Tuesday, May 31, 2016

ফাঁদ – দ্বিতীয় পর্ব

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।



এক.
আসরের নামাজ হয়ে গেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো, হলুদ রোদ নরম হয়ে কমলা হতে শুরু করেছে। অনেক কমলা রঙের রোদে ভরে গেছে মসজিদের পাশের খেলার মাঠটা। মাঠের সবুজ ঘাসের বুকে ফুটে থাকা সাদা ঘাসফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মন কেমন জানি উদাস হয়ে গিয়েছিল। ঘোর কাটল চিৎকার চেঁচামেচিতে। মসজিদের খাদেম সাহেবের ছোট্ট ছেলেটা ঘুড়ি ওড়ানোর চেষ্টা করছে মাঠে। খাদেম সাহেব লাল টুকটুকে ঘুড়িটা ধরে আছেন, ছেলে যখন নাটাই ধরে দৌড় মারছে তখন তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন ঘুড়ি।

লাল টুকটুকে ঘুড়িটা নাক উঁচু করে বাতাসে ভেসে আকাশে উঠতে চাচ্ছে, কিন্তু কিছুক্ষণ পর গোত্তা খেয়ে সোজা নেমে আসছে মাটিতে। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পর অবশেষে লাল ঘুড়িটা উড়তে পারল, পারল আকাশে ভেসে থাকতে। যেকোনো আসক্তি কাটিয়ে ওঠা অনেকটা আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর মতো বা ছোটবেলায় হাঁটতে শেখা কিংবা সাইকেল চালানো শেখার মতো। অনেক বার পড়ে যাওয়ার পর, হোঁচট খাবার পর, অনেক চেষ্টার পর তবেই-না সাইকেল চালানো শেখা যায়, ঘুড়িটা ডানা মেলে আকাশে। সে রকম আপনি একদিনেই, একবারে নেশা ছাড়তে পারবেন না—সময় লাগবে, লাগবে অনেক চেষ্টা আর দৃঢ় মনোবল।

পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তির কারণে জীবন অতিষ্ঠ। আপনি মুক্তি চান এগুলো থেকে। আদাজল খেয়ে, কোমরবেঁধে লেগে গেলেন, দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ মন। সবকিছুই ঠিকঠাক মতো চলছে। অনেকদিন পার হয়ে গেছে কিন্তু আপনি পর্ন-হস্তমৈথুনের ধারেকাছেও ঘেঁষেননি। খুব খুশি, স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন—যাক বাবা বাঁচা গেল...। কিন্তু হুট করেই একদিন ব্রেকডাউন হয়ে গেল—পর্ন ভিডিও দেখে ফেললেন বা হস্তমৈথুন করে ফেললেন। ঠান্ডা হবার পর মাথার চুল ছিঁড়তে লাগলেন আফসোস করে—হায়! হায়! এ কী করলাম আমি! এ রকম সময়ে কাটাঘায়ে নুনের ছিটা দেয়ার জন্য রঙ্গমঞ্চে আবির্ভাব ঘটে ইবলিসের। কুমন্ত্রণা দিতে থাকে, আরে ব্যাটা তুই যতই চেষ্টা করসি না কেন, পারবি না পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে। এত টিপস ফলো করলি, এত কিছু করলি, পারলি এগুলো থেকে বাঁচতে? বাদ দে এসব ন্যাকামো...” এ রকম কুমন্ত্রণা সে ক্রমাগত দিতেই থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি হতাশ হয়ে পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি থেকে বাঁচার চেষ্টা বন্ধ করে দেন।

হতাশ হবার কিছু নেই। পর্ন-আসক্তি প্রায় কোকেইন আসক্তির মতো ভয়াবহ ব্যাপার। এক দিনে, একবারেই সারা জীবনের জন্য পর্নোগ্রাফি বা হস্তমৈথুন আসক্তির সঙ্গে আড়ি দেয়া তো সম্ভব হবে না, সময় লাগবে কিছুটা। হতাশ হলে চলবে না। হস্তমৈথুন, পর্ন-আসক্তির যুদ্ধে বার বার পরাজিত হওয়া মানে “হেরে যাওয়া” না। আপনি হেরে যাবেন সেদিনই, যেদিন শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে হস্তমৈথুন, পর্ন-আসক্তি থেকে বাঁচার চেষ্টা ছেড়ে দেবেন।

পরিচিত একজন ভাই আছেন – ভয়াবহ রকমের হস্তমৈথুনে আসক্ত ছিলেন ক্লাস সেভেন থেকে । দুই তিন বছর আগে উনি বুঝতে পারেন – হস্তমৈথুন না ছাড়লে ভবিষ্যৎ অন্ধকার । শুরু করেন হস্তমৈথুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। প্রথম দিনগুলোর কথা বলছিলেন ভাই একদিন – প্রথম দিকে সব ধরনের টিপস ফলো করার পরেও খুব বেশিদিন হস্তমৈথুন থেকে বাঁচতে পারতাম না । একসপ্তাহ , বড়জোড় দুই সপ্তাহ । প্রত্যেক বার হস্তমৈথুন করার পর ভয়াবহ রকমের হতাশ হয়ে পড়তাম । মন খারাপ হয়ে যেত প্রচন্ড । দুই তিনদিন পর্যন্ত মন খারাপ থাকতো । আল্লাহ'র (সুবঃ) দরবারে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাতাম। বার বার দু’আ করতাম – আল্লাহ ! মুক্তি দাও আমাকে এটা থেকে, মুক্তি দাও । এভাবেই দেড় বছরের মতো চলে গেল । ধৈর্য ধরে  লেগে থাকলাম । অবশেষে আল্লাহ (সুবঃ) আমাকে মুক্তি দিলেন হস্তমৈথুন থেকে ।
ভাই হতাশ হলে চলবে না । হস্তমৈথুন/পর্ন আসক্তি’র যুদ্ধে বারবার পরাজিত হওয়া মানে আপনি “হেরে” যাননি, আপনি হেরে যাবেন সেদিনই, যেদিন শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে হস্তমৈথুন/ পর্ন আসক্তি থেকে বাঁচার চেষ্টা ছেড়ে দিবেন ।

হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছো তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়।”[আয-যুমারঃ৫৩] 
 
হাল ছাড়বেন না কখনোই। ধৈর্য ধরে লেগে থাকুন, আল্লাহ্‌র (সুবঃ) ওপর ভরসা করে। ইন শা আল্লাহ্‌ আপনি বিজয়ী হবেনই। ইন শা আল্লাহ্‌ একদিন চমৎকার ঝকঝকে হলুদ রোদ উঠবে চারিদিকে, ঝিরি ঝিরি বাতাসে গাছের পাতাগুলো দোল খাবে, দোয়েল মিষ্টি শিস দেবে, হস্তমৈথুন, পর্ন-আসক্তির কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আপনি ডানা মেলবেন সুন্দর ওই নীল আকাশটাতে—মুক্ত বাতাসে। সেদিন আপনার সমস্ত হতাশা, কষ্ট, দুশ্চিন্তা, দুঃখগুলো দলবেঁধে এসে দুঃখপ্রকাশ করবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করবে যে, তারা নিতান্তই মিথ্যে ছিল।

দুই.
শয়তানের আরেকটা খুব কার্যকরী কৌশল হচ্ছে, “আজকেই শেষ। কাল থেকে আর পর্ন ভিডিও দেখব না বা হস্তমৈথুন করব না”—এ চিন্তাভাবনা আপনার অন্তরের মধ্যে গেঁথে দেয়া। প্রতিটি আগামীকালের আরেকটি আগামীকাল আছে; আগামীকালও যে আপনার মনে হবে না আজকেই শেষবার, এর গ্যারান্টি কে দেবে? এটা একটা ইনফিনিট লুপ যার কোনো শেষ নেই। পর্ন দেখা বা হস্তমৈথুন করা বন্ধ করতে হবে আজকেই। যদি আজকে না পারেন তাহলে আগামীকাল পারবেন এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।

তিন.
ইসলাম নিয়ে সিরিয়াস হবার পরে হাল আমলের ছেলেমেয়েরা বিয়ে নিয়ে বেশ রোমান্টিসিযমে ভুগতে শুরু করে। কোনো এক অদ্ভুত কারণে এরা বিয়ে করাকেই তাদের ধর্মীয় জীবনের একমাত্র লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য অথবা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জনের প্রধান পূর্বশর্ত বানিয়ে ফেলেছে। অন্তরের অবস্থা আল্লাহ্‌ই (সুবঃ) ভালো জানেন, তবে তাদের বাহ্যিক আচার-আচরণ দেখে তা-ই মনে হয়। ভাবখানা এমন, ইসলাম শুধু বিয়ে করতেই বলেছে আর কিছু করতে বলেনি। বিয়ে করে “দ্বীনের অর্ধেক পূরণে” তাদের খুব আগ্রহ, কিন্তু দ্বীনের আরও অর্ধেক যে অংশ বাকি আছে সেটা পূরণে তারা ততটা মনোযোগী না।

এ বিয়ে নিয়েই শয়তান ব্যাটা খুবই মারাত্মক ফাঁদ পাতে, আর আমাদের তরুণেরা বিয়ে নিয়ে এতটাই রোমান্টিসিযমে ডুবে থাকে যে, সেই ফাঁদে পা তো দিয়ে বসেই, সেই সাথে কেউ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও তাদের হুঁশ ফেরে না। তরুণদের কাছে বিয়েই হয়ে গেছে সকল সমস্যার সমাধান।
   
“মন খারাপ কেন?
       “কারণ আমার বউ নাই”
 “রেসাল্ট খারাপ কেন?
      “কারণ বউ নাই, মন খারাপ থাকে, পড়তে পারি না ঠিকমতো।”
“ফজরের সালাত কাযা হয় কেন?
     “কারণ বউ নাই, মুখে পানি ছিটিয়ে কেউ ডেকে দেয় না।”
“পর্ন ভিডিও দেখা ছাড়তে পারছ না কেন? হস্তমৈথুন কেন করো?
     “কারণ আমার বউ নাই।”

বিয়ে কোনো ম্যাজিক বাটন না যে আপনি চাপ দেবেন আর আপনার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিয়ের আগের কিছু সমস্যা হয়তো বিয়ের পর চলে যাবে, সেই সাথে আরও অনেক নতুন সমস্যার উদ্ভব হবে। চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকা, ক্যান্ডেল লাইট ডিনার করা, একসঙ্গে রিকশায় ঘোরা, ফুচকা খাওয়া, শুধু এগুলোই বিয়ে না। বিয়ে মানে অনেক দায়িত্ব, অনেক কর্তব্য।

“বিয়ের আগে পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি কাটানো সম্ভব না, তুই চাইলেও ছাড়তে পারবি না। পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি দূর করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো বিয়ে, বিয়ে করবি সব ঠিক হয়ে যাবে, এখন দুশ্চিন্তা ভুলে “চিল” কররে পাগলা।”

এ রকম অজস্র মিথ্যে কথা শয়তান আপনাকে গুলে খাওয়াবে। আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন। পর্ন-হস্তমৈথুন থেকে বিয়ে করা ছাড়াও রেহাই পাওয়া যায় সেটা আপনি মেনে নিতে চাইবেন না। আপনার চিন্তাভাবনা আবর্তিত হবে বিয়েকে কেন্দ্র করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিয়েকে খুব কঠিন বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আবার দেখা যাবে বিয়ে নিয়ে সারাদিন আকাশ-কুসুম চিন্তা করলেও আসলে বিয়ে করার জন্য কোনো কংক্রিট স্টেপ আপনি নিচ্ছেন না। জীবিকার ব্যবস্থা করছেন না। আচরণে ম্যাচিউরিটি আসছে না। কাজকর্মে দায়িত্ববোধের ছাপ দেখা যাচ্ছে না। নিজের ফ্যামিলিকে বোঝানো দূরের কথা হয়তো তাদের সাথে এ নিয়ে কথাই শুরু করতে পারছেন না। কিন্তু দিনরাতে অনবরত বিয়ে নিয়ে চিন্তা থামছে না।

বাবা-মাকে বিয়ের কথা বলতেই দেখবেন অনেক দিন লেগে যাবে।
অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পরও হয়তো যখন চাচ্ছেন তখন বিয়ে করা হয়ে উঠবে না। আপনি আরও হতাশ হয়ে পড়বেন। পর্ন দেখা, হস্তমৈথুন করার পরিমাণ বাড়তে থাকবে। জীবন অসহ্য মনে হবে। অথচ আপনি যদি অন্য টিপসগুলো অনুসরণ করতেন, তাহলে হয়তো পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি থেকে মুক্তি পেতেন।

বিয়ে করলেই পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি দূর হয়ে যাবে এটা ভাবলে মারাত্মক রকমের ভুল করবেন। সাময়িক সময়ের জন্য হয়তো এগুলো থেকে দূরে থাকতে পারবেন, কিন্তু তারপর যেইকে সেই। অনেক অনেক বিবাহিত ভাই ভয়ঙ্কর রকমের পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তিতে ডুবে আছেন। অনেকের ঘর ভেঙেছে পর্ন-আসক্তি। অ্যামেরিকাতে ৫৬ শতাংশ ডিভোর্সের জন্য দায়ী পর্ন-আসক্তি। ৫৫ শতাংশ বিবাহিত অ্যামেরিকান পুরুষ স্বীকার করেছেন যে তারা মাসে একবার হলেও পর্ন ভিডিও দেখে।[1] ২৫ শতাংশ বিবাহিত অ্যামেরিকান মহিলা স্বীকার করেছে যে, তারা মাসে একবার হলেও পর্ন ভিডিও দেখে। আর যারা মাসে একবার হলেও পর্ন দেখে এমন অবিবাহিত অ্যামেরিকান মহিলার সংখ্যা শতকরা ১৬ জন।[2]

কিন্তু কেন বিয়ে পর্ন বা হস্তমৈথুনের সম্পূর্ণ সমাধান না?

পর্ন-আসক্তির কারণে আপনার মস্তিষ্কের গঠন বদলে যাবে। াদকের রাজ্যে’ শিরোনামের লিখায় আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বাস্তব যৌনতার প্রতি আপনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। সেই সঙ্গে যৌনমিলনের সক্ষমতাও। আপনার স্ত্রী আপনাকে যৌনতার জন্য প্রস্তুত করতে পারবেন না, স্ত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ হবার চাইতে ঘরের এক কোণায় বসে পর্ন দেখাকেই আপনি উত্তেজক এবং তৃপ্তিদায়ক মনে করবেন। পর্ন দেখে দেখে আপনার মধ্যে নারীর দেহ নিয়ে যে অতিরঞ্জিত ধারণা করেছিলেন, সেটা বুঝবেন বিয়ের পরে। আপনি হতাশ হবেন। আপনার পর্ন দ্বারা প্রোগ্রামড ব্রেইন আপনার স্ত্রীর চেয়ে পর্ন অভিনেত্রীদের নিটোল দেহের প্রতি বেশি আকর্ষিত হবে। আপনি আবার ফিরে যাবেন পর্নের জগতে।

অন্তরঙ্গতার পুরো ব্যাপারটিই দুজন মানুষের অত্যন্ত চমৎকারভাবে কাছে আসা, যা আসলেই আল্লাহ্‌র (সুবঃ) পক্ষ থেকে একটি আশীর্বাদ। ভালোবাসা এবং মমতার কারণে স্ত্রী বা স্বামীকে তৃপ্তি দেয়া। নিজের চেয়ে নিজের স্ত্রীর তৃপ্তির ব্যাপারে বেশি চিন্তা করা; নিশ্চিত করা যেন পুরো সময়টুকু তার জন্য আরামদায়ক হয়, যেন তিনি কষ্ট না পান বা তাঁর সাথে বিবেচনাহীন আচরণ না করা হয়, যেন তাঁকে সম্মান দেয়া হয়।

