Thursday, September 21, 2017

তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ (তৃতীয় কিস্তি)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।
.
মাঝে মাঝে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকি কীবোর্ড নিয়ে কিন্তু লিখা আসে না। শব্দগুলো বিক্ষিপ্ত ভাবে ছোটাছুটি করে মাথার ভেতর, বহু চেষ্টা সাধনার পরেও ধরা দেয় না।
.
একরাশ হতাশা আর মহা বিরক্তি নিয়ে উঠে আসি টেবিল ছেড়ে। ব্যালকনিতে যেয়ে দাঁড়াই। এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস এসে ঝাপটা মারে মুখে।তিলোত্তমা নগরী তখন গভীর ঘুমে। দু একটা রাতজাগা ক্লান্ত ট্রাক দীর্ঘশ্বাসের মতো হর্ন বাজিয়ে ছুটে চলে ফাঁকা রাজপথে। ব্যালকনির ওপারেই ইট পাথরের দালানের ফাকে নিভে যেতে বসা শুকতারা।হাত বাড়ালেই যেন ছোঁয়া যাবে।ক্লান্ত প্রাণে ব্যালকনির গ্রীল ধরে আমি ঠাই দাঁড়িয়ে থাকি। ভোর হতে এখনো অনেক দেরী।
.
Writer's Block বলে বিদঘুটে একটা রোগ আছে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নতুন করে কিছু লিখতে পারেন না বা সৃজনশীল কোন কাজ করতে পারেন না। একধরনের অসহনীয় স্থবিরতা নেমে আসে।অনেক বিখ্যাত কবি সাহিত্যিক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। [১]
.
Writer's Block কেন হয়, কীভাবে Writer's Block কাটানো যায় সেটা নিয়ে অনেক জল ঘাটাঘাটি করা হয়েছে।আমার ক্ষেত্রে এটা কেন হয় সেটার উত্তর পেলাম এই কয়েকদিন আগে।
..
আল্লাহ (সুবঃ) বলছেন, "তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল"।[২]
"মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে"।[৩] 
"গুরু শাস্তির পূর্বে তাদেরকে আমি অবশ্যই লঘু শাস্তি আস্বাদন করাবো,যাতে তারা ফিরে আসে"।[৪]
.
আমার কৃতকর্মের দরুনই আল্লাহ আমার ওপর এই বিপদ পাঠিয়েছেন। Writing Block যখন হয় তার আগের কয়েকটা দিন আমি কী কী করেছি শুকুনের দৃষ্টিতে দেখতে থাকলাম।যেগুলো পেলাম
.
১) ফজরের নামাজ বাদ পড়েছে।
২) বিতরের নামাজ আলসেমি করে পড়া হয়নি।
৩) সুন্নত নামাজ পড়তে দেরী করেছি বা পড়িইনি।
৪) চোখের হেফাযত করিনি
.
এই চারটি পাপের মধ্যে সর্বশেষ পাপটাই সবচেয়ে বেশী করেছি। চোখের হেফাযতের ব্যাপারে চরম মাত্রার উদাসীন ছিলাম।হুড তোলা রিকশায় বসা নিকাবীর দীঘল কালো চোখে চোখ পড়া মাত্রই চোখ নামিয়ে নেইনি, তাকিয়ে থেকেছি যতক্ষন দেখা যায়, ফ্রেন্ড লিস্টের কোন বন্ধুর লাইক দেওয়ার সুবাদে ফেসবুকের হোমপেইজে কোন মেয়ের ছবি আসলে সংগে সংগে সেই বন্ধুকে আনফলো বা আনফ্রেন্ড করে স্ক্রলডাওন করে যাইনি,বরং কিছুটা সময় ছবি দেখে তারপর স্ক্রলডাওন করেছি।
এই পাপগুলোর কারনে আল্লাহ (সুবঃ) আমার লেখনী ভোঁতা করে দিয়েছেন।



.
চোখের হেফাযতের গাফিলতি থেকে Writing Block হয়েছে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো মোটেই অযৌক্তিক কিছু না।
ইমাম আবু আব্দুল্লাহ ইবনু আজলা (রহঃ) বলেন, " আমি একবার ফুটফুটে এক খৃস্টান বালিকাকে দেখছিলাম। ইমাম আব্দুল্লাহ আল বালখী (রহঃ) আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে বললেন," তুমি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী করছো"?
.
আমি উনার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলাম," আপনি ঐ ফুটফুটে মেয়েটিকে দেখেছেন? এমন সুশ্রী চেহারাও কি জাহান্নামের আগুনে পুড়বে"?
.
ইমাম আল বালখী (রহঃ) আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন," এই খৃস্টান বালিকাকে দেখার পরিণতি তোমার জন্য খুব একটা ভালো হবেনা। একদিন না একদিন তোমাকে এর পরিণাম ভোগ করতে হবে"।
.
ইমাম ইবনু আজলা (রহঃ) বলেন," ৪০ বছর পর আমি কুরআন ভুলে যাই,আমি বুঝতে পারি যে, এর কারণ ছিল ঐ খৃস্টান বালিকাকে দেখা"। [৫]
.
কি যেন নাম ছিল বালিকার...নামটাও ভুলে গিয়েছি, অথচ একসময় এই বিস্মৃতপ্রায় বালিকাকে দূর থেকে ঠোঁট টিপে হাসতে দেখে কতোবার অংকে ভুল করেছি, ক্লাস এইটের একটা টার্মে কি যাচ্ছেতাই রেজাল্টই না করেছিলাম। বালিকার ইষৎ ভ্রুকুটি কতোবার নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেক্ট্রন বিন্যাস ওলট পালট করে ফেলেছে, থিওরি ওফ রিলেটিভিটির প্রশ্নগুলোর চিন্তা ভুলিয়ে দিয়েছে।
.
ঈল্ম তথা জ্ঞান অর্জনের অন্যতম পূর্বশর্ত হল চোখের হেফাযত করা। চোখের হেফাযত করলে বিচক্ষণতা বাড়ে, বুদ্ধি দিন দিন ধারালো হয়।
.
শায়খ সুজাউল কারমানী (রহঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি তার বাহ্যিক অবস্থাকে সুন্নাহর পাবন্দ বানায়, অন্তরকে আল্লাহর চিন্তায় ও স্মরণে ব্যস্ত রাখে, প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে দূরে থাকে, নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে নজর হেফাজত করে এবং হালাল খাদ্য গ্রহণ করে, সে ব্যক্তির উপলব্ধি এবং দূরদৃষ্টি কখনো ভুল হয় না।” [৬]
.
পড়া মনে থাকে না? অংক মাথায় ঢোকে না? পড়ার টেবিলে মন বসে না? চোখের হেফাযত করুন। সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে নিমিষেই। কসম খোদার!
.
চোখের হেফাযত করতে পারলে ঈমানের স্বাদ পাওয়া যায়।

