Friday, June 10, 2016

নেশা যখন চটিগল্প পড়া (দ্বিতীয় পর্ব)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।






.........সবই বুঝলাম চটিগল্পের কাহিনী পুরোটাই বানানো , গাঁজাখুরি কিন্তু আমার তো মজা লাগে ,  আর আমি তো শুধুই  পড়ছি ওরকম  কিছু তো করছিনা ।

ভাই দেখেন,  যেকোন  পাপ কাজেই কিন্তু একটা সাময়িক মজা আছে । পাপ কাজটাই এমন যে আপনি সাময়িক একটা মজা পাবেন ।  সিগারেট খাওয়া হারাম , মদ খাওয়া হারাম কিন্তু এগুলোতে  মজা আছে না ? চটিগুল্পের ব্যাপারটাও সেরকম আপনি পড়বেন আর সাময়িক মজাও পাবেন কিন্তু দিনশেষে এটা কিন্তু পাপই ।

আল্লাহ্‌ (সুবঃ) বলেছেন, “জেনার কাছেও যেয়ো না । এটি একটি লজ্জাজনক ও নিকৃষ্ট কর্ম যা আরো  নিকৃষ্ট কর্মের পথ খুলে দেয় ।
[সূরা ১৭,আয়াত ৩২ ]
তিনি কিন্তু বলেননি যে জেনা করো না , তিনি বলেছেন জেনার কাছেও যেয়ো না – এমন কিছু থেকে দূরে থাকো যা তোমাকে জেনার দিকে নিয়ে যেতে পারে ।
চটি গল্প পড়ার অভ্যাস আপনাকে জেনার দিকে নিয়ে যাবে কিনা  সেটা পরে আলোচনার ব্যাপার ,আসল পয়েন্টটা হচ্ছে চটিগল্প পড়া নিজেই জেনার অন্তর্ভুক্ত।


“আদম সন্তানের উপর জেনার যে অংশ লিপিবদ্ধ আছে তা সে পাবেই । চোখের জেনা হল নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি দৃষ্টিপাত করা , দু’কানের জেনা হল শ্রবন করা , রসনার জেনা হল কথোপকথন, হাতের জেনা হল স্পর্শ করা, পায়ের জেনা হল হেঁটে যাওয়া , অন্তরের জেনা হল আকাঙ্ক্ষা এবং কামনা করা ।
[সহীহ বুখারী ৮;৭৭;৬০৯]

তাহলে এবার হিসেব করুন কয় রকমের জেনা  আপনি  করলেন
প্রথমত হাতের জেনা , হাত দিয়ে  কিবোর্ড চেপে সার্চ করে করে চটিগল্প বের করলেন । দ্বিতীয়ত চোখের জেনা -  চোখ দিয়ে নিষিদ্ধ জিনিস দেখলেন এবং পড়লেন । তৃতীয়ত অন্তরের জেনা – চটিগল্পে পড়া জিনিস গুলো চিন্তা করলেন এবং ভাবলেন ইশ! একবার যদি হত এরকম ।


এবার একটা হাদীস শোনাই । খুব ভয়ংকর রকমের হাদীস ।  
রাসুল বলেছেন,“আমি স্বপ্নে একটি চুলা দেখতে পেলাম যার উপরের অংশ ছিল চাপা আর নিচের অংশ ছিল প্রশস্ত আর সেখানে আগুন উত্তপ্ত হচ্ছিল, ভিতরে নারী–পুরুষরা চিৎকার করছিল। আগুনের শিখা উপরে আসলে তারা উপরে উঠছে, আবার আগুন স্তিমিত হলে তারা নিচে যাচ্ছিল, সর্বদা তাদের এ অবস্থা চলছিল


আমি জিবরাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলামঃ এরা কারা ?
জিবরাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললঃ  এরা হল, জেনাকারী  নারী ও পুরুষ ।
 [সহীহ আল–বুখারী]