পর্নের পুরো ব্যাপারটিই অন্তরঙ্গতার বিপরীতে যায়, কারণ এখানে মুখ্য বিষয় হলো, নেয়া ও স্বার্থপরতা। নিজে তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত নিজেকে আনন্দ দেয়া, নতুন কিছুর খোঁজ চালিয়ে যাওয়া। পর্ন আসক্ত হবার কারণে আপনি আপনার স্ত্রীর চাওয়া পাওয়ার দিকে কোনো খেয়ালই রাখবেন না। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে তৃপ্তি না পেয়ে আপনি অ্যানাল সেক্স, ওরাল সেক্সের দিকে ঝুঁকবেন, স্ত্রীর ওপর জোরাজুরি করবেন। স্ত্রী রাজি না হলে আপনি থেকে যাবেন অতৃপ্ত। পর্ন দেখা শুরু করবেন আবারও। তা ছাড়া অ্যানাল সেক্স, ওরাল সেক্সে যৌনতৃপ্তির পরিমাণ কমে যায়। আপনি এগুলোর সুযোগ পেলেও অতৃপ্ত থেকে যাবেন। ঘুরেফিরে সেই পর্ন দেখে হস্তমৈথুন করতে হবে।[3]

বিয়ের পর পর স্বামী-স্ত্রীর সবকিছুই পরস্পরের ভালো লাগে। দুজন দুজনকে ক্রমাগত আবিষ্কার করে আর মুগ্ধ হয়। ঝড় বয়ে চলে ভালোবাসার। কিন্তু বেশ কিছুদিন পর বিশেষ করে ১০ বছরের একটা লুপের পর ভালোবাসার ঝড় থেমে যায়। অন্তরের টান, মায়া-মমতা আগের মতো থাকলেও শারীরিকভাবে আপনার স্ত্রী হয়তো আপনাকে আর আগের মতো টানবেন না। বাচ্চাকাচ্চা সামলাতে গিয়ে তিনি হয়তো আপনাকে আর আগের মতো “কোয়ালিটি টাইম” দিতে পারবেন না। হয়তো এ কারণে আপনি যৌনজীবন নিয়ে একঘেয়েমিতে ভুগবেন। তবে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানে যৌনতাই সব কিছু না; বরং বিয়ের অনেকগুলো অংশের মধ্যে এটি একটি। পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, বিশ্বাস, মায়া, দায়িত্ববোধ এগুলোও বিয়ের অংশ। তাই বয়সের সাথে সাথে সব পুরুষই যৌনজীবনে একঘেয়েমিতে ভুগবেন বা ভোগেন এমন না। সমস্যাটা হলো পর্ন কীভাবে আপনার চিন্তায় প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে। পর্ন আপনাকে একজন সঙ্গিনীতে সন্তুষ্ট হতে দেবে না।

যারা পর্ন দেখে অভ্যস্ত তাদের পক্ষে একজন যৌনসঙ্গিনীতে তৃপ্ত হওয়া অত্যন্ত কঠিন। পর্নের বৈশিষ্ট্যই হলো সাধারণ যৌনতার ব্যাপারে একঘেয়েমি সৃষ্টি করা। এমনকি পর্ন-আসক্ত ব্যক্তির কাছে একই ধরনের পর্নও একসময় একঘেয়ে লাগে। তার আরও কড়া কিছুর প্রয়োজন হয়। সফটকোর থেকে হার্ডকোর, হার্ডকর থেকে রেইপ পর্ন, গে পর্ন, চাইল্ড পর্ন এভাবে তার “উন্নতি” হতে থাকে। নীল জগতে নিত্যনতুন অপ্সরাদের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা আপনার কাছে রক্তমাংসের মানবী খুব তাড়াতাড়ি পুরোনো হয়ে যাবে, পানসে লাগবে। যৌনজীবনের একঘেয়েমি আপনাকে রাস্তা দেখিয়ে দেবে পর্ন এবং হস্তমৈথুনের। শত সহস্র মানুষ বিয়ে ছাড়াই পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি থেকে মুক্তি পেয়েছে। আপনিও পারবেন ইন শা আল্লাহ্‌। আল্লাহ্‌র (সুবঃ) ওপর ভরসা করে চেষ্টা চালু রাখুন, পাশাপাশি বিয়ের জন্যও নিজেকে যোগ্য করে তুলুন। বিয়ে করতে পারছি না তাই পর্ন-হস্তমৈথুন আসক্তি থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারছি না, এসব অজুহাত দেবেন না।



[1] 2014 Pornography Survey and Statistics. Proven Men Ministries-
http://www.provenmen.org/2014pornsurvey
[2]Barna Group, U.S., 2014
[3] পাঠকদের সবিনয়ে অনুরোধ করছি ১০৮ টি নীল পদ্ম আবারও পড়ে নিতে।

Saturday, May 28, 2016

“’ও’ যখন পর্ন আসক্ত” (তৃতীয় পর্ব )

যেভাবে বুঝবেন আপনার সঙ্গী পর্ন আসক্ত



বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।


বাচ্চা-কাচ্চা, কিশোর-তরুণদের পর্ন আসক্তির ওপর ফোকাস করতে গিয়ে বিবাহিতদের মারাত্মক পর্ন আসক্তি ফোকাসের বাইরেই থেকে যায়। বিবাহিতদের পর্ন আসক্তি কী ভয়ংকর এ বইয়ের প্রথম দিকে “১০৮ টি নীলপদ্ম” শিরোনামের লেখায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

একবার পর্ন আসক্ত হয়ে গেলে সঙ্গীর মাঝে আর প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া না, তাকে শুধু ভোগ্য দ্রব্য মনে হয়। অনেক স্বামী/স্ত্রী তাদের সঙ্গীদেরকে বাধ্য করেন বিছানায় পর্নস্টারদের অনুকরন করতে। ভালোবাসা হারিয়ে যায়, মধ্যরাতে স্বামীর স্পর্শ স্ত্রীর শরীরে আর শিহরণ জাগায় না, মনে হয় একটা পশু তাকে ছিড়ে ছিবড়ে ফেলছে। ঝড় থেমে গেলে স্বামী পাশ ফিরে ঘুমিয়ে যান, স্ত্রী বেচারী জেগে থাকেন একজোড়া সিক্ত চোখ আর বুকভরা ঘৃণা নিয়ে। একসময় ভেঙ্গে যায় সংসার।

অথচ একটু সচেতন হলেই বিবাহিতদের পর্নআসক্তি এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কীভাবে এ আসক্তির মোকাবেলা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে এ লেখায়।
আপনার স্বামী বা স্ত্রী যদি নিজে থেকেই আপনার কাছে এসে তার আসক্তির কথা স্বীকার করে নেয় তাহলে আসক্তি কাটিয়ে ওঠার অর্ধেক কাজটাই শেষ হয়ে যায়। বাকী থাকে শুধু দুজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অবশিষ্ট কাজ টুকু করে ফেলার। কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই পর্ন আসক্ত স্বামী/স্ত্রী আসক্তির কথা স্বযত্নে গোপণ রেখে দেন, সরাসরি জিজ্ঞাসা করলে অস্বীকার করে বসেন। ফলশ্রুতিতে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে যায়।

তো, প্রথমেই আমরা আলোচনা করবো কীভাবে বুঝবেন আপনার স্বামী পর্নআসক্ত।

যেভাবে বুঝবেন আপনার সঙ্গী পর্নআসক্ত:

১) আপনার স্বামী ধীরে ধীরে অসামাজিক হয়ে পড়বেন। পারিবারিক এবং সামাজিক বিভিন্ন গেট টুগেদার, তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে চলবেন। আপনাকেও তিনি আর আগের মতো সময় দেবেননা। আপনাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবেননা। আপনার মান-অভিমান, সুখ-দুঃখের প্রতি তার তেমন কোন নজর থাকবেনা।   

২) আপনার স্বামীর ইন্টারনেট আসক্তি অতিরিক্ত পর্যায়ের চলে যাবে। দিনরাত অনলাইনে পড়ে থাকবেন। কর্মক্ষেত্র থেকে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে তিনি ল্যাপটপ বা মোবাইল নিয়ে বসবেন। আপনার সাথে বা পরিবারের অন্য কোন সদস্যের সাথে স্থির হয়ে দুদণ্ড বসে কথা বলার সময়টুকুও তার হবে না।

৩) তার ঘুমের প্যাটার্ন বদলে যাবে। রাতভর অনলাইনে থাকার কারণে সকালে বেশ দেরী করে ঘুম থেকে উঠবেন। কখনো কখনো এমনো হবে যে সারা রাত তিনি বিছানায় পিঠ ঠেকাবেন না, “অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত” এ সব বলে রাত ভর অনলাইনে পড়ে থাকবেন।

৪) ব্রাউযারের সার্চ হিস্টোরি ডিলিট করে দিবেন।

৫) রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় আপনি সাথে থাকলেও, আপনার উপস্থিতি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে তিনি অন্য মেয়েদের শরীর চোখ দিয়ে গিলে খেতে চাইবেন।

৬) আইটেম সং, মিউযিক ভিডিওর প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আকর্ষণ জন্মাবে। আপনার সামনেই চরম অশ্লীল আইটেম সং দেখতেও দ্বিধাবোধ করবেননা।

৭) আপনার স্বামী সম্পূর্ণ এক নতুন দৃষ্টিতে আপনাকে দেখতে শুরু করবেন। আপনার পোশাক আশাক কেমন হওয়া উচিত,আপনার ফিগার কেমন হলে ভালো হয় সে সম্পর্কে তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা লেকচার ঝাড়তে থাকবেন। আপনি অবাক হয়ে আবিষ্কার করবেন, যে মানুষটার কাছে আপনি ছিলেন দুর্দান্ত রূপসী, অমরাবতীর রাজকন্যা, যে মানুষটা আপনার সবকিছুই পছন্দ করতো, আপনাকে নিশিদিন পাগলের মতো ভালোবাসতো, সে মানুষটি আজ আপনার চেহারার খুত ধরছেন, উঠতে বসতে আপনার কাজের ভুল ধরছেন, আপনার সাথে রূঢ় আচরণ করছেন!

৮)আপনার স্বামী অন্তরঙ্গতার সময় জানোয়ারের মতো হয়ে যাবেন। এনাল সেক্সের মতো হারাম বা ওরাল সেক্সের মতো জঘন্য কাজে আপনাকে বাধ্য করবেন বা করতে চাইবেন। আপনি রাজি না হলে আপনাকে বকাঝকা করবেন বা মারধর করবেন। অনেক সময় একাজগুলো করতে আপনাকে বাধ্য করবেন অথবা আপনার অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোর করে করবেন। অন্তরঙ্গতার সময় আপনার তৃপ্তি অতৃপ্তির দিকে কোন খেয়াল রাখবেননা, নিজের তৃপ্তিই তার কাছে শেষ কথা হয়ে দাঁড়াবে।

৯) বিছানার অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করে রাখতে চাইবেন।  

১০) পর্ন আসক্তির এক পর্যায়ে আপনার স্বামী আপনার সাথে অন্তরঙ্গতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। আপনার সঙ্গে একই বিছানা ভাগাভাগি করার চেয়ে তিনি অন্য বিছানায় বা অন্যঘরে ঘুমুতে আগ্রহী হবেন। অন্তরঙ্গতার বিশেষ পর্যায়ে তার উত্তেজিত হতে সমস্যা হবে।

১১) আপনার স্বামী তার প্রাইভেসি নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে। তার সঙ্গে কথা বললেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার স্বামী কী যেন লুকোচ্ছে আপনার কাছ থেকে। নিছক কৌতূহলবশত, “রাত জেগে অনলাইনে কী করো”, “কী লুকোচ্ছো আমার কাছ থেকে”, এ ধরণের প্রশ্নও আপনার স্বামীকে মারাত্মক ক্ষেপিয়ে দেবে। তিনি আপনাকে কটু কথা বলবেন, ঝগড়া ঝাটি করবেন।
অগণিত পর্নআসক্তদের ওপর গবেষণা করে বিশেষজ্ঞরা এ লক্ষণগুলো চিহ্নিত করেছেন। এর কিছু কিছু লক্ষণ অবশ্য পরকীয়া করেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যেও থাকতে পারে। তবে ৫,,,৯,১০ নম্বর লক্ষণ গুলো থাকলে নিশ্চিত ভাবেই বলতে পারবেন যে আপনার স্বামী পর্নআসক্ত।

রেফারেন্সঃ
[1] Does My Spouse Have a Pornography Problem?- https://goo.gl/KikzUJ 
[2] 8 Signs Your Partner Is Addicted To Porn-https://goo.gl/UqmhPf
[3] 10 Signs of Porn Addiction: Do these describe your husband?- https://goo.gl/uLEjBi