Sunday, April 16, 2017

নীল রঙের অন্ধকার (অষ্টম কিস্তি)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।

আসসালামু আলাইকুম ভাই,
আল্লাহ্‌ আপনাদের কাজে বারাকাহ দিক । আমার নাম আবু সাব্বির (ছদ্মনাম) আমি ১৯ বছরের এক তরুণ। থাকি শান্তিনগরে (ছদ্ম ঠিকানা) পর্ন এবং মাস্টারবেশন আসক্তি আমার জীবনকে বিষিয়ে দিয়েছে।

সপ্তাহ দুয়েক আগে আমি আপনাদের ফেসবুক পেইজ (
www.facebook.com/lostmodesty ) খুঁজে পাই । তখনই বেশ কিছু লিখা পড়ে ফেলি। অনেকেই পর্নআসক্তির বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রামের কথা শেয়ার করেছেন। আমার জন্য তাঁদের লড়াইয়ের কাহিনীগুলো ছিল খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক। অনেক দিন ধরেই আমি চেষ্টা করছি এই আসক্তি কাটিয়ে ওঠার,কিন্তু  কেন জানি পারছিনা। আমি হতাশ,ক্লান্ত, নিঃস্ব ,রিক্ত । দয়া করে আমাকে একটু সাহায্য করুন। আমার কাহিনী অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। সময় নিয়ে পড়বেন আশা করি। 
  
শুরু করি তাহলে? তখন আমার বয়স ছিল পাঁচ বছর একটা ফ্ল্যাটে আরো দুইটা পরিবারের সঙ্গে আমরা ভাড়া থাকতাম ঐ ফ্ল্যাটে  তিনটা রুম থাকলেও টয়লেট ছিল কেবল একটা। আমাদের রুমের বামের রুমে যেই পরিবার থাকতো,তাঁদের ক্লাস সিক্স পড়ুয়া এক ছেলে ছিল। আমরা একসঙ্গে খেলাধুলা করতাম,মাঝে মাঝে তার কাছে পড়া বুঝতে যেতাম। সে আমার বড় ভাইয়ের মতো ছিল
 হুট করে সে আমার সঙ্গে অদ্ভুত আচরণ করা শুরু করলো  আমার সামনেই পোশাক পাল্টাতো,আমার শরীরের এখানে সেখানে বাজেভাবে স্পর্শ করতো। আমি তার এরকম অদ্ভুত আচরণের কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেতাম না। সে আমার স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে হাত বুলাতো এবং মাস্টারবেট (এটা আমি অনেক পরে বুঝেছিলাম) করতো । সে বলতো,‘দেখ তুই আমার আদরের ছোট ভাই। এইসব কথা কাউকে বলবি না’।
কয়েকদিনের ভেতরেই সে আমাকে শিখিয়ে দিল কীভাবে মাস্টারবেট করতে হয়। যখন আমাদের বাবা মা কেউই বাসায় থাকতো না, তখন সে আমার এখানে সেখানে হাত বুলিয়ে মাস্টারবেট করতো। আমি ভাবতাম এটা বোধহয় মজার একটা খেলা, বাবা মা বাসায় না থাকলে এটা খেলতে হয়।

আমি সেই সময় ছিলাম একেবারেই বাচ্চা। তেমন কিছুই বুঝতাম না। দেখতাম সে মাস্টারবেট করার কিছুক্ষণ পরে স্নানঘরে যেয়ে গোসল করে নিচ্ছেএকবছর ধরে এমনটা চললো। তারপর ওরা বাসা বদলে চলে গেল অন্য জায়গায়।
কিন্তু এর মধ্যে যা ক্ষতি হবার হয়ে গিয়েছে। তাকে ছাড়াই আমি মাস্টারবেট করা শিখে গিয়েছি ততোদিনে। মাসে অন্তত দুইবার মাস্টারবেট করতাম। কোন ধারনাই ছিলনা আমি কি করছি,কিন্তু এটা আমাকে আনন্দ দিত প্রচুর।

 দশ বছর বয়সে ঘটলো এক অদ্ভুত ঘটনা। ততোদিনে আমি পুরোদস্তর মাস্টারবেশনে আসক্ত একজন। একদিন মাস্টারবেট করার পর দেখি আমার লজ্জাস্থান থেকে কি জানি বের হয়ে আসছে আমি ভয় পেয়ে গেলাম প্রচন্ড। সেই সময় মুখে ব্রণ উঠতে শুরু করলো। শরীর দুর্বল হয়ে গেল। পড়শোনায় মন দিতে সংগ্রাম করা লাগতো তখন
সেই সময় আমাদের দেশে মাল্টিমিডিয়া ফোন জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে কেবল। আমার কয়েকজন বন্ধুর mp4 প্লেয়ার ছিল। তাদের সঙ্গে আমি পর্ন দেখা শুরু করলাম। টিফিন পিরিয়ডে,ক্লাসের আগে, ক্লাসের পরে এমনকি ক্লাসে বসে বসেও আমি পর্ন দেখতাম। বন্ধুদের সঙ্গে মেয়ে নিয়ে সবসময়  রসালো আলোচনা করতাম। বয়স খুব বেশি না হলেও ততোদিনে আমি পরিণত হয়েছি দাঁতালো এক বুনো শুয়োরে।

নিজের মাল্টিমিডিয়া ফোন হাতে পেলাম  ১৪ বছর বয়সে। ইন্টারনেট তখন খুব একটা সহজলভ্য ছিলনা তারপরেও যতবেশি সম্ভব পর্ন ডাওনলোড দিতাম। স্কুলের রেজাল্ট খুব খারাপ হতে থাকলোমানসিক সমস্যা তো আগে থেকে ছিলই , বিভিন্ন দৈহিক সমস্যাও দেখা দিতে লাগলো। স্কুল বদলে অন্য স্কুলে গেলাম যেন পড়াশোনা আবার নতুন উদ্যোমে শুরু করতে পারি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলোনা। পড়াশোনা করব কি নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতেই পারলাম না! চুপচাপ থাকতাম সব সময়,কারো সঙ্গে তেমন একটা মিশতাম না। খেলাধুলার ধারে কাছেও যেতামনা , সত্যি বলতে কি এনার্জি পেতাম না খেলাধুলা করার। সবসময় হয়রান লাগতো। স্কুল পালাতাম। সপ্তাহে দুইবারের মতো পর্ন দেখতাম আর মাস্টারবেট করতাম। দুই বছর গেল এভাবেই।

১৬ বছর বয়সে যা হয়েছিল তা ভাবলে আমি আজো শিউরে উঠি। বাহিরের দুনিয়া সম্পর্কে আমার বাস্তব জ্ঞান তখন ছিল একেবারেই শুন্যের কোঠায়; ইন্টারনেট ঘেঁটে আবছা আবছা একটা ধারনা ছিল এই আরকি বেঁচে থাকা অসহ্য মনে হতো আমার কাছে। কোনকিছুই ঠিকমতো করতে পারতাম না। বাবামার সঙ্গে রাগারাগি করতাম। আমার না ছিল কোন ভাইবোন না ছিল কোন বন্ধু বান্ধব। আমার এই করুন অবস্থার জন্য কাউকে দায়ী করতে চাইতাম আমি। কিন্তু  কাকে দায়ী করব?
শেষমেশ কাউকে না পেয়ে  দায়ী করলাম আল্লাহ্‌কে! সব দোষ আল্লাহ্‌র! তিনি যদি আমাকে ঐ ছেলের সঙ্গে না মেশাতেন ছোটবেলায় তাহলে আমি পর্ন,মাস্টারবেশন কি জিনিস জানতামই না আর আমার জীবনটা এরকমও হতো না । আমি নাস্তিক ছিলাম না, কিন্তু আল্লাহ্‌কে দোষ দিতাম।

