Sunday, September 20, 2015

নরক

পর্ণের দুনিয়াটাকে অনেক আকর্ষণীয় মনে হয় তাই না? কিন্তু ভিতরের কাহিনী কিন্তু একদম উল্টো। বিকৃত রুচির মানুষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে কত মেয়েকে যে নির্মম অত্যাচারের শিকার হতে হয় আর কত মেয়ের চাপা কান্না যে বাতাসে হারিয়ে যায় সে খবর কি আমাদের কানে আসে? এই আর্টিকেলটাতে কিছু পরিসংখ্যান আর তথ্যের সাহায্যে পর্ণ অভিনেতা আর অভিনেত্রীদের ভয়াবহ জীবন তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।



“ছেলেরা আপনার মুখে ঘুষি মারতে থাকবে, বলতে গেলে আপনাকে ছিড়ে ফেলবে।আপনার মনে হবে আপনার প্রাণ বেরিয়ে আসছে আর এটা থেমে থাকে না।আপনাকে এখানে একটা ভোগ্য বস্তু হিসেবে দেখানো হবে, মানুষ হিসেবে নয়।মানুষ যখন সমাজে নিজের স্থান খুজে পায় না তখনি সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে” - সাবেক পর্ণ অভিনেত্রী



পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির কটি সেকেণ্ডারি নেচিবাচক প্রভাব হল  চুড়ান্ত পর্যায়ে   মাদকাসক্তি। একজন পর্ণ অভিনেত্রী  স্বীকারোক্তি “আমরা যেসব মাদক ব্যবহার করি তা হল এক্সটেসি,কোকেইন,মারিজুয়ানা(গাজা),জানাক্স,ভালিউম,ভিসোডিন আর এলকোহল


২০১২ সালে ১৭৭ জন পর্ণ অভিনেত্রীদের উপরে করা একটা জরিপে দেখা গেছে   জীবনে একবার হলেও ৭৯%  পর্ণ অভিনেত্রী  marijuana  ব্যবহার করেছেন , hallucinogens  ব্যবহার করেছেন ৩৯% , ecstasy  ব্যবহার করেছেন ৫০% , cocaine  ব্যবহার করেছেন ৪৪% , methamphetamine ব্যবহার করেছেন ২৭% , tranquilizers ব্যবহার করেছেন ২৬% , heroine ১০% ।



জানুয়ারি ২৮,২০০৮ এ এক পুরুষ পর্ণঅভিনেতা তার ব্লগে লিখেনঃ
“মাদক আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে খুব বড় একটি সমস্যা।কেউ যদি আপনাকে অন্য কিছু বলে তবে সে মিথ্যা বলছে।শুধু এই মাদকের জন্য অগণিত মেয়ে নিজেদের বেচে থাকার ইচ্ছা উদ্যম সব হারিয়ে ফেলেছে এটা চিন্তা করলেই  আমি খুবই কষ্ট পাই আর তাদের এই অধঃপতন খুবই বেদনাদায়ক,অন্তত আমার কাছে।এটা মানতেই হবে যে, বেশিরভাগ মাদকাসক্ত প্রফেশনাল সহায়তা ছাড়া তাদের অভিশপ্ত জীবন থেকে বের হয়ে আসতে পারেন না।আমি শুটিং সেট থেকে শুরু করে পার্টি এমনকি গাড়িতেও ড্রাগের যথেচ্ছ ব্যবহার দেখেছি।আনুমানিক ৯০% 


জনবল(পারফরমার,ড্রাইভার,এজেন্ট,মালিক ইত্যাদি) মারিজুয়ানা(গাজা) তে আসক্ত।সম্প্রতি স্টেজে আমার সাথে কর্মরত মেয়েটি আচমকা অজ্ঞান হয়ে যায়(সে অক্সিকোন্টিনে আসক্ত ছিল)আরেকটি মেয়ে GHB ওভারডোজ হয়ে সেটেই লুটিয়ে পড়ে(GHB-পার্টি ড্রাগ যেটা এলকোহলের সাথে সহজে মিশে না)প্রেস্টিজিয়াস  পুরস্কার পেয়েও ইতিহাস আছে এমন মেয়েদের যারা এতই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিল যে তারা সেটা আনতে যেতে পারে নি।কারণ তারা প্রায় ৫০ পাউন্ড ওজন হারিয়ে নিজের চেহারা গঠন সব ধুলোয় মিশিয়ে ফেলে।প্রশ্ন হল এখানে মাদক এত সহজলভ্য কেন??প্রথমত এখানে মুলত ১৮-২১ বছরের মেয়েরা কাজ করে যাদের অনেকেই অশিক্ষিত নয়তো অল্প শিক্ষিত।অনেকেই আসে যারা বলতে গেলে কপর্দকশূন্য অথবা পিজার দোকানে সস্তা কাজ করে।



এখানে এসে তারা মাসে ১০ হাজার ডলার আয় করে যার বিনিময়ে মাসে তাএর ৫ ঘন্টা করে ১০-১২ দিন কাজ করতে হয়।মাদকের দালালরা হাঙরের মত তাদের শিকার করে।এই মেয়েদের হাতে থাকে অবসর সময় আর প্রচুর কাঁচা টাকা।দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে মাদক ব্যবসায়ীদের বাজিমাত।
২০১২ সালে ১৭৭ জন পর্ণ অভিনেত্রীদের উপরে করা একটা জরিপে দেখা গেছে   জীবনে একবার হলেও ৭৯%  পর্ণ অভিনেত্রী  marijuana  ব্যবহার করেছেন , hallucinogens  ব্যবহার করেছেন ৩৯% , ecstasy  ব্যবহার করেছেন ৫০% , cocaine  ব্যবহার করেছেন ৪৪% , methamphetamine ব্যবহার করেছেন ২৭% , tranquilizers ব্যবহার করেছেন ২৬% , heroine ১০% ।






মাদকের ছড়াছড়ির সাথে সাথে নির্যাতনের বিষয়টিও ব্যাপক 

আকারে ছড়িয়ে পড়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে।একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে 

১০০% স্ট্রিপার শারীরিক নির্যাতন অথবা গালাগালির শিকার হন।

৯১% রিপোর্টে দেখা গেছে কাস্টমাররা মৌখিক ভাবে তাদের  

অপদস্ত করে, সাথে সাথে প্রায় সবাই শারীরিক নির্যাতনের সম্মুখীন হয়।

স্ট্রিপারদের গায়ে হাত দেয়া নিষিদ্ধ হলেও রিপোর্টে দেখা যায় 

কাস্টমাররা তাদের হাতে(৮৮%), স্তনে(৭১%),পশ্চাৎদেশে(৯১%) 


স্পর্শ করে।আক্রমণের ঘটনাও কম নয়।চুল টানা 

(২৭%),চিমটি(৫৪%),চড় মারা(৫৮%) এমনকি কামড়ে 

দেয়ার(৩৬%) মত ঘটনাও ঘটে।এই আক্রমণগুলো স্ট্রিপক্লাবের ভিতর বডিগার্ড আর স্টাফদের সামনেই ঘটে।

 ইদানিং পর্ণ ইন্ডাস্ট্রি জোর দিচ্ছে চড় থাপ্পড়, অমানবিক নির্যাতন আর থুথু ছিটানো রাফ আর পেইনফুল সেক্সের প্রতি। একটা সিনে পুরুষ অভিনেতা অভিনেত্রী কে ধরে টয়লেটের কমোডে মুখ ঢুকিয়ে চেপে ধরে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে এটাই নাকি ক্লাইম্যাক্স। ৮৮% ভাগ ফিল্ম শারীরিক ও মানসিক ভয়াবহ নির্যাতনে ভরপুর।


Subscribe to Shelley's Blog

আমাদের জানামতে ২০০৩ থেকে ২০১৪ সনের মধ্যেই সান ফেরনান্দ ভ্যালি , ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির প্রায় ১৫০০ যৌন কর্মীর ২২৮ জনই মৃত্যুবরণ করেছে এইডস , আত্মহত্যা , মাদক সেবনের মাধ্যমে । এদের অনেকেই হয়েছে হত্যার শিকার আবার অনেকে বরণ করেছে অকাল মৃত্যু । পৃথিবীর কোন ইন্ডাস্ট্রি , এমনকি মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি যা কিনা পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির চেয়েও ১০ গুণ বড় এমন পরিসংখ্যান নেই । যেখানে একজন আমেরিকানের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭৮.৬ বছর সেখানে একজন যৌনকর্মীর প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৩৬.২ বছর ।


পর্ণ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গুলোর খুব  গা ঘিনঘিনে  বিষয় হল যৌন রোগ  । লস অ্যাঞ্জেলস এর সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০-২৪ বছর বয়সীদের তুলনায় যৌনকর্মীদের ক্লামিডিয়া ও গনেরিয়া সংক্রমণ সম্ভবনা ১০ গুণ বেশি । তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে এই রোগগুলো সংক্রমণ সম্ভবনা যৌনকর্মীদের মাঝে কল্পনাতীত ভাবে বেশি । ডাক্তার শেরন মিশেল সাবেক পর্ণ অভিনেত্রী ও AIM (Adult Industry Medical Healthcare Foundation) এর  ফাউন্ডারের সঙ্গে  এক সাক্ষাতকারে যৌন রোগের প্রাদুর্ভাবের কথা নিশ্চিত করেছেন তিনি আরও উল্লেখ করেছেন ৬৬% যৌনকর্মী হারপিস এ ভোগেন , ১২-২৮% এর রয়েছে যৌন রোগ , ৭% এর রয়েছে HIV”

কোন যৌন রোগ আছে কিনা তার পরীক্ষা পর্ণ শিল্প আইনের আওতাভুক্ত নয় । কর্মীদের তাদের নিজ খরচে পরীক্ষা করাতে হয় । পর্ণ সেট এ একাধিক যৌন সঙ্গীর সাথে মেলামেশার দরুন পরীক্ষালব্ধ ফলাফল হয় অনিশ্চিত যার ফলে পর্ণ শিল্পে যৌন রোগের প্রাদুর্ভাব আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছে পর্ণ স্টারদের অনেক কিছু বলার আছে পর্ণ ভোক্তাদের কাছে এই যৌনরোগগুলোর ব্যাপারে ।.


তো বুঝলেন তো , ল্যাপটপে বা মোবাইলের স্ক্রীনের এইপাশে বসে পর্ণমুভির জগতটাকে  যতই আকর্ষণীয় দেখাক না কেন , পর্দার ওপাশে  লুকিয়ে আছে কতটা   বর্বরতা  আর  নিষ্ঠুরতা ?


এখানে স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রশ্ন এসে  যায় , পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা যদি  সত্যিই এতটা খারাপ হয় , সেখানে যদি নারীদেরকে এভাবেই নির্যাতন করা হয়  তা হলে পর্ণ ইন্ডাস্ট্রি  বন্ধ করে দেওয়া হয়না কেন ? পর্ণ ওয়েবসাইটগুলো তো ব্লক করে দিলেই কেল্লাফতে । আর মানবাধিকার রক্ষায় সদা জাগ্রত , নারী স্বাধীনতার অগ্রদূত   আমেরিকা, ফ্রান্স এরা চুপ করে কেন ? সুশীল সমাজ , মুক্তমনারা কেন এগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোন কথা বলে না ?
-      কারণ  টাকা জী টাকা ।  
 আপনাকে  পর্ণ মুভির বাজার সম্পর্কে একটা হালকা পাতলা ধারণা দিলেই ইনশা আল্লাহ্‌ বুঝতে পারবেন ব্যাপারটা


 “Online pornography is the first consistently successful e-commerce product.”
-      Donna Rice Hughes  ( ceo of enough is enough,  working for ensuring  the internet safety of children and families)
-       

 পৃথিবীতে আনুমানিক ৪২ লক্ষ পর্ণ ওয়েবসাইট আছে যা মোট ওয়েবসাইটের ১২% পৃথিবীর প্রায় ৭২ লক্ষ মানুষ এই ওয়েবসাইটগুলোর মাসিক পরিদর্শক । প্রত্যেক দিনের অনুসন্ধান আবেদনের (search request) চার ভাগের এক ভাগই থাকে পর্ণ বিষয়াবলীর উপর যার পরিমাণ দাড়াই ৬৮ লক্ষ । যেখানে প্রায় ৪০ লক্ষ আমেরিকানই পর্ণ ওয়েবসাইটের নিয়মিত পরিদর্শক ।U.S.A প্রাপ্তবয়স্ক চলচিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ১ বছরে প্রায় ৪০০০-১১০০০ চলচিত্র নির্মাণ করে এবং এর মাধ্যমে আয় করে আনুমানিক ৯-১৩ লক্ষ কোটি মোটা অঙ্কের টাকা ।

২০০৬ সালে sex-related entertainment business’ থেকে শুধুমাত্র আমেরিকার ১৩ বিলিয়ন ডলার কামিয়েছে ।
-Fishbein, president of the Adult Video News Media network


এমনকি  পর্ণ ইন্ডাস্ট্রি হলিউডের চেয়েও বেশী লাভজনক ।  প্রতিবছর গড়ে  ১৩০০০ পর্ণ মুভি তৈরি করা হয়  অন্যদিকে প্রতিবছর হলিউডে মাত্র ৫০৭ টি মুভি তৈরি করা হয় । পর্ণ মুভি থেকে মুনাফা আসে ১৩ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি আর হলিউডের মুভিগুলো থেকে  ৮.৮ বিলিয়ন ডলার । (Bridges and Wosnitzer, 2007).




এখানে আর একটা ব্যাপারও মাথায় রাখা জরুরী । পর্ণ মুভি তৈরি করার সময় খুব মোটা অংকের বাজেটের প্রয়োজন পড়ে না , কিন্তু হলিউডের মুভি গুলোর বাজেট হয় খুব বড়  অংকের । তারমানে পর্ণ ইন্ডাস্ট্রি খুব অল্প টাকা বিনিয়োগ করে গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশ বড়সড় টাকা হাতিয়ে নেয়


পর্ণ মুভির ব্যবসা নিয়ে কথা বলতে গেলে ঘুরে ফিরেই  আমেরিকার নাম আসবে ।  আমেরিকা হল সে দেশ পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির খনি । এখানেই সবচেয়ে বেশী পর্ণ মুভি  তৈরি করা হয় ।   এই আমেরিকার  Californiaতে  বিশ্বের ৮৫% এডাল্ট কন্টেন্ট তৈরি হয়।বেশিরভাগ নারী প্রতিভা(!) এজেন্সি এই এলাকার আশে পাশেই অবস্থিত আর অনেক নারী মডেল এখানে আসেন পর্ণ ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে।পুরুষ মডেলদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা, এমনকি ছোট বড় সব পর্ণ ইন্ডাস্ট্রি এই “California” তেই  অবস্থান করছে।পৃথিবীতে যতগুলো পর্ণ ওয়েবসাইট আছে তার শতকরা ৮৯ ভাগের মালিক আমেরিকানরা ।


তাহলে এবার বলুনতো দাদাবাবু , আমেরিকার কি দরকার পড়ছে পর্ণমুভির ইন্ডাস্ট্রী গুলো বন্ধ করে দেওয়া ?  অল্প পুঁজিতে পর্ণমুভি বানিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতানো বাদ দিয়ে  সে কেন  পর্ণ ইন্ডাস্ট্রী বন্ধ করবে ? সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে  বোকা ছাড়া আর কে  জবাই করতে চায়, বলুন?
   তাইলে,  পর্ণ ইন্ডাস্ট্রীতে ড্রাগসের ব্যবহার, নারী নির্যাতন  ...... ... আরো কি কি জানি ?
আমেরিকার মত উদার গনতান্ত্রিক দেশ , নারী স্বাধীণতায় বিশ্বাসী দেশ এগুলো মেনে নিবে ?
 আরে ভাই সহজ ব্যাপারটা বোঝেন না কেন ,  টাকার  আর তেলের গন্ধ পেলে পশ্চিমা দেশগুলোর হুশ থাকেনা  আর নারী  নির্যাতন ? তাদের ভাষায় তো  শুধু  মুসলিমরাই নারী  নির্যাতন  করে- তারা নারীদেরকে পর্দার আড়ালে আবদ্ধ করে রাখে , তাদেরকে ঘরে বন্দী  করে রাখে , সম্পত্তিতে সমানধিকার দেয় না ব্লা ব্লা ব্লা ......... ।
  


বোঝা গেছে  আমেরিকা কি চীজ ?

#হিপোক্রিট      

Friday, September 18, 2015

“****” ম্যাম গার্ড পড়ছিলঃ বুঝতে পারছিলাম না, প্যান্ট সামলাবো নাকি কলম !!!

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
বছর পাঁচেক আগের কথা । মফস্বল শহর থেকে ঢাকার এক দেশ বিখ্যাত কলেজে এইচ এস এসসি প্রথম বর্ষে ভর্তি হলাম। বাবা মা ছেড়ে একা একা ঢাকা শহরে এসেছি ,মন  ভার হয়ে থাকতো সবসময় । কিন্তু কলেজের স্যার আর ম্যামদের ক্লাসগুলো উপভোগ করতাম খুবই।
.
প্রত্যেকজন স্যার এবং ম্যাম ছিলেন প্রচন্ড পেশাদারিত্বের অধিকারী । সবার চোখে মুখে ছিল তাঁদের ছাত্রদের কিছু শেখানোর প্রবল আগ্রহ । ম্যাথ ডিপার্টমেন্ট এর এক শিক্ষক তো ছিলেন প্রবাদতুল্য মানুষ । শুধু একাডেমিক   পড়াশোনাই নয়, নীতি,নৈতিকতা,আদব,কায়দা   শেখানোরও প্রচন্ড চেষ্টা করতেন আমাদের স্যার এবং ম্যামরা । কলেজের অধ্যক্ষের মুখে তো লেগেই থাকতো,‘আমি ভালো ছাত্র চাই না , ভালো মানুষ চাই’।
.
বিশ্ব দাপিয়ে বেড়ানো অগণিত ভালো  ছাত্র কলেজ থেকে আগেও বের হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে কিন্তু  কয়জন ভালো মানুষ বের হচ্ছে তা গবেষণার বিষয় ।
.
টিচারদের এমন আন্তরিকতা  থাকার পরেও , তাঁদের সঙ্গে বিশেষ করে ম্যাডামদের সঙ্গে আমারই কয়েকজন সহপাঠী এবং সিনিয়র ভাইদের বেয়াদবি  দেখে  টাসকি খেয়ে গেছলাম ।
ম্যডামরা যখন রোল কল করতেন (বিশেষ করে ম্যাডাম অল্প বয়স্কা এবং সুন্দরী হলে ) তখন পোলাপান একটু ন্যাকামো করে, নাকি স্বরে ইয়েস ম্যাম বলে রেসপন্স করত ।
বায়োলজী ক্লাসগুলোতে মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে ম্যডামদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা হত ।পোলাপানের আড্ডার জটলা থেকে টুকরো টুকরো কথা কানে আসতো ......... অমুক ম্যডামকে শাড়ি পড়লে যা লাগে না , ...... তমুক ম্যডাম একটা *** , অমুক ম্যডামের সেই ফিগার ......
আরো অনেক কথা যেগুলো শালীনতার মাত্রা অতিক্রম করে যাবে । এখানে না বলাটাই শ্রেয় ।
.
বেয়াদবি  এই পর্যন্ত থাকলেও সহ্য করা সম্ভব ছিল । কিন্তু একদিন এক ম্যডামের ক্লাসে  পেছনের দিকের বেশ কয়েকটা বেঞ্চের পোলাপান একসঙ্গে  ফোনের লাউড  স্পীকারে পর্নমুভি ছেড়ে দিয়েছিল ।
ম্যাডাম সেদিন কাঁদতে কাঁদতে ক্লাস থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন ।
(এরকম কাহিনী অন্য একটা ক্লাসে অন্য একজন ম্যডামের সঙ্গেও করা হয়েছিল )


কলেজ লাইফের এই  ঘটনা গুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মনে করতাম । ভুলেও গিয়েছিলাম এইগুলো । কিন্তু কিছুদিন আগে আমাদের কলেজের ফেসবুক ফ্যান পেইজে (যেটা চালায় কলেজের প্রাক্তন এবং বর্তমান স্টুডেন্টরা)  একটা ট্রোল দেখে (ছবিতে দেখুন) আবারো টাসকি খেয়ে গেলাম ।  এতদিন যা কিছু ক্লাস রুমে করা হতো , যা কিছু মনের মধ্যেই চাপা পড়ে থাকতো বা বন্ধুদের আড্ডার সার্কেল থেকে বের হতে পারত না , তা ফেসবুকের খোলা বাজারে ঢাকঢোল পিটিয়ে জানান দিয়ে দেওয়া হল । বেয়াদবিটাকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়ে দেওয়া হল  আরকি  

...... ****  “****” ম্যাম গার্ড পড়ছিলঃ বুঝতে পারছিলাম না, প্যান্ট সামলাবো নাকি কলম !!!


কলেজের রানিং স্টূডেন্টদের বানানো  এই ট্রোলে আবার দেখলাম বেশ কয়েকজন রসিক সিনিয়র ভাইয়া কমেন্ট করে ব্যাপক মজা নিয়েছেন (ছবিতে দেখুন) 






এই ম্যডামগুলোই  স্টুডেন্টদের কিছু   শেখাবেন বলে , রাত জেগে ক্লাসের প্রিপারেশান নেন, চল্লিশ পঞ্চাশ মিনিট ঠাই দাঁড়িয়ে ক্লাস নেন , বক বক করেন  , ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে লিখতে চকের গুঁড়ো খান , ফ্যানের নিচে থেকেও দর দর করে ঘামেন  । যারা   এতটা আন্তরিকতা , এতটা স্নেহ , এতটা মমতা দিয়ে ক্লাসে পড়ানোর চেষ্টা করেন , তাঁদের সঙ্গেই এমন ব্যবহার করা হল  ? এটা জাস্ট তাদের মুখের কথা , কিন্তু এটাই কি   কুৎসিত একটা ইঙ্গিত দেয় । তাহলে চিন্তা করুন  তাদের মনের ভেতরে কি লুকিয়ে আছে , ম্যামদের  নিয়ে তাদের চিন্তা ভাবনা কতদূর গড়িয়েছে!   
.
কিছু  সিনিয়র ভাইয়দের দেখলাম  ওইখানে কমেন্ট করে মজা নিয়েছেন এবং  লাইক দিয়েছেন , বুঝলাম না  কী করে  তারা এমনটা করতে পারলেন। ছোট ভাইগুলার নাহয় এখনো ম্যাচিউরিটি আসে নি ,তারা নাহয় একটা  ভুল করে ফেলেছে  , সিনিয়র হিসেবে তাদের উচিত ছিল সেই ভুল শুধরিয়ে দেওয়া ।   কিন্তু তারা  সেই ভুল শুধরিয়ে না দিয়ে কমেন্ট করে  তাদেরকে আরো উৎসাহ দিলেন !এরাই না দেশের সবচেয়ে মেধাবী সন্তান ?  দেশ ও জাতির গর্ব ? দেশ না একদিন এরাই চালাবেন ?   এদের  টিচারও যদি এদের   সেক্স ফ্যান্টাসির শিকার হওয়া থেকে রেহাই না পায় , তাহলে  তাদের সহপাঠী,  অফিসের কলিগ,  অধীনস্থ নারী কর্মচারীরা কী করে রেহাই পাবে ?
এরকম একটা প্রজন্ম নিয়ে আমরা কী স্বপ্ন দেখব,  বলুন ? এদের হাতে যখন দেশ চালানোর ভার পড়বে  তখন কী অবস্থা হবে এই দেশের ?
 .
 বাংলাদেশে আজ এমন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছ যেখানে স্টুডেন্টদের হাতে মহিলা শিক্ষকদের  টিজিং এর শিকার হতে হয় । ঘটনা গুলো চাপা পড়ে থাকে । লোক লজ্জা আর মান সম্মান খোয়ানোর ভয়ে এইগুলো কেউ প্রকাশ করেন না । আর এইগুলো বলে বেড়ানোর কথাও না । একবার  এক আড্ডায় আমার ভার্সিটির  পোলাপানের   অন্য একটা ভার্সিটির  মহিলা ফ্যাকাল্টিদের ফিগার এনালাইসিস শোনার দুর্ভাগ্য হয়েছিল  । বেশিক্ষন সেখানে বসে থাকতে পারিনি ।
.
(এখানে আমার একটা ব্যক্তিগত অব্জারভেশান বলে রাখি – এইটা জাস্ট আমার পার্সোনাল একটা মতামত -  স্টুডেন্টদের হাতে ম্যামদের নাকাল হবার পেছনে ম্যামরা নিজেরাও অনেকটা দায়ী । যেই লেভেলের সাজগোজ আর পোশাক আশাক পরে কিছু কিছু   ম্যাম ক্লাস রুমে যান , অমুকের গায়ে হলুদ, তমুকের বৌভাতে উনারা যেরকম মাঞ্জা মেরে ফটোগ্রাফারদের হাতে শরীর ছেড়ে দেন এবং পরে সেইছবি গুলো ফেসবুকে আপলোড করেন, তাতে একজন স্টুডেন্টের পক্ষে তাদেরকে নিয়ে খুব ভালো কিছু ভাবা সম্ভব নয়   )
.
আসলে সারারাত ধরে পর্নমুভিতে নারীদের বস্ত্র হরণ দেখলে , আইটেম সং দিয়ে ফোনের মেমরি লোড করে রাখলে নারীদেরকে নিয়ে খুব একটা ভাল চিন্তা করা সম্ভব হয়না । নারীরাও যে মানুষ , তাদেরও হৃদয় আছে, তাদেরও মন আছে , একজোড়া চোখ আছে সেই চোখের ভেতরে একটা আকাশ আছে এগুলো অনুধাবন করা যায়না । তাদেরকে শুধু একটা মাংসপিণ্ড মনে হয় যা নিয়ে উদ্দাম ফুর্তি করা যায়, রাত কাটানো যায়, কিন্তু ভালবাসা যায় না, তার চোখের তারায় হারিয়ে যাওয়া যায় না , তাদেরকে সম্মান করা যায়না ।
.
ম্যামদের নিয়ে যারা এরকম চিন্তা ভাবনা করতে পারে তারা তাদের “জাস্ট ফ্রেন্ড” কিংবা ছোট বোন বড় বোন হিসেবে দেখা আশেপাশের মেয়েদের নিয়ে কোন লেভেলে চিন্তা করতে পারে তা মাথায় একটু বুদ্ধি থাকলেই বোঝা যায় ।  মুখের সামনে আপু আপু বা দোস্ত দোস্ত করে মুখে ফেনা তুলে ফেললেও , ভদ্রতার মুখোশ পড়ে থাকলেও এইসব ছেলেরা তাদের সেই আপুদের বা ইয়ার দোস্তদের অনুপস্থিতিতে তাদের ফিগার নিয়ে যে পোস্টমর্টেম করে তার রিপোর্ট  জানলে কোন ভদ্র মেয়ের পক্ষে তাদের সঙ্গে মেশা  দূরে থাক কথা বলাও সম্ভব নয় । ফেসবুকে আপুদের আপলোড করা পিক  দিয়ে যে    তার কত “জাস্ট ফ্রেন্ড” ছেলে বন্ধু   যৌবন জ্বালা নিভায় তা যদি এইসব আপুরা জানতো !     
তবে আজকাল দিন বদলাইয়া গেছে । আজকালকার মেয়েরা নাকি তাদেরকে কেউ হট চিক , সেক্সি বললে খুশিই হয় ।  কোথায় চলেছে আমাদের এই সমাজটা, কোথায় যাচ্ছি আমরা ?  আবহমান বাংলার সেই লজ্জাবতী নারীরা কোথায় গেল আজ?
.
 জীম তানভীর ভাইয়ের একটা লিখার কিছু অংশ এখানে তুলে দিতে  ইচ্ছে করছে,
............ছেলেরা যখন মেয়েদেরকে “slave” হিসেবে দেখতে শেখে তখন মেয়েরা শেখে শিলা হতে হবে,তাতে যৌবনজ্বালায় বিকারগ্রস্ত ছেলেদের চড়কির মত ঘোড়ানো যাবে।
তারা শেখে পার্লারে গিয়ে কি সব পেডিকিউর মেনিকিউর না করলে নাকি স্ট্যাটাস থাকে না।
তারা শেখে বড় মডেল কিংবা অভিনেত্রী হওয়ার জন্য নিজের চরিত্রকে ফটোগ্রাফার কিংবা প্রডিউসারের কাছে নিজের চরিত্র বিকিয়ে দেয়া দোষের কিছু না।
তারা সানন্দা টাইপের ম্যাগাজিনগুলো বিমুগ্ধ নয়নে পড়তে থাকে আর বুঝে ফেলে শরীর দেখিয়ে ক্যারিয়ার গড়ার মূলমন্ত্র।
.
তারা হিন্দী সিরিয়াল দেখে আবিষ্কার করে নিজেকে সাজিয়ে রাখা হল স্মার্ট মেয়েদের কাজ !এই যদি আমরা শিখি,আমরা কিভাবে আশা করতে পারি একটা ছেলে একটা মেয়েকে সম্মান করবে ?
সম্মান অর্জন করা যায় শরীর দেখিয়ে? সৌন্দর্য দিয়ে ? সেক্সি মেয়ে দেখলে আমাদের চোখ বিনয়ে নুয়ে পড়ে নাকি কি যেন খুজে বেড়ায় ?
একটা মেয়ে কি গায়ের উপর থেকে ওড়না ফেলে দিয়ে আশা করে তার দাম বাড়বে
 ?
আজকে যে ছেলেটা জন্ম নিয়েছে সে শরীর নাচিয়ে কুদিয়ে বেড়ানো মিলার মিউজিক ভিডিও দেখে কি ভাববে সেটা কি আমরা চিন্তা করেছি ???




  




        



Sunday, September 6, 2015

আমাদের সন্তান পর্ন দেখে!! (প্রথম কিস্তি )

প্রথম পরিচয়

ক্লাস নাইন টেনের সময়টাতে গান শোনার প্রচন্ড নেশা ছিল। স্কুল আর ঘুমানোর সময় বাদ দিয়ে  প্রায়  পুরোটা সময়  একটার পর একটা গান শুনতাম। গান শোনা ছাড়া কেন জানি থাকতে পারতাম না। সে সময় আমার নিজের পিসি বা ফোন কিছুই ছিল না। গান শোনার একমাত্র সম্বল ছিল সনির এমপি ফাইভ। তখনো এন্ড্রয়েড ফোনের যুগ শুরু হয়নি। বাজার  দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নকিয়া ২৭০০ ক্লাসিক আর  চায়না ফোন। বন্ধুদের চায়না ফোনের লাউডস্পীকার  থেকে তাহসানের গান ভেসে আসতো, আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম আর ভাবতাম কবে আমি  একটা এরকম “অস্থির” ফোনের গর্বিত মালিক হবো। 

সারাক্ষণ যেহেতু গান শুনতাম তাই একটা গানে অল্প দিনেই অরুচি ধরে যেত। ইন্টারনেট তখন আমার কাছে স্বপ্নের মতো। গলির মোড়ের কম্পিউটারের দোকানই ভরসা। কয়েকদিন পর পর গলির মোড়ের  কম্পিউটারের দোকানে যেতে হতো নতুন গান ডাউনলোড দিতে। দশ বিশ টাকা দিলেই পুরো এমপি ফাইভ ভর্তি করে গান দিয়ে দিতো। এভাবে বার বার যাবার কারণে দোকানদারের সাথেও বেশ খাতির জমে গেল। তো একবার সে লোক আমার  এমপি ফাইভ লোড করে দিয়ে একটু বেশী টাকা চাইলো। আমি অবাক হয়ে  তার দিকে তাকাতেই সে একটা চোখ টিপ দিয়ে বললো, “মাল দিছি ছোট ভাই”।

পরে আমার অনেক  বন্ধুবান্ধবের কাছে অনেকটা একইরকমের গল্প শুনেছি। কেউ দোকানে গেছে কলকাতার বাংলা সিনেমা ডাউনলোড করে নিতে, কম্পিউটারের দোকানদার সেই সিনেমা তো দিয়েছেই সেই সাথে ফাউ হিসেবে কিছু নীল সিনেমাও দিয়ে দিয়েছে। তারপর আস্তে তাকে পর্ন ভিডিওতে আসক্ত বানিয়ে ফেলে দোকানের  ক্যাশ বাক্স ভরিয়েছে। আমার খুব কাছের অসম্ভব মেধাবী একজন বন্ধু এভাবে পর্ন ভিডিওতে আসক্ত হয়ে পড়াশোনা শিকেয় তুলে ফেলেছিল। খুব কাছ থেকে পর্নোগ্রাফির মুভির কারণে ওর বদলে যাওয়া দেখেছি। এই হাইস্পিড ইন্টারনেটের যুগেও প্রতিনিয়ত অনেককে দেখি এভাবে কম্পিউটারের দোকান থেকে মেমোরি কার্ড লোড করে নিতে (বিশেষ করে গ্রাম এবং মফস্বল অঞ্চলগুলোতে)। পঞ্চাশ-ষাট টাকার জন্য জাহান্নাম কিনে নিতে দুবারও ভাবছেন না এ সব দোকানদাররা।

যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না”। [২৪:১৯]

পর্ন ভিডিওর সাথে পরিচয়ের আরেকটা কমন মাধ্যম হচ্ছে কচি বয়সেই “পেকে” যাওয়া বন্ধু বান্ধব। এই অকালপক্ক বন্ধু বান্ধবের দল কোন ভাবে পর্নমুভির সন্ধান পেয়ে গেছে। তারপর তারা নিজেরা তো সেই জিনিস দেখেই সাথে সাথে তার ইয়ার দোস্তকেও সেটার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মহান দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়। শেয়ার ইট, ব্লু টুথ, পেনড্রাইভ, হার্ডডিস্কে চলে লেনাদেনা।  ক্লাসের গোলগাল মোটা রিমের চশমা পড়া ভদ্র ছেলেটাকেও জোরাজুরি করে পর্ন ভিডিও দেখার জন্য। বন্ধুদের  চাপাচাপিতে নেহায়েত বাধ্য হয়েই ভদ্র, ভালো ছেলেটা হয়তো একবার পর্ন ভিডিও দেখে ফেলে। প্রথমবার দেখে তার বমি আসতে চাইলেও, পাসশাপাশি শরীরে অচেনা এক “ফিলিংস”-ও কাজ করে। পরে আবার দেখতে ইচ্ছে করে। তারপর আবার। এভাবেই একসময় ভালো ছেলেটাও আটকা পড়ে পর্ন মুভির জালে।



অনেক সময় ১০-১২ বছরের ছেলেরা শরীরে হুট করে আসা পরিবর্তন দেখে চমকে যায়, কিন্তু ভয়ে বা লজ্জায় বাবা মাকে এগুলো সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করতে পারে না। কৌতূহল মেটাতে না পেরে বাধ্য হয়ে শেষমেষ আশ্রয় নেয় তাদের বন্ধুদের কাছে। বন্ধুদের সাথে এ কথা, এই আলোচনা সেই আলোচনা হতে হতে একসময় পর্ন, মাস্টারবেশন এই কথাগুলও চলে আসে। এভাবেও অনেকের পর্ন এবং মাস্টারবেশনের সাথে পরিচয় হয়ে যায়। আমার বাল্যকালের অনেক ইয়ার দোস্তদের এভাবেই পর্ন এবং মাস্টারবেশনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল।  
  
পর্নমুভির সঙ্গে পরিচয় ঘটার আর একটা মাধ্যম হচ্ছে বড়ভাই, কাযিন বা পাড়াতো ভাই বোনদের (বিশেষ করে গ্রামে এটা খুবই বেশী) পর্ন আসক্তি। বড়ভাই, বোন বা কাযিন পর্ন ভিডিওতে আসক্ত। তার  মোবাইলে বা পিসির মেমোরি ভর্তি পর্ন ভিডিও। ছোটভাই, বোন বা কাযিন সে মোবাইল বা পিসিতে মাঝে মাঝে গেইমস খেলে, ঘাঁটাঘাঁটি করে। হুট করে সে একদিন আবিষ্কার করে বসবে পর্ন ভিডিও। আমার খুব কাছের একজন আত্মীয়ের ছয় সাত বছরের পিচ্চির এভাবেই পর্নোগ্রাফির সাথে পরিচয় ঘটে গেছে। 

কথাটা বলতে খুব খারাপ লাগছে কিন্তু তবুও বলি, এভাবে পাড়াতো ভাই বোন বা কাযিনদের মাধ্যমে যেসব বাচ্চাদের পর্নোগ্রাফির সাথে পরিচয় ঘটে, সেই পাড়াতো ভাই বোন বা কাযিনদের মাধ্যমে সেই বাচ্চাদের যৌন নিপীড়িত হবার খুব ভালো  একটা সম্ভাবনা থাকে।[1] কাজেই এটা খুবই সিরিয়াসলি নেয়া দরকার। 

তবে পর্নোগ্রাফি এবং মাস্টারবেশনের সাথে টিনেইজার বা বাচ্চাদের পরিচিত হবার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হল ইন্টারনেট এবং স্যাটেলাইট চ্যানেল। অ্যামেরিকাতে শতকরা ৪৬ ভাগ কিশোর নেট ব্রাউযিং করা অবস্থায় নিজেরা পর্নোগ্রাফি না খুজলেও এমনি এমনিই পর্ন ভিডিওর খোঁজ পেয়ে যায়।[2] ১৫-১৭ বছর বয়সী টিনেইজারদের মধ্যে শতকরা ৭০ জন অনলাইনে স্বাস্থ্য বিষয়ক কন্টেন্ট ঘাটতে গিয়ে হুট করে পর্ন ভিডিওর সন্ধান পেয়ে যায়।[3]
 
তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে আপনার সন্তানকে একদিন না একদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দিতেই হবে। আমরা সেটা নিষেধও করছি না। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো, আপনি ১০-১২ বছরের একটা বাচ্চার হাতে কেন হাই স্পিড নেট তুলে দেবেন? কেন তাদের হাই কনফিয়াগেরশান ফোন তুলে দেবেন? ১০-১২ বছরের একটা বাচ্চা হাই কনফিগারেশান ফোন, হাই স্পিড নেট দিয়ে কী এমন গুরুত্বপূর্ন কাজ করবে ঠিক বুঝতে পারছি না? সে কি নেট ঘেঁটে অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার ব্যাপারে গবেষণা করবে? ইউটিউব থেকে টিউটোরিয়াল নামিয়ে দেখবে? উইকিপিডিয়াতে গিয়ে পড়াশোনা করবে? গুগলে বিভিন্ন শিক্ষামূলক বিষয় নিয়ে সার্চ করবে? ফেইসবুকে বিভিন্ন শিক্ষামূলক গ্রুপে থাকবে?
বি প্র্যাক্টিকাল। আপনার সন্তান গুগলে ঠিকই যাবে তবে “সালোক সংশ্লেষণ” নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার জন্য না, পর্ন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার জন্য। ইউটিউব থেকে টিউটোরিয়াল নামাবে না,  নামাবে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত পর্দায় “আগুন লাগানো” কোন আইটেম সং। ফেইসবুকের শিক্ষা মূলক গ্রুপ গুলোতে তাকে খুবই কম পাওয়া যাবে, সে বুঁদ হয়ে থাকবে কারো রঙ্গ লীলার কাহিনীতে কিংবা সময় কাটাবে বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে চ্যাট করে। 
 