ভাই , জাহান্নামের আগুন এতোটাই ভয়াবহ সেখানে কেউ যদি এক সেকেন্ড না এক মাইক্রো সেকেন্ড বা তারচেয়েও অনেক কম সময় থাকে তাহলে সে দুনিয়ার সকল আনন্দ , সকল মজা , আরাম আয়েশ ভুলে যাবে । হয়তো সে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি ছিল , জীবনেও কোন দুঃখ কষ্টের মুখোমুখি হয়নি , রাজার হালে থেকেছে , যা মন চায়  খেয়েছে,  ইচ্ছেমত পান করেছে । কিন্তু জাহান্নামের এক মুহূর্তই তাকে দুনিয়ার সব সুখস্মৃতি ভুলিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট । চটিগল্প পড়ে মজা পাচ্ছেন কিছুটা সময়ের জন্য কিন্তু একটা বিশাল পাপের পাহাড় তৈরি করছেন    আস্তে আস্তে  আর আপনাকে আপ্যায়ন করার জন্য  উত্তপ্ত করা হচ্ছে জাহান্নামের আগুন বাঁচান ভাই নিজেকে , জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচান । কোনমতেই  সহ্য করা সম্ভব না ঐ আগুন ।

চটিগল্পের নেশা আপনাকে একদিন না একদিন মাস্টারবেশন আর পর্ন আসক্তির দিকে ঠেলে নিয়ে যাবেই । উত্তপ্ত হয়ে ওঠা ভেতরটাকে ঠান্ডা করতে হবে না ? তাছাড়া শুধু পড়তে আর কতদিন ভালো লাগবে ?  গল্পে পড়া জিনিসগুলো বাস্তবে দেখতে মন চাইবে না ?

সাধারণত  চটিগল্পের নেশা  দিয়ে অশ্লীল অসভ্য  ভয়ংকর এই  জগতটাতে মানুষের প্রবেশ ঘটে,মাস্টারবেশন পর্ন আসক্তির বেড়া ডিঙ্গিয়ে লিটনের ফ্ল্যাটে যেয়ে  তার পথচলা শেষ হয় । ভুল বললাম বোধহয় লিটনের ফ্ল্যাটে না  জাহান্নামের আগুনের গর্তে যেয়ে পথচলা শেষ হয়

একটা গল্প বলি । গল্প হলেও সত্যি ।  
২০১০ সালে এস. এস. সি.   পরীক্ষার রেজাল্টের পরে বাবা মার ইচ্ছে হল ঢাকার কোন কলেজে ছেলেকে  ভর্তি করানোর ।  কলেজের ফর্ম তোলার জন্য একদিন কয়েকজন বন্ধু বান্ধব মিলে ঢাকার ট্রেনে চেপে বসলাম । অনেক  প্রথমের সূচনা ছিল সেই দিনটা আমার জন্য । প্রথমবারের মতো ট্রেনে চড়া , প্রথমবারের মতো মফঃস্বল শহর ছেড়ে  এতদূরের শহর ঢাকা যাওয়া , প্রথমবারের মতো   ফুটপাতে ময়লা ন্যাকড়া জড়িয়ে কুকুরের সঙ্গে জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকা পথশিশু দেখা , রাস্তার পাশে , রেললাইনের ধারের  বস্তিতে অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টে বেঁচে থাকা মানুষদের দেখা । খুব খারাপ লেগেছিল সেদিন । এক ছুটির সকালে হোস্টেলের পেছনে আশীপিতর এক বৃদ্ধা লাঠিতে ভর  করে বহু কষ্টে কাগজ কুড়াচ্ছিল । কেন সে এত কষ্ট করে কাগজ কুড়াচ্ছে জিজ্ঞেস করাতে বলেছিল , “বাবা! সকালের নাস্তা করব কিন্তু কোন টাকা নেই আমার কাছে । তাই , কাগজ কুড়াচ্ছি , ভাঙ্গাড়ীর দোকানে বিক্রী করে ঐ টাকা দিয়ে কিছু কিনে খাব” ।

কেঁদেছিলাম সেদিন । নীরবে , ডুকরে ডুকরে । ঢাকায় আসার পর মাস ঘুরে এক  বছর শেষ  হয়ে  গেল ।  কলেজে যাবার পথেই প্রতিদিন দেখতাম   ডাস্টবিনের পাশের ময়লাতে টোকাইরা শুয়ে আছে ,  আগের মতো খারাপ লাগতো না ।  আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে গেল । মনে হতো ঠিকই তো আছে , টোকাইরাতো রাস্তাতেই শুয়ে থাকবে ।  বস্তির মানুষের করুন দশা দেখেও আমার আর মন খারাপ হতো না , কান্না কাটি করা তো বহু দূরের কথা ।
                                          