তারপর ভাবলাম যে,বখাটে ছেলেপেলেদের সঙ্গে মেলামেশা করি। তারা হয়তো আমার বন্ধু হবে আর আমি এই নরকতুল্য জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে ‘অস্থির’ একটা জীবন পাববখাটে ছেলেদের সঙ্গে মেশা শুরু করলাম, রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফোকা শুরু করলাম। গাঁজাটাই বা বাদ যাবে কেন ! গাঁজার কল্কিতেও দম দেয়া শুরু করলাম। মাঝে মধ্যে কড়া কিছু ড্রাগসও নিতাম। রাস্তায় রাস্তায়  রংবাজি করে বেড়াতাম  সারাদিন। 
 ভাবতাম এতদিনে বোধহয় আমার স্বপ্নের জীবনটা পেয়ে গেছি আমি, কিন্তু আমার পর্নআসক্তি গেলই না বরং আরো বাড়লো। ড্রাগস নিতাম তো শরীরে এনার্জি যেন টগবগ করে ফুটতো, প্রচুর পরিমাণ মাস্টারবেট করতাম। হাস্যকর একটা ব্যাপার ঘটলো এইসময়...

প্রেমে পড়লাম আমি! 

পর্ন দেখতাম আর ও’কে নিয়ে ফ্যাণ্টাসীতে ভুগতাম। কিন্তু আমি জানতাম কখনোই তাকে নিজের করে পাবো না আমি । কত পাগলামিই যে করেছি আমি তার জন্য! হাসি পায় এখন এসব মনে হলে। হাত কেটে রক্ত দিয়ে তার নাম লিখেছি,মারামারিতে জড়িয়েছি আরো কত কি! সে অনেক কথা!
একসময় মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেল । আমি ভেঙ্গে পড়লাম আরো বেশী বখাটে ছেলেপেলেদের সঙ্গে মেশাবন্ধ করলাম। বাসায় থাকতাম সবসময়। মাঝে মাঝে শুধু সিগারেট কিনতে বাহিরে যেতাম। পর্ন দেখার মাত্রা বেড়ে গেল আরো।

আলহামদুলিল্লাহ্‌! এই সময় আমি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে অল্পবিস্তর জানাশোনা শুরি করি। আমি জানলাম
  আমি যেগুলো করছি সেগুলো করা মারাত্মক ভুল। যে ভুল আমি করেছি তার মাশুল আমাকে সারাজীবন গুনতে হবে। অন্যান্য ধর্ম নিয়েও ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করেছিলাম কিছুদিন। কিন্তু শেষমেশ বুঝলাম যা আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি সেটা ইসলাম, অন্য কিছু না।
গাঁজা খাওয়াতো আগেই ছেড়েছি এবার সিগারেট খাওয়াও ছেড়ে দিলাম। বাসায় নামাজ পড়া শুরু করলাম। কিন্তু পর্ন আর মাস্টারবেশন আসক্তি ছাড়তে পারলামনা কিছুতেই। 

পুরোনো কাসুন্দি তো অনেক ঘাঁটাহল এবার বর্তমান অবস্থার কথা বলি...

আমি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বাসায় পড়ার চেষ্টা করি। পড়াশোনা করিনা, বাবা মার সঙ্গে  থাকি। ভাইবোন নেই,নেই কোন বন্ধবান্ধব।একাকীত্বে ভুগি,আত্মবিশ্বাস তলানিতে। মানুষজনের সঙ্গে মিশতে পারি না। এমনকি বাসায় আত্মীয়স্বজন আসলে আমি পালিয়ে পালিয়ে বেড়াই। আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ। পাগল বলতে পারেন একপ্রকার। নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলি প্রায়ই, মানুষজন আড়চোখে তাকায়। কিছু মনে থাকে না। তীব্র মাথা ব্যাথা হয়,ব্যাথায় মাথা যেন ছিড়ে যায়,মনে হয় মাথা কেটে ফেলে দেই। আমার  বয়স যদিও ১৯ বছর আমাকে দেখে মানুষ ভাবে আমার বয়স বোধহয় ত্রিশের কোঠায়। চুল পড়ে যাচ্ছে আর আমার যে ছোট ছোট কিছু দাঁড়ি আছে জানি না কি কারণে সেটা লাল হয়ে যাচ্ছে।
আমি খুব বেশী খাওয়া দাওয়া করিনা, কিন্তু আমি অনেক মোটা। ব্যায়াম ট্যায়াম যে করবো তাও হয়না, সবসময় এতো ক্লান্ত থাকি...

আমি জানি না কী করব। আমি এত অল্প বয়সে মাস্টারবেশনের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম যে আমার শরীর নিজে নিজেই রিঅ্যাক্ট করে। অর্থাৎ প্রায় প্রতি রাতেই মাস্টারবেট করি। এমনকি ট্রাউজার বেল্ট দিয়ে বেঁধে রাখলেও নিজেকে থামাতে পারি না। নিজের অজান্তেই পাপ করে ফেলি। ব্যাপারটা অদ্ভুত যে মাস্টারবেশনের পর পর্নোগ্রাফির দিকে ঝুঁকে পড়ি। অপরাধবোধ হয়, মনে হয় যে খোদা আমাকে ক্ষমা করবেন না, তারপর পর্ন দেখি। আমার একটি পিসি ও ফোন আছে। আমার কোন ডিভাইসেই পর্ন নেই, হতাশ লাগলে ওসবের সাইটে যাই। মাঝে মাঝে ওয়েব ব্রাউজ করার সময় নারীর ছবি দেখলে উত্তেজিত হয়ে যাই। ক্লিক না করে থাকতে পারি না।আমার আত্মীয়স্বজন বেড়াতে এসে তাদের সন্তানদের সাফল্য নিয়ে গর্ব করেনআমি আরো হতাশ হয়ে যাই,পুনরায় ফিরে যাই পাপের রাজ্যেআমার মা-বাবা আমাকে বকাঝকা করলে আমি হতাশ হয়ে পাপ করে ফেলি। সবভাবেই আমি ডুবে যাচ্ছি এক গভীর অন্ধকারে

একটা হাদিস আছে যেখানে বলা হয়েছে, হাশরের ময়দানে একদল মানুষ আল্লাহ্‌র সামনে পাহাড়সমান পুণ্য নিয়ে দাঁড়াবে, কিন্তু আল্লাহ্‌ সেই পুণ্যগুলোকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবেন, কারণ এই মানুষগুলো একা থাকা অবস্থায় সব ধরণের সীমা অতিক্রম করেছিল ও আল্লাহ্‌কে অমান্য করেছিল। [রেফারেন্স লাগবে]

আমার নবী (সাঃ) আমাকে নিয়ে হাদিসে বলেছেন। আমি যখন একা থাকি, আমিও ওরকম কাজ করি।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন।

আরো পড়ুনঃ
নীল রঙের অন্ধকার (প্রথম কিস্তি): https://goo.gl/38nyqS
নীল রঙের অন্ধকার (দ্বিতীয় কিস্তি): http://bit.ly/2hz9Pqu
নীল রঙের অন্ধকার (তৃতীয় কিস্তি): http://bit.ly/2hwkT5K
নীল রঙের অন্ধকার (চতুর্থ কিস্তি): https://goo.gl/8cUK9B
নীল রঙের অন্ধকার (পঞ্চম কিস্তি): https://goo.gl/DFL62I
নীল রঙের অন্ধকার (ষষ্ঠ কিস্তি): https://goo.gl/0ffWi6
নীল রঙের অন্ধকার (সপ্তম কিস্তি):https://goo.gl/s366A1
পর্ন জীবনের স্বাদ নষ্টকারী: https://goo.gl/doMrt0
আত্মোপলব্ধিঃ
 http://bit.ly/2ibGm4Z



1 comment:

  1. Ever wanted to get free Google+ Circles?
    Did you know you can get these ON AUTOPILOT AND ABSOLUTELY FREE by registering on Like 4 Like?

    ReplyDelete