Friday, April 22, 2016

“সিরিয়াল কিলার (দ্বিতীয় পর্ব)”



বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।



শ্রীঘর দর্শনঃ
সিয়াটল , সল্টলেক সিটি , কলারাডো , ফ্লোড়িডার মেয়েরা একের পর এক রহস্যজনক ভাবে হারিয়ে যাচ্ছে । জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না কাউকে । কয়েকদিন পর পাওয়া যাচ্ছে পচে গলে যাওয়া বিকৃত লাশ । এফবিআই   চারিদিকে জাল বিছিয়েছে ঘাতককে ধরার জন্য, কিন্তু ঘাতক প্রতিবারেই সুচতুরভাবে জালভেদ করে বেরিয়ে গিয়েছে ।



আগস্ট , ১৯৭৫ । আমেরিকার সল্টলেক সিটির কিছুটা দূরের   Utah হাইওয়ে ।  একটা ট্রাফিক সিগন্যাল মিস করাতে বাদামী রঙের একটা ভোক্সওয়াগানকে থামানো হল । প্যাট্রল অফিসাররা  অবাক হয়ে দেখলেন ভোক্সওয়াগানের সামনের ড্রাইভারের পাশের সিটটা নেই । সন্দেহ হওয়াতে গাড়ির ভেতরে সার্চ করা হল । পাওয়া গেল – নাইলনের দড়ি , সিঁধকাঠি , হ্যান্ডকাফ , মুখোশ , দস্তানা, স্ক্রু ড্রাইভার এবং আরো টুকিটাকি জিনিসপত্র । “এই ব্যাটা সিঁধেল চোর  না হয়েই যায় না” ভাবলেন প্যাট্রল অফিসাররা । গাড়ির মালিক  একান ওকান বিস্তৃত মনভুলানো হাসি দিয়ে অফিসারদের ভুজুং ভাজুং বোঝানোর চেষ্টা করল – বেরসিক অফিসাররা  হাতে হাতকড়া পড়িয়ে সে হাসির বিনিময় দিলেন  । অফিসাররা তখনো জানতেন না এইমাত্র তারা যাকে গ্রেফতার করলেন সে  আমেরিকার টপ টেন মোস্ট ওয়ান্টেড লোকদের একজন থিওডর রবার্ট বান্ডি ওরফে  টেড বান্ডি , নারীদের পশুর মতো ভোগ করে গলা টিপে হত্যা করা যার নেশা ।



পালাবি কোথায় ?

১৯৭৭ সালের জুন মাসে   বান্ডিকে Garfield County jail  থেকে  Pitkin County Courthouse    নিয়ে যাওয়া হয়একটা শুনানির জন্য বান্ডিকে সুযোগ দেওয়া হয় আত্মপক্ষ সমর্থন করার এবং হ্যান্ডকাফ খুলে  দেওয়া হয়  শুনানির বিরতির এক পর্যায়ে  বান্ডি  লাইব্রেরীতে যাওয়ায় আবেদন করেতার নিজের কেস নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য লাইব্রেরীতে যেয়ে সে একটা বুক সেলফের পেছনের জানালা দিয়ে  দুইতলা থেকে লাফ দেয় মাটিতে   গোড়ালি মচকিয়ে গেলেও  কোর্টের সীমানার বাহিরে চলে যেতে  সক্ষম হয় সে   পুলিশের দেওয়া রোডব্লক এড়াতে এস্পেন পর্বতমালার মধ্য দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে  কিন্তু পার্বত্য এলাকায় পথহারিয়ে ফেলে  বান্ডি ছয়দিন পর বান্ডি যখন পুলিশের কাছে  স্যারেন্ডার করে তখন ক্ষুদপিপাসায়  আর ক্লান্তিতে তারঅবস্থা ছিল খুবই কাহিল

ফেরারী বান্ডিকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশের দেওয়া রোডব্লক


জেলে ফিরে বান্ডি  আবার ফন্দি আঁটতে থাকে কিভাবে ফেরারী হওয়া যায় । প্রায় ৫০০ ডলারের বিনিময়ে সে একটা হ্যাকসো ব্লেড জোগাড় করে ফেলে । সন্ধ্যায় অন্য বন্দীরা যখন গোসল করতো সেই ফাঁকে সে জেলের সেলের সিলিঙ ফুটো করতে থাকে । ছয় মাসের অবিরাম  চেষ্টায়  এবং  ১৬ কেজি ওজন কমিয়ে প্রায় একফুট বর্গাকার গর্ত দিয়ে সিলিঙের ওপরে উঠতে সক্ষম হয়  বান্ডি বেশ  কয়েকবার রিহারসেল দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়  জেল থেকে পালানোর জন্য ।

১৯৭৭ এর ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ রাত । বেশীর ভাগ জেল কর্মীই বড়দিনের ছুটিতে। এই সুযোগ কাজে লাগায় বান্ডি । সিলিঙের গর্ত দিয়ে বের হয়ে নিমিষেই হাওয়া হয়ে যায় জেল থেকে ।

১৭ ঘন্টা পর ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে যখন জেল কর্মকর্তারা বান্ডির সেলের সিলিঙ্গে গর্তটা আবিষ্কার করেন  ততক্ষণে বান্ডি পগার পার হয়ে গেছে ।

এই ঘরের সিলিং ফুটো করেই জেল থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল বান্ডি 


মৃত্যুর চৌকাঠেঃ


জেল থেকে পালিয়ে বান্ডি হাজির হয় ফ্লোরিডাতে । সেখানে একের পর এক ধর্ষণ আর  নারকীয় হত্যাকান্ড চালাতে থাকে এফবিআই আর ফ্লোরিডার পুলিশদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ।

অবশেষে  ফেব্রুয়ারী ১২ তারিখে রাত ১ টার সময় পুলিশ অফিসার ডেভিড লি   ,  Alabama  স্টেট এর কাছে  এরেস্ট করেন  টেড বান্ডিকে মিঃ লি  টেড বান্ডিকে  সোজা নিয়ে যান  জেলে   । জেলে যাবার পথে  টেড বান্ডি আপন মনেই বলছিল –“ তুমি আমাকে মেরে ফেললেই ভালো করতে ,অফিসার”।

টেড বান্ডিকে তার অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয় ।     

১৯৮৯ সালের ২৪ শে জানুয়ারী স্থানীয় সময় সকাল  ৭:১৬  মিনিটে টেড বান্ডিকে ইলেক্ট্রিক চেয়ারে বসিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় । সে সময় জেলের বাহিরে প্রায় ২০০০ জনতা বিশেষ করে তরুনী এবং যুবতীরা জড়ো হয়েছিল । নেচে, গেয়ে, ফায়ারওয়ার্ক এর মাধ্যমে তারা উল্লাস প্রকাশ করছিল । ক্ষণে ক্ষণে স্লোগান উঠছিল – “বার্ন বান্ডি বার্ন”, “ ইউ আর ডেড, টেড”

বান্ডির মৃতদেহ পুড়িয়ে ছাই করে ফেলা হয় এবং তার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তা ওয়াশিংটনের   অজ্ঞাত স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয় ।

কিন্তু কেন ?

কি ছিল টেড বান্ডির এই অন্ধকার জগতের চালিকা শক্তি ? কেন  বিশ্ববিদ্যালয়ের উঁচু ডিগ্রীও টেড বান্ডিকে মানুষ বানাতে পারেনি ?

উত্তরটা খুবই চমক জাগানিয়া – পর্নোগ্রাফি

বারো তের বছরের ছোট্ট টেড বান্ডি যেদিন  বাসার বাহিরে পাড়ার মুদি দোকানে এবং ড্রাগস স্টোরে পর্নোগ্রাফিক ম্যাগাজিনের সন্ধান পেয়ে গেল সেইদিনই ছোট্ট টেডের মধ্যে জন্ম নিল একটা সিরিয়াল কিলার , রেপিস্ট স্বত্বা ।


(মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে ডক্টর জেমস সি. ডবসন এর নিকট একটি সাক্ষাৎকার দেয় টেড বান্ডি । সাক্ষাৎকারটি পড়ে আসুন –  এখান থেকে  ।  
অনুরোধ করব এই লিংকে যেয়ে সাক্ষাৎকারের ভিডিওটিও দেখে আসতে । মৃত্যুর চৌকাঠে পা দেওয়া মানুষটার কথাতে যে আবেগ মেশানো ছিল সেই আবেগ লেখাতে ধারন করার ক্ষমতা কাউকে দেওয়া হয়নি)


আপনি  পর্ন মুভি দেখছেন আর ভাবছেন আমি তো শুধু কিছুই করছি না , শুধু দেখছি ; কিন্তু আপনার পর্ন আসক্তি যে আরেকটা টেড বান্ডির জন্ম দেবে না তার নিশ্চয়তা কে দিবে ?  বেশ কিছু হাই কোয়ালিফাইড গবেষনায় [ http://tinyurl.com/hgs2zeu ] প্রমাণিত হয়েছে পর্ন আসক্তি এর  আসক্তদের মাঝে  যৌন নিপীড়ন করার প্রবণতা জাগিয়ে তোলে । 

আপনি কি চান একজন টেড বান্ডি হতে ? একজন ধর্ষক  ? 


মৃত্যুর চৌকাঠে দাঁড়িয়ে বলা টেড বান্ডির কিছু কথা এখানে না উল্লেখ করলেই  নয়-

“.........আমাদের মতো যারা মিডিয়ার হিংস্রতা বিশেষত পর্নোগ্রাফিক হিংস্রতা দ্বারা অতিমাত্রায় প্রভাবিত, তারা কেউই বাহ্যত দানবীয় নই। আমরা আপনাদেরই পুত্র, আপনাদেরই স্বামী। আর সবার মতোই আমরাও একটা পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে বেড়ে উঠেছিলাম। কিন্তু এখন ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে- পর্নোগ্রাফি যে কারো বাসার মধ্যে  ঢুকে পড়ে এক ঝটকায় বাসার বাচ্চাটাকে পারিবারিক কাঠামোর বাইরে বের করে নিয়ে আসে। ঠিক যেমনভাবে বিশ-ত্রিশ বছর আগে এটা আমাকে ছোবল মেরে বাইরে বের করে এনেছিলো। আমার বাবা-মা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে এসব থেকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারে আন্তরিক ছিলেন যেমনটা অপরাপর কট্টর খ্রিস্টান পরিবারেও হয় কিন্তু এসব প্রভাবকের ব্যাপারে সমাজ অনেকটাই শিথিল” 

“...... আমি কোনো সমাজবিজ্ঞানী নই এবং ভান ধরে এটাও বলবো না যে- সভ্য সমাজের চিরাচরিত ধারনায় আমার বিশ্বাস আছে। কিন্তু আমি দীর্ঘদিন যাবত কারাগারে বন্দী এবং এই সময়ের মধ্যে আমি এমন অনেকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি যারা ভায়োলেন্স ঘটানোর ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ। কিছু ব্যতিক্রম বাদে, তাদের প্রত্যেকেই পর্নোগ্রাফিতে গভীরভাবে আসক্ত ছিলো। নরহত্যা সংক্রান্ত এফ.বি.আই এর নিজেদের রিপোর্ট  বলে- সিরিয়াল কিলারদের সাধারণ আগ্রহের বিষয় হচ্ছে পর্নোগ্রাফি। সুতরাং এটাকে উপেক্ষা করার কোনো উপায়ই নাই”    

“......... আমি আশা করবো- আমি যাদের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়েছি তারা আমার অনুশোচনায় বিশ্বাস না করলেও এখন আমি যে কথাগুলো বলবো সেগুলো বিশ্বাস করবেন। আমাদের শহর, আমাদের সম্প্রদায় কিছু প্রভাবকের ব্যাপারে এতোটাই শিথিল যেগুলোর সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে।  আজ হোক কাল হোক এগুলো প্রকাশ পাবেই। মিডিয়ায় ভায়োলেন্স বিশেষত সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স এখন হরেক উপায়ে গিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার ভয় হয় যখন আমি ক্যাবল টি.ভি. দেখি। আজকাল সিনেমার মাধ্যমে যেসব ভায়োলেন্স আমাদের বাসা অবধি পৌঁছে গেছে, ত্রিশ বছর আগে সেগুলো এক্স-রেটেড অ্যাডাল্ট থিয়েটারেও দেখানো হতো না” 

এই কথাটা  খুব গুরুত্বপূর্ণ......
“.........যেটা আমি আগেও বলেছি- প্রভাবকগুলোর ব্যাপারে আমাদের সমাজের শিথিলতা চোখে পড়ার মতো। বিশেষতঃ এই ধরণের ভায়োলেন্ট পর্নোগ্রাফি। যখন সভ্য সমাজ টেড বান্ডিকে দোষারোপ করতে করতে পর্ন ম্যাগাজিনের পাশ দিয়ে দেখেও না দেখার ভান করে হেঁটে যাচ্ছে, তখন আসলে একদল তরুন তাদের অগোচরেই  টেড বান্ডিতে পরিণত হচ্ছে।  আক্ষেপের জায়গাটা ঠিক এখানেই”

দেখুন নারী স্বাধীনতা, নারীদের সমানাধিকার বিশেষ করে মুসলিম নারীদের নিয়ে পাশ্চাত্যের চিন্তাভাবনার কোন শেষ নেই , মুসলিম নারীদের জন্য  তাদের ফেমিনিস্টদের মায়াকান্নায়  আকাশ বাতাস ভারী হয়ে যায়  , অথচ দেখুন পাশ্চাত্যই কি সুনিপন ভাবে এই পৃথিবীটাতে  লক্ষ লক্ষ টেড বান্ডি তৈরি করার কাঁচামাল যোগান দিচ্ছে ......   প্রতি ৩৯ মিনিটে আমেরিকা একটা করে নতুন পর্ন মুভি আপলোড করছে , বিশ্বের  মোট পর্ন মুভির শতকরা ৮৫-৮৯ ভাগ বানাচ্ছে আমেরিকা একাই

 [http://tinyurl.com/9ys2k , http://tinyurl.com/jm8qtl8 ] পর্ন মুভি বানানোয় প্রথম ১০টা দেশের মধ্যে বেশীরভাগই   পাশ্চাত্যের 
[ http://tinyurl.com/zap2rap ] হলিউড, মিউজিক ভিডিও,  রিয়েলিটি শো, ফ্যাশন শো , সুন্দরী প্রতিযোগিতা, রেসলিং এইগুলার কথা না হয় নাই বললাম । 
 পাশ্চাত্যের পর্ন মুভি আর সেক্স ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা পুরনের জন্য মানব পাচারের শিকার হতে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মা বোন , লক্ষ লক্ষ ছোট ছোট দুধের শিশুদের । [http://tinyurl.com/zanm372 , http://tinyurl.com/hvofqnd, http://tinyurl.com/zn2yvy9 ]

পাশ্চাত্য   নারীদের কিভাবে  স্বাধীনতা  দিবে ? যখন  তারাই নারীদের   জন্য এই পৃথিবীটাকে  করে তুলেছে  বসবাসের অযোগ্য ।

আমেরিকাতে প্রতি  ১০৭ সেকেন্ডে একটা করে ধর্ষণ হয় [http://tinyurl.com/k8ehojc ] , তাদের  তরুনরা এতোটাই পশু যে প্রতি ৪ জন নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন ধর্ষিত হয় তাদেরই পুরুষ ক্লাসমেটদের দ্বারা [http://tinyurl.com/jagb8ky ] ,  প্রতি ৬ জন নারীর মধ্যে ১ জন এবং প্রতি ৩৩ জন পুরুষের মধ্যে একজন তাদের লাইফটাইমে একবার হলেও  ধর্ষণের শিকার হয়। [http://tinyurl.com/nm3gp5o ] ১৮ বছরে পা দেবার আগেই প্রতি ৪ জন মেয়ে শিশুর ১জন এবং প্রতি ৬ জন ছেলে শিশুর ১ জন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়[http://tinyurl.com/mzfxksp]
বাবার হাতে মেয়ে, ভাইয়ের হাতে বোন ধর্ষণের শিকার হয় [http://tinyurl.com/hjq2a29  ,  http://tinyurl.com/zerbb5v ]
মা বোনেরা অফিসে আদালতে, রাস্তা ঘাটে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় [http://tinyurl.com/mk2dmcr , http://tinyurl.com/pbzgmdrhttp://tinyurl.com/hvhqkcq ] 

এতকিছুর পরেও যখন পাশ্চাত্য নারী স্বাধীনতার বুলি আওড়াই তখন কুরআনের একটা আয়াতই কেবল মনে পড়ে ……
“…তাদের যখন বলা হয় এই পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করোনা , তখন তারা বলে আমরাই তো বরং শান্তি স্থাপন কারী (সূরা বাকারাহ , আয়াত-১১)   

আল্লাহ (সুবঃ) আমাদের অন্তর গুলো খুলে দিক , সত্য গ্রহণ করার তৌফিক দিক । (আমীন)

                                       (শেষ) 


পর্নোগ্রাফি যেভাবে আমাকে সিরিয়াল কিলার বানিয়েছেঃ টেড বান্ডি’র অন্তিম সাক্ষাৎকার

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।




টেড বান্ডি একজন কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার। ১৯৮৯ সালের ২৪ জানুয়ারী মৃত্যুর অব্যবহিত আগ মুহূর্তে মনোবিদ জেমস সি. ডবসনের কাছে তিনি এই কৌতূহলোদ্দীপক সাক্ষাৎকার প্রদান করেন।
টেড বান্ডি  ছিলেন খুবই সুদর্শন এক যুবক।  আইনের তুখোড় এই ছাত্র কীভাবে এই ভয়ঙ্কর অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন?

জেমস সি. ডবসন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ এর বর্ণনা দিচ্ছেন এইভাবে- “ আমাকে সাতটা স্টিলের দরজা এবং মেটাল ডিটেক্টরের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তার সঙ্গে কথা বলার জন্যে। এগুলো এতোই সংবেদনশীল ছিলো যে আমার টাই ট্যাক এমনকি জুতার পেরেক পর্যন্ত অ্যালার্ম বাজিয়ে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট ছিলো।  

অবশেষে আমি একদম ভেতরের একটা কক্ষে গিয়ে পৌঁছলাম যেটা আমার এবং বান্ডির সাক্ষাৎ এর জন্যে পূর্বনির্ধারিত। খানিক বাদে বান্ডিকে সেখানে আনা হলো- ছয়জন কারারক্ষী তাকে ঘিরে ছিলো। আমাদের কথোপকথনের মাঝখানে হঠাৎ করে আলো কমিয়ে দেওয়া হয়। ”


জেমস সি. ডবসনঃ এখন প্রায় বেলা আড়াইটা।  অন্যথা না হলে আগামীকাল সকাল সাতটা নাগাদ আপনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা। ঠিক এই মুহূর্তে আপনার মনের মধ্যে কী চলছে? বিগত কয়েকদিনে ঠিক কী ধরণের  চিন্তা ভাবনা এসেছে আপনার মনের মধ্যে

টেডঃ আমি এটা বলবো না যে- সবকিছু আমার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অথবা যা যা হতে চলেছে তার জন্যে আমি পুরোপুরি প্রস্তুত। মনে হচ্ছে- আমি প্রতিটা মুহূর্তের হিসাব রাখতে পারছি। মাঝেমধ্যেই স্নায়ুর উত্তেজনা হ্রাস পায়- তখন নিজেকে বড্ড শান্ত, খুব চুপচাপ মনে হয়। আবার মাঝেমধ্যে খুব বেশী অস্থির লাগে। ঠিক এই মুহূর্তে আমার মনের মধ্যে যেটা চলছে তা হচ্ছে- আমাকে যতোটা সম্ভব প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা ঘণ্টার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে।এটা প্রতিটা মুহূর্ত ফলপ্রসূভাবে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। ঠিক এই মুহূর্তে আমি কিছুটা স্থিরতা অনুভব করছি। এর একটা বড়ো কারণ হচ্ছে- আমি এখন আপনার  সঙ্গে কথা বলছি।



জেমস সি. ডবসনঃ নথি অনুযায়ী আপনি অনেক মহিলা এবং অল্পবয়সী তরুণীদের হত্যার দায়ে অভিযুক্ত।

টেডঃ  হ্যাঁ! এটা সত্যি




জেমস সি. ডবসনঃ কীভাবে এটা হলো? চলুন পেছন থেকে ঘুরে আসা যাক। কোন ঘটনাগুলো আপনার এই ধরণের আচরণকে প্রভাবিত করেছিলো? আপনার মতে- আপনি স্বাস্থ্যকর একটা পরিবেশে বেড়ে উঠেছিলেন। আপনি শারীরিক, মানসিক অথবা সেক্সুয়াল হেনস্থারও শিকার হন নি 
কখনো।  

টেডঃ  না, হই নি। এটাই সবচেয়ে বড়ো ট্র্যাজেডি। আমি দু’জন স্নেহপ্রবণ পিতা-মাতার সংস্পর্শে খুবই চমৎকার একটা বাসায় বেড়ে উঠেছি। আমরা পাঁচ ভাই আর এক বোন ছিলাম বাবা-মায়ের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। আমরা নিয়মিত গির্জায় যেতাম। আমার বাবা-মা মদ তো দূরে থাক সিগারেট পর্যন্ত খেতেন না এমনকি জুয়াও খেলতেন না। কোনো শারীরিক হেনস্থা অথবা কলহও ছিলো না আমাদের বাসায়। আমি বলছি না- সবকিছু একেবারে যথাযথ ছিলো কিন্তু এটা ছিলো সন্তোষজনক, একটা ভালো খ্রিস্টান পরিবার।  আমি আশা করবো- কেউ খুব সহজে আমার পরিবারকে দোষারোপ করে বসবেন না আমার এহেন আচরণের জন্যে। আমার সঙ্গে আসলে কী হয়েছিলো- সেটা আমি অকপটে বলার চেষ্টা করছি।

বারো-তেরো বছর বয়সের একটা বাচ্চা ছেলে হিসাবে একদিন স্থানীয় মুদির দোকানে এবং ড্রাগ স্টোরে অপ্রত্যাশিতভাবেই আমি কিছু সফটকোর পর্নোগ্রাফির সন্ধান পেয়ে যাই। কমবয়সী তরুণেরা পাড়াপড়শিদের মধ্যে এসবের বিস্তার ঘটায় আর আমাদের প্রতিবেশীরা কী করতো জানেন? দরকার শেষে তারা এগুলো আবর্জনার স্তুপে ছুঁড়ে ফেলতো। সময়ের পরিক্রমায় আমরা অধিক উত্তেজক বইয়ের সংস্পর্শে আসলাম যেখানে আরও অনেক বেশী ছবি ছিলো। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই- এর মধ্যে গোয়েন্দা ম্যাগাজিনও ছিলো। নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি- সবচেয়ে ক্ষতিকর পর্নোগ্রাফি হচ্ছে সেগুলো যেগুলোতে ভায়োলেন্স বিশেষত সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স উপস্থিত থাকে। এই দুইয়ের সমন্বয় এমন এক ধরণের বিধ্বংসী  আচরণের জন্ম দেয় যা বর্ণনা করাও ভীতিকর। 

জেমস সি. ডবসনঃ আমাক এই ব্যাপারে বিস্তারিত বলুন। সেই মুহূর্তে আপনার মনের মধ্যে ঠিক কী চলছিলো ?

টেডঃ আরও কিছু বলার আগে এটা নিশ্চিত হওয়া জরুরী যে- আমি যা যা বলছি মানুষ তার পুরোটা বিশ্বাস করবে। আমি পুরো দায়ভার পর্নোগ্রাফির উপর চাপিয়ে দিচ্ছি না। আমি বলছি না যে- এটাই আমাকে বাইরে বের করে এনে খুনগুলো করতে বাধ্য করেছিলো। আমি যা যা করেছি তার পুরো দায়ভার আমি নিজে বহন করতে রাজী আছি। প্রশ্নটা এখানে নয়।  যেটা বুঝতে হবে সেটা হচ্ছে- এটা কীভাবে ধ্বংসাত্মক আচরণের  ছাঁচটা গড়ে দেয়।

জেমস সি. ডবসনঃ তার মানে এটা আপনার কল্পনার জগৎকে প্রভাবিত করেছিলো।

টেডঃ শুরুর দিকে এটা এই ধরণের চিন্তা প্রক্রিয়াকে ইন্ধন যোগায়। কিছু সময় বাদে এর কারণেই সম্পূর্ণ আলাদা একটা সত্ত্বা নিজের ভেতরে স্পষ্ট হয়ে উঠে।  

জেমস সি. ডবসনঃ মুদ্রিত সামগ্রী ( Printed materials ) , ছবি, ভিডিও- এগুলোর মাধ্যমে আপনি আপনার কল্পনার জগতের যতোটা গভীরে সম্ভব গিয়েছিলেন। আর তারপরে এই আসক্তিই আপনাকে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যে প্ররোচিত করেছিলো, তাই তো ?  


টেডঃ  এসবে একবার আসক্ত হয়ে গেলে ( হ্যাঁ, আমি এটাকে আসক্তিই বলি ) আপনি অধিক শক্তিশালী, অধিক জোরালো উত্তেজকের সন্ধানে লেগে যাবেন। অপরাপর আসক্তির মতোই আপনি হন্যে হয়ে আরও শক্তিশালী কিছু খুঁজে বেড়াবেন যেটা আপনাকে অধিক উত্তেজনা এনে দিতে পারে। এই তালাশ ততোক্ষণ পর্যন্ত চলবে যতোক্ষণ না আপনি খাদের এক্কেবারে কিনারে এসে দাঁড়াচ্ছেন। এই অবস্থানে এসে আপনি ভাবতে শুরু করবেন- কেবল পড়ে অথবা দেখে আর চলছে না, আসল মজা সেই কাজগুলো নিজে এক্সপেরিয়েন্স করার মধ্যে।

জেমস সি. ডবসনঃ কাউকে ভিকটিমাইজ করার আগে আপনি ঠিক কতোদিন এই অবস্থায় ছিলেন ?

টেডঃ  প্রায় দুই বছরের মতো। ক্রিমিন্যাল এবং হিংস্র আচরণের ব্যাপারে তুমুল আগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে এক ধরণের সঙ্কোচ কাজ করছিলো আমার ভেতরে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, প্রতিবেশী, স্কুল, গির্জা আমার মধ্যে এইধরণের সঙ্কোচবোধ তৈরি করে দিয়েছিলো।  
আমি জানতাম- এই ধরণের কাজ সম্পাদনা তো দূরে থাক, এই ধরণের চিন্তা মনে আনাও ভুল। কিন্তু আমি ছিলাম খাদের এক্কেবারে কিনারে- নিজেকে বিরত রাখার শেষ চেষ্টাটুকু আমি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পর্নোগ্রাফি আমার কল্পনার জগৎকে এমনভাবে প্রভাবিত করেছিলো যে আমি প্রতিনিয়ত কেবল জর্জরিতই হচ্ছিলাম।  

জেমস সি. ডবসনঃ আপনার কি মনে আছে- কোন ব্যাপারটা আপনাকে খাদের কিনারে এনে দাঁড় করিয়েছিলো ? যাবতীয় বিধি-নিষেধ হাওয়ায় উড়িয়ে দিলেন কীভাবে ?

টেডঃ এটা বর্ণনা করা খুবই কষ্টসাধ্যধ্বংসের চূড়ায় পৌঁছানোর জন্যে  আমার ভেতরে এক অদম্য উত্তেজনা কাজ করতো এবং আমি  জানতাম- এটা আমার নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। শৈশবে যে সীমারেখাগুলোর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিলো সেগুলো আমাকে পেছন থেকে টেনে ধরার জন্যে যথেষ্ট ছিলো না। 

জেমস সি. ডবসনঃ এটাকে কি যৌন উত্তেজনা বলা যায় ?

টেডঃ এটাকে একরকম যৌন উত্তেজনা বলা চলে। এর সঙ্গে আরও কিছু ব্যাপার আছে যেমন- বিধ্বংসী শক্তি গড়ে তোলার ব্যাপারে একরকম বাধ্যবাধকতা কাজ করতো। আরেকটা ব্যাপার যেটা না বললেই নয় সেটা হচ্ছে- অ্যালকোহলের সঙ্গে আমার সখ্যতা। পর্নোগ্রাফির ব্যাপারে আমার নগ্ন আসক্তির সঙ্গে এর যোগসূত্রটা কোথায় জানেন ? অ্যালকোহল আমার সঙ্কোচকে হ্রাস করেছে আর পর্নোগ্রাফি এটাকে ধীরে ধীরে বিনষ্ট করেছে।



জেমস সি. ডবসনঃ প্রথম খুন করার পরে আপনার উপর এর কী রকম প্রভাব পড়েছিলো ?  এরপরের দিনগুলোর অভিজ্ঞতা কী রকম ছিলো ?   

টেডঃ এতোদিন পরে এসে এই ব্যাপারে কথা বলা একটু কঠিন। ব্যপারটা যদিও বলে বুঝানো কঠিন তবুও আমি চেষ্টা করছি। এটা অনেকটা  ভয়ঙ্কর কোনো দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার মতো ব্যাপার।  অতিনাটকীয়তা করতে না চাইলে আমাকে বলতে হবে-  এর সঙ্গে কেবল একটা জিনিসেরই তুলনা চলে। আমার নিজেকে বশীভূত মনে হচ্ছিলো- যেনো খুব ভয়ঙ্কর কিছু ভর করেছিলো আমার উপর। পরের দিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে আমার কেবলই মনে হচ্ছিলো- আমি যা করেছি তার জন্যে আইনের চোখে এবং অবশ্যই ঈশ্বরের চোখে আমি অপরাধী। খানিক বাদেই যখন আমার খেয়াল হলো- পুরো কাজটা আমি  আমার নৈতিক মূল্যবোধকে অক্ষত রেখে খুবই ঠাণ্ডা মাথায় করেছি, আমি আতঙ্কে শিউরে উঠলাম।

জেমস সি. ডবসনঃ তার মানে খুনটা করার আগে আপনি জানতেনও না যে- আপনি এই ধরণের একটা কাজ করতে সমর্থ ?

টেডঃ আসলে এই ধরণের কাজ করার জন্যে ভেতরে ভেতরে যে প্রচণ্ড হিংস্র বাসনা কাজ করে- সেটা বর্ণনাতীত। আর একবার সেই কামনা চরিতার্থ হয়ে যাওয়া মাত্র ভেতরের বিধ্বংসী শক্তি রাতারাতি কোথায় যেনো মিলিয়ে যায়- আমি তখন নিজের মধ্যে ফিরে আসি। আসলে আমি ছিলাম খুবই সাধারণ একজনআমি সরাইখানায় গিয়ে পড়ে থাকতাম না অথবা অকর্মাদের মতো ইতস্তত ঘুরেও বেড়াতাম না। আমি বাহ্যত যৌন বিকারগ্রস্থও ছিলাম না যাকে একপলক দেখেই লোকে বলে দিতে পারে- “ এর মধ্যে কোনো ভেজাল আছে। ” আমি ছিলাম খুবই সাধারণ একজন। আমার অনেক ভালো বন্ধু-বান্ধব ছিলো।

আমাদের মতো যারা মিডিয়ার হিংস্রতা বিশেষত পর্নোগ্রাফিক হিংস্রতা দ্বারা অতিমাত্রায় প্রভাবিত, তারা কেউই বাহ্যত দানবীয় নই। আমরা আপনাদেরই পুত্র, আপনাদেরই স্বামী। আর সবার মতোই আমরাও একটা পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে বেড়ে উঠেছিলাম। কিন্তু এখন ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে- পর্নোগ্রাফি যে কারো বাসার মধ্যে  ঢুকে পড়ে এক ঝটকায় বাসার বাচ্চাটাকে পারিবারিক কাঠামোর বাইরে বের করে নিয়ে আসে। ঠিক যেমনভাবে বিশ-ত্রিশ বছর আগে এটা আমাকে ছোবল মেরে বাইরে বের করে এনেছিলো। আমার বাবা-মা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে এসব থেকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারে আন্তরিক ছিলেন যেমনটা অপরাপর কট্টর খ্রিস্টান পরিবারেও হয় কিন্তু এসব প্রভাবকের ব্যাপারে সমাজ অনেকটাই শিথিল।  


জেমস সি. ডবসনঃ এই দেয়ালের বাইরেই শতো শতো সাংবাদিক আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্যে গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আপনি বেছে বেছে আমাকেই প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন কারণ আপনার বিশেষ কিছু বলা আছে। আপনার মনে হয়েছিলো- সফটকোর পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে হার্ডকোর পর্নোগ্রাফির দুনিয়ায় অনুপ্রবেশ ঘটে। এগুলো দর্শক ছাড়াও আরও অনেকভাবেই অন্যদের অপরিমেয় ক্ষতির কারণ হচ্ছে যেমন- মেয়েদের অ্যাবইউজড হওয়া এবং পরবর্তীতে নৃশংস মৃত্যুর জন্যে এগুলোই দায়ী।    

টেডঃ আমি কোনো সমাজবিজ্ঞানী নই এবং ভান ধরে এটাও বলবো না যে- সভ্য সমাজের চিরাচরিত ধারনায় আমার বিশ্বাস আছে। কিন্তু আমি দীর্ঘদিন যাবত কারাগারে বন্দী এবং এই সময়ের মধ্যে আমি এমন অনেকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি যারা ভায়োলেন্স ঘটানোর ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ। কিছু ব্যতিক্রম বাদে, তাদের প্রত্যেকেই পর্নোগ্রাফিতে গভীরেভাবে আসক্ত ছিলো। নরহত্যা সংক্রান্ত এফ.বি.আই এর নিজেদের রিপোর্ট  বলে- সিরিয়াল কিলারদের সাধারণ আগ্রহের বিষয় হচ্ছে পর্নোগ্রাফি। সুতরাং এটাকে উপেক্ষা করার কোনো উপায়ই নাই।  

জেমস সি. ডবসনঃ এই প্রভাবকগুলো না থাকলে আপনার জীবন কী রকম হতে পারতো ?  

টেডঃ আমি জানি- এটা অনেক বেশি ভালো হতো। শুধু আমার জন্যেই না বরং আরও অনেক মানুষ যেমন ভিকটিম এবং তাদের পরিবারের জন্যেও ভালো হতো। এখানে কোনো প্রশ্নেরই কোনো অবকাশ নাই যে-  অনেক চমৎকার একটা জীবন হতো আমার।  আমি নিশ্চিত- প্রভাবকগুলো না থাকলে আমি কখনোই এই ধরনের ভায়োলেন্সের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতাম না। 


জেমস সি. ডবসনঃ আপনি কি কখনো আপনার সকল ভিকটিম এবং তাদের পরিবারের কথা ভেবে দেখেছেন ? এতোদিন বাদে তাদের জীবন আর আগের মতো নেই। তারা আর কখনোই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে না- এটা ভাবলে কি আপনার মাঝে মধ্যে গভীর অনুশোচনা হয় না ?


টেডঃ    আমি জানি- মানুষ কেবল আমাকেই আমার কৃতকর্মের জন্যে দোষারোপ করবে। কিন্তু ঈশ্বরের কৃপায় দেরীতে হলেও আমি এমন একটা অবস্থানে এসে পৌঁছেছি যেখানে দাঁড়িয়ে আমি তাদের অসহনীয় বেদনা, তাদের ভোগান্তি অনুভব করতে পারি।  হ্যাঁ, অবশ্যই পারি ! বিগত কয়েকদিনে আমার সঙ্গে কয়েকজন তদন্তকারী কর্মকর্তার কথা হয়েছে অমীমাংসিত কেসগুলো নিয়ে- যেগুলোতে আমার সংশ্লিষ্টতা ছিলো। এতোদিন বাদে এসে এসব ব্যাপারে কথা বলা বেশ কঠিন। কারণ এটা ভয়ঙ্কর সেইসব অনুভূতি এবং চিন্তা-ভাবনাগুলোকে জাগিয়ে তোলে যেগুলো আমি একসময় বেশ ঠাণ্ডা মাথায় সম্পাদনা করেছিলাম।  অনুভূতিগুলোর দুয়ার পুনরায় খুলে গেছে এবং আমি সেইসব বিভীষিকার কথা ভাবলেই আঁতকে উঠি।  

 আমি আশা করবো- আমি যাদের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়েছি তারা আমার অনুশোচনায় বিশ্বাস না করলেও এখন আমি যে কথাগুলো বলবো সেগুলো বিশ্বাস করবেন। আমাদের শহর, আমাদের সম্প্রদায় কিছু প্রভাবকের ব্যাপারে এতোটাই শিথিল যেগুলোর সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে।  আজ হোক কাল হোক এগুলো প্রকাশ পাবেই। মিডিয়ায় ভায়োলেন্স বিশেষত সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স এখন হরেক উপায়ে গিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার ভয় হয় যখন আমি ক্যাবল টি.ভি. দেখি। আজকাল সিনেমার মাধ্যমে যেসব ভায়োলেন্স আমাদের বাসা অবধি পৌঁছে গেছে, ত্রিশ বছর আগে সেগুলো এক্স-রেটেড অ্যাডাল্ট থিয়েটারেও দেখানো হতো না।


জেমস সি. ডবসনঃ কাটা-ছেঁড়া দেখানো হয় এমন সব চলচ্চিত্রের কথা বলছেন?

টেডঃ দৃশ্যমান ভায়োলেন্সের চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে এইটা। বিশেষতঃ যখন শিশুরা অরক্ষিত থাকে অথবা তারাও যে একদিন টেড বান্ডিতে বদলে যেতে পারে- এ ব্যাপারে অসতর্ক থাকে, তখন তাদের মধ্যে এই ধরণের আচরণ অনুকরণ করার প্রবণতা জন্মায়।   

জেমস সি. ডবসনঃ আপনার কি মনে হয় রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া এই সাজা আপনার প্রাপ্য?
টেডঃ খুব ভালো একটা প্রশ্ন করেছেন। মিথ্যা বলবো না- আমি  মরতে চাই না। এই শাস্তিটা আমার প্রাপ্য। অবশ্যই সমাজের সর্বোচ্চ শাস্তিটাই আমার প্রাপ্য। আমি মনে করি- আমি এবং আমার মতো অন্য যারা আছে তাদের থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখাটা সমাজের অধিকার। এ ব্যাপারে  সন্দেহের কোনো অবকাশ নাই। আমি আশা করবো- আমাদের আলোচনা থেকে এই ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে যে, সমাজের তার নিজের কাছ থেকেই সুরক্ষা দরকার সবচেয়ে বেশী।

 যেটা আমি আগেও বলেছি- প্রভাবকগুলোর ব্যাপারে আমাদের সমাজের শিথিলতা চোখে পড়ার মতো। বিশেষতঃ এই ধরণের ভায়োলেন্ট পর্নোগ্রাফি। যখন সভ্য সমাজ টেড বান্ডিকে দোষারোপ করতে করতে পর্ন ম্যাগাজিনের পাশ দিয়ে দেখেও না দেখার ভান করে হেঁটে যাচ্ছে, তখন আসলে একদল তরুন তাদের অগোচরেই  টেড বান্ডিতে পরিণত হচ্ছে।  আক্ষেপের জায়গাটা ঠিক এখানেই।  

আমাকে মেরে ফেললেই ফুটফুটে বাচ্চাগুলো তাদের বাবা-মা’র কোলে ফিরে যাবে না অথবা আমার মৃত্যুতে তাদের কষ্টও লাঘব হবে না। কিন্তু এখনো অনেক ছোটো ছোটো বাচ্চা  যারা  এখন হয়তো রাস্তায় খেলাধুলায় রত, হয় কাল নয়তো পরশু মারা পড়বে। কারণ কী জানেন? অল্পবয়স্ক অনেক তরুণের কাছে আপত্তিকর ওইসব সামগ্রী এখন সহজলভ্য।   

এই সাক্ষাৎকার গ্রহণের পরের দিন ঠিক সকাল সোয়া সাতটায় টেড বান্ডির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।


 অনুবাদ করেছেন- নাফিস রায়হান রিদিত । আল্লাহ (সুবঃ) তাঁকে উত্তম প্রতিদান দান করুক । (আমীন)

টেড বান্ডি সম্পর্কে জানতে পড়ুন - 
১) সিরিয়াল কিলার প্রথম পর্ব - http://lostmodesty.blogspot.com/2016/04/blog-post_18.html

২) সিরিয়াল কিলার দ্বিতীয় পর্ব- http://lostmodesty.blogspot.com/2016/04/blog-post_22.html