বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।
কতটা বিপদজনক ?
প্রত্যেকবারই দেখি, দিনের বেলা ট্রেন যখন ঠিক যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে যায়, নিতান্তই কাঠখোট্টা , নীরস লোক ছাড়া প্রায় সবাই জানালা দিয়ে উঁকি ঝুঁকি মারে বাহিরের যমুনার রূপ দেখার জন্য । এ জিনিস যেন পুরোনো হবার নয় । একবার দেখলে বার বার দেখতে ইচ্ছে করে । হল থেকে বাসায় যাচ্ছি । ট্রেন যখন যমুনা সেতুর ওপরে উঠেছে , আমি করিডোরে হাঁটাহাঁটি করছি । যথারীতি প্রায় সবাই দাঁড়িয়ে , বসে জানালা দিয়ে উঁকি ঝুঁকি মেরে তাদের প্রকৃতি প্রেমের পরিচয় দিচ্ছে , এক মধ্যবয়স্ক লোক দেখি মোবাইলের স্ক্রিনে বুঁদ হয়ে আছে । আশে পাশে কী হচ্ছে তার কোন হুঁশ জ্ঞান নেই । পাশ দিয়ে যাবার সময় চোখের কোন দিয়ে তাকালাম একটু, কি এত মজার জিনিস দেখছে ব্যাটা তা দেখার জন্য । আস্তাগফিরুল্লাহ...... আস্তাগফিরুল্লাহ ...
আমরা অনেকেই যে ভুল ধারনাটা করে বসি সেটা হল পর্নআসক্তি শুধুমাত্র অবিবাহিত ছেলে /মেয়েদের আছে । কিন্তু আমাদের খোলা চোখে কখনোই ধরা পড়ে না যে মধ্যবয়স্ক বিবাহিত শিক্ষিত অশিক্ষিত দুই ধরণের লোকদের মধ্যেও এই সমস্যা প্রবল । আমাদের সমাজে বিশেষ করে মফস্বল এবং গ্রামের দিকগুলোতে একশ্রেনীর মধ্যবয়স্ক পুরুষ আছে যারা ইন্টারনেট মানে বোঝে পর্নমুভি , চটিগল্প এই সব । একটু খেয়াল করলেই দেখবেন রিকশাওয়ালা, বাস /ট্রাকের ড্রাইভার, হেল্পার মানে এই ক্যাটাগরির লোকগুলো ইন্টারনেট, মোবাইল এবং স্যাটেলাইট চ্যানেলের কল্যানে খুব মারাত্বক রকমের অশ্লীলতার মধ্যে ডুবে আছে । পর্নমুভি বলুন, আইটেম সং বলুন আর চটিগল্প সবখানেই তাদের অবাধ বিচরণ । বিবাহিত মধ্যবয়স্কদের এই পর্ন/ আইটেম সং আসক্তি খুবই ভয়ংকর রূপ ধারন করতে পারে ।
পর্ন মুভি দেখার ফলে অনেকেই যৌন সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন বা বিছানায় ঠিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না সংসারে শুরু হয় অশান্তি ।
“ডাক্তারি অভিজ্ঞতায়ও দেখেছি, পর্নোগ্রাফি দর্শকের যৌন-কর্মক্ষমতার ক্ষতি করে। পর্ন-দর্শকদের প্রিম্যাচিউর ইজ্যাকুলেশন (দ্রুত বীর্যপাত) এবং ইরেকটাইল ডিসফাংশনে (পুরুষাঙ্গ শৈথিল্য) ভোগার প্রবণতা থাকে।
কাগজ, সেলুলয়েড ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপ্রাকৃতিক যৌন অভিজ্ঞতায় এত বেশি সময় খরচ করায় তাদের জন্য সত্যিকারের মানুষের সাথে সেক্স করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। পর্নোগ্রাফি তাদের যৌন অভিজ্ঞতার ধরণ ও পরিমাণ নিয়ে প্রত্যাশা ও চাহিদা বাড়িয়ে দিচ্ছে, একই সময়ে সেক্স উপভোগ করার ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে।”
– ড. ম্যারিঅ্যান ল্যাডেন
একবার পর্ন আসক্ত হয়ে গেলে সঙ্গীর মাঝে আর প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া না , তাকে শুধু ভোগ্য দ্রব্য মনে হয় । অনেক স্বামী/স্ত্রী তাদের সঙ্গীদেরকে বাধ্য করেন বিছানায় পর্নস্টারদের অনুকরণ করতে । অনেক স্বামীই স্ত্রীকে তো রেপ পর্যন্ত করে ফেলেন –ভালোবাসা হারিয়ে যায় , মধ্যরাতে স্বামীর স্পর্শ স্ত্রীর শরীরে আর শিহরণ জাগায় না , মনে হয় একটা পশু তাকে ছিড়ে ছিবড়ে ফেলছে । ঝড় থেমে গেলে স্বামী পাশ ফিরে ঘুমিয়ে যান , স্ত্রী বেচারী জেগে থাকেন একজোড়া সিক্ত চোখ আর একদলা ঘৃণা নিয়ে । একসময় ভেঙ্গে যায় সংসার ।
“ তার কাছে আমি রক্ত মাংসের একজন মানুষ ছিলাম না , ছিলাম একটা ভোগ্য পণ্য । বিছানায় সে আমার সঙ্গে ঠিক মতো প্রেম করতো না , যেন বিছানায় শুধু তার শরীরটাই উপস্থিত , মন থাকতো অন্য কোথাও – হয়তোবা সেই পর্ন অভিনেত্রীদের কাছে ; যাদের কথা চিন্তা করে সে উত্তেজিত হতো এবং আমার শরীরের ওপরে ঝাল মিটাতো ...... ”
একজন পর্ন আসক্ত স্বামীর হতভাগ্য স্ত্রী এভাবেই বর্ণনা করেন কীভাবে পর্ন আসক্তি তাঁর স্বামীকে পশু বানিয়ে ফেলেছিল । (Bergner & Bridges )
একবার পর্ন আসক্ত হয়ে গেলে নিজেদের বঊ/স্বামী’র শরীর দিয়ে তাদের আর পোষায় না । পর্ন স্টার / আইটেম গার্ল এর কাছে নিজেদের বউ/স্বামীকে তখন খুব পানসে মনে হয় । তাদের দরকার হয় নতুন শরীরের । তাছাড়া একটা আর কয়দিন চলে – এরকম মানসিকতা পোষণ করে এমন পাবলিকেরও অভাব এই দেশে নাই ।
বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় যেহেতু একের অধিক বিয়ে করাকে খুবই বাঁকা চোখে দেখা হয় । কাজেই তাদের বিকৃত লালসা চরিতার্থ করার জন্য তারা বেছে নেয় অন্য রাস্তা । শুরু করে পরকীয়া , ব্যাভিচার । অনেক সময় কোপ পড়ে বাসার কাজের মেয়ে , ছাত্রী, অফিসের অধস্তন নারী কর্মচারী এই শ্রেণীর মহিলাদের উপর । পর্নমুভির গল্পগুলোও এমন ভাবে সাজানো হয় যেন অফিসের অধস্তন নারী কর্মচারীরা বস্দের সঙ্গে শুতে খুবই উদগ্রীব । আর এখনকার দিনের মুভি , নাটকের কাহিনীও এই কামের আগুনে কেরোসিন ঢেলে দিচ্ছে ।
সবচেয়ে জঘন্য ব্যাপার হলো অনেক অনেক মানুষ আজকাল ইন্সেস্ট চটিগল্প পড়ে বা এই কন্সেপ্ট নিয়ে বানানো পর্নমুভি গুলো গোগ্রাসে গিলে । বিবাহিত, অবিবাহিত সবাই । বাঙ্গালী গর্ব করে তার ভাষা নিয়ে , কোটি কোটি টাকার ফুল নষ্ট করে শহীদ মিনারে , দেশ টা মা না বলে আবেগে "কাইন্দালসে" টাইপ অবস্থা অথচ এই বাঙ্গালীই ইন্টার নেটের এমন অবস্থা করে ছেড়েছে যে গুগলে মা বা বোন লিখলেই যে অটোসাজেশান গুলো আসে তা স্বাভাবিক মস্তিষ্কের কোন মানুষের পক্ষে হজম করা সম্ভব না । গাঞ্জার কল্কিতে দু’টান মেরে আসলে অবশ্য ভিন্ন কথা ।
এইসব বিকৃত লোকদের লালসার শিকারে পরিণত হয় তাদেরই কোন নিকটাত্মীয়। বিশেষ করে খালু, ফুফা,দুলাভাই ,দেবর এরকম আত্মীয়ের দ্বারা অনেকই যৌন নিপীড়নের শিকার হয় । বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও একটু খোঁজ খবর করে দেখেন – অবস্থা টের পাবেন ।
......... চলবে ইনশা আল্লাহ
অবশ্যই পড়ুনঃ
১০৮ টি নীলপদ্ম সিরিজের সবকয়টি পর্ব-
প্রথম পর্ব-https://goo.gl/4oSpTV
দ্বিতীয় পর্ব- https://goo.gl/98xQZV
দ্বিতীয় পর্ব- https://goo.gl/98xQZV
No comments:
Post a Comment