যেকোনো সমস্যা সমাধানের পূর্বশর্ত হচ্ছে সমস্যাটা স্বীকার করে নেয়া। পর্ন-আসক্তির ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তা-ই। প্রথমেই আপনাকে স্বীকার করতে হবে যে আপনি পর্নেআসক্ত, তবেই কেবলভেতর থেকে আসক্তি দূর করার তাগাদা পাবেন। পর্ন-আসক্ত হবার পরেও আপনি যদি গোঁ ধরে থাকেন যে আপনি পর্ন-আসক্তনা, শুধু মাঝেমধ্যেদু-একটা পর্ন ভিডিও দেখেন, তাহলে কারোরই সাধ্য নেই আপনাকে সাহায্য করার।
নিজেকে এ প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করুন। একটিপ্রশ্নের জবাবও যদি “হ্যাঁ” হয়, তাহলে বুঝবেন, বিপদঘণ্টাবেজে গেছে। আপনি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন।
প্রথমপ্রশ্ন : দিন দিন আপনার পর্ন ভিডিও দেখার সময় কি বেড়ে যাচ্ছে? একবার পর্ন দেখতে বসলে খেয়াল থাকে না কতটা সময়কেটে গেছে? প্রত্যেকদিন বা প্রত্যেকবারকি আপনি আগের দিনের চেয়ে বেশি সময় ধরে পর্ন ভিডিও দেখছেন?
পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত লোকেরা প্রতিদিন তাদের পর্ন ভিডিওদেখার পরিমাণ একটু একটু করে বাড়িয়ে দেয়। ব্যাপারটা মাদক ব্যবহারের মতো। নিয়মিত মাদক ব্যবহার করা শুরু করলে একসময় মানুষ আবিষ্কার করে, আগে যেডোজে “কাজ” হতো, এখন আরতাতে হয় না। নিয়মিত ব্যবহারকারীরা তাই ক্রমান্বয়েমাদকের পরিমাণ বাড়াতে থাকে।
পর্ন-আসক্তদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম। তারা একটা পর্ন ভিডিও এক-দু বার দেখার পর তাতে আগ্রহহারিয়ে ফেলে। মাদকাসক্তের রুটিনে তিনটি মূল কাজ থাকে। মাদকের জন্য টাকা জোগাড়, মাদক কেনা, নেশা করা। তার দৈনন্দিন জীবন, চিন্তাভাবনা, প্ল্যান-প্রোগ্রাম সব এ তিনটিকেঘিরে আবর্তিত হয়।
পর্ন আসক্তের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম। পার্থক্য হলো ফ্রি ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফির এ যুগে পর্ন-আসক্তব্যক্তিকে টাকার চিন্তা করতে হয় না। পর্ন-আসক্ত ব্যক্তিরসময় যায় নতুন নতুন পর্ন ভিডিও খুঁজে বের করতে। এ খোঁজাখুঁজির ব্যাপারটা তাদের প্রতিদিনের রুটিনের অনেকটা সময় নিয়েনেয়। এতে তারা স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি বা কর্মক্ষেত্রে যেতে দেরিকরে ফেলে, অলসতা বোধ করেএবং কাজ করে কূল পায় না।
আপনার মধ্যে এই লক্ষণগুলো থাকলে বুঝবেন আপনি পর্নোগ্রাফিতে আসক্তহয়ে পড়েছেন।
দ্বিতীয়প্রশ্ন : আপনি কি সফটকোর পর্ন ভিডিওছেড়ে হার্ডকোর পর্ন দেখা শুরু করেছেন?
পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত লোকেরা প্রথম অবস্থায় সফটকোর পর্ন ভিডিও দেখে। কিছুদিন পর তারা সফটকোরপর্নে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এটা তাদের কাছে আর যথেষ্ট “উত্তেজক” মনে হয়না। তারা নতুন, আর“কড়া” কিছু খুঁজেবেড়ায়। আস্তে আস্তে হার্ডকোর পর্ন ভিডিও দেখতে শুরু করে। এভাবে তারা একসময় এমন একটা অবস্থায় পৌঁছায় যখন অজাচার, সমকামিতা বা শিশুদেরধর্ষণের ভিডিও তাদের উত্তেজিত করে, তাদের কাছে স্বাভাবিকবিষয় বলে মনে হয়। ওরাল সেক্স, অ্যানাল সেক্সের মতো জঘন্য বিষয়গুলোও তাদের কাছে ডালভাত হয়ে যায়।
আপনার এ রকম অবস্থা হলে বুঝবেন বিপদঘণ্টা বেজে গেছে—আপনি মারাত্মকভাবে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত।
তৃতীয়প্রশ্ন : আপনার মাথায় কি সারাদিন পর্ন ভিডিওতেদেখা দৃশ্যগুলো ঘুরতে থাকে?
পর্ন ভিডিও দেখার পর একজন পর্ন-আসক্তব্যক্তির মাথায় অনেকক্ষণ এটার রেশ থেকে যায়। ভিডিওতে দেখা দৃশ্যগুলো তার মাথায় ক্রমাগত ঘুরপাক খায়। পড়াশোনা করার সময়, অফিসে কাজ করারসময়, রাতে ঘুমানোরআগে, অলস বসেথাকার সময়, এমনকি নামাজ পড়ার সময়ওতার মস্তিষ্ক অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই শেষ দেখা পর্ন ভিডিওর দৃশ্যগুলো নিয়ে ভাবতে থাকে। পর্ন ভিডিওর নায়িকাদের শরীরের সাথে সে তার আশেপাশেরমহিলাদের শরীর তুলনা করে, তার স্ত্রীরশরীর (মেয়েরা স্বামীর শরীর এবংবিছানায় তার স্বামীর পারফরম্যান্স) এবং বিছানারপারফরম্যান্স নিয়ে অসন্তুষ্টিতে ভোগে। পর্ন ভিডিওতে দেখানো পদ্ধতিতে তার সঙ্গীর সাথে সে যৌনমিলন করতে চায়।পার্টনার রাজি না হলে সেরেগে যায় এবং মনঃক্ষুণ্ণ হয়। সম্পর্কে সৃষ্টি হয় জটিলতা।
এই বিষয়গুলোর একটিও আপনার মধ্যে থাকলে আপনি বুঝবেন,আপনি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত।
চতুর্থ প্রশ্ন : পর্ন ভিডিওদেখার পর আপনি কিবিষণ্ণবোধ করেন? দিন দিনহতাশা কি আপনাকে গ্রাস করে ফেলছে? আপনি কি অস্থিরতায় ভুগছেন? নিজেরআচরণের জন্য লজ্জিত? সব সময়নিজের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে?
ভালো কাজ মানুষের অন্তরে প্রশান্তি সৃষ্টি করে, প্রচণ্ড ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টি করে। অন্যদিকেমন্দ কাজ অন্তরকে অশান্ত করে তোলে, মানুষকে অপরাধবোধে ভোগায়। পর্ন ভিডিওদেখার পর বিষণ্ণবোধ করলে, অস্থিরতায় ভুগলে বুঝবেন এটা আপনার জন্য অশনিসংকেত।
পঞ্চমপ্রশ্ন : আপনি কি নিজের কাছে বাঅন্য কারও কাছে ওয়াদা করেছেন—আমি আর কখনোই পর্ন ভিডিওদেখব না, কিন্তু সেই ওয়াদা রাখতে পারেননি?
এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তিরা নিজের কাছে বা অন্য কারও কাছেপ্রতিজ্ঞা করে যে, আমি আর কখনোই পর্ন ভিডিওদেখব না, কিন্তু কিছু সময়বা কয়েকদিন পরে তারা সেই প্রতিজ্ঞা বেমালুম ভুলে যায়, আবারও পর্ন দেখায়ফিরে যায়। অনেকে আবার আরেক কাঠি সরেস। প্রতিবার পর্ন ভিডিও দেখার আগে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়—এটাই শেষ বার, আমি আরজীবনে কখনোই পর্ন দেখা তো দূরের কথা, এর ধারেকাছেওঘেঁষব না। কিন্তু কিছু সময় বা কয়েকদিন পরে তারাআবারও পর্ন দেখে এবং এবারও বলে এটাই আমার শেষ বার, এবারের পর আরকখনোই পর্ন দেখব না।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণপয়েন্ট হলো পর্ন-আসক্তদের অনেকেই বলে, “আরে ধুর! আমি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হতে যাব কেন? আমি চাইলেইযেকোনো সময় এটা দেখা ছেড়ে দিতে পারি।” কিন্তু দুঃখের বিষয় তারাচাইলেই পর্ন ভিডিও দেখা ছাড়তে পারে না।
No comments:
Post a Comment