Monday, June 22, 2015

পর্নঃজীবনের স্বাদ নষ্টকারী

পর্নোগ্রাফি একটি সামাজিক মহামারি ব্যাধি। শিশুতরুণও প্রাপ্তবয়স্ক কেউ এর প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। প্রযুক্তির সহজলভ্যতাইন্টারনেট এর মাধ্যমে অপ-সংস্কৃতির অবাধ প্রবেশ এর প্রধান কারণ।
 পর্নোগ্রাফি ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা আমাদের উদ্দেশ্য। মানুষ পর্নমুভির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে সচেতন হবে এ আশায় ব্যক্তিগতভাবে পর্নমুভি দেখার ক্ষতিকর ফলাফল ভোগ করেছেন এমন অনেকেই  তাদের কাহিনী আমাদের সাথে নির্দ্বিধায় শেয়ার করেছেন।



তেমনি একটি সত্য কাহিনী টাইসন নামের(নাম পরিবর্তন করা হয়েছে)একজনের বাস্তব জীবন থেকে নেয়া। যেটি তার অতীতের ড্রাগস ও পর্নমুভি আসক্তির সাথে সংগ্রামের  টাইসনের গল্পটি আমরা বিরল ও অদ্ভুত ঘটনা বলতে পারতাম। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা সারা বিশ্বর শিশু, তরুণ, ও প্রাপ্তবয়স্ক থেকে যে হাজার হাজার মেইল এবং সরাসরি পত্র পেয়েছি তার বেশীরভাগে দেখা যায়, পর্নমুভি আসক্তির অভিজ্ঞতা সবক্ষেত্রে অনুরূপ।

...... আমি এককালে  ড্রাগস আসক্ত ছিলাম ।সেই আসক্তি কাটিয়ে উঠেছি অনেক দিন হল  ড্রাগসের সরাসরি শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। আমি বেঁচে আছি এজন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি

যদি আপনি আমাকে পাঁচ বছর আগে জিজ্ঞেস করতেন, আমি পর্ন মুভিকে কখনোই আসক্তি ও ড্রাগস হিসেবে বিবেচনা করতাম না। সত্যি কথা বলতে, আমি আপনার কথা হেসে উডিয়ে দিতাম। কিন্তু  আমি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি   পর্ন মুভি, ড্রাগসের মতোই ক্ষতিকর    
আমি ভাবতাম পর্নোগ্রাফি  জীবনের একটা স্বাভাবিক অংশ   আমি মনে করতাম পর্ন মুভি ক্ষতিকর নয়। পর্নমুভি আমাকে  তো আমাকে বলছে না যাও কাউকে  খুন করে আসো বা   কারো ক্ষতি কর 

 কিন্তু একসময়  আমি একটি কঠিন সত্য আবিষ্কার করলাম  পর্ন মুভি আমার স্বাভাবিক জীবন যাত্রার ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে আমি রক্ত-মাংসের মানুষ ভেবে কোন  নারীর দিকে তাকাতে পারতাম না, তাকে শুধু কেনা-বেচার বস্তু ও কামনার আগুন উস্কে দেওয়ার সামগ্রী হিসেবে দেখতাম। আমি নিজের উপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছিলাম না এবং এ ধরনের চিন্তাকে আমি যত বেশি প্রশ্রয় দিতাম তত বেশি পর্ন মুভির প্রতি ক্ষুধা বেড়ে যেত।

কিন্তু, ততক্ষণ আমি এটা থামানোর চেষ্টা করিনি, তক্ষণ পর্যন্ত আমি পর্ন মুভি আসক্তিকে  সত্যিকারভাবে ড্রাগস আসক্তির অনুরূপ হিসেবে দেখিনি। কোন এক বিকেলে,  যৌন আবেদনময়ী পোশাকে এক আকর্ষণীয় নারীকে দেখে আমি কামাতুর হয়ে গেলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আমি নারীর শরীর  পেতে চাইলাম।  এই অনুভূতি থেকে মুক্তি পেতে কিছু পর্নমুভি দেখতে চাইলাম। আমি ইন্টারনেটে আমার প্রিয় পর্ন সাইটে লগ অন করার জন্য তাড়াতাড়ি কম্পিউটারের কাছে  এ ছুটে গেলাম। আমি কোন কিছু পরোয়া করছিলাম না, আমি যে কোন উপায়ে শুধু পর্ন মুভি অথবা সেক্স চেয়েছিলাম। যখন আমার অবস্থা স্বাভাবিক হল ঠিক ঐ মুহূর্তে আমার মনে হল আরে  আমি একসময় ড্রাগ নিতে দেরি হলে যেরকম অস্থির হয়ে যেতাম , শরীরের প্রচন্ড চাপ অনুভব করতাম পর্ন মুভির ক্ষেত্রেও তো সেরকমটা হচ্ছে ।   আমি বুঝতে পারলাম যে আমি নিজের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছি, এবং পর্ন মুভি  আসক্তি আমাকে শেষ করে ফেলেছে

দুর্ভাগ্যবশত, এই চোখ-খুলে দেওয়া অভিজ্ঞতাটা অনেক দেরিতে হল। ড্রাগস আসক্তির চেয়ে পর্ন মুভি আসক্তি নির্মূল করতে আমার আরও অনেক বেশি বছর লেগেছিল। মনে করে দেখুন পূর্বে আমি বলেছিলাম যে আমার পর্ন  দেখা কাউকে আঘাত করছে কিনা, হায়! আমি কতই না ভুল ছিলাম ? আমার পর্ন  আসক্তি আমার স্ত্রী ও সন্তানের প্রায় অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। এই দুঃসহ অভিজ্ঞতা পাড়ি দেওয়ার সময় আমার অনেক বার মনে হয়েছে আত্মহত্যা করে ফেলি। কারন আমার মনে হত সম্ভবত আমি আর কখনো সাভাবিক জীবন ও সুস্থ সম্পর্কে ফিরতে পারবনা।   

অনেকেই মনে করেন পর্ন মুভি শুধু  মজা, সেক্স, ও স্রেফ বিনোদনের জন্য । কিন্তু  এটা মোটেও ঠিক না । প্রায় সবাই জানে যে, ড্রাগস নেওয়া আপনার জন্য ভাল নয়, কিন্ত তারা কি জানে পর্ন মুভি আসক্তি ঠিক একই ভাবে আসক্তিপূর্ণ ও প্রিয়জনের সাথে সম্পর্ক বরবাদ করে দেয়? নিজে জেনেছি যে, ড্রাগস আসক্তির চেয়ে   পর্ন  আসক্তি থেকে রিকভার করা অধিকতর কঠিন। যারা আনন্দময় জীবন ও সম্পর্ক চায়, তাদের উচিত যে কোন মূল্য পর্ন মুভি থেকে দূরে থাকা। যদি আপনি ইতোমধ্যে এতে জড়িয়ে পড়েন তবে দ্রুত বেরিয়ে পড়ুন এবং সাহায্য নিন। এটা আপনাকে কখনো আনন্দ দেবেনা, বরং আরও বেশি ক্ষতি করবে। পর্ন মুভি আসক্তি থেকে  মুক্তি পাবার পর আমি  নতুন করে বাঁচতে শিখেছি , নারীদেরকে সম্মান করতে শিখেছি । জীবনটা আমার কাছে এখন অনেক বেশি মধুর মনে হয় ।

 (লস্ট মডেস্টি অনুবাদ টিম কর্তৃক অনূদিত)

মূল লিখাটি এই সাইট থেকে সংগৃহীত- https://fightthenewdrug.org/blog/ 
পড়ুন- মাদকের রাজ্যে-  



এখনি সময় পর্নকে বিদায় বলার!

এখনি সময় পর্নকে বিদায় বলার!

একদিন আমি ফেসবুকে একটা প্রশ্ন পোস্ট করলাম – “কোন খারাপ স্বভাবটাকে এই রামাদানে একেবারেই ছেড়ে দিবেন বলে মনে করেন?”
আশ্চর্যজনকভাবে এক ভাই ডাইরেক্ট বলে দিলেন যে তিনি পর্ন দেখা ছাড়তে চান। মানে ব্যাপারটা একবার ভেবে দেখুন,  একজন মানুষ কোন পর্যায়ের হতাশায় ভুগলে এই ব্যাপারে জনসম্মুখে এভাবে মুখ খোলেন!
আসলে  লজ্জার মাথা খেয়ে তাঁর এই সত্যকথন, তাঁর সাহসের স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং এটাই প্রমাণ করছে যে তিনি নিজের সঙ্গে  অনবরত যুদ্ধ করছেন। আর আমরা এটাও বুঝতে পারছি যে তিনি তাঁর এই আসক্তি কাটানোর জন্য  আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কীভাবে রামাদান মাস সহিসালামতে কাটাবেন এটা নিয়ে তিনি মারাত্মক চিন্তিত। তিনি ভয়ে আছেন, রোজা থাকা অবস্থায় না আবার নিজেকে আটকাতে না পেরে কোন পর্ন website-এ গিয়ে পর্ন দেখা শুরু করে দেন।
আপনারা কেউ কেউ হতেবা এটা মনে করতে পারেন, “আস্তাগফিরুল্লাহ! রামাদান মাসে কেউ এমন করারতো দূরের কথা, এরকম কাজ করার চিন্তা কেমন করে করতে পারে?” যদি এই চিন্তা আপনার মাথায় এসে থাকে তাহলে একটু থামুন। আস্তাগফিরুল্লাহ না বলে বরং আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলে আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করুন যে তিনি, আর-রহমান, আপনাকে এই ফিতনা থেকে বাঁচিয়েছেন আর তাঁর কাছে এই দোয়া করুন যে তিনি যেন আপনাকে পর্ন থেকে যিনা পর্যন্ত সব ধরণের হারাম থেকে রক্ষা করেন।

পর্নের প্রভাবঃ
যদিও পর্ন আসক্তির অনেক ক্ষতিকর ফলাফল আছে, এর মধ্যে যেটা তালিকার শীর্ষে রয়েছে সেটা হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গতার মধ্যে যেই প্রভাব এটা ফেলে। গবেষণা থেকে জানা যায় যে পর্নগ্রাফি কার্যক্রমে মানুষকে যৌন অনুভূতিহীন করে ফেলে। এর ফলে তাদের একই আনন্দ পেতে আরও বেশি উত্তেজনার প্রয়োজন হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, এর ফলে তাদের নিজের স্বামী/স্ত্রী পর্যায়ক্রমে তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করার জন্য যথেষ্ট থাকে না।
পর্ন আসক্তির ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে সবারই জেনে রাখা উচিৎ। যারা এতে আসক্ত এবং যারা আসক্ত না, উভয়েরই। পর্ন আসক্তির ঠিক মদ কিংবা মাদকাসক্তির মতো। এটাকে হুট করে থামানো যায় না। এটার পিছনে সময় ও শ্রম ব্যায় করতে হয় আর পর্ন আসক্তির এতটা শক্তিশালী কেন এটা যতক্ষণ না কেউ ঠিক মতো না বুঝতে পারছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। পর্ন আসক্তির তো যৌন আসক্তির  শুধুমাত্র একটা অংশ বিশেষ। পর্ন আসক্তি যিনার চেয়ে কম গুনাহের কাজ কিন্তু এটা যদি না ছাড়া যায় তাহলে এটাই এক সময় যিনার দিকে নিয়ে যাবে। ঠিক এই কারণেই আল্লাহ বলেছেন – “আর বাভিচারের কাছেও যেয়ো না...”(কুরআন ১৭:৩২)। আর পর্ন হচ্ছে যিনার দরজা। আসক্তি

এটা (পর্ন) কেন একটা পর্ন আসক্তিঃ
এই বিষয় নিয়ে গবেষণা থেকে জানা যায় যে পর্ন আসক্তি  এক ধরণের রাসায়নিক আসক্তি। অর্থাৎ, পর্নের প্রতি মানুষের আকর্ষণ মস্তিষ্কের উপর ঠিক সেই প্রভাবটাই ফেলে যেটা কোন মাদকদ্রব্য ফেলে। এমনকি এটাকে এই Wired articleটিতে “crack cocaine” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মেরি অ্যানি লেইডেন,  co-director of the Sexual Trauma and Psychopathology Program at the University of Pennsylvania's Center for Cognitive Therapy, পর্নের ব্যাপারে বলেন, “একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যত ক্ষতিকর জিনিস আছে, আমার জানা মতে তার মধ্যে এটা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর।”



আসক্তি অতিক্রম করাঃ
আপনি যদি পর্নআসক্ত হয়ে থাকেন তাহলে এটা জেনে রাখুনঃ
১।আপনি একা নন
২।আপনি অভাগা বা খারাপ মানুষও নন

স্ত্রী এবং পরিবার, আপনারা জেনে রাখুনঃ
১।এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আসক্তদের ব্যাপারে তাচ্ছিল্য করে কথা না বলে আপনি এই আসক্তিটার উপস্থিতি এবং বাস্তবতা স্বীকার করুন। তাদের সঙ্গে এইরকম আচরণ করলে তারা নিজেদেরকে আরও ছোট মনে করবে, নিজেদের ব্যাপারে আরও খারাপ অনুভব করবে এবং ফলে তাদের পর্নের মাধ্যমে endomorphine এর যেই আনন্দলাভের তীব্র অনুভুতি, সেটা পাওয়ার ইচ্ছা আবার জাগ্রত হবে। 
২।পর্ন আসক্তি যে শুধু মাত্র আসক্তদের জন্যই ক্ষতিকর তা নয় বরং এটা তার স্বামী/স্ত্রীর জন্যও খারাপ। এটা বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার কারণও হয়ে দারাতে পারে। ঠিক এই জন্যই এই ব্যাপারটাকে এত তুচ্ছ মনে করা ঠিক নয়। পর্ন আসক্তদের স্বামী/স্ত্রীর কাছে আমার বিনিত অনুরধ থাকল যে আপনারা পুলিশ অফিসারের মতো কড়া ব্যবহার না করে বরং তাদের এই সমস্যার সমাধানে যোগদান করুন। তাদের আসক্তিটা আপনি কখনও জোর করে ছাড়াতে পারবেননা।

রামাদানকে কাজে লাগানোঃ

পর্ন আসক্তিকে অতিক্রম করার জন্য দুটি দরকারি জিনিস দরকার– দৃঢ় ইচ্ছা এবং বাস্তব পদক্ষেপ।
রামাদান মাসে আমাদেরকে রোজা রাখতে হয়। রাসুল(সাঃ) রোজা রাখার মাধ্যমে আমাদের যৌন আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা শিখিয়েছেনঃ
রামাদান হল এমন একটা সময় যখন আমাদের রোজা রাখার অনেক “দৃঢ় ইচ্ছাথাকে। রোজা রেখে আবার নিজের এই আসক্তির কারণে আমরা এটাকে ভেঙ্গে ফেলতে পারি না। রামাদানই হল একটা বাস্তব পদক্ষেপ।

সহযোগীর সাহায্য নেয়াঃ

এই আসক্তিটার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একজন সহযোগী রাখুন। এই সহযোগী হতে পারে আপনার কোন বন্ধু অথবা আপনার পরিবারের কোন সদস্য অথবা আপনার স্বামী বা স্ত্রী। আপনার এই সহযোগীকে বলুন আপনার কম্পিউটারে একটা পর্ন
filtering monitor install করে দিতে এবং তাদেরকে দিয়ে আপনার কম্পিউটারে পাসওয়ার্ড সেট করে নিন এবং তাদের কাছ থেকে কথা নিন যে আপনি তাদের কাছ থেকে সেটা জানার যতই চেষ্টায় থাকুন না কেন তারা যেন কোন অবস্থাতেই সেটা আপনাকে না বলে।

আরও কিছু পরিবর্তনঃ

আপনার স্মার্ট ফোনটা বদলে ফেলুন - আপনার স্মার্ট ফোনটা বদলে একটা সস্তা ফোন ব্যবহার করুন। এমন কিছু যেটাতে ইন্টারনেট চলে না।
আপনার কম্পিউটার বদলে ফেলুন - এমন যদি হয়ে থাকে যে আপনি আপনার ল্যাপটপে পর্ন দেখেন তাহলে ওটা বাদ দিয়ে একটা ডেস্কটপ কিনে ফেলুন যেটা আপনার বাসার কোন খোলা জায়গায় রাখতে হবে যেখানে বসে আপনি পর্ন দেখতে পারবেন না।
আপনার টিভিটা বন্ধ রাখুন – আপনার কাছে যদি কোন পর্নের ভিডিও অথবা ডিভিডি থেকে থাকে সেগুলো নষ্ট করে ফেলুন অথবা ফেলে দিন। সহযোগীর সাহায্য নেয়াঃ

আরও কিছু কার্যকরী পদক্ষেপঃ

নিজেকে যাচাই করাঃ
আপনি নিজেকে নিজের কাজের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করুন এবং আপনার সহযোগীর সাথে আপনার addictionএর ব্যাপারে পরামর্শ নিন। একবার ভেবে দেখুনঃ আপনি যদি রোজা থাকা অবস্থায় নিজেকে সামলাতে পারেন তাহলে আপনি রামাদান মাসের রাত্রিগুলোতে, যেই রাতগুলো বছরের অন্য সব রাতের থেকে পবিত্র, এই সময়ে কেন সামলাতে পারবেন না? আর আপনি যদি নিজেকে রামাদান মাসে নিজেকে সামলাতে পারেন তাহলে রামাদান মাসে যেই আল্লাহকে আপনি মানেন বাকি মাসগুলোতেও কি আপনি একই আল্লাহকে মানেন না, যিনি সব সময় আপনাকে দেখেন?
সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া করুন – আল্লাহ, আত-তাওয়াবের কাছে ক্ষমা চান, আপনি যেই সময়টা ব্যায় করছেন, যেই চেষ্টাটা চালিয়ে যাচ্ছেন, তিনি যেন তাতে বরকত দান করেন এবং আপনার এই পরিক্ষাটা যেন উনি সহজ করে দেন। সবসময় মনে রাখুন যে একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছাতেই আপনি এই পরীক্ষায় পরেছেন এবং আপনি চেষ্টা করলে উনি ওনার রহমতের দ্বারা আপনাকে এটা থেকে আরও শক্তিশালী মু’মিন হিসেবে বের করবেন। এই পবিত্র মাসের রাতগুলোতে এবং ইফতারি করার আগের সময়গুলোতে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, তাঁর সাহায্য চান।

এইরকম বেশি বেশি দোয়া করুন –
اللهم انيظلمت نفسي ظلما كثيرا ولايغفر الذنوب الا انتفاغفرلي مغفرة من عندك, وارحمني انك انت الغفور الرحيم
 [O Allāh! I have wronged myself very much, and none can forgive sins, except You only. Grant me forgiveness, and have mercy upon me; indeed You are the Most Forgiving, Ever Merciful.] (Bukhāri)

বই পড়ুনঃ সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে  এই আসক্তি থেকে বের হয়ে আসার উপর যেই বইগুলো লেখা হয়েছে, সেগুলো পড়ে দেখা। ইচ্ছা  হারিয়ে ফেলার আগেই বইগুলো পড়া শুরু করুন।

মোট কথা, চেষ্টা করুন যে এই রামাদানে, যখন আপনার spiritual motivationটা অনেক বেশি ,এই সময়টাতে এমন কোন কিছু করার একটা অভ্যাস করুন যেটা আপনাকে শুধু এই রামাদানেই নয় বরং ভবিষ্যতেও  পর্ন থেকে দূরে রাখবে।

Wednesday, June 17, 2015

মুখোশ উন্মোচনঃ পর্ব-১

আমেরিকা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড  নিজেদেরকে দাবী করে এক মহান সভ্যতার ধারক হিসেবে । যার অন্যতম ফিচার  গনতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা আর নারীদের সমান অধিকার । পৃথিবীর বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাদের তোড়জোড়ের অভাব নেই । war on terror এর নামে তারা মুসলিম দেশ গুলোতে আক্রমণ করতে দুইবার চিন্তা করে না । মুসলিম নারীদের জন্য তাদের মায়াকান্নার শেষ নেই । তারা বলে মুসলিমরা নারীদেরকে বোরখার আড়ালে রেখে,নারীদেরকে  ঘরে বন্দী করে রেখে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে , তাদেরকে এক অদৃশ্য দাসত্বের শিকলে বেঁধে রেখেছে । তারা মুসলিম নারীদেরকে বোরখার আড়াল থেকে বের করে এনে, শরীয়া আইনের দাসত্বের শৃঙ্খল ভেংগে ফেলে  তাদেরকে পুরুষের সমান অধিকার দিতে চায় । অথচ তাদের দেশেই তারা  নারীদের অধিকার কেড়ে নিয়ে  নারীদেরকে পন্য বানিয়ে ফেলেছে  তারাই পর্ন ইন্ডাস্ট্রি বানিয়েছে,তারাই সেখানে  নারীদের সাথে পশুর মতো আচরণ করছে । বাসায়, স্কুলে, কলেজে, রাস্তাঘাটে, অফিসে, হাসপাতালে , সেনাবাহিনীতে কোথাও নারীরা নিরাপদ নয়। সবখানেই নারীরা চরম ভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে । আমাদের এই সিরিজে আমরা চেষ্টা করব এই পাশ্চাত্য সভ্যতার ভন্ডামী আপনাদের সামনে তুলে ধরার । আমরা চেষ্টা করব সেই সব  হতভাগ্য বোনদের বুকফাটা হাহাকার গুলো আপনাদের কাছে পৌঁছে দেবার যারা এই তথাকথিত আধুনিক, মক্তমনা, নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী সমাজের দ্বারা ভয়ংকর যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন 
.
“আমেরিকান আর্মির  মহিলা সদস্যরা শত্রুদের নিয়ে ততোটা বেশী শংকিত থাকে না ,  যতটা বেশী  শঙ্কিত থাকে তাদের পুরুষ সহকর্মীদের হাতে যৌন নিপীড়িত হবার  ভয়ে ......”।
.
একটা গভীর  দীর্ঘশ্বাস ছেড়েই এই কথা গুলো বললেন ডোরা হারনান্দেজ যিনি প্রায় দশ বছরেরও বেশী সময় ধরে কাজ করেছেন আমেরিকান নেভি এবং আর্মি ন্যাশনাল গার্ডএ । ডোরা হারনান্দেজ সহ আরো কয়েকজন প্রবীণ ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা হচ্ছিল যারা আমেরিকার সামরিক বাহিনীতে  কাজ করেছেন অনেক বছর , ইরাক এবং আফগানিস্থান যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছেন । এই ফ্রন্টগুলোতে কোনমতে  তারা সারভাইভ করতে পেরেছেন কিন্তু পুরো কর্মজীবন জুড়ে তাদেরকে আরোও একটি যুদ্ধ করতে হয়েছে নীরবে-এবং সেই যুদ্ধে তারা প্রতিনিয়তই পরাজিত হয়েছেন । তাদের সেই নীরব যুদ্ধ ধর্ষণের বিরুদ্ধে ।
পেন্টাগনের নিজেস্ব  রিসার্চ থেকেই  বের হয়ে এসেছে যে আমেরিকান সামরিক বাহিণীর  প্রতি চার জন মহিলা সদস্যের একজন তাদের ক্যারিয়ার জুড়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ।

ডোরা হারনান্দেজ থেমে যাবার পর  মুখ খুললেন সাবিনা র‍্যাংগেল , টেক্সাসে,  এলপাসোর অদূরে তাঁর বাসার ড্রয়িংরুমে বসেই আমাদের কথা হচ্ছিল, “ আমি যখন আর্মির বুট ক্যাম্পে ছিলাম তখন আমি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম এবং যখন নেভিতে গেলাম তখন একেবারে  ধর্ষণের শিকার হলাম” ।



জেমি লিভিংস্টোন ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন  ইউ.এস নেভিতে  তিনি বললেন, আমি জানতাম   ইউ এস আর্মির কালচারটাই এমন যে  সৈনিক এবং অফিসাররা রেপ করাকে তাদের অধিকার  মনে করে  তাই আমি রেপের ঘটনা গুলো চেপে যেতাম আর আমার বসই আমাকে রেপ করত, কাজেই আমি কাকে রিপোর্ট করব’?    

ভদ্রমহিলাগন একে একে আমেরিকান  আর্মিতে তাদের উপর করা যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো বলে চলছিলেন । তারা কেউই পূর্ব পরিচিত ছিলেন না , কিন্তু আমেরিকান আর্মিতে নিজেদের সহকর্মী এবং বসদের হাতে তারা যে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতাই তাদেরকে একে অপরের কাছে নিয়ে এসেছে । হৃদয়ের সবকটা জানালা খুলে দিয়ে তারা একজন অপরজনের দুঃখগুলো ভাগাভাগি করে নিচ্ছিলেন ।

পেন্টাগনের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে (২০১০ সাল,) ইউ এস আর্মিতে প্রতি বছর উনিশ হাজারের মতো যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে । (২০১১ সালে এটার পরিমাণ ছিল ছাব্বিশ হাজার)ইউ এস আর্মির মহিলা সদস্যরা আমেরিকার বেসামরিক মহিলাদের থেকে অধিক মাত্রায় যৌন নির্যাতনের ঝুকিতে থাকে । পেন্টাগনের  Sexual Assault Prevention and Response office এর প্রধান গ্যারী প্যাটন বলেন , আমাদের অবশ্যই এই কালচারটা পরিবর্তন করতে হবে । যৌন নির্যাতনকে স্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবে মেনে নিলে চলবে না ।  ভিক্টিমের ইউনিটের সবাইকে যৌন নির্যাতনের ব্যাপারটিকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে ।

সাবিনা র‍্যাংগেল  হাইস্কুল শেষ করেই আর্মিতে জোগদান করেছিলেন । তার  ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনের ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল  আর্মির বুট ক্যাম্পে একদিন ট্রেনিং করার সময় তার  ড্রিল সার্জেন্ট এর দ্বারা । সাবিনা র‍্যাংগেল প্রথমে ভেবেছিলেন তার সার্জেন্ট বোধহয় তাকে ড্রিল করার ব্যাপারে নির্দেশনা দিচ্ছেন , কিন্তু আসলে সার্জেন্ট  তার  শরীরে হাত বুলানোর চেষ্টা করছিলেন ।
সাবিনা র‍্যাংগেল বুট ক্যাম্প শেষ করার পর আর  আর্মি ছেড়ে চলে আসেন । যৌন নির্যাতনের ঘটনা  চেপে যান সবার কাছ থেকে ।

পেন্টাগনের পরিসংখ্যান অনুসারে মাত্র ১৪ শতাংশ যৌন নির্যাতনের ঘটনা রিপোর্ট করা হয় । বাকী ৮৬ শতাংশ ঘটনা লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যায় । অনেক ভিক্টিম অভিযোগ করেন তার নির্যাতনকারী তার চেয়ে উঁচু র‍্যাংকের।অনেকে অভিযোগ করেন  যৌন নির্যাতনের শিকার হলে যেই  কর্মকর্তার কাছে রিপোর্ট করতে হবে , সেই সব কর্মকর্তাই আমাকে  যৌন নির্যাতন করেছে  র‍্যাংগেলের ক্ষেত্রেও এইরকমটা হয়েছিল । 

 র‍্যাংগেল  ২০০০ সালের দিকে আবার ইউ এস  সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেন । এইবার তিনি নেভিতে । এল পাসোতে ইউ এস নেভীর একটা ঘাঁটিতে তিনি  কাজ করার দায়িত্ব পান ।
একবার তার বেতনের চেকে কিছুটা সমস্যা হলে তিনি তাঁর কমান্ডার এক সার্জেন্ট মেজরের  সঙ্গে  যোগাযোগ করলেন । সেই সার্জেন্ট মেজর তাঁকে  তার অফিসে ডেকে পাঠালেন । তবে তিনি র‍্যাংগেলকে এই প্রস্তাবও দিলেন , “ তুমি যদি আমার সঙ্গে হোটেলে দেখা কর তাহলে, আমি তোমাকে খুশি করে দিব” ।
র‍্যাংগেল এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন । কিন্তু সেই সার্জেন্ট মেজর এতে একটুকুও না দমে র‍্যাংগেলকে বিছানায় যাবার প্রস্তাব দিতেই থাকলেন।
আমি যখন তার অফিসে গেলাম তখন আর কোন উপায় না পেয়ে  তার পি.এস (যিনি নিজেও একজন মহিলা) কে বললাম , যখন বস আমাকে ডাকবে এবং আমি যাবার পর ভেতর থেকে দরজা লক করে দিবে , প্লীজ আপনি এই সময়টাতে একটু পর পর দরজায় নক করবেন । তিনি কিছুটা ক্লান্তস্বরে উত্তর দিলেন , “সাবিনা ! শুধু তোমার সাথেই না , বস সবার সাথেই এরকম করে ...।

আমরা,সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন বা আছেন এমন অনেক অনেক মহিলার সঙ্গে কথা বলেছি , যারা সবাই একটা ব্যাপারে একমত হয়েছেন – ইউ.এস সামরিক বাহিনীর পুরুষরা , সামরিক বাহিনীর নারীদের ধর্ষণ করাকে তাদের অধিকার মনে করে । সামরিক বাহিনীতে তো একটা কৌতুক প্রচলিতই আছে ,‘পুরুষ সহকর্মী বা অফিসারদের হাতে  ধর্ষিত হওয়া নারী অফিসার বা সৈন্যদের পেশাগত দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে’।

সাবিনা র‍্যাংগেল একবার এক মিশনের দায়িত্ব পেলেন । সেই মিশনেও এই সার্জেন্ট মেজর ছিলেন । এই সার্জেন্ট মেজর আর একজন সার্জেন্ট মেজরকে নিয়ে সাবিনা র‍্যাংগেল কে ধর্ষণ করতে থাকেন ।
সাবিনা র‍্যাংগেল বিভিন্ন সময় তার কমান্ডারদের (যাদের মধ্যে একজন মহিলা কমান্ডারও ছিলেন) তার ধর্ষিত হবার ঘটনা জানালে , তারা কোন পদক্ষেপ না নিয়ে সাবিনাকে ঘটনা গুলো চেপে যেতে বললেন । এমনকি কোন কোন অফিসার তাঁকে এই ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে উত্যক্ত করত ।

সাবিনা র‍্যাংগেল আস্তে আস্তে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়লেন । একদিন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন সামরিক বাহিনী ছেড়ে চলে যাবার - ব্যস অনেক হয়েছে আর এই পাশবিক নির্যাতন সহ্য করা যাবে না । তিনি জীবন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়লেন । ধর্ষিত হবার দুঃসহ স্মৃতি গুলো তাঁকে সারাক্ষন তাড়া করে বেড়াতে লাগলো । আত্মহত্যার চেষ্টাও করলেন কয়েকবার ......

শরীয়াহ আইনানুসারে, অপরাধ করার কারণে নারীদের দোররা মারলে   আমেরিকার মিডিয়াতে প্রতিবাদের ঝড় উঠে ,মুসলিমদের তুলোধুনো করে দেওয়া হয় , নারীবাদীরা মায়া কান্না কাঁদে, হই চই শুরু করে দেয় – মুসলিমরা বর্বর, মধ্যযুগীয়, মুসলিমরা নারী স্বাধীনতার বিরোধী   ব্লা ব্লা ব্লা ...  
অথচ তাদের নিজেদের দেশের আর্মিতেই যে ভয়াবহ নারী নির্যাতন হয় সে ব্যাপারে তারা চুপ   কোথায় তাদের মানবাধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, কোথায়  নারী স্বাধীনতা ?

#ডাবলস্ট্যান্ডার্ড 

চলবে ইনশা আল্লাহ্‌  ......

(লস্ট মডেস্টি অনুবাদ টিম কর্তৃক অনুবাদিত )

পড়ুন- 
মুখোশ উন্মোচনঃ পর্ব-২ http://lostmodesty.blogspot.com/2015/10/blog-post_25.html  
মুখোশ উন্মোচনঃ পর্ব-৩  http://lostmodesty.blogspot.com/2015/12/blog-post_29.html 
পাশ্চাত্যে বেড়ে ওঠা - http://lostmodesty.blogspot.com/2015/12/blog-post_17.html 


রেফারেন্স- 
১) http://www.npr.org/2013/03/20/174756788/off-the-battlefield-military-women-face-risks-from-male-troops
২)http://www.protectourdefenders.com/factsheet/
৩) http://www.globalresearch.ca/sexual-assault-against-women-in-the-us-armed-forces/5374784