বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।
কাগজ-কলম নিয়ে বসে যান নিরিবিলি কোনো রুমে। তারপর স্মৃতি খুঁড়ে বের করে আনুন হস্তমৈথুন করা, পর্ন ভিডিও দেখা বা চটিগল্প পড়ার ঠিকপরের অনূভুতিগুলো। বিস্তারিত লিখুন হস্তমৈথুন করার পর বা পর্নভিডিও দেখার পর আপনার কতটা খারাপলাগে, কতবার নিজেকে ধিক্কার দেন, কতবার আপনার মাটির সাথে মিশেযেতে ইচ্ছে করে। কেন আপনি হস্তমৈথুন বা পর্নোগ্রাফি দেখা ছাড়তে চান। এক এক করেলিখুন সবকিছুই। খুঁটিনাটি কিছুই বাদ দেবেন না। খুঁজে বের করুনকেন আপনি হস্তমৈথুন করেন বা পর্ন ভিডিও দেখেন। লেখা শেষে সযত্নে রেখে দিন কাগজগুলো। পরে আমাদের কাজে লাগবে এগুলো।
.
এবার একটি ডায়েরি বা খাতা নিয়েবসুন। তারপর লিখুন, যে বছরথেকে আপনি হস্তমৈথুন করা শুরু করেছেন বা পর্ন দেখাশুরু করেছেন সে বছর এবংতারপাশে লিখুন দিনে কতবার হস্তমৈথুন করতেন বা কতক্ষণ পর্ন দেখতেন। পরের লাইনতার পরের বছরের জন্য। পরের লাইন তার পরের বছরের জন্য। এভাবে সিরিয়াল অনুযায়ী লিখতে থাকুন চলতি বছর পর্যন্ত। এটিও ভালোমতো রেখে দিন। শিশু ও অভিভাবকের নাগাল থেকে দূরে,নিরাপদে।
.
পরের কাজটুকু খুব গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ মানুষই এই কাজটি করার ব্যাপারেঅনীহা দেখান। একজন ভালো বন্ধু খুঁজে বের করতে হবে আপনার। হতে পারে সেটা আপনার ক্লাসমেট, বড়ভাই, কোনো নিকটাত্মীয় বাস্ত্রী। যার কাছে আপনি মন খুলে কথাবলতে পারেন এবং যিনি আপনার গোপনীয় ব্যাপারগুলো গোপনই রাখেন। বিশ্বস্ত। তাকে সব খুলে বলুন। আপনি যে তওবা করেএই অন্ধকার জগৎ থেকে বের হয়ে আসতে চান, সেই কথা বলুন। তার সাহায্য চান। একা একা লড়াই করার চেয়ে দুজনের সম্মিলিত শক্তিতে লড়াই করা অনেক বেশি যুতসই। পর্ন/হস্তমৈথুন আসক্তি কাটানোর ক্ষেত্রে আপনি প্রায়৫০ শতাংশ সফল হবেন, যদি এই কাজটি করতে পারেনইন শা আল্লাহ্। তবে, বিপরীত লিঙ্গের গাইরে মাহরাম কারও কাছে আবার সাহায্যেরজন্য যাবেন না। হিতে বিপরীত হবে।
.
আপনার সব পর্ন ভিডিও একেবারে শিফট ডিলিটদিতে হবে। মন চাইলেই যেন ইন্টারনেটেগিয়ে পর্ন ভিডিও দেখতে না পারেন সে জন্য পর্ন সাইটব্লক করে রাখতে হবে। এ জন্য বিভিন্ন অ্যাপস এবং সফটওয়্যার আছে। “বিষে বিষক্ষয়” শিরোনামের লেখায় বিস্তারিতআলোচনা এসেছে। আপনার সেই বিশ্বস্ত বন্ধুর সহায়তায় এই অ্যাপস বা সফটওয়্যারগুলো ইন্সটলকরে নিন। শুধু আপনার বন্ধু পাসওয়ার্ড জানবেন, আপনি জানবেন না।এ কারণে চাইলেও আপনি আর পর্ন দেখতেপারবেন না আপনার ডিভাইসগুলো ব্যবহার করে। এবার টার্গেট সেট করার পালা। আপনি যদি প্রতিদিন হস্তমৈথুন করেন, পর্ন দেখেন, তাহলে নিজেকে টার্গেট দিন, এখন থেকেআগামী ৩ দিন আমিহস্তমৈথুন করব না, পর্ন দেখব না/চটিগল্প পড়ব না। টার্গেটপূরণ করতে না পারলেও সমস্যা নেই। আবার তিন দিনের টার্গেট সেট করুন। এই টার্গেট পূরণ করতেপারলে নতুন টার্গেট ঠিক করুন, আমি আগামী ৭ দিন হস্তমৈথুনকরব না, পর্ন দেখব না/চটিগল্প পড়ব না।এটা পূরণ করতে পারলে আবার নতুন টার্গেট ঠিক করুন। আমি আগামী ১৪ দিন হস্তমৈথুনকরব না... এভাবে চালিয়ে যেতে থাকুন। আর হ্যাঁ, প্রতিবার টার্গেট পূরণ করারপর নিজেকে পুরস্কার দিতে ভুলবেন না।
.
পর্ন ভিডিও দেখার পর বা হস্তমৈথুনকরার পরের অনুভূতি আপনি যে কাগজের টুকরোতে লিখেছিলেন প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকেউঠে একবার সে কাগজে চোখ বুলাবেন। পর্ন ভিডিও দেখার জন্য বা হস্তমৈথুন করার জন্যমন আঁকুপাঁকু করলে দৌড়ে গোপন জায়গা থেকে বের করে আনুন ওই কাগজগুলো। মনোযোগ দিয়ে, চিন্তা করে পড়ুন। আপনিএখন খুবই ক্রিটিকাল অবস্থায় আছেন। এখন যদি আপনি আপনার প্রবৃত্তির কাছে হেরে যান, তাহলে অবস্থা খুবই খারাপ হবে। অধিকাংশ মানুষই বোঝে পর্ন দেখা খারাপ, হস্তমৈথুন করা ক্ষতিকর।কিন্তু ভেতর থেকে যখন পর্ন দেখার নেশা ওঠে তখন সে কিছুক্ষণ নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে, না আমি ওসব দেখব না... কিন্তু যুদ্ধ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। সে আত্মসমর্পণ করে তারপ্রবৃত্তির কাছে। আপনার সকল ইচ্ছাশক্তি এক করে লড়াই করুন প্রবৃত্তির সাথে।
.
আর আল্লাহ্কে ডাকতে থাকুন অনবরত। বার বার মনে করতেথাকুন এ আসক্তি কীভাবে আপনাকে বঞ্চিত করেছে জীবন উপভোগ করা থেকে! কী ভয়ঙ্কর ক্ষতি করেছে আপনার! আপনার জন্য কীকরুণ পরিণতি অপেক্ষা করে আছে! জায়গা পরিবর্তন করুন, শুয়ে থাকলে উঠে বসুন। বসে থাকলে ঘর থেকে বেরহয়ে যান। এমন কোথাও যান যেখানে আলো আছে, মানুষ আছে, যেখানে উষ্ণতা আছে। ভিযুয়ালাইয করার চেষ্টা করুন, বিষধর এক সাপ আপনাকেআষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে দংশন করছে। নিজের সমগ্র সত্তা দিয়ে লড়াই করুন।
প্রত্যেক সপ্তাহ বা দুসপ্তাহ অন্তর সেই ডায়েরিনিয়ে বসুন। তারপর এ কয়েকদিনের মধ্যে আপনার পুরো অবস্থাররিপোর্ট লিখে ফেলুন। এভাবে দু-এক মাস কাটানোর পর ডায়েরিতে লেখা আগেরবছরগুলোতে হস্তমৈথুন করার হার, পর্ন ভিডিও দেখার পেছনে ব্যয় করা সময়ের সাথে বর্তমান অবস্থার তুলনা করুন। ইন শা আল্লাহ্ দেখবেন বেশ পার্থক্য এসেছে। হস্তমৈথুন করার রেট বা পর্ন ভিডিওদেখার সময় অনেকটাই কমে এসেছে—আল্লাহ্ (সুবঃ) চাইলে হয়তো একেবারেই কমে গেছে। দেড়-দু মাস যাবার পরও যদি আপনার অবস্থার উন্নতি না হয়, তাহলে সেটা চিন্তার বিষয়। হয়তোআপনার নিয়্যতের মধ্যে ঘাপলা আছে অথবা আপনি হয়তো ঠিকমতো ফোকাস ধরে রাখতে পারছেন না বা আল্লাহ্র (সুবঃ) ওপর ঠিকভরসা করতে পারছেন না। আমাদের দেখানো পদ্ধতিটা আবার প্রথমথেকে প্রয়োগ করা শুরু করুন আরেকটু বেশি ফোকাসড হয়ে।
.
চোখের হেফাযতের ব্যাপারে যত্নবান হোন, সপ্তাহের দুদিন(সোমবার ও বৃহস্পতিবার) রোযারাখুন, প্রচুর পরিমাণ দান-সাদকাহ করুন। কাজকরবেই করবে ইন শা আল্লাহ্।
No comments:
Post a Comment