(প্রথম কিস্তি)
বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।
পৃথিবীর তখন গভীর গভীরতরো অসুখ । ফুল ও বসন্ত, চাঁদ ও জ্যোৎস্না হারিয়ে গিয়েছিল , পরিযায়ী পাখি ও জোনাকিদের তখন চরম দুর্দিন । বাতাসে তখন বোমার আঘাতে কিমা হয়ে যাওয়া মানবদেহের পোড়া গন্ধ , চারিদিকে শুধু মৃত্যু, কান্না আর ধ্বংসাবশেষ । মানবতা আর গনত্বন্ত্রের ধ্বজাধারী ইংল্যান্ড, আমেরিকা , জার্মানি, ফ্রান্স , রাশিয়া, জাপান পাগল হয়ে গিয়েছিল যুদ্ধের নেশায় । এই সন্ত্রাসী দেশগুলোর বিমান থেকে টন টন বোমা লোকালয়ে নেমে আসতো । পুড়ে ছারখার হয়ে যেত লোকালয় , স্প্লিন্টারের আঘাতে তছনছ হয়ে যেত সাজানো গোছানো সংসার । অনেক শৈশব ,অনেক স্বপ্ন, অনেক ভালোবাসা চাপা পড়ত ধ্বংসাবশেষ এর নিচে । ১৯৩৯ সালে শুরু হয়ে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত চলা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রান হারায় ৬০ মিলিয়ন লোক যা ১৯৪০ সালে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশ ছিল । [১]
বেশীরভাগ পুরুষ রণক্ষেত্রে চলে যাওয়ায় কলকারখানা গুলোতে কাজের লোকের প্রচন্ড অভাব দেখা দেয় । যুদ্ধের গোলাবারুদ সাজ সরঞ্জামের চাহিদা ব্যাপক আকারে বেড়ে যায় । বাধ্য হয়ে কলকারখানা গুলোতে নারীদের নিয়োগ করা হয় । যুদ্ধের চাহিদা মেটাতে দিন রাত এক করে খাটতে হতো তাদের । অধিক পরিশ্রমের কারণে অনেকে মারাও যেত । [২]
তবে পশ্চিম রণাঙ্গন সম্পূর্ণ শান্ত হয়ে গেলেও নারীদের আর ঘরে ফেরা হয়নি । যুদ্ধের পর বদলে যাওয়া পৃথিবীর কর্মক্ষেত্রগুলোতে পুরুষের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হয়েছে নারীকে। স্বভাবগতভাবেই কোমল নারীকে নামতে হয়েছে রাফ এন্ড টাফ পুরুষদের সঙ্গে উপরে ওঠার সাপ লুডু খেলায় ।
সময়ের প্রয়োজনেই নারীরা ঘরে অবুঝ শিশুদের ফেলে ছুটে এসেছিল কর্মক্ষেত্রে । অথচ একসময় পুঁজিবাদীরা সেটাকেই বানিয়ে ফেললো নারী স্বাধীনতার প্রতীক । কলকারখানায় কামলা খাটা নারীরা হয়ে গেল নারীস্বাধীনতার ‘পোস্টার গার্ল’ । ঘরে থেকে পায়ের ওপর পা তুলে বসে বসে খাওয়া, সন্তানের দেখাশোনা করা , স্বামীকে আদর আপ্যায়ন করা হয়ে গেল বন্দীদশা । আর আকাশে বিমানবালা আর আলো আঁধারির রেস্টুরেন্টে, প্রমোদবালা হয়ে জনগনকে আদর আপ্যায়ন করা হয়ে গেল স্বাধীনতা ।
পাশ্চাত্যের ঠিক করে দেওয়া স্বাধীনতার বিরোধিতা যারা করল তারা হয়ে গেল মৌলবাদী, গোঁড়া , প্রগতিবিরোধী । নারীদের চোখে তাদের বানিয়ে দেওয়া হল ভিলেন । মুসলিম দেশগুলোতে দালালদের মাধ্যমে আওয়াজ তোলা হল জাগো গো ভগিনী ...
অথচ এই পাশ্চাত্য এবং তাদের চামচা দেশগুলোর কর্মক্ষেত্রগুলোতে নারীদের উপর কি পরিমাণ মানসিক, শারীরিক, যৌন নির্যাতন করা হয়, বেতনের ক্ষেত্রে তাদেরকে কিভাবে ঠকানো হয় তা জানলে আপনি উশটা খেতে বাধ্য ।
‘উশটা’ খাওয়ার পথ পরিক্রমায় আপনাকে স্বাগতম ।
# কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা-
“.........আমার বঊ একটা বহুজাতিক কোম্পানীতে কাজ করে । কাজের জন্য তাকে বিভিন্ন যায়গায় যেতে হয় । তার বস তাকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে ধর্ষণ করে এবং তা ভিডিও করে । এখন সেই ভিডিও দেখিয়ে আমাদের নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করে । আমরা এখন কি করব? ” [৩]
“…… আমাকে বলা হল হয় এব্রোশান করে ফেল না হলে রাস্তামাপতে পারো। এক অফিসে একি সঙ্গে আমরা দুইজনগর্ভবতী কর্মচারী রাখতে পারবো না , অফিসের কাজ কর্মশিকেয় উঠবে”
“......অফিসে কমপক্ষে ৩টা শিফট থাকতো প্রতি সপ্তাহে এবং সেখানে আমাকে নানা ভাবে যৌন নিপীড়ন করা হত।”
“……একবার আমাদের কোম্পানীর জন্য আমি খুব ভালো একটা কাজ নিয়ে আসতে সক্ষম হলাম । আমার ইমিডিয়েট বস আমাকে বলল, “কার মনোরঞ্জন (ইংরেজি যে শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছিল সেটা ছাপার অযোগ্য ) করে ডিলটা জিতলে?” বসের কথা শুনে আমি তো থ মেরে গেলাম । চোখ মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল । কিন্তু সবাই এমনভাবে হেসে উঠলো যেন এটা খুব ভালো একটা জোকস ছিল”
“............ আমি ছিলাম হসপিটালের জুনিয়র ডাক্তার । আমার পরামর্শককে একদিন বললাম , স্যার এই এক্সরে রিপোর্টটা একটু দেখে দিবেন ? তিনি বললেন – হুম! তুমি আমার কোলে একটু বস তাহলেই আমি এক্সরে রিপোর্টটা দেখে দিব, হানি”।
“…… কোম্পানীর ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের একমেম্বার দেঁতো হাসি হেসে আমাকে বললো , “জানো সেদিন বোর্ড মিটিং এ কি হয়েছে ? সবাই আলোচনা করছিল আমাদের অফিসের কোন মহিলা সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং আকাঙ্ক্ষিত (ইংরেজি যে শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছিল সেটা ছাপার অযোগ্য ) । শেষমেশ সবাই একমত হল যে সেটা তুমিই ”
“……একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সবাই চলে যাওয়ার পর আমাকে আটকে রেখেছিল এবং হুমকি দিয়েছিল – আমার সাথে তুমি যদি হোটেলে যেতে রাজী না হও তাহলে তোমাকে আটকিয়ে রাখব । তুমি বাসায় যেতে পারবে না । তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর ”
“……তখন আমার বয়স ছিল ২৩ বছর, আমি কর্মস্থলে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হতাম। আমি আমার চাকুরি হারানোর ব্যাপারে এতটাই ভীত ছিলাম যে, এ ব্যাপারে অভিযোগ করতাম না।”……….
“………আমি কাজ করতাম মদ্যপানশালাতে । যখন পুরুষেরা মদের অর্ডার করতো,তখন তাদের কাছে আমি নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হতাম আর এটা ছিল নিত্যদিনকার ঘটনা। আমি জানতাম যে এর প্রতিবাদ বা অভিযোগ করলে,আমাকে চাকুরী হারাতে হবে।”
.“………এক ম্যানেজার আমাকে বলেছিলো সে আমাকে একদিন না একদিন ধর্ষণ করবে।”
“………অফিসের এক লোক বলেছিলো তার সাথে আমাকে শারিরীকভাবে মিলিত হতে হবে, তা না করলে আমার চাকুরী চলে যাবে। তার ভাই ছিল অফিসের প্রধান।”
“………আমার অফিসের একজন পুরুষ প্রধান কর্মকর্তা বার বার আমাকে কুরুচিপূর্ণ কথা বলতো।আমি এ ব্যাপারে মহিলা কাছে অভিযোগ করলে,তিনি এটাকে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো আমাকেই দোষ দিলেন।”
# কিছু জরিপ -
১) ২২৩৫ জন পূর্ণ ও খণ্ডকালীন মহিলা কর্মীর উপরে একটি জরিপ পরিচালনা করেছিল ‘Survey Monkey’ নামক সংস্থা। এর ফলাফল এমন হয় যে , ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী মহিলাদের মাঝে প্রতি ৩ জনের ১ জন কর্মস্থলে যৌন হয়রানির শিকার হন । এদের মাঝে ৮১% রিপোর্ট করেছেন মৌখিক ভাবে হয়রানির ব্যাপারে, অন্য দিকে ২৫% বলেছে যে তারা এমন ক্ষুদে বার্তা বা ই-মেইল পায় যা শালীনতার সীমা অতিক্রম করেছে, এবং ৪৪% অভিযোগ করেছেন যে তারা অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শের সম্মুখীন হয়েছেন । এই জরীপ আরও দেখায় যে, যৌন হয়রানির শিকার মহিলাদের মাঝে ৭১%ই এই ব্যাপারে কোন রিপোর্ট করে না ।
২) যৌন হয়রানির শিকার মহিলাদের মাঝে ৭১% এই ব্যাপারে কোন রিপোর্ট করে না । - জলি এমারসন ( সমানাধিকার নিশ্চিতকরণ নামক একটি অলাভজনক সংস্থার সাবেক আইনজীবী) ।
৩) ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী মহিলাদের মাঝে প্রতি ৩ জনের ১ জন কর্মস্থলে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে রিপোর্ট করেন।- U.S. Equal Employment Opportunity Commission (EEOC)
৪) আইনজীবি স্লেটার আর গর্ডন কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে দেখা যায় , কর্মস্থলে নারী কর্মচারীদের প্রতি ৬ জনের মাঝে ১ জন সহকর্মীদের আপত্তিকরভাবে তাকিয়ে থাকার শিকার, প্রায় অর্ধেক তাদের শরীর নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য শোনার শিকার এবং এ ধরনের নানা আপত্তিকর কারণে প্রতি ৮ জনের মাঝে ১ জন নারী তার কাজ ছেড়ে দেন।
এই রিপোর্ট অনুযায়ী, কর্মস্থলে নারী ও পুরুষ উভয়ই যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে এবং তা বেড়েই চলেছে। প্রায় ৪০% পুরুষ এ ব্যাপারে রিপোর্ট করেন ।কিন্তু আরও বাকি ৬০% পুরুষ এই ধরনের ঘটনা নিজেদের মাঝেই চেপে রাখে এবং এটাই এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
#একেই_বলে_সভ্যতা
চলবে ইনশা আল্লাহ্ ......
[লস্ট মডেস্টি অনুবাদ টিম কর্তৃক অনূদিত ।]
রেফারেন্স-
৩) ৬ জুলাই , ২০১৫ তারিখে রেডিও স্বাধীনে ‘মায়া আপা কি বলে’ অনুষ্ঠানে এই ছিল একব্যক্তির প্রশ্ন।
6) http://www.huffingtonpost.com/2015/02/19/1-in-3-women-sexually-harassed-work-cosmopolitan_n_6713814.html
Do you need free Twitter Re-tweets?
ReplyDeleteDid you know you can get these AUTOMATICALLY AND ABSOLUTELY FREE by getting an account on Like 4 Like?