প্রথম পর্ব- “মিথ্যে কথার রাজ্যে”
বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।
ভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ারে পড়তাম তখন । ছুটিতে বাসায় গিয়েছিলাম । রাতের ট্রেনে বাসা থেকে হলে ফিরছি ।একা একা নাইট জার্নি করে যাচ্ছি তাই আব্বু , আপু আর আম্মু বেশ টেনশান করছিল । ফোন দিয়ে আমাকে অস্থির করে তুলছিল । ঘুমাতে পারছিলনা ।
ট্রেন ছাড়ল রাত ১১ টার অনেক পরে ।আম্মু ১১টার অনেক আগেই ঘুমিয়ে যায় কিন্তু সেদিন জেগে ছিল ,আম্মুকে ফোন করলাম । আম্মু ঘুমালো ।
“ভাই, আপনার ফোন থেকে একটা কল করা যাবে”?
ঘুরে তাকালাম আমার পাশের সিটে বসা প্রশ্নকারীর দিকে । ২৪/২৫ বছরের মতো বয়স। নিম্নবিত্ত
কিছুটা অবাক হয়ে বিরক্তি মাখা সুরেই বললাম, “হ্যাঁ করেন” ।
আমার বিরক্তিটা সহজেই টের পেয়ে গেল সে । কৈফিয়ত দেবার মতো করে বলল , “ভাই আমার ফোন টা হারায়ে গেসে গতকাল ।বুড়া মা বাসায় চিন্তা করছে । ফোন না করলে আমার মা টা ঘুমাতে পারবেনা”।
সে আমার ফোন থেকে তার পাশের বাসায় ফোন করল ( তার মায়েরও ফোন নেই)। তার মাকে জানাতে বললো সে ভালোমতো ট্রেনে উঠেছে ।
এসি রুমে আরামদায়ক বিছানায় শোয়া মা সন্তানের জন্য যেরকম দুশ্চিন্তায় করে,ফুটপাতে শোয়া মা তার সন্তানের জন্য সেইরকম দুশ্চিন্তাই করে ।মা দের সন্তানের প্রতি ভালোবাসাই আর কোন ব্যাপার নেই, কোন ফরমানলিন নেই । আমরা মায়ের এই অপার্থিব ভালোবাসা, বোনের স্নেহের প্রতিদান দিচ্ছি তাঁদের নিয়ে লিখা চটি গল্প পড়ে ! আমরা অনলাইনের জগতটাকে এমন অসুস্থ বানিয়ে ছেড়েছি যে বাংলায় টাইপ করে গুগলে কিছু খুঁজতে কোন সুস্থ লোকের প্রবৃত্তি হয় না ।
একটা বিশাল প্রজন্ম গড়ে উঠেছে এবং উঠছে যারা প্রাইমারী স্কুলের গন্ডি পার হবার আগেই চরম অশ্লীলতার জগতটার সঙ্গে পরিচিত হয়ে যাচ্ছে , যারা মা ,বোন ,কাজিন,ভাবী ,খালা, চাচী,মামী এদের নিয়ে লিখা চটি গল্প পড়ে আর রাত দিন এদের নিয়ে সেক্স ফ্যান্টাসীতে ভোগে ।
চটি গল্প, পর্নমুভির চেয়েও ভয়ংকর প্রভাব ফেলতে পারে এর পাঠকদের ওপর । বই/লিখা মানুষের মনোজগতকে প্রভাবিত করার জন্য খুবই শক্তিশালী একটা মাধ্যম । কুরআনের দিকে আমরা তাকাতে পারি । আল্লাহ্’র (সুবঃ) এই পবিত্র বই কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের গতিপথ পরিবর্তন করেছে এবং করছে । পাথরের চেয়েও কঠিন মনের মানুষ শিশুর মতো অঝোরে কাঁদে কুরআন পড়ে , এই কুরআন পড়েই আল্লাহ্র জন্য মানুষ তার জীবনটা বিলিয়ে দিতেও কুন্ঠাবোধ করে না ।
চটি গল্প পড়ার সময় পাঠক অনেককক্ষন ধরে বিষয় গুলো নিয়ে চিন্তা করার সময় পায় , ইচ্ছে হলেই পড়া বন্ধ করে সেক্স ফ্যান্টাসীতে ডুবে যায় । কিন্তু পর্ন মুভিতে তার এ সুযোগ থাকে সীমিত । ঘটনার দ্রুত পট পরিবর্তন হয় , চিন্তা করার খুব একটা সময় থাকে না । কোন বিষয়ের ওপর ভিডিও দেখা বা লেকচার শোনার চেয়ে সেই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলে সেটা বেশি সময় ধরে মাথায় থাকে । চটি গল্পে পড়া জিনিস গুলো এর পাঠকের মস্তিষ্কে খুব বেশি সময়ের জন্য পাকাপোক্ত আসন গেড়ে বসে । সারাক্ষন মাথার মধ্যে কৃমির মতো কিলবিল করতে থাকে গল্পের ঘটনাগুলো । সহজেই রেহাই পাওয়া যায়না বিকৃত অবাধ্য চিন্তাগুলোর হাত থেকে ।
আমাদের এই সিরিজে ইনশাআল্লাহ্ আমরা আলোচনা করব ভয়ংকর এই আসক্তি নিয়ে । প্রথমে ইনশা আল্লাহ্ আমরা চেষ্টা করব চটি গল্পের ধাপ্পাবাজির দিকটা তুলে ধরার , তারপর আলোচনা করা হবে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে এবং সর্বশেষে ইনশা আল্লাহ্ কিছু টিপস দেওয়া হবে চটি গল্পের আসক্তি দূর করার জন্য ।
অনেকগুলো মিথ্যে কথা –
১) ভাই, চটি গল্পে আপনি যা পড়ছেন বা পড়েছেন তার আগাগোড়া ষোল আনাই মিথ্যে । একেবারে বানানো গল্প । কারো সাথে কখনো ওরকম কিছু হয়নি । কেউ ওরকম করে না । কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে ঐগুলো করা তো দূরের কথা চিন্তা করাও সম্ভব নয় । পেটে লাল নীল পানি না পড়লে বা গাঞ্জার কল্কিতে দু’টান মেরে না আসলে ঐরকম গালগল্প লিখা সম্ভব না ।
২) অন্তরঙ্গতার পদ্ধতি, সময় , ফ্রিকোয়েন্সি ঐগুলাও অবাস্তব । কোন স্বাভাবিক নারী পুরুষের পক্ষে ওদের মতো করে এত সময় ধরে বা এত ঘন ঘন অন্তরঙ্গ থাকা সম্ভব নয় ।
৩) নারী বা পুরুষের প্রাইভেট পার্টস এর যে বর্ণনা আপনি পড়ছেন, তার সবকিছুই ঢাহা মিথ্যে , অতিরঞ্জিত ।
৪) কোন স্বাভাবিক নারী পুরুষের পক্ষে অন্তরঙ্গতার সময় এত নির্লজ্জ হওয়া সম্ভব না । কেউ ওরকম খিস্তি খেউর করেনা , পশুর মতো চিৎকার চেঁচামেচি করে না ।
৫) চটি গল্পে মামী , ভাবী, চাচী , খালা , কাজিন , বোন , মা (লিখতে খুবই অস্বস্তি লাগছে, আল্লাহ্ আমাদের এইসব জঘন্য কাজ থেকে রক্ষা করুক , যারা এসব লিখে আল্লাহ্ তাদের হেদায়াত দিক অথবা ধ্বংস করে দিক) বান্ধবীদের সঙ্গে লীলাখেলার যে কাহিনী আপনি পড়ছেন এবং তার অনেকটা সত্য বলে ধরে নিয়েছেন তার পুরোটাই মিথ্যে । পাশের বাসার আন্টি , কাজের মেয়ে , টিচারদের নিয়ে যে গল্পগুলো পড়েছেন সেগুলোও ভুয়া ।
বটমলাইনটা হল - চটি গল্প গুলো বের হয় সাধারণত প্রচন্ড সেক্স পারভারট একদল মানুষের (আসলে জানোয়ার , মানুষ না) গাঞ্জার ধোঁয়ার আচ্ছন্ন বিকৃত মস্তিষ্ক থেকে । নিজের কিছু করার মুরোদ নেই , অথচ মনে প্রচন্ড খিদে - কি আর করবে বেচারারা ! তাই মনের জঘন্য চিন্তা গুলো লিখে আর তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে । কিন্তু এগুলোকেই ধ্রুব সত্যি মনে করে বেড়ে উঠছে একটা জেনারেশানের ছেলেমেয়ে । কোন দিকে কি যাচ্ছে আমাদের সমাজটা তা কি ভাবার সময় আসেনি ?
......... চলবে ইনশাআল্লাহ্
আলহামদুলিল্লাহ। শুরুটা চমৎকার। ভাইয়া, পরের পর্ব কোথায়?
ReplyDeletehttp://lostmodesty.blogspot.com/2016/06/blog-post_10.html
ReplyDeletehttp://lostmodesty.blogspot.com/2016/06/blog-post_20.html
http://lostmodesty.blogspot.com/2016/06/blog-post_28.html
অসাধারন , , , , শুরু! অনেক দেরী হয়ে গেল যে। লিখতে থাকুন ভাই।
ReplyDeleteহুমম, গুগলে কোন বিষয়ে সার্চ করা আমার খুব বেশি প্রিয় একসময় কোন একটা বই খুজতে গিয়ে এই কাল জগতটার সন্ধান পেয়েছিলাম আর সার্চ করলেই ঐ সব শব্দ দিয়ে এসব চলে আসে একদম প্রথমে অথচ আমরা এই শব্দ গুলো প্রতি দিন ইউস করি আপন জন কে সম্বোধন করতে । কতটা জঘন্য অবস্থা এর পাঠক অনেক না হলে গুগলে এসব পোস্ট প্রথম পেজে আসত না ।
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDelete