Sunday, January 10, 2016

একগুচ্ছ অনুবাদ (দ্বিতীয় কিস্তি)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।



# কর্মক্ষেত্রেও পর্নোগ্রাফি!!
পর্নোগ্রাফির বিষবাষ্প আর এর বিষাক্ত প্রভাব রেহাই দেয়নি কর্মক্ষেত্রের পরিবেশকেও পাশ্চাত্য সভ্যতার তৈরি পর্ন ইন্ডাস্ট্রি এবং এর ন্যাক্কারজনক প্রোডাক্ট পর্নোগ্রাফি তিলে তিলে ধ্বংস করে চলেছে সারা পৃথিবীর মানুষের নীতিবোধ পবিত্রতা তবে এর ক্ষতিকর প্রভাব বুমেরাং হয়ে সবথেকে বেশি আক্রান্ত করেছে স্বয়ং পাশ্চাত্য সমাজকেই পর্নোগ্রাফির দূষিত প্রভাবে কর্মপরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সাথে সাথে কর্মক্ষেত্রের নারীদেরকে সম্মুখীন হতে হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার


ভাবুন তো, অফিসে বসে একজন কর্মী কম্পিউটারে কাজের ফাঁকে ফাঁকে চুপিচুপি আরেকটা ট্যাব খুলে তাতে পর্ন দেখছেন এতে কাজের ক্ষতি হচ্ছে কি না সেটা আমাদের আলোচনার বিষয় নয় তবে এতে তার কল্পনা চিন্তনপ্রক্রিয়া ভরে যাচ্ছে কলুষতায় এমন অবস্থায় তিনি তার পাশের বিপরীত লিংগের সহকর্মীর দিকে তাকালেন; হয়ত কোন জরুরি কাজের বিষয়েই তার সাথে কথা বলতে হবে কিন্তু তিনি আর পারছেন না মনোযোগ স্থির রেখে মানুষটাকে স্বাভাবিকভাবে দেখতে না চাইলেও তার দৃষ্টি এমনভাবে চলে যাচ্ছে, যেভাবে একজন সহকর্মীর দিকে তার তাকানো উচিত নয় বা চিন্তা করা উচিত নয়; লুকানো ট্যাবে সদ্য দেখা চরিত্রের সাথে বারবার মিলিয়ে ফেলছেন তাকে আচ্ছা এবার ভাবুন, দুর্ভাগা সেই সহকর্মীটি আপনি নিজেই! যেই কুপ্রবৃত্তির প্রভাবে পড়ে কেউ পর্ন দেখছেন, সেই একই প্রবৃত্তিই তাকে ধাবিত করছে কলুষ চিন্তাভাবনার দিকে, ফলে ঘটে চলেছে কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্য, হয়রানি ইত্যাদি


২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রেরবার্না গ্রুপ’-এর চালানো একটি জরিপে দেখা যায়, বিগত তিন মাসের মধ্যে পুরুষদের ৬৩% কর্মস্থলে থাকা অবস্থায় পর্ন দেখেছেন; নারীদের মধ্যে এর সংখ্যাটি ৩৬% (1)


২০০৩ সালে বিজনেস অ্যান্ড লিগ্যাল রিপোর্ট একটি জরিপ করেছিল ৪৭৪ জন হিউম্যান রিসোর্স প্রফেশনালদের উপর, যেখানে দুই-তৃতীয়াংশ কর্মীই বলেছেন তারা তাদের অফিস কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভে পর্ন পেয়েছেন (2) পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয় কারণ, ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অস্ট্রেলিয়ার ৩৫০টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চালান জরিপে জানা যায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কর্মীই স্বীকার করেছেন অফিস কম্পিউটারে পর্নোগ্রাফিক উপাদান ডাউনলোড করার কথা(3) একই বছরেই ম্যাসেজ ল্যাবস-এর রিপোর্টে দেখা গেল, সারাদিনের ভেতর পর্নসাইটগুলোতে সবচেয়ে বেশি হিট পড়ে সকাল ৯টা থেকে ৫টার মধ্যে- যখন কি না অধিকাংশ মানুষই থাকে কর্মস্থলে তার মানে তারা সারাদিনের ভেতর পর্ন দেখার জন্য অফিসের সময়টাকে নির্বিঘ্ন বলে বেছে নেন, এতটাই নেশা!


কলুষতার সাথে বসবাস করলে এর প্রভাব আচরণ, কাজে-কর্মে পড়বেই এরই এক উদাহরণ কর্মক্ষেত্রে নারীদের হয়রানি ‘Survey Monkey’ নামক একটি সংস্থা ২২৩৫ জন পূর্ণ খন্ডকালীন নারী কর্মীর উপর জরিপ চালিয়ে ফলাফল পায়, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী মহিলা কর্মীদের প্রতি জনের মধ্যে জনই কর্মস্থলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা সহকর্মীর দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হন এদের মধ্যে শতকরা ৮১ জন জানিয়েছেন তারা মৌখিক হয়রানির (অশালীন ইংগিত/মন্তব্য) শিকার অন্য দিকে শতকরা ২৫ জন বলেছেন, তারা চুড়ান্ত অশালীন ক্ষুদে বার্তা বা -মেইল পান এবং শতকরা ৪৪ জন অভিযোগ করেছেন যে তারা অনাকাংক্ষিত স্পর্শের সম্মুখীন হয়েছেন


জরিপে আরো দেখা যায় যে, হয়রানির শিকার মহিলাদের শতকরা ৭১ জনই ব্যাপারে কোন রিপোর্ট করেন না চাকরি হারানোর ভয়, তার কথা কেউ পাত্তা দেবে না, মূল অপরাধীর বদলে বরং তাকেই সবাই দোষ দেবে ইত্যাদি চিন্তা করে তারা সাহস করে মুখ না খুলে বিষয়গুলো চেপে যান এবং দুঃখজনক হলেও সত্যি, অনেক সময় এধরনের অভিযোগ তোলা হলে হয়রানিকারীর দোষ না দেখে ভুক্তভোগীকেই দোষী বলা হয় আবার কিছুক্ষেত্রে দেখা যায় মানুষ এই আচরনকে মজা বা কৌতুক হিসেবে নেয় ফলে ভুক্তভোগী মনে করে ব্যাপারে কিছু বললে বা অভিযোগ করলে অন্যরা তাকে অসামাজিক বা রসবোধহীন মনে করবে এমনকি যেসব পেশাকে খুব সম্মানজনক বলে ধরে নেওয়া হয় সেখানেও এই অন্ধকার দিকগুলো বিদ্যমান উদাহরণস্বরুপ সেনাবাহিনীর সদস্যদের কথা বলা যায়, যেখানে কেউই নিরাপদ নন


শুধুমাত্র নারীরাই না, পুরুষরাও কর্মক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হন আইনজীবি স্লেটার আর. গর্ডন কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, কর্মস্থলে নারী পুরুষ উভয়ই যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে এবং তা বেড়েই চলেছে প্রায় ৪০% পুরুষ ব্যাপারে রিপোর্ট করেন কিন্তু আরও বাকি ৬০% পুরুষ এই ধরনের ঘটনা নিজেদের মাঝেই চেপে রাখেন এবং এটাই এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে  (4&5)  




#  ......প্রতি বছর হাজার হাজার টীনেজারদের সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি আপনি যদি এই “বড়দিনে”  বড়দিনের উপহার হিসেবে আপনার বাচ্চার জন্য বাজার থেকে স্মার্টফোন বা আইপড কিনে আনেন , তাহলে  আপনি আপনার বাচ্চার জন্য আসলে একটা পোর্টেবল এক্স রেটেড মুভি থিয়েটার কিনে নিয়ে আসলেন ।


আপনার বাচ্চার নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য (এবং তাদের ভবিষ্যৎ জীবন সঙ্গী / সঙ্গিনীর জন্যও) দয়া করে অবশ্যই অবশ্যই বাচ্চার হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়ার আগে তাকে ইন্টারনেটের অন্ধকার জগত সম্পর্কে সচেতন করুন ।   বিপদ ঘটার পূর্বেই  প্রয়োজনীয়  এক্সরেটেড ওয়েবসাইট ব্লকিং  সফটওয়্যার বা অ্যাপস  ইন্সটল করুন । দেরী করবেন না । এবং ভাববেন না আমার বাচ্চার ওপর আমার বিশ্বাস আছে , ও কখনো এমন করবে না । সমস্যাটা হয় আপনার সন্তানের ওপর আপনার বিশ্বাসের কারণে না বরং ইন্টারনেটের ওপর আপনার অগাধ বিশ্বাসের কারণে ।  আবারো বলছি গড়িমসি করবেন না । তা হলে  হয়তো কিছু দিন পর  আপনি আবিষ্কার করে বসবেন  আপনার সন্তান পর্ণমুভিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে”। (Matt Fradd , anti porn activist)
- 


শিশু কিশোরদের পর্ণ আসক্তির ব্যাপকতা, ক্ষতিকর দিক এবং এ  শিশু কিশোরদের পর্ণ আসক্তি দূর করার উপায় নিয়ে লিখা এই আর্টিকেল গুলো পড়তে পারেন –
আমাদের সন্তান পর্ণ দেখে  সিরিজের চারটি পর্ব –

২) দ্বিতীয় পর্ব- http://lostmodesty.blogspot.com/2015/08/blog-post_26.html


৪) চতুর্থ পর্ব- http://lostmodesty.blogspot.com/2015/09/blog-post_6.html

পাশ্চাত্যে বেড়ে ওঠা-http://lostmodesty.blogspot.com/2015/09/blog-post_6.html

   
আসল কথা হল পর্ণ ইন্ড্রাস্টীর মুনাফার অংকটা বেশ বড় ।  আর এ কারনেই  বিশ্বজুড়ে  পর্ণমুভির ভয়াবহ বিস্তার । এবং ব্যক্তিজীবনে, সমাজ জীবনে  পর্ণ মুভির  ভয়াবহতা দেখেও পর্ণ মুভির বিস্তার ঠেকানোর সেরকম উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ কেউ নেয় না ।   আমাদের দেশে (ইন্দোনেশিয়া)  কয়েক বছর আগে সরকার একটা উদ্যোগ নিয়েছিল আইন করে পর্ণ  মুভির ভয়াবহ প্রসার বন্ধ করার  । কিন্তু তথাকথিত “প্রগতিশীলরা” এটা হজম করতে পারলো না কারণ ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন ধর্মীয় কমিউনিটি বিশেষ করে মুসলিম কমিউনিটি সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছিল এবং সাপোর্ট করেছিল এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য । সেই তথাকথিত ‘প্রগতিশীল এবং মুক্তমনাদের’ প্রতিবাদের মুখে শেষ পর্যন্ত আমাদের সরকার সেই আইনটি আর পাশ করাতে পারেনি ।  এই পর্ণমুভির কারণে  বর্তমান ইন্দোনেশিয়ান তরুণ- তরুনীদের  মানসিকতা কতটা নীচে নেমে গেছে তা আপনি হয়তো ভাবতেও পারবেন না । ইউটিউবে তারা নিয়মিত এমন সব ভিডিও আপলোড দেয় যা অনেক সময় পর্ণ মুভির বেহায়াপনাকেও হার মানায় ।
(একটি এন্টিপর্ণ ওয়েবসাইটের কমেন্ট সেকশনে করা একজন ইন্দোনেশিয়ান মুসলিমের কমেন্টের চুম্বুকাংশ)
---------------------------*-------------------------
#  ……. বিশ্বায়নের একটি অভাবিত ফল হল উন্নয়নশীল বিশ্বে পশ্চিমা পর্ণোগ্রাফির জঘন্য প্রভাব বিস্তার।  অনেক অনুন্নত দেশের গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা সত্ত্বেও জেনারেটর চালিয়ে গ্রামের একটি কুঁড়েঘরকে অশ্লীল সিনেমা হলে পরিণত করা হয়, যা  তরুণদেরকে বানায় ধর্ষক; উৎসাহিত করে নারীদেরকে  নির্যাতন করতে তরুণরা লাগামহীন ভাবে পর্ণ মুভি দেখছে  আর যা দেখছে ঠিক তা-ই বাস্তবে করতে গিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা, অনাচার আর   HIVএর সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এইডস কমিশনের প্রধানের বিবৃতি অনুযায়ী, পর্ণোগ্রাফি হল এমন এক টাইমবোমা যা তাদের সকল জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।  জরিপে দেখা গেছে যে HIV আক্রান্ত বিবাহিতদের যৌনশিক্ষার উৎস হল ল্যাটিন আমেরিকায় তৈরি পর্ণোগ্রাফি” .  
---- টিম স্যামুয়েলসচলচ্চিত্র নির্মাতা,বিবিসি প্রামাণ্য চিত্র "Hardcore Profits"(২০০৯)  The Guardian "Africa Goes Hardcore" )  


(লস্ট মডেস্টী অনুবাদ টীম কর্তৃক অনূদিত) 
চলবে ইনশাআল্লাহ......
পড়ুন একগুচ্ছ অনুবাদ সিরিজের  প্রথম কিস্তি- http://lostmodesty.blogspot.com/2015/12/blog-post_26.html

রেফারেন্স-
1)    2014 Pornography Survey and Statistics. Proven Men Ministries. http://www.provenmen.org/2014pornsurvey/ (accessed Dec. 29, 2014).
2)    Michael Leahy, Porn @ Work: Exposing the Office’s #1 Addiction(Chicago: Northfield Publishing, 2009).
3)    Bob Sullivan, “Porn at work problem persists,” MSNBC News,Sept.6,2004.http://www.msnbc.msn.com/id/5899345/ (accessed Dec. 27, 2012).


1 comment: