প্রতিবার জুমুআতে ইমাম সাহেব খুতবা শেষ করেন কুরআনের এই আয়াত দিয়ে-
“আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।” (সূরা আন নাহল,আয়াত-৯০)
“আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।” (সূরা আন নাহল,আয়াত-৯০)
এখানে যে বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে পর্নোগ্রাফিক কালচার সে বিষয়গুলোকেই রাঙ্গিয়ে তোলে।এইবার একটু টেকনিক্যাল কথাবার্তায় আসি।এইখানে মূলত ৩ টি শব্দের উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো হল
(১)ফাহসা,
(২)মুনকার ও
(৩)বাগি
মুনির বালবাকির আল মাওরিদ অ্যারাবিক-ইংলিশ ডিকশনারি অনুযায়ী “ফাহসা” অর্থ হল অশ্লীলতা,অসভ্যতা,অভদ্রতা,লজ্জাহীনতা,এমন কিছু যা জঘন্য,নোংরা ও কুরুচিপূর্ণ।অন্য এক অভিধানে এগুলোর বাইরেও কিছু অর্থ এসেছে যেমন অঙ্গবিকৃতি,নিচুতা,কদর্যতা ও ব্যাভিচার।কুরআন ও সুন্নাহতে অনৈসলামিক যৌন কার্যকলাপ বোঝাতে এই শব্দটির বহুল ব্যবহার রয়েছে।কুরআনের আলেমদের মতে,প্রত্যেক কুকর্ম তা ব্যাভিচারই হোক বা আর যাই হোক তা এই ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত।উদাহরণস্বরূপ, নগ্নতা,পাবলিক ফোরপ্লে,গালাগালি,অশ্রাব্য ভাষা,বাছবিচারহীন মেলামেশা,টাইট কাপড় পড়া ইত্যাদি।এসবের একেবারে চূড়ান্ত ধাপ হল জিনা ও সমকামিতা(কুরআন ১৭:৩২,৭:৮০,২৭:৫৪)।
“আল-মুনকার” এর অর্থ হল বাজে,নিকৃষ্ট,রুচিহীন,গর্হিত ও চরম অনৈতিক।এই ক্যাটাগরিতে আছে ওইসব খারাপ কাজ যেগুলো সর্বসম্মতভাবে বর্জনীয়,বিবেকের কাছে ঘৃণিত ও বিধাতা কর্তৃক সর্বকালের জন্য নিষিদ্ধ।যেকোনো ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে পর্ন ধিক্কারযোগ্য।এমনকি মূলধারার আমেরিকান পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলোও এসব অনুমোদন করে না।এই নীতিহীনতাকেই কুরআনে আল-মুনকার বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
এইবার বাকি রইল “আল-বাগি” যার অর্থ ভুল,অবিচার,অত্যাচার ও নিপীড়ন।মানে বিধাতা বা যে কোন আদম সন্তানের ন্যায্য অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বা দুর্নীতি করা।পর্নোগ্রাফিক ইন্ডাস্ট্রি নারীদের অধিকার ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে আজ তাদের সেক্স অবজেক্টে বদলে দিয়েছে।পর্নোগ্রাফিক ই-মেইল দিনে কমপক্ষে ৪ বার আমেরিকানদের ইনবক্সে ঢুঁ মারে।আল্লাহ বলেন,
“তাদের বলে দাও(হে মুহাম্মাদ):আমার প্রতিপালক প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা,পাপকাজ..................নিষিদ্ধ করেছেন।”(৭:৩৩)
“তাদের বলে দাও(হে মুহাম্মাদ):আমার প্রতিপালক প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা,পাপকাজ..................নিষিদ্ধ করেছেন।”(৭:৩৩)