আপনার  সন্তানকে কি ফেরেশতা ভাবেন? সে কি মানুষ নয়? তার কি জৈবিক চাহিদা বলে কিছু নেই? পত্রিকা, বিলবোর্ড, টিভি, সিনেমা, ইন্টারনেট – তার প্রতি চারদিক থেকে ছুড়ে দেয়া হচ্ছে যৌনায়িত ইমেজারি। আপনি আপনার সন্তানকে নিয়ে একসাথে ড্রয়িংরুমে বসে বসে ভারতীয় নর্তকীর নাচ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছেন, দেখছেন আইপিএল-বিপিএলের চিয়ারলিডারদের শরীরের ভাঁজ, মুভি দেখছেন, বাসায় প্রথম আলো টাইপ পত্রিকা রাখছেন যেটা পর্নস্টার, নর্তকী আর পতিতাদেরকে বাংলাদেশের মানুষজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মহান দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে চলেছে। এখনকার বলিউডের এক একটা আইটেম সং পর্ন ভিডিওর চেয়েও খারাপ। নারী পুরুষের সব রসায়নই সেখানে দেখানো হচ্ছে।  আপনার সন্তান এগুলো দেখছে, হয়তো আপনার সাথে এক সাথে বসেই দেখছে কিন্তু  আপনি তাকে কিছুই বলেন না। এখন কোন  আইটেম সং তার ভালো লেগে গেলে সে সেটা ডাউনলোড করার জন্য নেটে তো ঘুরে বেড়াবেই। সেই আইটেম গার্ল এর নাম লিখে গুগল সার্চ তো করবেই। আর এসব জায়গা থেকেই সে খোঁজ পেয়ে যাবে পর্নোগ্রাফির জগতের। আর বীর বাঙালি গুগলের এমন অবস্থা করে ছেড়েছে যে গুগলে কোন বাংলা ওয়ার্ড লিখে সার্চ দিলেই অমুকের স্ক্যান্ডাল, তমুকের রাতের আঁধারে ধর্ষণ, এ জাতীয় খবরের লিংক চলে আসে।        

আপনার সন্তান এমন এক সমাজে, এমন এক পরিবেশে আছে যেখানে প্রতিনিয়ত তার জৈবিক চাহিদাকে উস্কে দেয়া হচ্ছে। আপনার সামনেই সেটা হচ্ছে, আপনি এ নিয়ে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, আপনার সন্তানকে এ যৌনতা তাড়িত সংস্কৃতি থেকে রক্ষার জন্য কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না – সে তো আগুন নেভানোর রাস্তা খুঁজবেই। 

পরের বার টিভিতে যখন কোন আইটেম সং চলবে, একটা ছোট পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। অন্যান্য বারের মতো অন্যমনস্ক ভাবে চ্যানেল স্কিপ করে যাবেন না। ভালো করে খেয়াল করবেন। একটা ১০-১২ বছরের ছেলে কিংবা মেয়ের চোখে ভিডিওর প্রতিটি ফ্রেম দেখার চেষ্টা করবেন। গানের কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনবেন। এধরণের ডজন ডজন বা শতো শতো আইটেম সং বর্তমান সমাজ ও সংস্কৃতিতে একটা ১০-২ বছরের কিংবা আরো ছোট ছেলে অথবা মেয়ের চিন্তা ও আচরণের ওপর ঠিক কী ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার চেস্টা করে দেখুন। আশা করি সত্য অনুধাবনে কষ্ট হবে না।

 এ আইটেম সং গুলো পর্ন আসক্তি তৈরি করে চলেছে। পর্নোগ্রাফির সাথে বাচ্চাদের পরিচয় হচ্ছে হয়তো ১০ -১২ বছর বয়সে, গোপনে লুকিয়ে লুকিয়ে বাচ্চারা এগুলো দেখছে। কিন্তু আপনি নিজেই সারাদিন টিভি ছেড়ে রেখে, খাওয়ানোর সময় বলিউডের গান ছেড়ে রেখে, একেবারে ছোট ছোট শিশুকে আইটেম সং এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন, যেখানে অনেক ক্ষেত্রেই পর্নোগ্রাফির চেয়েও বেশী উত্তেজক ভাবে নারী পুরুষের রসায়ন দেখানো হচ্ছে। মাঝে মাঝে বাজারের কোন ‘হিট’ গান ছেড়ে ওকে বলছেন, “বাবু! একটু নেচে দেখাওতো” বা “বাবু একটু গেয়ে শোনাও তো”। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, নিজ হাতে আপনি ওর কত বড় সর্বনাশ করছেন?


রেফারেন্সঃ

[1] Porn Has Fueled A 400% Rise In Child-On-Child Assaults In The UK - http://bit.ly/2CV4q4r
[2] Influence Of New Media On Adolscent Sexual Health: Evidence And Opportunities - http://bit.ly/2CFwURY
[3] Rideout VJ, Foehr UG, Roberts DF. Generation M2: Media in the lives of 8- to 18-year-olds. Menlo Park, CA: Henry J. Kaiser Family Foundation; January 2010