Sunday, May 14, 2017

সমকামিতা এবং হস্তমৈথুনের অভ্যাস আদিম মানুষের মধ্যে বিরল!!

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম। 

‘হস্তমৈথুন খুব সাধারণ একটা ব্যাপার’, ‘এটা সবাই করে’ ‘এটা এমন একটা যৌন কর্ম যা সৃষ্টির শুরু থেকে সবাই করে আসছে’ এই কথাগুলো বলে বর্তমান প্রজন্মকে হস্তমৈথুনের পক্ষে ব্রেইনওয়াশড করা হচ্ছে। যখন এই ভুল ধারণাগুলোর বিপরীতে যুক্তি দেখান হয় তখন এমন কিছু অর্ধশিক্ষিত এবং মিথ্যাবাদী লোক যারা নিজেদের যৌনবিশেষজ্ঞ দাবি করে এবং যাদের এই যৌন শিক্ষার ভিত্তিই হল ধর্ষণ এবং শিশুকাম, তারা তেড়েফুঁড়ে আসে। “হস্তমৈথুন একটি স্বাস্থ্যকর এবং স্বাভাবিক ব্যাপার” যারা এর বিরোধিতা করছে তাদেরকে নিয়ে উল্টো ব্যাঙ্গ করা হয় এবং তাদেরকে ধর্মান্ধ ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে।পর্ন বা হস্তমৈথুনের পক্ষে যতই বাগাড়ম্বরপূর্ণ যুক্তি দেয়া হোক না কেন বিজ্ঞান কিন্তু বিপরীত কথা বলছে। বিজ্ঞান বলছে হস্তমৈথুন কোনভাবেই সাধারণ কিংবা প্রাকৃতিক কোন ঘটনা হতে পারে না এবং এর স্বপক্ষে প্রমাণও হাজির করছে।

আকা নামক একদল শিকারি গোত্র যাদের কাছে পাশ্চাত্যের সেক্সুয়াল প্রোপাগান্ডা এখনও পৌঁছায়নি তাদের উপর চালানো জরিপের উপর ভিত্তি করে ২০১০ সালের অক্টোবরে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেই রিপোর্ট থেকে বেরিয়ে আসে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য। সেই রিপোর্টে বলা হয় – “আমরা তাদেরকে সমকামিতা এবং হস্তমৈথুন নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এবং আমরা বিস্মিত হয়েছি যে তাদের এ সম্বন্ধে কোন ধারনাই নেই। তাদের সমকামিতা এবং হস্তমৈথুনের কোন পরিভাষা নেই। তাই তাদেরকে বোঝাতেই কষ্ট হয়েছে। আমরা যখন তাদের বুঝাচ্ছিলাম তখন তারা হাসছিল। আমরা ভেবেছিলাম তারা বোধহয় প্রকৃতিগত ভাবে লজ্জাশীল। কিন্তু অস্বাভাবিক হলেও এটাই ওদের বৈশিষ্ট....।”

আকা এবং এঙ্গান্ডু গোত্র দুটির মধ্যে সমকামিতা (গে অথবা লেসবিয়ান) সম্পূর্ণ অপরিচিত। বিশেষ করে আকা গোত্রটিকে সমকামিতা সম্পর্কে বোঝাতে বেশি কষ্ট হয়েছে। তাদের নিজস্ব কোন পরিভাষা না থাকায় বারবার বলে সমকামিতা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে।


গবেষক দল যখন তাদেরকে বুঝাচ্ছিল তখন তারা সমকামিতা এবং হস্তমৈথুনের কথা শুনে হাসছিল।
সমকামিতার মত হস্তমৈথুন সম্পর্কেও তাদের ধারণা দিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তাদের কাছে ব্যাপারটি অস্বাভাবিক এবং তারা বলেছে যে কঙ্গো থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে হয়ত এর প্রচলন থাকতে পারে কিন্তু তাদের নিকট এটা অজানা। হস্তমৈথুনের জন্য তাদের নিজস্ব কোন পরিভাষাও নেই। আমরা তাদের পুরুষদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তারা বিয়ের পূর্বে হস্তমৈথুন করত কিনা কিন্তু তারা সেটাও করত না।

তাদের সবাই বলেছে যে বিয়ের পূর্বে তারা কখনই হস্তমৈথুন করেনি। কল্পনা করুন যে একদল পুরুষ কখনই বিয়ের পূর্বে কিংবা পরে হস্তমৈথুন করেনি!!

“জংগলের অধিবাসীদের মধ্যেও হস্তমৈথুন অপরিচিত। রবার্ট বেইলি (ব্যক্তিগত সংবাদদাতা) একটি প্রজনন উর্বরতা সমীক্ষার জন্য কঙ্গোর ইতুরি জঙ্গলের পুরুষদের থেকে বীর্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। আমরা তার অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছিলাম। তিনি বলেছেন যে পুরুষদের থেকে বীর্য সংগ্রহ করা খুবই কঠিন ছিল। কিভাবে হস্তমৈথুন করে বীর্যপাত করতে হয় তা তাদেরকে বোঝানো যাচ্ছিল না। খোলাখুলি ভাবে জিনিসটা তাদেরকে বলার পর মাত্র তিন থেকে চারটি বীর্য নমুনা তারা সংগ্রহ করতে পেরেছিল। কিন্তু সেই নমুনা গুলো ছিল আবার যোনী হতে নির্গত তরল মিশ্রিত।
খুব অবাক লাগছেগবেষকরা পুরুষদের বীর্য নমুনা নেয়ার জন্য তাদেরকে হস্তমৈথুন শেখান হল অথচ তারা স্ত্রী মিলনের মাধ্যমে বীর্যপাত করে সেই নমুনা জমা দিল। ওরাল সেক্স এবং পায়ুকাম এই কাজগুলো তাদের নিকট অজানা।

কারন এই ধরনের যৌনাচার প্রকৃতিগত নয়। পর্নএবং প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর মাধ্যমে এগুলো জনপ্রিয় বানানো হয়েছে।   

“কিন্তু মানুষ যতই পাশ্চাত্যের রাজনীতি এবং অর্থনীতির সাথে পরিচিত হবে বা জড়িয়ে পড়বে ততই তাদের সভ্যতাকে স্বাভাবিক মনে হবে। অথচ বিভিন্ন দেশ হতে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত যাচাই করে দেখা গেছে যে পাশ্চাত্যদের যৌনাচার অস্বাভাবিক এবং বিকৃত।”

যারা দাবি করে হস্তমৈথুন এবং অন্যান্য বিকৃত যৌনাচার স্বাভাবিক তাদের জন্য এই তথ্যবহুল গবেষণাটি একটি চপেটাঘাত। পাশ্চাত্যের দেশগুলো তাদের বিকৃত যৌনাচার এবং উগ্র যৌনতা নির্ভর একটা সভ্যতা বাকি বিশ্বের উপর চাপিয়ে দিতে চায়। ওবামা প্রশাসনজাতিসংঘকিন্সলে ইন্সিটিউট ইত্যাদির মাধ্যমে তারা আপনার দেশের মানুষকে বিকারগ্রস্ত করে রাখতে চায়।

“সমকামিতা এবং হস্তমৈথুন কর্মস্পৃহা কমিয়ে দেয় এবং তা কোনভাবেই একটি শিশুকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে না।”

“এই গোত্রগুলোর নারী ও পুরুষদের মধ্যে সমকামিতা এবং হস্তমৈথুনের অনুপস্থিতি আমাদের অবাক করেছে। বর্তমানের পাঠ্যবইগুলোতে বলা হচ্ছে উক্ত বিকৃত যৌনাচারগুলো স্বাভাবিক কিন্তু আকা এবং এঙ্গান্ডুর মানুষের যৌন অভ্যাসের সাথে এই ব্যাখ্যা মিলে না।”
বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে যেভাবে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের কারনসমকামিতাহস্তমৈথুন ইত্যাদি যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই প্রবন্ধটি সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।


  
পড়া যেতে পারে এই বইগুলোঃ

দেখা যেতে পারে এই ভিডিওগুলোঃ

মাস্টারবেশনের অপকারিতা জানতে পড়ুন এই লিখাগুলোঃ 
২)  চোরাবালি প্রথম পর্ব - http://bit.ly/2dzgf4I
৩) চোরাবালি দ্বিতীয় পর্ব - http://bit.ly/2diRZBJ
৪) চোরাবালি তৃতীয় পর্ব - http://bit.ly/2h4sMAb
৫) চোরাবালি চতুর্থ পর্ব - http://bit.ly/2hePUes
৬) চোরাবালি পঞ্চম পর্ব- https://goo.gl/pJtnxg
 ৭)  চোরাবালি ষষ্ঠ পর্ব- https://goo.gl/jlHULY

রেফারেন্সঃ https://goo.gl/l58VDg  

হৃদয়ের ঋণ (শেষ কিস্তি)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।

লক্ষ লক্ষ ছেলেদের জীবন নষ্টের জন্য আমি,আপনি আমরা সবাই দায়ী। আমরা কি এই ছেলেগুলোর জন্য এমন একটা সমাজ তৈরি করিনি যার সবকিছুই যৌনতাকে উস্কে দেয়? প্রথম আলো যখন একজন ‘বিশেষ’ পর্নস্টারের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করে এই দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয় তখন কি আমরা চুপ করে থাকিনি? খোঁজ নিয়ে দেখেন এই বিশেষ পর্নস্টারের নাম জানার পর  কতো হাজার হাজার ছেলে পর্ন আসক্ত হয়েছে? নকশা আর বিনোদন পাতায়  প্রতিনিয়ত মেয়েদের কাপড়  খুলতে শেখানো হচ্ছে তারপরেও তো আমরা চুপ করে আছি। এই সেই প্রথম আলো যারা আলিমদের নামে মিথ্যাচার করে চলেছে, এই সেই প্রথম আলো যারা রানাপ্লাজার ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে মেরিল- প্রথম আলো পুরস্কারের আয়োজন করেছিল ২০১৩ সালে; পুরো দেশ ও জাতি যখন গভীর শোকে নিমজ্জিত তখন প্রথম আলো গং তথাকথিত জানোয়ার সেলিব্রেটিদের নিয়ে হাসি তামাশা আর রং ঢঙ্গে নেমেছিল,রানা প্লাজার হতাহতদের জন্য ত্রান গঠনের খেলা খেলে কুমিরের মায়া কান্না কেঁদেছিল। ২০১৭ সালেও হাওরবাসীর কান্নাকে উপেক্ষা করে এরা মেরিল-প্রথম আলো পুরুষ্কারের আয়োজন করলো। খুবই সস্তা রসিকতার মাধ্যমে লিটনের ফ্ল্যাটে যাওয়াকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হল। আমরা এই প্রথম আলোর বিরুদ্ধে চুপ। প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদকে আমরা ওহী’র চেয়েও বেশী বিশ্বাস করি।


প্রথম আলো,কালের কন্ঠ,বাংলাদেশ প্রতিদিন,চ্যানেলআই এই টাইপের মিডিয়াগুলো শয়তানের সাক্ষাৎ চ্যালা। এরাই এদেশে  লিটনের ফ্ল্যাটের আবিষ্কারক  ফারুকীগংকে প্রমোট করেছে,এরাই ভালোবাসা দিবসকে প্রমোট করেছে,এরাই ‘সুন্দরী প্রতিযোগিতার’ নামে মেয়েদেরকে কর্পোরেট প্রস্টিটিউট বানাচ্ছে। ফিচারের পর ফিচার লিখে কলামের পর কলাম জুড়ে এরা ক্রমাগত তরুণ তরুণীদের ব্রেইন ওয়াশ করে গিয়েছে এবং এখনো যাচ্ছে; জিন্স,টিশার্ট পড়ে ‘জাস্টফ্রেন্ডদের’ সঙ্গে ঢলাঢলি করাকে এরা নাম দিয়েছে ‘নারী স্বাধীনতা’। মাঝে মাঝে হাসিই পায়, শুধু মাত্র জিন্স টিশার্ট পড়ে ঢলাঢলি করলেই নারীরা স্বাধীন হয়ে যাবে! স্বাধীনতা এতোটাই সঙ্কীর্ণ?
.
লক্ষ লক্ষ ছেলে জীবন নষ্টের জন্য আমি,আপনি আমরা সবাই দায়ী। বাঙ্গালী সংস্কৃতির মোড়ল সেজে অনেককেই পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেই প্রতিনিয়ত অথচ বাঙ্গালী সংস্কৃতির সঙ্গে কোনভাবেই যায় না এমন বলিউডের আইটেম সং সাদরে গ্রহণ করেছি আমরা। বিদেশী টাকায় চলা এনজিওগুলো আমাদের দেশে সমকামিতার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে আমরা  চুপ করে আছি জুলহাস মান্নান কোং যখন ডলার খেয়ে এদেশে সমকামিতার প্রচার করেছিল তখনো আমরা চুপ করে ছিলাম, জুলহাস মান্নান মারা যাবার পরে  যখন মিডিয়াতে বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে উপস্থাপন করা হলো তখনো আমরা চুপ করে ছিলাম । সব হজম করে ফেলেছি । আমাদের হজমী শক্তি মাশা’আল্লাহ্‌ অসাধারণ।   
.
একজন তরুণ তরুনীর নষ্ট হবার জন্য পারফেক্ট একটা গ্রাউন্ড তৈরি করে রেখেছি আমরা। বিলবোর্ড,ম্যাগাজিন,বিজ্ঞাপন,নাটক,সিনেমা সব জায়গাতেই নারীদেহের উগ্র প্রদর্শনী দেখে একজন টগবগে যুবক কিভাবে নিজেকে স্থির রাখতে পারবে? হয়তো  বিয়ে তাকে স্থির রাখতো, কিন্তু এই বিয়েকে আমরা কতোইনা কঠিন করে ফেলেছি। আরেকদল বুদ্ধিজীবী আর এনজিও ওয়ালাদের বাল্যবিবাহ নিয়ে ‘হুক্কা হুয়া’ আমরা মেনে নিয়েছি। নিজের ইচ্ছায় প্রাপ্তবয়স্ক ( তাদের ভাষায় অবশ্য নাদান দুধের বাচ্চা)  দুইজন  ছেলে মেয়ে  বিয়ে করতে চাইলে তারা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে, কিন্ত এই একই বয়সী দুধের বাচ্চাদের  এরা  লিটনের ফ্ল্যাটে যাওয়া শেখায়,সেক্স এডুকেশানের নামে শেখায় যৌনতার কলাকৌশল। আমরা এদের উৎপাতও মুখ বুঝে মেনে নিয়েছি   
.
কফিনের শেষ পেরেকটা ঠোকা হয়ে গিয়েছে তখন যখন মিডিয়া মগজ ধোলাই করে আমাদের জঙ্গি চিনিয়েছে।
আপনার সন্তান কি হুট করে নামায পড়া শুরু করেছে? দাড়ী কামানো বন্ধ করে দিয়েছে ?
আপনার সন্তানের কি বিপরীত লিঙ্গের কোন বন্ধু নেই? আপনার সন্তান কি প্রেম করেনা ? 
আপনার সন্তান কি গান শোনে না ? মুভি সিরিয়াল দেখে না ?
এর উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তারমানে আপনার সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে, আপনার ছেলে/মেয়ে জঙ্গি বা পোটেনশিয়াল জঙ্গি!!
এই টাইপের লিখা সাংবাদিক নামক জানোয়ারেরা আমাদের পাতে তুলে দিয়েছে আর আমরা তা গিলে খেয়েছি। ডোনাল্ড ট্রাম্প হুদাই হুদাই সাংবাদিকদের এপর এতো চ্যাতা না, যথেষ্ট কারণ আছে ।
গান না শুনলে জঙ্গি! মেয়ে বন্ধু না থাকলে জঙ্গি ! মাই ফুট!
.
মুসলমানের ছেলে হটাত তওবা করে যে আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আসবে তারো উপায় নেয় । তাকে জঙ্গি ট্যাগ খেতে হবে। এই জঙ্গি ফিল্টারে সব সাহাবী(রাঃ) আটকে যাবেন; তাঁদেরও কোন মেয়ে বন্ধু ছিলনা,তাঁরা মুভি সিরিয়ালও দেখতেন না।
.
ইসলামের অনুশাসন মেনে চলা তরুণ-তরুনীদেরকে পর্ন/মাস্টারবেশন থেকে দূরে রাখতো পারতো।  কিন্তু আমরা তরুণ-তরুনীদের জন্য ইসলাম মেনে চলা এতোটাই কঠিন করে ফেলেছি বা ফেলছি যে ইসলাম মেনে চলা জলন্ত অঙ্গার হাতে নিয়ে থাকার মতোই কঠিন। 
এতোসব প্রতিকূলতার মধ্যে পড়ে হরমোনের প্রেসারে কোন ছেলে যদি গভীর রাতে পর্ন দেখে মাস্টারবেট করে ফেলে তাহলে সে যেমন দোষী,আমরাও আমাদের এই সমাজটাও ঠিক ততোটাই দোষী। এই ছেলে যদি হাশরের ময়দানে আল্লাহ্‌র কাছে আমাদের বিরুদ্ধে বিচার চায় তাহলে আমাদের করার থাকবেন না কিছুই।
.
এভাবে আর কতোকাল চলবে ? কত ছেলের জীবন নষ্ট হলে আমাদের হুঁশ ফিরবে? আমরা কি দেখিনা সোনার এই দেশটাতে কি ব্যাপক হারে ধর্ষণের মাত্রা বেড়ে গেছে? ৩-৪ বছরের শিশুদেরকেও আজ রেহায়  দেওয়া হচ্ছে না ?
.                               
একজন পর্ন আসক্তের দুঃখ,কষ্ট,বেদনা সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষের পক্ষে  বোঝা সম্ভব নয় কখনোই।
.
আমাদের আসলে সময় এসেছে নতুন করে চিন্তা করার। নতুন করে ভাবার কেন এই দেশটাতে আজ এতো বেশী ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে? এদেশে ধর্ষণের হার বেড়ে যাবার জন্য কারা দায়ী? কারা এই দেশটাতে তরুণদের মধ্যে অস্লীলতার সয়লাব করে দিচ্ছে ? কোন কোন দেশ টাকা ঢালছে এই দেশে সমকামিতা প্রচারের জন্য? সেই টাকা গুলো কারা খাচ্ছে? কোন কোন দেশ আমাদের তরুণদের হাতে ফেন্সিডিল ধরিয়ে দিচ্ছে, ইয়াবার প্যাকেট তুলে দিচ্ছে? অপার সম্ভাবনাময় বাংলার তরুণদের তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে?
.
সময় এসেছে শত্রু চেনার।ভেবে বের করতে হবে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি কারা- মাথামোটা আইএস জঙ্গীরা ? কোন দেশ? কোন আইডিওলোজি? কোন মীরজাফরের দল ?
.
হে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, হে সমাজের নেতারা, হে আমার পিতারা,হে আমার বড় ভাইয়েরা  আর কতোকাল আপনারা উদাসীন হয়ে থাকবেন? এরা আপনাদেরই সন্তান,আপনাদেরই ছোটভাই, ছোটবোন। এই সাড়ে তিনহাত ভূমি এদেরও। আপনারা এদেরকে কেন এভাবে নির্বাসনে দিয়ে  রেখেছেন? কেন আপনারা এদেরকে ভুলে আছেন? কি হয়ে গেল আপনাদের? কোন হতাশায় হারিয়ে গেলেন আপনারা ? কেন আপনারা আজ দেখেও দেখছেননা, আপনাদের সন্তানেরা আজ ‘দুধে-ভাতে’ নেই? আপনাদের সন্তানের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে মাদক ? আপনাদের ছোটভাইদের যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে পর্ণ,আইটেম সং এর মাধ্যমে। আপনাদের ছোটভাই, ছোটবোনদেরকে কিছু এনজিও,কিছু মীরজাফর সমকামিতার শিক্ষা দিচ্ছে, আপনাদের ছোটভাইদের বানানো হচ্ছে ধর্ষক,ছোটবোনদের হতে হচ্ছে ধর্ষিত?              
.
কি হয়ে গেল আপনাদের? কেন আপনারা চুপ করে আছেন? সন্তানদের প্রতি,ভাইবোনদের প্রতি আপনাদের সকল ভালোবাসাই কি তবে কেবল মুখের ফাঁপা বুলি ? লোক দেখানো? আপনাদের সন্তান যখন ছোট ছিল, তখন তার আধো আধো বুলি,ফোকলা দাঁতের হাসি পৃথিবীর সকল সুখ আপনাদের পায়ের কাছে এনে দেয়নি? আপনাদের সন্তানের ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় আপনারা কি বহু রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেননি, সারাদিন উদায়স্ত পরিশ্রম করেননি? তবে আজ যখন আপনাদের কলিজার টুকরো সেই সন্তানদেরকে  গলা টিপে টিপে মারছে একদল দাঁতালো শুয়োর,তখন কেন আপনারা চুপ করে আছেন? কেন? কেন?              
.
কি হয়ে গেল আপনাদের? কোন হতাশায় হারিয়ে গেলেন আপনারা ? কেন আপনারা আজ দেখেও দেখছেননা? কেন আপনারা এইভাবে নির্বাসন দিয়ে রেখেছেন এদেরকে? এই সাড়ে তিনহাত ভূমি তো এদেরও!

পড়ুনঃ প্রথম পর্ব- https://goo.gl/BU4QxN

Monday, May 8, 2017

হৃদয়ের ঋণ (প্রথম কিস্তি)


বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।

ছোটবেলা থেকেই খাম খেয়ালী ছিলাম।ভার্সিটিতে ওঠার পর  খামখেয়ালীপনা আরো বেড়েছিল। খামখেয়ালীপনার তোড়ে জীবনটা হয়ে গিয়েছিল  একেবারেই ছন্নছাড়া। প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট মোটামুটি হয়েছিল। পরের সেমিস্টারের রেজাল্ট খারাপ হল খুব।
ধাক্কা খেলাম একটা।

সমাজটাকে বদলে দেওয়ার কথা বলতো,মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেম গড়ার কথা বলতো এমন একটা সংগঠনে স্বেচ্ছাশ্রম দিতাম তখন। গাধার মতো খাটতাম, বাড়ি ফিরতে রাত হতো, প্রায় প্রতিদিন বাবা মার বকুনি খেতে হতো। দ্বিতীয় সেমিস্টার শেষে অবাক হয়ে দেখলাম ঘুনে ধরা সমাজ পরিবর্তনের কথা বলে যারা,তাদের অন্তরেই অনেক আগে ঘুন ধরেছে। মুক্তিযুদ্ধ এদের কাছে স্রেফ ব্যাবসার প্রোডাক্ট,আর কিছুনা।
ধাক্কা খেলাম আরেকটা।

তৃতীয় এবং শেষ ধাক্কাটা খেলাম প্রায় একই সময়ে । এটাই  ছিল সবচেয়ে বড় ধাক্কা। সে অনেক কথা, অন্য কোথাও অন্য একদিন বলব ইনশা আল্লাহ্‌।

এখন পেছনে ফিরে দেখলে,সেই দিনগুলোর কথা ভাবলে  অটোমেটিক বেশ বড়সড় একটা আলহামদুলিল্লাহ্‌ চলে  আসে অন্তর থেকে। সেই সময়,সেই ধাক্কাগুলো আমার খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। সেই ধাক্কাগুলো না খেলে হয়তো আর প্রত্যাবর্তন করা হতো হতোনা আমার রবের দিকে। হেমন্ত আর মান্নাদে শুনে রুপালী আগুন ঝরা অসংখ্য নক্ষত্রের রাত কাটিয়ে দেওয়া আমার হয়তো কোনদিন সুযোগ হতোনা শেষ রাতে উঠে রবের সামনে নতমুখে দাঁড়ানোর।
   
সেই সন্ধ্যাটার কথা কোনদিন ভুলতে পারবোনা । জানুয়ারীর ৩ তারিখ ছিল বোধহয়। মাগরিবের সালাতের পর মসজিদে বসে ছিলাম একরাশ হতাশা নিয়ে। জীবনের হিসেব না মেলা ঘটনাগুলো একে একে আসছিল দুঃখের পসরা সাজিয়ে। ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল। হুট করে অন্তরের ভেতর থেকে কে জানি বললো,‘ ফিরে আয়, এখনো সময় আছে ফিরে আয় তোর রবের কাছে, আত্মসমর্পণ কর তোর রবের কাছে পরিপূর্ণভাবে। সিজদায় পড়ে গেলাম। তওবা  করলাম। অশ্রুর সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভেতর জমাট বাঁধা দুঃখ কষ্টগুলোও বের হয়ে গেল। শান্তি পেলাম, অন্যরকম এক শান্তি,যার বর্ণনা দেওয়ার ক্ষমতা নেই আমার

জীবনটা সুস্থির হতে শুরু করলেও একাডেমিক লাইফ নিয়ে ছিলাম চরম হতাশায়। এই সময় আল্লাহ্‌ সাহায্য পাঠালেন রুমমেট দুইজনের মাধ্যমে। একরুমমেটের এক দুপুরে বলা অগোছালো কিছু কথাবার্তা আমার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনলো অনেকটাই। পরের তিনটা বছর প্রত্যেকটা পরীক্ষার আগে রুমমেট দুইজন আমাকে পড়া বুঝিয়ে দিত, নোট করে দিত। ক্লাসে শেষ বেঞ্চগুলোতে বসে আমি আরামসে ঘুম দিতাম বা গল্পের বই পড়তাম কারণ আমি জানতাম আমার রুমমেট মনযোগ দিয়ে ক্লাস করছে। পাস করা অনেক কষ্টকর হয়ে যেত আমার জন্য যদি আমার এই রুমমেট দুইজন না থাকতো। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে জান্নাতেও একত্রিত করুক।


মানুষ যখন খুব বিপদে পড়ে,দুঃখ দুর্দশা,হতাশা আর গ্লানি যখন মানুষকে ঘিরে ধরে তখন একা একা তার পক্ষে লড়াই করে টিকে থাকা অসম্ভব রকমের কঠিন হয়ে পড়ে। তখন তার ভীষণ ভীষণ প্রয়োজন পড়ে কিছু হৃদয়ের ঋণের,দুটো সহানুভূতি আর উৎসাহের কথা,কিছু সান্ত্বনা, কিছু সাহস যোগানো মানুষের। একা একা মানুষের পক্ষে জীবনযুদ্ধ কতসময় ধরেই বা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব? ইসলাম এইজন্যেই একা একা থাকার চেয়ে জামাআত বদ্ধ হয়ে থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। দলবদ্ধ হয়ে থাকলেই না শয়তানের বিরুদ্ধে এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুলের (সাঃ) শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াইটা জুতসই হবে।

আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশী ভুল বোঝা হয় বোধহয় পর্ন/মাস্টারবেশনে আসক্তদেরকে।এই ছেলেদের দুঃখ-কষ্ট আর দীর্ঘশ্বাসগুলো এই সমাজ কোনদিন বোঝেনি,বোঝার চেষ্টাও করেনি। পর্ন/মাস্টারবেশন আসক্তির ভয়াবহতা  অনুভব করতে পারেন না বেশীরভাগ মানুষই। এটা যে কি গভীর এক অসুখ, এই আসক্তি যে কোকেন বা হিরোইন আসক্তির মতোই ক্ষতিকর তা কয়জন মানুষ জানেন? কয়জন মানুষই’বা উপলব্ধি করতে পারেন একজন পর্ন/মাস্টারবেশনে আসক্ত ছেলের অবসাদ আর গ্লানির গভীরতা? 

পর্ন/মাস্টারবেশন আসক্তি এই ছেলেগুলোর শরীর ভেঙ্গে চুরে দেয়, যৌন শক্তি ধ্বংস করে দেয়, আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করে দেয়,আত্মিক শূন্যতা সৃষ্টি করে,জীবন এদের কাছে নরকতুল্য মনে হয়, এই ছেলেগুলো নিজেদেরকে প্রচন্ড ঘৃণা করে। এদের অনেকের পক্ষেই একা একা সম্ভব হয়না পর্ন/মাস্টারবেশন আসক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার। প্রয়োজন হয় কিছু হৃদয়ের ঋণের। মানুষের সাহায্য সহযোগিতা,সহানুভূতির।

আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পর্ন/মাস্টারবেশন আসক্তি প্রবেশ করলেও এখন পর্যন্ত এই সমাজে এটাকে ট্যাবু করে রাখা হয়েছে। খোলাখুলি এটা নিয়ে তেমন কেউ কথা বলেনা, যারা কথা বলে অনেকসময়ই তাদেরকে একটু অন্য চোখে দেখা হয়, ঠাট্টা তামাশা করা হয়। একজন পর্নআসক্ত ছেলে সাহায্যের জন্য অন্য কারো কাছে যাবে,তার  অন্ধকার,গোপন জগতের কষ্টগুলোর কথা  কারো সঙ্গে শেয়ার করবে এটা এই সমাজের বাস্তবতায়  খুবই কঠিন। এতোটাই কঠিন যে এরচেয়ে পর্ন আসক্তরা   একা একা পর্নআসক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করাটা সুবিধাজনক মনে করে। অথচ একা একা লড়াই করে অন্য কারো সাহায্য না নিয়ে পর্ন/মাস্টারবেশন আসক্তি থেকে মুক্ত হয়েছে এমন নজির খুবই কম।

কোন গাঁজাখোর বা কোন বোতলবাজ যখন স্বেচ্ছায় তার পরিবারের কাছে যেয়ে বলে,‘আমি ভালো হয়ে যেতে চাই, এই নেশা ছাড়তে চাই’ তখন পরিবার,সমাজ তাকে খুব সাধুবাদ জানায়, হাজার হাজার টাকা খরচ করে তাকে কাউন্সেলিং করায়,মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যায়। অথচ পর্ন/মাস্টারবেশন আসক্তি এই নেশাগুলোর চেয়েও অনেক অনেকগুন ভয়ংকর। জীবন নিয়ে অতিষ্ঠ হবার পরেই কেবল একজন পর্ন আসক্ত ছেলে  লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে, শত দ্বিধাদ্বন্দে ভোগার পরেও পরিবার বা কাছের কোন মানুষের  নিকট সাহায্যের জন্য যায়। যখন তার খুব বেশি প্রয়োজন হয় হৃদয়ের ঋন আর সহানুভূতির ঠিক তখন পরিবার,সমাজ তাকে দূরে ঠেলে দেয় । একনিমিষেই এই অসহায় ছেলেগুলোর পৃথিবীর সব রং নিভে যায়। বাবা মা ভাবেন, ‘ছি!ছি! আমার ছেলে কীভাবে এতোটা খারাপ হয়ে গেল!’  যেই সমাজের মানুষজন ‘গুডবয়’ ট্যাগ দিয়েছিল এই ছেলেদেরকে,সেই সমাজের মানুষজনের চোখেই এই ছেলেগুলো ‘লুইচ্চা’ হয়ে যায়।

এই সমাজে লুইচ্চামির ডেফিনেশানটা আলাদা। গভীর রাতে গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ফোনালাপ  লুইচ্চামি না, ফুটপাতে জাস্ট ফ্রেন্ডদের মধ্যে ঢলাঢলির সময় এই সমাজ চুপ করে থাকে;এইগুলা লুইচ্চামি না। ঈদ,পুজা,একুশে ফেব্রুয়ারী, সহ সব উৎসবের দিনকে ভ্যালেন্টাইন ডে বানিয়ে ফেলে লিটনের ফ্ল্যাটে যাওয়াও লুইচ্চামি না। এইগুলা বরং স্বাভাবিক।  বয়সের দোষ।         

পাপ থেকে দূরে সরে থাকার জন্য সাহায্য চাওয়াটা শুধু লুইচ্চামি! 
হায়রে সমাজ!
হায়রে এই সমাজের মানুষ!


(আগামী পর্বে সমাপ্য ইনশা আল্লাহ্‌......) 

পড়ুনঃ শেষ পর্ব https://goo.gl/3sKvlu

Thursday, May 4, 2017

কুড়ানো মুক্তো (পঞ্চম পর্ব )

 বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।

মানুষ যে কয়টা ফিতরাত নিয়ে জন্মায় তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ফিতরাত হলো যৌনতা। মানুষের শারীরিক এবং মানসিক যৌন চাহিদা রয়েছে এবং এটা এমন এক চাহিদা যার কোন অলটারনেটিভ নেই, তাই মানুষ স্বাভাবিকভাবেই এই চাহিদা চরতার্থ করার প্রয়াস পায়, বৈধ উপায়ে না পারলে অবৈধ উপায়ে। এখন কেউ যদি বলে সে সারাদিন অশ্লীল ছবি দেখছে, পর্ণ দেখছে, বান্ধবীকে সাথে নিয়ে হাটে- মাঠে- ঘাটে, লিটনের ফ্ল্যাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু এটা তার মধ্যে কোন অনুভূতিই তৈরী করছে না তাহলে হয় সে মিথ্যে বলছে না হয় তার মেডিক্যাল সমস্যা আছে। 
.
.
যারা আজকের আধুনিক সভ্য মানুষের আদি পিতামাতারা জংলি হয়ে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতো বলে গাঁজাখুরি থিউরি দিয়ে থাকে তারাও নিজেদের ইজ্জতের বিষয়ে অল্পবিস্তর সচেতন। তাই কিনা তারা অন্তত এতটুকু বলে আদিম মানুষ বনে জঙ্গলে ল্যাংটো হয়ে ঘুরে বেড়াতো না, তারা পশুর চামড়া, ঘাস, লতাপাতা দিয়ে নিজেদের লজ্জাস্থান ঢেকে রাখতো, তারপর তাদের থিওরিতে নীতিবাক্য হিসেবে কিছু টীকা থাকে যেমন, মানুষ প্রাকৃতিক ভাবেই সমাজবদ্ধ, লজ্জাশীলতা সেটা আমাদের আদিম যুগ থেকেই মানুষের মধ্যে বাই বর্ন ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব আমরা আমাদের স্কুলের বইতে পড়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে যে মানুষ দাবি করে এরকম একটা জংলী পূর্বপুরুষদের আদিমতা চাপিয়ে তারা এখন আধুনিক, সভ্য হয়েছে সেই তারাই এখন পোশাক আশাকে, চালচলনে, ভাবাদর্শে সেই আদিমতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। 


.
দুর্ভাগ্যবশত সেদিন একটা আর্টিকেল পড়ছিলাম। আর্টিকেলটা যে টপিক নিয়ে হবে ভেবেছিলাম মূলত সেই টপিকে ছিল না তাই কিছুদূর গিয়েই অফ করতে হল। আর্টিকেলটা ছিল একটা কথিত কনজার্ভেটিভ মুসলিম ফ্যামিলিতে জন্ম নেওয়া একজন তরুরী তার মা বাবা, সমাজকে ফাঁকি দিয়ে কি করে ডজনেরও বেশী লোকের সাথে যৌনকর্ম সম্পন্ন করেছে তার খুঁটিনাটি। লেখাটা সেই তরুনী নিজেই লিখেছে এবং বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পত্রিকায় সেটা ছাপা হয়েছে, টুইটারে সেই আর্টিকেল নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে, এবং মাঝখান দিয়ে সেই তরুণী এরকম একটা অসভ্য কাজ করেও সো কলড সভ্য মানুষের আধুনিক দুনিয়াতে একজন সাহসী, উদারপন্থী নারী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। লজ্জাশীলতা আদিম যুগ থেকেই মানুষের মধ্যে ছিল এই থিউরিতে বিশ্বাস করা বিজ্ঞানমনস্ক মানুষেরা আজ লজ্জাহীনতা, যৌনতা, ব্যভিচারের গল্প বলে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য। তসলিমা নাসরিনরা দুই পয়সার বই বিক্রির জন্য নিজের, স্বামীর, মা বাপের, চাচা কাকু চৌদ্দ গোষ্ঠীর আকাম কুকামের ফিরিস্তি বর্ণনা করে যায় নির্দ্বিধায়। অমুক দল বিশ্বকাপ জিতলে তমুক বিবস্ত্র হবেন, বলিউড মাতাচ্ছেন অমুক পর্ণস্টার এসব আজ আমাদের পত্রিকার শিরোনাম হয়। পর্ণস্টারদের নামে বায়ান্ন হাজার টাকা দামে ঈদের পোশাক বিক্রি হয় এই আমাদের মুসলিম দেশে। আর আমাদের বাবা মায়েরাই সেসব পোশাক কিনে দেন তাদের মেয়েদের, জাতে তোলার জন্য, আধুনিক বানানোর জন্য। একটা রিপোর্ট বলছে মাঝে মাঝে তারকারা ইচ্ছে করেই নিজেদের যৌনকর্মের ভিডিও লিক করেন, শুধুমাত্র বিখ্যাত হওয়ার জন্য, মানুষের কাছে পরিচিত পাওয়ার জন্য, আলোচনায় থেকে তাদের আপকামিং মুভির কাটতি বাড়ানোর জন্য! 
.
সামরিক আগ্রাসনের চেয়েও মুসলিম একটা জাতিকে ধ্বংস করার জন্য কাফেররা যেসব উপকরণ ব্যবহার করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হল অবাধ যৌনতা, অশ্লীলতা। যৌনতা আর অশ্লীলতার এই নব্য জাহিলিয়াত ১৪০০ বছর আগের জাহিলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। সেই সময়ের জাহেলী যুগে মুশরিকরা বিবস্ত্র হয়ে কাবাঘর তাওয়াফ করত কারণ তারা বলত যে কাপড় পরিধান করে তারা আল্লাহর অবাধ্যতা করে সেই কাপড় পরিধান করে আল্লাহর ঘর তাওয়াফ তারা করতে পারবে না। কিন্তু সেই জাহিলিয়াত অজ্ঞতার কারণে ছিল, আজকের কু প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জাহিলিয়াত ছিল না। বিবস্ত্র হলেও মহিলারা তখন রাতের অন্ধকারে তাওাফ করত আর কবিতা আবৃত্তি করত, “আজ শরীরের কিয়দংশ অথবা পুরো শরীর বিবস্ত্র হয়ে যাবে। কিন্তু যে অংশ বিবস্ত্র হবে তা আমি পরপুরুষের জন্য বৈধ করে দিব না মক্কা বিজয়ের পর আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বায়াত দিতে আসলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম কুরআনের আয়াত পাঠ করলেন, 
.

হে নবী, ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের শপথ করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না…” [সূরা মুমতাহিনাঃ ১২] 
.
তখন সাথে সাথে হিন্দ বেশ বিস্ময়ের সাথে জিজ্ঞেস করল ইয়া রাসূলুল্লাহ! একজন স্বাধীন নারী কি যিনা করতে পারে? তারা মুশরিক ছিল, অজ্ঞ ছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে আখলাক ছিল, হায়া ছিল, শালীনতা ছিল। আর আজকের তথাকথিত সভ্যতার উৎকর্ষতার যুগে স্বাধীনতা আর উদারপন্থার মানে হল বেহায়া হওয়া, নির্লজ্জ হওয়া, যতটা পারা যায়! 
.
শয়তান চায় আপনি নির্লজ্জ হোন, শয়তানের দোসর কাফের মুশরিকরাও চায় আপনি নির্লজ্জ হোন। কারণ তারা জানে সামরিক আগ্রাসন কিছু মানুষকে হত্যা করতে পারে, বাড়িঘর ধন সম্পদ ধ্বংস করতে পারে কিন্তু মানুষের শরীরের ভেতর যে অন্তর সেটা সামরিক শক্তি দিয়ে ধ্বংস করা যায় না। তবে হ্যাঁ সেটা খুব ধীরে ধীরে কলুষিত করা যায়, স্লো পয়জনিং করে অন্তরটাকে মেরে ফেলা যায়, পাথরের মত শক্ত করে দেওয়া যায়। আর এই কাজে সবচেয়ে ফলপ্রসূ হল অশ্লীলতা, যৌনতার নোংরামি। এটা একদিকে মানুষকে নৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয় অন্যদিকে এমন এক অন্তর তৈরি করে যা আল্লাহর সাথে কোনভাবেই কানেক্টেড হতে পারে না। আল্লাহর কিতাব শুনে সেই অন্তর থাকে নির্লিপ্ত, নিথর। কারণ সেই অন্তর মরে গেছে। And finally there is a spiritual death! তাই আল্লাহ সুরা আল ইসরায় বলেন,
.
 
"
আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। [সূরা আল ইসরাঃ ৩২]"
.
আল্লাহ কিন্তুলাতাযিনুবা ব্যভিচার করো না স্রেফ এটা বলেননি। তিনি বলেছেন ব্যভিচারের ধারে কাছেও যেও না, অশ্লীলতার ধারে কাছেও যেও না। কারণ এটা একটা পথ, وساء سبيلا মন্দ পথ, নিকৃষ্ট পথ। অমুক মুভির কয় মিনিটের খারাপ দৃশ্যটা, ফেসবুক পেজের মাঝে মধ্যে খারাপ ছবিগুলো, ১৫+, ১৮+ যেভাবেই চিন্তা করুন না কেন একটু একটু করে এসব কাজই আপনাকে পথে নিয়ে যাচ্ছে। তাই আল্লাহ শুধু বলেননি ব্যভিচার করো না, বরং তিনি বলেছেন ব্যভিচারের ধারে কাছেও যেও না, পথটাই কখনো মাড়িও না। কারণ এটা আমাদের আধ্যাত্মিক মৃত্যু ঘটায়, এর প্রভাব পড়ে আমাদের ঈমানে, আমাদের সালাতে, আমাদের দোয়ায়। 
.
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে আল্লাহ এই আয়াতের পরের আয়াতে বলেছেন,

সে প্রাণকে হত্যা করো না, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন…” [সূরা আল ইসরাঃ ৩৩]
.
 
আল্লাহ বলছেন নিরীহ মানুষকে হত্যা করো না, তার মানে ফিজিকাল মার্ডার। কিন্তু তার আগের আয়াতে আল্লাহ স্পিরিচুয়াল মার্ডারের কথা বলেছেন ,فاحشة যা অন্তরকে মেরে ফেলে আর এরপরই এসেছে ফিজিকাল মার্ডারের কথা قتل আল্লাহ এখানে দুই ধরণের অপরাধের কথা উল্লেখ করেছেন একটি স্পিরিচুয়াল মার্ডার আরেকটি ফিজিক্যাল মার্ডার, কিন্তু স্পিরিচুয়াল মার্ডারের কথা আগে উল্লেখ করেছেন। কারণ যার আত্মা মরে যায় তার রক্ত মাংসের শরীরটার আর কি দাম থাকে। যার আত্মার শক্তি শেষ হয়ে যায় তার সিক্স প্যাক শরীরের শক্তি আর কি কাজে আসে! আর তাই শয়তান প্রথমে এই আত্মাকে শেষ করে দিতে চায়। আর সেটা আপনাকে ফাহেশা কাজে যুক্ত করার মাধ্যমে। 
.
তাই যারা রাহমানের বান্দা হতে চায়, যারা এই দ্বীনের ঝাণ্ডা বহন করতে চায় তাদের উচিত শারীরিক এবং মানসিক দুইভাবেই শত্রুর বিরুদ্ধে প্রস্তুতি গ্রহণ করা। শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামরিক দুর্গ যেমন দরকার তেমনি দরকার আত্মাকে কুলষতা থেকে মুক্তির জন্য নিশ্ছিদ্র দুর্গ। দরকার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করা। দরকার সমস্ত ফাহেশা এবং মন্দ কাজ থেকে আত্মাকে হেফাজরত করা। আল্লাহ বলেন, 
যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয় [সূরা আশ শামসঃ -১০]

লিখেছেন -  ইউসুফ আহমেদ
পড়ুন প্রথম চারটি  পর্বঃ

কুড়ানো মুক্তো (প্রথম পর্ব) - https://goo.gl/RSriJy
কুড়ানো মুক্তো (দ্বিতীয় পর্ব) - https://goo.gl/zImLKR
কুড়ানো মুক্তো (তৃতীয় পর্ব) - https://goo.gl/5sd3tc
কুড়ানো মুক্তো (চতুর্থ পর্ব) - https://goo.gl/BMzUce