মানুষের সাইকোলজি কিন্তু এরকমই । কোন অস্বাভাবিক কিছু প্রতিনিয়ত চোখের সামনে দেখতে থাকলে সে সেটাকেই স্বাভাবিক বলে ধরে নেয় ।

ভাই প্রথম প্রথম আপনি যখন চটিগল্প পড়া শুরু করেছিলেন তখন  মা, বোন , খালা , ভাবী , চাচী , মামী , কাজিন ,  পাশের বাসার আন্টি , টিচার, কাজের মেয়েদের নিয়ে লিখা গল্প গুলো পড়ে আপনার  মনে হত না,   গল্প গুলো কত  জঘন্য  ? কিন্তু আস্তে আস্তে আপনার কাছে সেটাই স্বাভাবিক হয়ে গেল । আপনি তাদেরকে নিয়ে ফ্যান্টাসীতে ভোগা শুরু করলেন , তাদের বিভিন্ন আচরনের অন্য অর্থ করলেন আপনি ,   শেয়ালের চোখে দেখতে শুরু করলেন তাদের,  বশ করার ফন্দি আঁটলেন ,  হয়তো সুজোগও খুঁজলেন ,তাই না ? অস্বীকার করবেন না । স্বভাবতই   বাঙ্গালী ছেলেদের  চিন্তাভাবনা   কতগুলো  নিকটাত্মীয়াকে (ভাবী , শালী , কাজিন  ) নিয়ে  একটু অন্যরকম হয় । চটিগল্পে  তাদের  সেই অবাধ্য চিন্তাভাবনায় রঙ চং লাগিয়ে একেবারে তারা ঠিক যেমন  চাই তেমন ভাবেই উপস্থাপন করা হয় ।        

চটি  গল্পের  প্রধান  সমস্যাটাই এখানে । আপনাকে সে যৌনতা সম্পর্কে একগাদা মিথ্যে তথ্য গুলে খাওয়াবে এবং আপনি সেগুলো আস্তে আস্তে সত্যি বলে ধরে নিবেন- সত্যিই বোধহয় তারা আমার কাছ থেকে কিছু চাই , আমার সঙ্গে বিছানায় যেতে আগ্রহী ইত্যাদি ইত্যাদি ।  আপনি শুধু এখানেই বসে থাকবেন না , মেয়ে শিকারের সেই  টেকনিক গুলো  নিজের  জীবনেও এপ্লাই করার চেষ্টা করবেন ।  
বিকৃত চিন্তার গল্প গুলো পড়ে আপনি নিজের ভেতরে ক্রমাগত যে ‘কামের’ আগ্নেয়গিরি তৈরি করছেন তার  অগ্নুৎপাত কি কখনো হবে না ভেবেছেন ?  অগ্নুৎপাতের পরে কি হবে চিন্তা করেছেন কখনো ? কত ঘর ভাঙবে , সম্পর্ক আর জীবন নষ্ট হবে ? আপনার বাবা মা’র কথা একবার চিন্তা করুন । কি পরিমাণ লজ্জিত , অপমানিত তারা হবেন !

আপনি হয়তো আমার কথা এখন হেসেই উড়িয়ে দিবেন  কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনার চটিগল্পের নেশা আপনাকে ধর্ষক , শিশু নির্যাতনকারী এমনকি সমকামিও (আঊজুবিল্লাহ) বানিয়ে ফেলতে পারে  , পতিতার কাছেও যাওয়াও আশ্চর্যের কিছু না   চটিগল্প পড়ে হরমোন ক্ষরণে উত্তেজিত হয়ে ওঠা আপনি শান্ত হয়ে  হওয়ার জন্য হাতের কাছে যেটা আছে সেটা দিয়েই কাজ সারতে চাইবেন । কেউই আপনার লালসা থেকে নিরাপদ  থাকবে না । 

চলবে ইনশা আল্লাহ্‌ .........

পড়ুনঃ
১) “নেশা যখন চটিগল্প পড়া” সিরিজের প্রথম পর্ব- http://lostmodesty.blogspot.com/2016/05/blog-post_23.html


        






1 comment: