পর্ন মুভি বিষাক্ত মাকড়াশার মতো জাল বিছিয়ে রাখে । গ্ল্যামার আর চাকচিক্যে আকৃষ্ট হয়ে যে কেউ আটকে পড়তে পারে এই জালে । একবার জালে আটকা পড়লে সেই জাল ভেদ করে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত কঠিন । মাকড়াশা যেভাবে পোকাকে তিলে তিলে মেরে ফেলে পর্ন মুভিও আপনাকে ঠিক সেভাবেই একটু একটু করে ধ্বংস করে ফেলবে । আপনি আস্তে আস্তে হারাবেন আপনার স্বাস্থ্য, আপনার পরিবার, আপনার চাকুরী, এমনকি আপনার ভালবাসার মানুষটিকেও । আমাদের এই সিরিজে আমরা আপনাদের কিছু সত্যিকারের গল্প বলে যাব । গল্পগুলো কিছু পর্ন আসক্ত মানুষের । কীভাবে তারা হারিয়ে ফেলেছেন এই জীবনের মূল্যবান সবকিছুই, নীল রঙের অন্ধকার গহ্বরে কিভাবে তারা ডুবে যাচ্ছেন সেই গল্প ।
ব্যর্থতা আর আর্দ্রতার গল্প!
দীর্ঘশ্বাস আর নীরব আর্তনাদের গল্প!
নষ্ট হবার গল্প!
পাঠক, আপনাকে স্বাগতম !
আমার স্বামী পর্ন আসক্ত। এটি কষ্টকর , কারণ আমি একজন সমাজ কর্মী । তার সাথে পরিচয়ের আগ থেকেই আমি পর্নের বিরুদ্ধে লড়ে আসছি। আমি ব্যক্তি, পরিবার, এবং সমাজের উপর তার ধ্বংসাত্মক প্রভাব দেখেছি। আমি সারাটা জীবন যুদ্ধ করেছি। আমি ছোটবেলা থেকেই উত্ত্যাক্তকারীর কবলে পড়েছি, কিন্তু আমি সেক্স এবং যৌনতাকে স্পেশাল মনে করি। সেই দম্পতিদের জন্য এটা নিষ্পাপ এবং পবিত্র একটা উপহার যারা পরস্পরের প্রতি নিজেকে উৎসর্গ করেছে। আমার আর আমার স্বামীর মূল্যবোধ একই ধরনের ছিল। আমরা পরস্পরের সাথে সব সময় আমাদের চিন্তা চেতনা শেয়ার করতাম। আমরা পরস্পরের জন্য নিজেকে, নিজের ভালবাসাকে , নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলাম।
আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত যেদিন সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আর তার পর দিন ছিল সবচেয়ে খারাপ দিন। আমাদের বাগদান উদযাপন করতে , আর আমার পরিবারকে বাগদানের আংটি দেখাতে আমরা একসাথে আমাদের বাসায় যাই। ফেরার পথে সে আমাকে বললে যে সে আমাকে কিছু বলতে চায়। সে মনে করেছিল এটা এত গুরুত্বপূর্ণ না। তারপরেও আমার জানা উচিত।
সে পর্নে আসক্ত ছিল। ১২ বছর বয়স থেকে সে পর্নে আসক্ত ছিল। আমার সাথে দেখা হবার আগ পর্যন্ত তার কখনও অনুতাপ হয়নি । আমি মেনে নিতে চেষ্টা করলাম। আমার সবটা দক্ষতা দিয়ে তাকে পর্ন ত্যাগ করার জন্য উৎসাহিত করলাম। বাসায় ফিরে এসে নিজেকে একা আবিষ্কার করলাম। খুব কাঁদলাম। আমি জানতাম এটা আমার দোষ ছিল না , আমি কোন খারাপ কাজ করিনি। এমনকি পরিস্থিতি এতটা খারাপও ছিল না। সেতো শুধু পর্ন দেখেছে। নাইট ক্লাব বা পতিতালয়ে যায়নি। সে এখনও একজন ভাল মানুষ। তাকে আমি ভালবেসেছি, তার খারাপ অতীত জেনেও।
কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল। আমি তার সম্পর্কে ভুল ধারনা করেছি। সে এমন একজন মানুষ যে প্রমাণ করেছে, বছরের পর বছর পর্ন দেখেও মানুষের যৌন তাড়না পুরণ হয় না। সে এমন একজন মানুষ যে তার চোখ দিয়ে মেয়েদেরকে ব্যবহার করেছে , অবমাননা করেছে। কাজেই সে নির্দোষ না। সে এইসব কথা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছে। আর এমন সময় সে এগুলো প্রকাশ করেছে জখন আমার আর ফিরে যাবার পথ খোলা নেই। নেই কোন প্রশ্ন করার সুযোগ। আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, "আগে থেকে জানলে আমি কি বিয়েতে রাজি হতাম? আমি কি তাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে বলতাম? " হয়তোবা করতাম। কিন্তু তার এই সত্য লুকিয়ে রাখা আমাকে দুর্বল করে দিয়েছে। এটা আমাকে এক বিকৃত যৌন চাহিদার এক রাক্ষসের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করছে।
এরপর বিয়েটা হয়েই গেল। সে সৎ থাকবে বলে আমাকে কথা দিয়েছিল। সে বলেছিল, যদি আমি চাই তবে আমরা সারা জীবন কোন সাপোর্ট গ্রুপে যাব। অবচেতন ভাবে তার কর্মকাণ্ডের দায়ভার আমি নিতে শুরু করলাম। আমরা সাপোর্ট গ্রুপে গেলাম । সেখানে পাশাপাশি দুইটা রুম ছিল। আমি সারাটা সময় কাঁদলাম। তাদের কথা শুনলাম। কিছু রূপসী মেয়ে তাদের সঙ্গীর অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার জন্য নিজেকে দোষারোপ করছিল । তারা খুব বড় ধরনের মানসিক আঘাত পেয়েছিল। আসলে একজনের ভুলের কারণে যখন নির্দোষ কাওকে পস্তাতে হয় তখন এমন হওয়া স্বাভাবিক। আমি সেই পুরুষমানুষ গুলোকে ঘৃণা করি। সেখানে গেলে আমার নিজেকে লাঞ্ছিত মনে হয়। আর সেখানে নিয়ে যাবার জন্য আমার স্বামীকেও ঘৃণা করি। আমি এই কাউন্সেলিং সেশনে যাওয়া পছন্দ করি না। কারণ আমি জানি সেখানে কারা যায়। সেদিন সে খুশিমনেই কাউন্সেলিং গ্রুপ থেকে ফেরে। কিন্তু আমি গাড়ি পর্যন্ত যাবার আগেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি। বাসায় ফিরে সে আমার কাছে বসে। কিন্তু সে বোঝে না আমার ভিতর কি চলছে। সে আস্তে আস্তে ভাল হতে থাকে। কিন্তু আমার গায়ে “Wife of a Porn Addict.” লেবেলটা চিরতরে লেগে যায়।
তার আর আমার সম্পর্কের পবিত্রতা নষ্ট হয়ে গেছে। সেকি পর্ন তারকাদের সাথে আমার তুলনা করবে না? সেকি আমাকে আসলেই ভালবাসবে? সে কীভাবে আমাকে ভালবাসবে যেখানে আমাকে দেখলেই তার পর্নমুভির কথা মনে পড়ে?
বিয়ের পর কিছুদিন সব ভালোই চলছিল। একদিন আমি অফিসের মিটিং সেরে তাড়াতাড়ি বাসায় খাবার খেতে ফিরলাম। খাওয়া সেরে আমি তাকে বিদায় জানালাম। একটু পরে সে আমাকে মেইল করল যে তার আবার পর্ন দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু সে দেখবে কিনা বুঝতে পারছে না। আমি বুঝতে পারলাম , এটা এমন এক আসক্তি, যা থেকে সে কখনোওই ও মুক্তি পায় নি । এরপর থেকে আমি খুব ভয়ে থাকি, খুব সতর্ক থাকে।
আমি বুঝতে পারলাম অন্তরঙ্গতাকে আমি শুধু তাকে আমার কাছে বেধে রাখার জন্য ব্যবহার করি। আমার ইচ্ছা না থাকলেও এটা করতে হয়। এরপর তার যৌন অক্ষমতা দেখা দিতে লাগল। আমার ভয় হয় যে আমি তাকে পর্নোগ্রাফির জগতে হারিয়ে ফেলব।
আমি ডায়েট করা শুরু করেছি। এখন আমার নিজের শরীর কে আমি নিজেই ঘৃণা করি। আমি এখন সবসময় তার প্রতি সন্ধিহান। আমি তার অতীতের জন্য ক্ষুব্ধ। কিন্তু সে আমাকে খুশি রাখতে সচেষ্ট।তাই আমি এখন কাউন্সেলিংএ যাই কীভাবে তাকে মাফ করবো তা বুঝতে। আমি যাই করি না কেন,সে হয়ত আর ভালো হবে না। আমার সাথে সে কখনোই সুখী হবে না। আমি এসব মেনে নিয়েছি।
আমার স্বামী তার বড় ভাই ও বাবার মাধ্যমে খুব ছোটবেলাতে পর্নোগ্রাফির সঙ্গে পরিচিত হয়ে যায়। সে এর নেতিবাচক ফলাফল বোঝার বয়স হবার আগেই আসক্ত হয়েছে। আর আমি... আমি আমার মনে ভিতর অবিশ্বাস পুষে নিয়ে চলেছি। প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছি এই অচেনা পৃথিবীর সাথে মানিয়ে নেবার। পর্নের বেড়াজালে আমরা আজ আবদ্ধ।
(লস্ট মডেস্টি অনুবাদ টিম কর্তৃক অনূদিত)
আসলে ই কস্ট
ReplyDelete