বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।
লক্ষ লক্ষ ছেলেদের জীবন নষ্টের জন্য আমি,আপনি আমরা সবাই দায়ী। আমরা কি এই ছেলেগুলোর জন্য এমন একটা সমাজ তৈরি করিনি যার সবকিছুই যৌনতাকে উস্কে দেয়? প্রথম আলো যখন একজন ‘বিশেষ’ পর্নস্টারের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করে এই দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয় তখন কি আমরা চুপ করে থাকিনি? খোঁজ নিয়ে দেখেন এই বিশেষ পর্নস্টারের নাম জানার পর কতো হাজার হাজার ছেলে পর্ন আসক্ত হয়েছে? নকশা আর বিনোদন পাতায় প্রতিনিয়ত মেয়েদের কাপড় খুলতে শেখানো হচ্ছে তারপরেও তো আমরা চুপ করে আছি। এই সেই প্রথম আলো যারা আলিমদের নামে মিথ্যাচার করে চলেছে, এই সেই প্রথম আলো যারা রানাপ্লাজার ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে মেরিল- প্রথম আলো পুরস্কারের আয়োজন করেছিল ২০১৩ সালে; পুরো দেশ ও জাতি যখন গভীর শোকে নিমজ্জিত তখন প্রথম আলো গং তথাকথিত জানোয়ার সেলিব্রেটিদের নিয়ে হাসি তামাশা আর রং ঢঙ্গে নেমেছিল,রানা প্লাজার হতাহতদের জন্য ত্রান গঠনের খেলা খেলে কুমিরের মায়া কান্না কেঁদেছিল। ২০১৭ সালেও হাওরবাসীর কান্নাকে উপেক্ষা করে এরা মেরিল-প্রথম আলো পুরুষ্কারের আয়োজন করলো। খুবই সস্তা রসিকতার মাধ্যমে লিটনের ফ্ল্যাটে যাওয়াকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হল। আমরা এই প্রথম আলোর বিরুদ্ধে চুপ। প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদকে আমরা ওহী’র চেয়েও বেশী বিশ্বাস করি।
প্রথম আলো,কালের কন্ঠ,বাংলাদেশ প্রতিদিন,চ্যানেলআই এই টাইপের মিডিয়াগুলো শয়তানের সাক্ষাৎ চ্যালা। এরাই এদেশে লিটনের ফ্ল্যাটের আবিষ্কারক ফারুকীগংকে প্রমোট করেছে,এরাই ভালোবাসা দিবসকে প্রমোট করেছে,এরাই ‘সুন্দরী প্রতিযোগিতার’ নামে মেয়েদেরকে কর্পোরেট প্রস্টিটিউট বানাচ্ছে। ফিচারের পর ফিচার লিখে কলামের পর কলাম জুড়ে এরা ক্রমাগত তরুণ তরুণীদের ব্রেইন ওয়াশ করে গিয়েছে এবং এখনো যাচ্ছে; জিন্স,টিশার্ট পড়ে ‘জাস্টফ্রেন্ডদের’ সঙ্গে ঢলাঢলি করাকে এরা নাম দিয়েছে ‘নারী স্বাধীনতা’। মাঝে মাঝে হাসিই পায়, শুধু মাত্র জিন্স টিশার্ট পড়ে ঢলাঢলি করলেই নারীরা স্বাধীন হয়ে যাবে! স্বাধীনতা এতোটাই সঙ্কীর্ণ?
.
লক্ষ লক্ষ ছেলে জীবন নষ্টের জন্য আমি,আপনি আমরা সবাই দায়ী। বাঙ্গালী সংস্কৃতির মোড়ল সেজে অনেককেই পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেই প্রতিনিয়ত অথচ বাঙ্গালী সংস্কৃতির সঙ্গে কোনভাবেই যায় না এমন বলিউডের আইটেম সং সাদরে গ্রহণ করেছি আমরা। বিদেশী টাকায় চলা এনজিওগুলো আমাদের দেশে সমকামিতার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে আমরা চুপ করে আছি । জুলহাস মান্নান কোং যখন ডলার খেয়ে এদেশে সমকামিতার প্রচার করেছিল তখনো আমরা চুপ করে ছিলাম, জুলহাস মান্নান মারা যাবার পরে যখন মিডিয়াতে বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে উপস্থাপন করা হলো তখনো আমরা চুপ করে ছিলাম । সব হজম করে ফেলেছি । আমাদের হজমী শক্তি মাশা’আল্লাহ্ অসাধারণ।
.