তাই ঘরের চার দেয়ালে আটকে থেকে পর্ন দেখা বা যাবতীয় অশ্লীলতা সবই হারাম।কুরআনে আল্লাহ সুবহানা ওয়া তাআ’লা অশ্লীল কাজ ও কথাবার্তার ধারে কাছে যেতেও বারণ করেছেন তা প্রকাশ্যেই হোক কিংবা গোপনে।এই একই আয়াতে আল্লাহ শিরক ও হত্যার মত ভয়াবহ অপরাধ সম্বন্ধে আমাদের সচেতন করেছেন।এইবার বুঝুন তাহলে কত প্রবল এই পর্নোগ্রাফির আযাব।আল্লাহ আমাদেরকে খুব ভালভাবেই চিনেন কারণ তিনিই আমাদের সৃষ্টি করেছেন।আমাদেরকে দুর্বল করে তৈরি করা হয়েছে।তাই আমাদের হারাম থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা কম চ্যালেঞ্জিং না।আল্লাহ বলেন,
“যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে পীড়াদায়ক শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন,তোমরা জানো না।”(২৪:১৯)
শয়তানের এই মারণাস্ত্র থেকে বেঁচে থাকার তাগিদ মহান আল্লাহ বার বার দিয়েছেন।তিনি আরও বলেন,
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে।”(২৪:২১)
এখানে ফাহসা ও মুনকার ২ ধরণের কাজের ব্যাপারেই উল্লেখ করা হয়েছে।আপনাকে শয়তান কোনদিনই বলবে না যে,“চলো,একটা বড়সড় হারাম করি বা জিনা করি।”সে আপনাকে একটু একটু করে লোভ দেখাবে এবং আপনি যতই ওর টোপ গিলবেন ততই ও আপনার অন্তরকে নিজের দখলে আনতে থাকবে।এমন একসময় আসবে যখন ও আপনাকে আদেশ দিবে আর সাথে সাথে সেটা পালনে আপনি মরিয়া হয়ে উঠবেন।নিজেকে বেচে দিবেন এই অভিশপ্তের হাতে।এই অঘটন যাতে না ঘটে তাই শুরু থেকেই ব্যাটার নীল নকশাতে পানি ঢেলে দিন।
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে।.........”(২৪:৩০-৩১)
এইবার হাদিস এর কয়েকটি রেফারেন্স দেওয়া যাক
১। কোন পুরুষ বা নারীর উচিৎ নয় অপর কোন পুরুষ বা নারীর গোপনাঙ্গের দিকে দৃষ্টিপাত করা যদি না তারা বিবাহিত হয়।(মুসলিম)
২। আমার রবের কসম, কারো গোপনাঙ্গের দিকে তাকানোর চেয়ে বা কাউকে আমার গোপনাঙ্গ দেখানোর চেয়ে আমি আকাশ থেকে নিক্ষিপ্ত হওয়া ও তারপর খণ্ড খণ্ড টুকরায় ভাগ হওয়াই বেছে নিব।(সালমান(রাঃ) কর্তৃক বর্ণনাকৃত)
৩। কারোর সামনে তোমার থাই অনাবৃত করো না এবং অন্য কারোর থাই এর দিকেও নজর দিয়ো না হোক সে জীবিত বা মৃত কিংবা নারী অথবা পুরুষ।(ইবনে মাজাহ,আবু দাউদ)
৪। আল্লাহ তাআ’লা আদম সন্তানের জন্য তার জিনার অংশ লিখে রেখেছেন যা সে অবধারিতভাবে করে।চোখের জিনা হল যা সে দেখে(হারাম জিনিসপত্র),মুখের জিনা হল যা সে বলে(হারাম জিনিসপত্র)।আর তার ভেতরের মনটা তা কামনা করে।তার গোপনাঙ্গ হয় এসবের সাক্ষী হয় নয় এগুলো বর্জন করে।(বুখারি,মুসলিম,আবু দাউদ)
পর্নমুভি দেখা,এই ধরণের গান শোনা বা গাওয়া,নিজের হাত বা পা এর অপব্যবহার করা এসবই ধীরে ধীরে জিনার দিকে টেনে নেয় ও ঈমান ধ্বংস করে দেয়।একবার এই সাইকেলে আটকা পড়লে এই সাইকেল ভাঙ্গাটা অনেক চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায় বিশেষত তরুণ ভাই বোনদের জন্য।কিন্তু আল্লাহ কখনই আমাদের নিঃসঙ্গ হতে দিতে নারাজ।আর এই ভালোবাসা ও নিজের সচ্চেষ্টাকে আগলে নিয়ে নিজেদের নফসের বিরুদ্ধে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।দুয়া করি আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন যাতে আমদের আত্মিক ও শারীরিক উভয়ভাবেই নিরাপদ রাখেন।আমিন।
(লস্ট মডেস্ট অনুবাদ টিম কর্তৃক অনূদিত)
No comments:
Post a Comment