রিয়া সময় ও ধৈর্যের উপর নির্ভরশীল।
যেমনটি ইবনে আল জাওযী, সায়দ আল খাতির – এ বলেছেনঃ
কষ্ট-দুঃখ-দুর্দশা শেষ হবার একটি নির্ধারিত সময় আছে যা শুধু আল্লাহ্‌ জানেন। তাই যে ব্যক্তি দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তাকে ধৈর্যশীল হতে হবে। আল্লাহ্‌র নির্ধারিত সময় আসার আগে ধৈর্য হারিয়ে ফেলা, কোন কাজে লাগবে না। ধৈর্য আবশ্যক কিন্তু দু’আ ছাড়া ধৈর্য অর্থহীন। যেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে দু’আ কছে তাঁর কাছে সাহায্য চাইছে তাঁর উচিত না অধৈর্য হওয়া। বরং তাঁর উচিত, ধৈর্য, সালাহ এবং দু’আর মাধ্যমে সর্বজ্ঞানী আল্লাহর ইবাদাতে নিয়োজিত হওয়া।

অধৈর্য ব্যক্তি তাঁর ধৈর্য হারানোর মাধ্যমে আল্লাহ্‌র পরিকল্পনা লঙ্ঘন করার চেষ্টা করছে এবং এটা আল্লাহ্‌র সামনে একজন গোলাম ও বান্দার উপযুক্ত আচরণ কিংবা অবস্থান নয়। আল্লাহর বান্দা হিসেবে আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ অবস্থান হলো, আল্লাহর কাছ থেকে আসা তাকদীরকে মেনে নেওয়া। এবং এজন্য প্রয়োজন ধৈর্য। এবং এর সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হলো সালাহর মাধ্যমে ক্রমাগত আল্লাহ্‌-র কাছে ভিক্ষা চাওয়া।
 আল্লাহর কাছ থেকে আসা তাকদীরের বিরোধিতা করা হারাম এবং এটা আল্লাহর পরিকল্পনা লঙ্ঘনের চেষ্টার মধ্যে পড়ে। তাই এই বিষয়গুলো অনুধাবন করো এবং তোমার জন্য তোমার দুঃখ-কষ্ট-দুর্দশা সহ্য করা অনেক সহজ হবে।”


রেফারেন্সঃ
[১] সূরা বাকারাহ, আয়াত – ২১৬
[২] তিরমীজি, আহমাদ,হাকিম 


3 comments:

  1. JAZAKALLAHU KHAIRAN ei post tir jonno bhaiya...onk shundor ebong beneficial post,MA SHAA ALLAH.amio kichuta ekoi rokomer poristhithi the achi kintu ei post ti porer por nijer buj bujlam ALHAMDULILLAH.
    ALLAH amader shobaike sotik pothe porichalitho koruk,shobaike dhorjo dorar Tawfeeq dan koruk,amader shobar Dua kobul koruk o amader shobar iccha puron koruk ebong ALLAH amader shobaike koma kore JANNAT dan koruk,AAMEEN.

    ReplyDelete
  2. Ever wanted to get free Google+ Circles?
    Did you know you can get these ON AUTOPILOT AND TOTALLY FREE by getting an account on Like 4 Like?

    ReplyDelete