একজন তরুণ তরুনীর নষ্ট হবার জন্য পারফেক্ট একটা গ্রাউন্ড তৈরি করে রেখেছি আমরা। বিলবোর্ড,ম্যাগাজিন,বিজ্ঞাপন,নাটক,সিনেমা সব জায়গাতেই নারীদেহের উগ্র প্রদর্শনী দেখে একজন টগবগে যুবক কিভাবে নিজেকে স্থির রাখতে পারবে? হয়তো বিয়ে তাকে স্থির রাখতো, কিন্তু এই বিয়েকে আমরা কতোইনা কঠিন করে ফেলেছি। আরেকদল বুদ্ধিজীবী আর এনজিও ওয়ালাদের বাল্যবিবাহ নিয়ে ‘হুক্কা হুয়া’ আমরা মেনে নিয়েছি। নিজের ইচ্ছায় প্রাপ্তবয়স্ক ( তাদের ভাষায় অবশ্য নাদান দুধের বাচ্চা) দুইজন ছেলে মেয়ে বিয়ে করতে চাইলে তারা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে, কিন্ত এই একই বয়সী দুধের বাচ্চাদের এরা লিটনের ফ্ল্যাটে যাওয়া শেখায়,সেক্স এডুকেশানের নামে শেখায় যৌনতার কলাকৌশল। আমরা এদের উৎপাতও মুখ বুঝে মেনে নিয়েছি।
.
কফিনের শেষ পেরেকটা ঠোকা হয়ে গিয়েছে তখন যখন মিডিয়া মগজ ধোলাই করে আমাদের জঙ্গি চিনিয়েছে।
আপনার সন্তান কি হুট করে নামায পড়া শুরু করেছে? দাড়ী কামানো বন্ধ করে দিয়েছে ?
আপনার সন্তানের কি বিপরীত লিঙ্গের কোন বন্ধু নেই? আপনার সন্তান কি প্রেম করেনা ?
আপনার সন্তান কি গান শোনে না ? মুভি সিরিয়াল দেখে না ?
এর উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তারমানে আপনার সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে, আপনার ছেলে/মেয়ে জঙ্গি বা পোটেনশিয়াল জঙ্গি!!
এই টাইপের লিখা সাংবাদিক নামক জানোয়ারেরা আমাদের পাতে তুলে দিয়েছে আর আমরা তা গিলে খেয়েছি। ডোনাল্ড ট্রাম্প হুদাই হুদাই সাংবাদিকদের এপর এতো চ্যাতা না, যথেষ্ট কারণ আছে ।
গান না শুনলে জঙ্গি! মেয়ে বন্ধু না থাকলে জঙ্গি ! মাই ফুট!
.
মুসলমানের ছেলে হটাত তওবা করে যে আল্লাহ্র দিকে ফিরে আসবে তারো উপায় নেয় । তাকে জঙ্গি ট্যাগ খেতে হবে। এই জঙ্গি ফিল্টারে সব সাহাবী(রাঃ) আটকে যাবেন; তাঁদেরও কোন মেয়ে বন্ধু ছিলনা,তাঁরা মুভি সিরিয়ালও দেখতেন না।
.
ইসলামের অনুশাসন মেনে চলা তরুণ-তরুনীদেরকে পর্ন/মাস্টারবেশন থেকে দূরে রাখতো পারতো। কিন্তু আমরা তরুণ-তরুনীদের জন্য ইসলাম মেনে চলা এতোটাই কঠিন করে ফেলেছি বা ফেলছি যে ইসলাম মেনে চলা জলন্ত অঙ্গার হাতে নিয়ে থাকার মতোই কঠিন।
.
এতোসব প্রতিকূলতার মধ্যে পড়ে হরমোনের প্রেসারে কোন ছেলে যদি গভীর রাতে পর্ন দেখে মাস্টারবেট করে ফেলে তাহলে সে যেমন দোষী,আমরাও আমাদের এই সমাজটাও ঠিক ততোটাই দোষী। এই ছেলে যদি হাশরের ময়দানে আল্লাহ্র কাছে আমাদের বিরুদ্ধে বিচার চায় তাহলে আমাদের করার থাকবেন না কিছুই।
.
এভাবে আর কতোকাল চলবে ? কত ছেলের জীবন নষ্ট হলে আমাদের হুঁশ ফিরবে? আমরা কি দেখিনা সোনার এই দেশটাতে কি ব্যাপক হারে ধর্ষণের মাত্রা বেড়ে গেছে? ৩-৪ বছরের শিশুদেরকেও আজ রেহায় দেওয়া হচ্ছে না ?
.
একজন পর্ন আসক্তের দুঃখ,কষ্ট,বেদনা সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় কখনোই।
.
আমাদের আসলে সময় এসেছে নতুন করে চিন্তা করার। নতুন করে ভাবার। কেন এই দেশটাতে আজ এতো বেশী ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে? এদেশে ধর্ষণের হার বেড়ে যাবার জন্য কারা দায়ী? কারা এই দেশটাতে তরুণদের মধ্যে অস্লীলতার সয়লাব করে দিচ্ছে ? কোন কোন দেশ টাকা ঢালছে এই দেশে সমকামিতা প্রচারের জন্য? সেই টাকা গুলো কারা খাচ্ছে? কোন কোন দেশ আমাদের তরুণদের হাতে ফেন্সিডিল ধরিয়ে দিচ্ছে, ইয়াবার প্যাকেট তুলে দিচ্ছে? অপার সম্ভাবনাময় বাংলার তরুণদের তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে?
.
সময় এসেছে শত্রু চেনার।ভেবে বের করতে হবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি কারা- মাথামোটা আইএস জঙ্গীরা ? কোন দেশ? কোন আইডিওলোজি? কোন মীরজাফরের দল ?
.
হে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, হে সমাজের নেতারা, হে আমার পিতারা,হে আমার বড় ভাইয়েরা আর কতোকাল আপনারা উদাসীন হয়ে থাকবেন? এরা আপনাদেরই সন্তান,আপনাদেরই ছোটভাই, ছোটবোন। এই সাড়ে তিনহাত ভূমি এদেরও। আপনারা এদেরকে কেন এভাবে নির্বাসনে দিয়ে রেখেছেন? কেন আপনারা এদেরকে ভুলে আছেন? কি হয়ে গেল আপনাদের? কোন হতাশায় হারিয়ে গেলেন আপনারা ? কেন আপনারা আজ দেখেও দেখছেননা, আপনাদের সন্তানেরা আজ ‘দুধে-ভাতে’ নেই? আপনাদের সন্তানের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে মাদক ? আপনাদের ছোটভাইদের যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে পর্ণ,আইটেম সং এর মাধ্যমে। আপনাদের ছোটভাই, ছোটবোনদেরকে কিছু এনজিও,কিছু মীরজাফর সমকামিতার শিক্ষা দিচ্ছে, আপনাদের ছোটভাইদের বানানো হচ্ছে ধর্ষক,ছোটবোনদের হতে হচ্ছে ধর্ষিত?
.
কি হয়ে গেল আপনাদের? কেন আপনারা চুপ করে আছেন? সন্তানদের প্রতি,ভাইবোনদের প্রতি আপনাদের সকল ভালোবাসাই কি তবে কেবল মুখের ফাঁপা বুলি ? লোক দেখানো? আপনাদের সন্তান যখন ছোট ছিল, তখন তার আধো আধো বুলি,ফোকলা দাঁতের হাসি পৃথিবীর সকল সুখ আপনাদের পায়ের কাছে এনে দেয়নি? আপনাদের সন্তানের ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় আপনারা কি বহু রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেননি, সারাদিন উদায়স্ত পরিশ্রম করেননি? তবে আজ যখন আপনাদের কলিজার টুকরো সেই সন্তানদেরকে গলা টিপে টিপে মারছে একদল দাঁতালো শুয়োর,তখন কেন আপনারা চুপ করে আছেন? কেন? কেন?
.
কি হয়ে গেল আপনাদের? কোন হতাশায় হারিয়ে গেলেন আপনারা ? কেন আপনারা আজ দেখেও দেখছেননা? কেন আপনারা এইভাবে নির্বাসন দিয়ে রেখেছেন এদেরকে? এই সাড়ে তিনহাত ভূমি তো এদেরও!
পড়ুনঃ প্রথম পর্ব- https://goo.gl/BU4QxN
No comments:
Post a Comment