"যে মুসলমান প্রথমবার কোন মহিলার সৌন্দর্য দেখে চোখ নামিয়ে নেয়, আল্লাহ (সুবঃ) তার জন্য ইবাদাতে স্বাদ ও মিষ্টতা সৃষ্টি করে দেন"। [৭] 
.
"কুদৃষ্টি শয়তানের বিষমিশ্রিত তীর সমূহের একটি। যে ব্যক্তি আল্লাহ'র (সুবঃ) ভয়ে উহাকে ছেড়ে দিবে, আল্লাহ (সুবঃ) তার অন্তরে ঈমানের স্বাদ সৃষ্টি করে দিবেন"।[৮]
.
এই ঈমানের স্বাদ যে কতো মিষ্টি হতে পারে তা কল্পনাও করতে পারবেন না। আপনার কোন চিন্তা নেই,ভাবনা নেই, দুঃখ নেই, হতাশা নেই। মুক্ত,স্বাধীন বাতাসের মতোন অবাধ আপনার জীবন।
কী এক অসহ্য আনন্দ! আমি এই আনন্দটার উদাহরণ দেই এভাবে, দুপুরে গরুর মাংসের ঝাল তরকারী দিয়ে গরম গরম ভাত খেলেন পেটপুরে। তারপর জর্দা ছাড়া একটা পান মুখে দিয়ে কিছুক্ষন চিবুলেন। তারপর চিলেকোঠার ঘরটাতে যেয়ে দখিনা জানালা খুলে দিয়ে শীতল পাটির ওপর জম্পেশ একটা ঘুম দিলেন!
.
.ঢাকা শহরে একটা কথা বেশ চালু ছিল। ঢাকা শহরে কাকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশী।এখন অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে নিশ্চিন্তেই বলা যায় ঢাকা শহরে কাকের চেয়ে মোটিভেশনাল স্পীকারের সংখ্যা বেশী। ইউটিউব,ফেসবুক লাইভ,পাড়ার অলিগলি,চিপা চাপা সবখানেই এদের উৎপাত। স্বপ্ন বেচার এই সব চোরাকারবারিরা ঘ্যানর ঘ্যানর করে অবিরাম- এইভাবে চললে তুমি স্মার্ট হতে হবে,তোমার পোষাক আশাক হতে হবে এইরকম,বিশ্বের সংগে তাল মিলিয়ে চলতে হলে তোমাকে লীডারশীপ শিখতে হবে,টীম ওয়ার্ক করা শিখতে হবে, শিখতে হবে নেটওয়ার্কিং ,ঠিক এই এই কাজগুলো করলে তোমার আত্মবিশ্বাস ছুঁয়ে ফেলবে ঐ নীলাকাশ। 
.
তবে ব্রেইন ওয়াশিং এর আসল কাজটা করে মিডিয়া- তুমি তখনই প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী একজন মানুষ হবে যখন তুমি দাঁত ব্রাশ করবে ক্লোজআপ পেস্ট দিয়ে, যখন হুইল পাওয়ার হোয়াইট দিয়ে তোমার কাপড় গুলো ধোয়া হবে, যখন ফেয়ার হ্যান্ডসাম ম্যান থাকবে তোমার কাবার্‌ডে আর  ক্লিয়ার ম্যান স্পোর্টস থাকবে তোমার বাথরুমে। বডি স্প্রে আর চুলে জেলের ব্যবহার তোমাকে করে তুলবে দুর্দান্ত একজন মানুষ। রাফ এন্ড টাফ।যাকে বলে আসল পুরুষ! 
.
ব্রিটিশ অথবা মার্কিন একসেন্টে ইংরেজি বলতে পারে,স্প্যানিশ অথবা ফ্রেঞ্চ ভাষার ওপরেও মোটামুটি দখল আছে, পোশাক আশাকে কেতাদুরস্ত, লীডারশীপ কোর্স করা আছে বেশ কয়েকটা এমন অনেক "কুল গাই" রা যখন ফেসবুকের রঙ্গিন ছবির আড়ালে হতাশার চাষাবাদ করে, বিদেশী লালপানিতে ডুবে নিজেকে ভুলে থাকতে চায় তখন এদের জন্য করুণা হয়। চেনা ট্র‍্যাকটুকু পরিবর্তিত হলেই এরা ডাংগায় তোলা মাছের মতো খাবি খায়, আত্মবিশ্বাসের নাম গন্ধও থাকে না তখন। 
.
নিজের ওপর সামান্য নিয়ন্ত্রণটুকু নেই কর্পোরেট স্লেইভদের।"তেতুল হুজুর" লেবেলিং করতে এরা খুব পটু, কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দুই একজন  বাদে এদের অধিকাংশেরই মেয়ে দেখলে মুখে লালা ঝরে; শুধু দেখতে পাওয়া যায়না আরকি। অফিস আড্ডাগুলোতে চলে নারীদেহ নিয়ে রসালো আলাপ, অফিস পার্টিগুলোতে হয় উৎসব ; কাম,মদ আর মাতসর্যের। পর্ন,মাস্টারবেশন এইগুলোর কথা বলাই বাহুল্য।
.
চোখের হেফাযত করতে পারলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। আশেপাশে কোন রূপবতী থাকলে প্রচন্ড ইচ্ছে করে  তার দিকে তাকাতে। পর্ন দেখার নেশা জাগলে সেটাকে দমিয়ে রাখাও খুবই কষ্টকর।আপনি যদি ঠিক এই মুহূর্তগুলোতে নিজের ইচ্ছেটাকে পায়ের নিচে পিষে ফেলতে পারেন, তাহলে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস জন্ম নিবে আপনার মনে । আপনি হবেন অদম্য,দুরন্ত,দুর্বার। কোনকিছুই অসম্ভব মনে হবেনা। পাহাড়সম বাঁধা,বিপত্তিও বরণ করে নিবেন হাসিমুখে। 'কুছ পরোয়া নেহি, আমি পারবই ইনশা আল্লাহ' এই হবে আপনার এপ্রোচ। আপনার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করবেন আপনি নিজে,নফস,পর্ন বা মাস্টারবেশনের অন্ধকার পৃথিবী নয়। 
.
চোখের হেফাযত আপনাকে উপহার দিবে ইস্পাত কঠিন এক ব্যক্তিত্ব। পাঁচ দশটা গার্লফ্রেন্ড চালায় এমন ছেলে আসল পুরুষ নয়,আসল পুরুষতো তারাই যারা রূপবতীদের রূপের আকর্ষণ উপেক্ষা করে চোখের হেফাযত করে।মেয়েদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকা মানে নিজেকেই অপমান করা এটা কেন আমরা বুঝি না? মনুষ্যত্বের কী ভীষণ অপমান! যেই মেয়েটির দিকে আপনি লুল চোখে তাকিয়ে আছেন,সেই মেয়েটির কাছে আপনি কতোটুকু ছোট হয়ে গিয়েছেন সেটা একবার ভেবে দেখুন। সেই মেয়েটি এটা ধরেই নেবে যে আপনি একটা ক্যাবলাকান্ত, আপনাকে চাইলেই ইচ্ছেমত নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানো যায়। রূপবতীদের রূপের দেমাগে যে মাটিতে পা পড়েনা তা কি আর এমনি এমনি? 
.
বিশেষ করে দাড়ি টুপিওয়ালা ভাইয়েরা, এই ব্যাপারে খুব সাবধান। এই জঘন্য কাজটি করার মাধ্যমে আপনি নিজেকে তো সেই মেয়েদের চোখে ছোট করছেনই, সেই সংগে আপনার দ্বীনেরও মারাত্মক ক্ষতি সাধন করছেন। হুজুররা কিছু করুক বা না করুক দিনশেষে সব দোষ তাদের ওপরই চাপানো হয়। হিন্দু পুরোহিত রাম রহিমও ২০০০ হাজারের অধিক নারীকে ধর্ষন করে, খৃস্টান পাদরীরাও নানদের যৌন নির্যাতন করে, ইউরোপ,আমেরিকার ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, আর্মি, হাসপাতাল,কর্মক্ষেত্র এমনকি নিজ বাসস্থানেও নারীরা যৌন নিপীড়নের হাত থেকে রেহায় পায় না, অথচ দিনশেষে হুজুররাই নাকি সেক্স স্টারভড, স্যাডিস্ট!
.
এই বিরুদ্ধ পরিবেশে মেয়েদের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থেকে আর নিজের দ্বীনকে ছোট করবেন না। এই অধিকার আপনার নেই। ওভার এন্ড আউট। 

চলবে ইনশা আল্লাহ…
========
পড়ুনঃ
প্রথম কিস্তিঃ  https://goo.gl/Zrr498
দ্বিতীয় কিস্তিঃ https://goo.gl/tCjzCd
========
 রেফারেন্সঃ
[১] http://tinyurl.com/q8hs7rw
[২]সূরা শুরা,আয়াত ৩০
[৩]সূরা রুম,আয়াত ৪১
[৪] সূরা সাজদাহ,আয়াত ১২৩
[৫]যাম্মুল হাওয়া,পৃষ্ঠা: ১০২
[৬] চোখের আপদ ও প্রতিকার,ইরশাদুল হক আছরী,পৃষ্ঠাঃ ৪৮
[৭]আহমাদ হাঃ ২২৩৩২, তাবারানী,বাইহাকী
[৮] হাকিম,তাবারানী

Thursday, September 14, 2017

তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ (দ্বিতীয় কিস্তি)

বিসমমিল্লাহির রহমানীর রহীম।
.
দ্রুতগতি সম্পন্ন নিউট্রন সজোরে ধাক্কা মারলো ইউরোনিয়াম-২৩৫ পরমানুকে। ইউরোনিয়াম-২৩৫ পরমানু ভেঙ্গে হল দু টুকরো। উৎপন্ন হল বিপুল শক্তি এবং নতুন তিনটি নিউট্রন। এই নতুন তিনটি নিউট্রন আবার সজোরে ছুটে গেল নতুন তিনটি ইনট্যাক্ট ইউরোনিয়াম-২৩৫ পরমানুকে আঘাত হানার জন্য। এই তিনটি ইউরোনিয়াম ভেঙ্গে দুটুকরো হল, উৎপন্ন হল পূর্বের চেয়েও অনেকগুন বেশি শক্তি এবং নতুন নয়টি নিউট্রন। এই নিউট্রনগুলো আবার নতুন নয়টি ইউরোনিয়াম-২৩৫ পরমানুকে আঘাত করল। এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকে যতোক্ষন পর্যন্ত সেখানে একটি ইউরোনিয়াম-২৩৫ পরমানু অবশিষ্ট থাকে।
.
নিউক্লিয়ার সায়েন্সের খুবই পরিচিত একটি বিক্রিয়া এটি, নিউক্লিয়ার ফিশন রিএকশ্যান নামেই যেটি পরিচিত। এই চেইন রিএকশ্যানই ঘটে ধ্বংসাত্মক পারমানবিক বোমার মধ্যে।অতিক্ষুদ্র এক নিউট্রনের মাধ্যমে যার শুরু হয়, সমাপ্তি ঘটে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পরে। [১]
.
চোখের অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টিকে আমরা তুলনা করতে পারি চেইন রিএকশ্যান শুরু করে দেওয়া অতিক্ষুদ্র সেই নিউট্রনের সংগে। শুধু একটি মাত্র অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টির কারনে শুরু হয়ে যেত পারে পাপের চেইন রিএকশ্যান। একটার পর একটা পাপ করে যেতেই থাকে মানুষ। শেষটা হয় দুনিয়া এবং আখিরাত দুটোই হারিয়ে।

.

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের জন্য রাতের গভীরে সালাতে দাঁড়িয়ে কাঁদতেন। দীর্ঘ সিজদায় আল্লাহর কাছে আকুল প্রার্থনা করতেন আমাদের জন্য [https://goo.gl/JhZZrC]। আমাদের সংগে তাঁর গভীর বন্ধনের উদাহরন দিতে যেয়ে তিনি বলেছিলেন,‘ তোমরা হলে পাখাওয়ালা পতঙ্গের মতো। মরুভূমিতে রাতের আধারে মশাল জ্বালানো হয়েছে। সেই আগুনে আকৃষ্ট হয়ে তাতে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য তোমরা সবাই ছুটে চলছো। আর আমি তোমাদেরকে আঁকড়ে ধরে আছি, যেন তোমরা সে আগুনে ঝাঁপ দিতে না পারো’। [২]
.
 রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে,আমাদের নিজেদের পিতামাতার চেয়েও বেশী ভালোবাসেন।
হাশরের ময়দানে জাহান্নামের ভয়াবহতা দেখে পিতামাতা পর্যন্ত তাদের সন্তানকে অস্বীকার করবেন, চাইবেন যেন তাদের সন্তান, তাদের মা বাবা ,ভাই বোন ,আত্মীয় স্বজন প্রয়োজন পড়লে এই দুনিয়ার সবকিছু জাহান্নামে ফেলে দিক তাও যেন তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ না করেন। সেই ভয়াবহ, স্বার্থপরতার দিনেও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের জন্যেই উদ্বিগ্ন থাকবেন। এতোটাই ভালোবাসেন তিনি (সাঃ) আমাদেরকে। এই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বারবার সতর্ক করে দিয়ে গিয়েছেন নারীর ফিতনাহর ব্যাপারে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘ আমার উম্মাতের উপর অসংখ্য ফিতনাহ আসবে,তারমধ্যে অধিক কষ্টদায়ক ও ক্ষতিকারক হল মহিলাদের ফিতনাহ’।


উসমান বিন যায়িদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,‘ আমার মৃত্যুর পরে পুরুষদের জন্য আমি নারীর ফিতনাহকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকর মনে করি’।[৩]

আর নারীর ভয়াবহ এই ফিতনার সূচনটা হয় চোখের অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টির কারনে।

সেই রঙিন কৈশোর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কতোবার আপনি মায়াময়ীদের প্রেমে পড়েছেন! রুপা,মীরা,নীরা,প্রতীতি,সোমা! আর কতোবার আপনার হৃদয় ভেংগেছে! কতোবার শান্ত, নিরুদ্রপ জীবন ছারখার হয়ে গিয়েছে! দীর্ঘ নির্ঘুম রাত,একলা শুকতারা,নিকোটিনের ধোয়া,পুরোনো ইনবক্স, গভীর দীর্ঘশ্বাস, ঝাঁকড়া চুল,শূন্য মানিব্যাগ,শূন্য পরীক্ষার খাতা,চিড় ধরা ভাতৃত্বের মতো বন্ধুত্ব,মায়ের চোখের জল,বাবার ভীষন আক্ষেপ। .
যখন আপনার বন্ধুরা পড়ার টেবিলে ভবিষ্যৎ গড়তে ব্যস্ত,তখন আপনি নিজ হাতে আপনার ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছেন। বাবার টাকা নষ্ট করেছেন, মায়ের সংগে মিথ্যা বলেছেন। টেনশান,অস্থিরতা আর উদ্বিগ্নতায় কাটিয়েছেন কত দিন,কত রাত। নিজের সংগে একটু সৎ হোন। সত্যি করে বলুনতো আসলেই কি সুখ পেয়েছেন? আর শান্তি?
.
হারাম থেকে পাওয়া সুখ অল্পেই শেষ হয়ে যায়
থাকে শুধু গ্লানি আর লজ্জা
দিনশেষে শুধু থাকে শূন্যতা আর পাপের বোঝা
সেই আমোদপ্রমোদে কি লাভ শেষমেশ যার ফলাফল জাহান্নামের আগুনের শাস্তি?'
-শেইখ খালিদ আর রশীদ
.
চিন্তা করে দেখুন একবার,এর কিছুই হতোনা যদি আপনি চোখের হেফাযত করতেন। প্রথমে চুরি করে দেখেছেন, তারপর ইনবক্স আর প্রোফাইল পিকচারে তেল মেরেছেন, দূরালাপনে হেলাল হাফিয আর সুনীলের কবিতাকে নিজের বলে চালিয়েছেন, তারপর ডেটিং,তারপর কিছুক্ষন ভালোবাসার মিথ্যে উৎসবে মেতে থাকা ,তাইতো? চোখের হেফাযত করতে পারলে আপনার জীবনের গল্পটাই অন্যরকম হতো!
.
পূর্বের যামানায় এক ব্যক্তি দরিয়ার তীরে বসবাস করতো। যেখানে সে ৩০০ বছর ধরে আল্লাহর ইবাদাত করেছিল। সে দিনে সিয়াম রাখতো আর রাতে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতো।একদিন এক মেয়ে তার বাসস্থানের পাশ দিয়েই যাচ্ছিল। সেই মেয়েকে দেখা মাত্রই তার প্রেমে পড়ে যায় ঐ লোক। প্রেমের মোহে ইবাদাত বন্দেগী সব ছেড়ে দিয়ে কাফির হয়ে যায়। একটা সময়ে অবশ্য আল্লাহ তাকে তওবা করার সুযোগ দেন এবং সে তওবা করে। [৪]
.
মিশরে এক যুবক ছিল। সে মসজিদে আযান দিতো,সলাত পড়াতো। তার চেহারা জুড়ে ছিল ইবাদাতের নুর । একদিন সে আযান দেয়ার জন্য মসজিদের মিনারে ওঠে। সেই মসজিদের পাশেই ছিল এক খৃস্টান পরিবারের বাস। অপরুপা এক মেয়ে ছিল তাদের। মিনার থেকে যুবকের চোখ পড়ে সেই রূপসীর ওপর। সংগে সংগেই যুবক প্রেমে পড়ে যায়।ততক্ষনাত হাজির হয় সেই মেয়ের ঘরে। মেয়েটি তাকে জিজ্ঞাসা করল," তুমি কেন এখানে এসেছ? যুবক উত্তর দিল," তোমার প্রেম আমাকে এখানে টেনে নিয়ে এসেছে। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই"। "এটা কিভাবে সম্ভব? তুমি মুসলিম আর আমি খৃস্টান। আমার বাবা কখনোই এ বিয়েতে রাজী হবেন না"। " তোমার জন্য প্রয়োজনে আমি খৃস্টান হয়ে যাব"। "তাহলে বিয়ে হতে পারে"।
.
যুবকটি খৃস্টান হয়ে গেল। তাদের বিয়েও হয়ে গেল। একরাতে যুবকটি ঘুমানোর জন্য ঘরের ছাদে যায়। ঘরের ছাদ থেকে সে পা পিছলে নিচে পড়ে এবং সেখানেই মৃত্যুবরন করে।[৫]
.
সুবহান আল্লাহ ! চিন্তা করুন একবার। যুবকটি খ্রিষ্টান হয়ে গেল যুবতীর প্রেমে পড়ে।যে ইসলাম তাকে বাঁচাতে পারতো ধ্বংসাত্বক পরিণতির হাত থেকে, যে কালিমা এক নিমিষেই হারাম করে ফেলত জাহান্নামের ভীষন আগুন সেই ইসলামকে ছেড়ে, কালিমাকে ভুলে যুবতীর প্রেমে অন্ধ হয়ে সে খৃষ্টান হয়ে গেল। তারপর সেই অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করল! মানব জীবনের কি ভীষণ অপচয়।
চোখের অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি এই জমীনের বুকে কতো হাজার বার রক্ত ঝরিয়েছে! জলে,স্থলে আর অন্তরীক্ষে সৃষ্টি করেছে বিপর্যয়।কতো মানব হৃদয়ের মৃত্যু ঘটিয়েছে,জান্নাতের পথ থেকে বিচ্যুত করেছে , আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের (সাঃ) দুশমনেরা মুসলিম উম্মাহকে দুর্বল করার চক্রান্ত করেছে।

আল্লাহ (সুবঃ) আমাদের হেফাযত করুক।

চলবে ইনশা আল্লাহ......

========
পড়ুনঃ প্রথম কিস্তি- https://goo.gl/Zrr498
========

রেফারেন্সঃ
[২] সহীহ বুখারী ,হাদীস নং- ৬১১৮, সহীহ মুসলীম,হাদীস নং- ২২৮৪ । ভাবানুবাদ।
[৩] সহীহ বুখারী,হাদীস নং- ৪৮০৮,মুসলিম হাদীস নং-২৭৪০
[৪] চোখের আপদ ও তার প্রতিকার, ইরশাদুল হক আছরী, পৃষ্ঠা-৫৭
[৫] আদ-দা-উ ওয়া আদ- দাওয়া।


Tuesday, September 5, 2017

ভুলে ভরা স্বপ্ন! (প্রথম কিস্তি)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।  
.
ব্যাপারটা বেশ ঝামেলার । শীতকাল হলে তো কথায় নেই। মাঝেরাতের ঘুম ভাংগা চোখ। ট্রাউজার, লেপ,কম্বল  ভিজে একাকার চিটচিটে, আঠালো লিকুইডে । গা গুলোয়। পানি গরম করা,বালতি নিয়ে টানাহেঁচড়া,  বাবা,মা, ভাই,বোনদেরকে লুকিয়ে খুব সাবধানে গোসল করা। কি ভীষন লজ্জা! বাবা,মা একটু অন্যরকম ভাবে তাকালেও সন্দেহ হয় এই বুঝি বুঝে গিয়েছে !

.
একটু বয়স হয়ে যাওয়ার পর সবাই কমবেশী  সামলিয়ে নেয়, কিন্তু কৈশোরে বা প্রথম তারুন্যে স্বপ্নদোষ খুবই ভীতিকর এক অভিজ্ঞতা।দশ বারো বছরের বাচ্চা একটা  ছেলে হুট করে যখন এক রাতে ঘুম ভেংগে দেখে তার প্যান্ট ভিজে গিয়েছে আঠালো লিকুইডে তখন তার ঘাবড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। দেহের আকস্মিক এই পরিবর্তনের রহস্য  উদঘাটনে সে শরনাপন্ন হয় বন্ধু,পাড়ার ভাই বেরাদর,কাজিন বা নিজের ভাই বোনদের কাছে। বাবা মা বা অন্য কোন গুরুজনদের সংগে তার দৈহিক পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করার কথা সে ভুলেও ভাবে না। কিছুটা লজ্জা আর বাকীটা জেনারেশান গ্যাপ। স্বপ্নদোষ সম্পর্কে আমাদের সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার,হাতুড়ে ডাক্তার,হারবাল কোম্পানীর দৌরাত্ম্য,সঠিক তথ্যের অপ্রতুলতার কারনে একগাদা ভুল ভাল তথ্যে বোঝায় হয় ছোট্ট মস্তিষ্ক। সে ঘাবড়িয়ে যায় আরো। শারীরিক এবং মানসিক  বিকাশ মারাত্মকভাবে বাধাপ্রাপ্ত  হয়।
.
অথচ  মুসলিমদের এরকমটা হবার কথা ছিলনা। অপ্রয়োজনীয়  লজ্জা বিলাসিতা করা মুসলিমদের সাজে না। খোদ রাসূলুল্লাহকে (সাঃ)  মহিলা সাহাবীরা স্বপ্নদোষের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছেন," ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! আল্লাহ সত্য প্রকাশে লজ্জিত হন না, একজন মহিলার স্বপ্নদোষ হলে তাকে কি গোসল করতে হবে"? [১] আমরা লজ্জার দোহাই দিয়ে অতিপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যাই। গুরুজনদের এই বিষয় গুলো নিয়ে প্রশ্ন করাকে বেয়াদবি মনে করি।ভাবখানা এমন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আর তার সাহাবীদের (রাঃ) চেয়েও বেশী লজ্জাশীল হয়ে গিয়েছি! আমরা তাদের চেয়েও বেশী আদব কায়দা জানি!  আফসোস!
.
আমাদের এই ব্যাপারগুলো নিয়ে খোলাখুলি কথা বলা উচিত। তার মানে আবার এটা নয় যে, আমার স্বপ্ন দোষ হয়েছে, এই বলে বাজারে ঢোল পিটাব। একটু মাথা খাটালেই, শালীনতা বজায় রেখে খুবই কার্যকরী ভাবে স্বপ্ন দোষ নিয়ে  বিভ্রান্তি দূর করে সঠিক তথ্য গুলো সবাইকে জানানো যায়। মসজিদগুলোকে আমরা কাজে লাগাতে পারি। ইমাম সাহেব বা কম বয়সী কোন আলিম একদিন মহল্লার সকল  উঠতি ছেলেদেরকে মসজিদে দাওয়াত করলেন। কিছু খাওয়া দাওয়া, গল্প গুজব হলো। এরই ফাকে ফাকে  পর্ন,মাস্টারবেশনের অপকারিতা, চোখের হেফাযতের গুরুত্ব, স্বপ্নদোষ, পবিত্রতা অর্জনের গুরুত্ব এবং পদ্ধতি নিয়ে আলাপ আলোচনা করা হল। খুঁজলে এমন অনেক চিকিৎসক পাওয়া যাবে যারা খুব আগ্রহের সংগে এইধরনের প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করবেন। একটু আন্তরিকতা আর সদিচ্ছা থাকলেই সমাজের বিশুদ্ধতম মানুষগুলোর কাছ থেকে আমাদের কিশোরেরা এই অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।
.
সেক্স এডুকেশানের পেছনে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালার কোন দরকার নেই,দরকার নেই বিদেশী এনজিওর সাহায্য নিয়ে  আলফ্রেড কিনসির এজেন্ডা বাস্তবায়নের   সুযোগ করে দেওয়ার। খুব কম লজিস্টিক সাপোর্ট আর স্বল্প বাজেট দিয়েই  কোয়ালিটি সেক্স এডুকেশান নিশ্চিত করা সম্ভব।
.
আল্লাহর কসম! আমাদের মসজিদগুলো আজ বিরান হয়ে গিয়েছে। কুরআনের দারস নেই, হাদীসের হালাকা নেই। রোবটের মতো মানুষগুলো সিজদাহ দিয়ে নামায পড়ে,তারপর বের হয়ে আসে। মসজিদ কমিটির সদস্যদের এইগুলো নিয়ে তেমন কোন মাথাব্যাথা নেই। তাদের সব মাথাব্যাথা মসজিদে এসি লাগানো,টাইলস লাগানো নিয়ে।জাতি হিসেবে কোথায় চলেছি আমরা? মসজিদে তরুনেরা কুরআন নিয়ে বসতে ভয় পায়!  হালাকা করতে ভয় পায়! খতীব সাহেবেরা দ্বীনের কথা,আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) কথা বলতে ভয় পান! 
.
আক্ষেপের প্যাচাল বাদ দিয়ে আসল কথাই আসি।
স্বপ্নদোষ কি?
.
স্বপ্নদোষ হল ঘুমের মধ্যে নারী পুরুষের অন্তরংগতার স্বপ্ন দেখে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রাইভেট'স পার্ট থেকে বীর্য বের  হয়ে আসা।
স্বপ্নদোষ সাধারনত রাতে হয়ে থাকে। একারনে একে একাডেমিক্যালি Nocturnal Emissions বলা হয়। তবে মাঝে মধ্যে দিনেও স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে।[২] সকল পুরুষেরাই জীবনে অন্তত একবার হলেও এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেয়ে থাকেন।
.
ইসলামী শরীয়া অনুসারে, স্বপ্নদোষ হল একজন বালকের প্রাপ্তবয়স্ক হবার অন্যতম একটি নিদর্শন। প্রথমবার স্বপ্নদোষ হবার পর থেকেই একজন বালককে প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং শরীয়া তার ওপর কার্যকর হবে। [৩]

সাধারনত ১২-১৩ বছর বয়স থেকে স্বপ্নদোষ শুরু হয়।  ছেলেদের যেমন স্বপ্নদোষ হয়,তেমন মেয়েদেরও স্বপ্ন দোষ হয়।
.
কেন হয় স্বপ্নদোষ?
.
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন।নির্দিষ্ট করে বলা যায় না ঠিক এই  এই কারনে স্বপ্নদোষ হয়।
.
স্বপ্নদোষ হওয়া শুরু হয় বয়ঃসন্ধিকালে যখন পুরুষের শরীরে টেসটোসটেরন [৪] হরমোন তৈরি হওয়া শুরু হয়। এই হরমোনের প্রভাবেই পুরুষ, পুরুষালী আচরন করে, নারী পুরুষ একে অপরের প্রতি দৈহিক আকর্ষণ বোধ করে।  টেসটোসটেরন হরমোন  বীর্য প্রডাকশনে সাহায্য করে।
টেসটোসটেরনের পরিমান স্বাভাবিকের চেয়ে  বেশি হয়ে গেলে হলে  পুরোনো বীর্য স্বপ্নদোষের মাধ্যমে বের হয়ে যায় এবং নতুন বীর্য তৈরি হয়। 
.
দীর্ঘ  সময় ধরে যৌননিষ্ক্রিয়তা স্বপ্নদোষের আরকেটি সম্ভাব্য কারন। যৌননিষ্ক্রিয়তা,  টেসটোসটেরনের পরিমান বাড়িয়ে দেয়,যার ফলশ্রুতিতে স্বপ্নদোষ হয়। [৫]
.
মাত্রাতিরিক্ত ক্লান্তি,টাইট পোষাক পড়ে ঘুমানো, দেরী করে ঘুমানো এবং দেরী করে ঘুম থেকে ওঠা,সকালে ঘুম ভাংগার পরে আবার ঘুমানো, সবসময়  সেক্স ফ্যান্টাসিতে বুঁদ হয়ে থাকা এইগুলোও স্বপ্নদোষের সম্ভাব্য কারন।
.
কত দিন পর পর স্বপ্নদোষ হয়?
.
নির্দিষ্ট করে বলার উপায় নেয়। কারো কারো এক সপ্তাহ পর পর আবার কারো কারো তিন- চার সপ্তাহ পর পর স্বপ্নদোষ হয়।
.
স্বপ্নদোষ  কি ক্ষতিকর?
.
এটি নিয়ে বেশ বিভ্রান্তিমূলক কথা বার্তা ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের সমাজে। স্বপ্নদোষ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক একটা ব্যাপার।  এটা শরীরের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয়।
.
আল্লাহ (সুবঃ) শুধুমাত্র সেই সব বিষয় হারাম করেছেন যেগুলো মানুষের জন্য ক্ষতিকর।  যেমন ধরুন, মদ,গাঁজা। মানুষকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ (সুবঃ) এগুলোকে হারাম করেছেন।  স্বপ্নদোষ সম্পুর্ন প্রাকৃতিক একটা ব্যাপার। এটাকে আল্লাহ (সুবঃ) হারাম করেননি।বরং এটাকে বানিয়েছেন সাবালকত্বের নিদর্শন। ইরশাদ হচ্ছে, "আর যখন তোমাদের সন্তানেরা বয়ঃপ্রাপ্ত  হয় (স্বপ্ন দোষের মাধ্যমে)..." [৬]
.
আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন," তিন ব্যক্তির আমলনামা হতে কলম গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে;
১) ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘুম থেকে জাগ্রত হবার আগ পর্যন্ত।
২) শিশুদের প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগ পর্যন্ত
৩)পাগলের হুশ হবার আগ পর্যন্ত [৭]
.
একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি নিজেও জানেনা ঘুমের ঘোরে সে কি করছে।তখন তার আমল লিপিবদ্ধ করা হয় না। স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে ঘুমন্ত অবস্থায়।এবং এটাকেও আমলনামায়  লিপিবদ্ধ করা হয় না। [৮]
.
স্বপ্নদোষ যদি ক্ষতিকরই হতো,তাহলে আল্লাহ (সুবঃ) অবশ্যই অবশ্যই একে হারাম করতেন এবং স্বপ্নদোষের কারনে শ্বাস্তির ব্যবস্থা করতেন। তিনি এর কোনটাই করেননি। কাজেই আমরা মুসলিমরা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে নিতে পারি স্বপ্নদোষের কোন ক্ষতিকর দিক নেই।
.
চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুসারেও স্বপ্নদোষ ক্ষতিকর নয়।[৯]
.
পানি পান করা হালাল।তবে আপনি যদি গ্লাসের পর গ্লাস পানি পান করতেই থাকেন,করতেই থাকেন তাহলে তা অবশ্যই ভালো না। অতিরিক্ত স্বপ্নদোষও ভালো না। যদি আপনার দীর্ঘদিন ঘন ঘন স্বপ্নদোষ হয়, মনে করুন  প্রত্যেকদিন বা দুই একদিন পর  স্বপ্নদোষ হয়, তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।আই রিপিট, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আউল ফাউল কোন হার্বাল বা হাতুড়ে ডাক্তার না।

চলবে ইনশা আল্লাহ......

রেফারেন্সঃ
[১] https://goo.gl/Chj9kD
[২] https://goo.gl/GkWHLM
[৩] https://goo.gl/d94TQs
[৪]https://goo.gl/7v2l2Q
[৫] https://goo.gl/GkWHLM
[৬] সুরা নুরঃআয়াত ৫৯
[৭] তিরমিযী ১৩৪৩,ইবনে মাজাহ ৩০৩২,আল নাসাঈ ৩৩৭৮। হাদীসের মান হাসান।
[৮] https://goo.gl/VBZhcE
[৯]https://goo.gl/aPRUqE

Friday, September 1, 2017

তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ (প্রথম কিস্তি)

বিসমমিল্লাহির রহমানীর রহীম।
.
গ্রীষ্মের দাবাদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ।মাঠ ঘাট ফেটে চৌচির। নদী খালবিল সব শুকিয়ে গিয়েছে।বৃষ্টির নামগন্ধও নেই। পানির সন্ধানে তৃষ্ণার্ত এক কাক অনেক ক্ষন থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক। পানির দেখা নেই। বহু খোঁজাখুজির পর মাটির এক কলসি দেখতে পেল সে। ততক্ষনাত উড়ে গেল কলসির কাছে। পানি!পানি! তৃষ্ণার পানি! কিন্তু কলসির কাছে যেয়ে হতাশ হতে হল তাকে। পানি কিছু আছে বটে তবে তা একেবারেই কলসির তলানিতে। এই পানির নাগাল পাওয়া ঐ কাকের পক্ষে পাওয়া সম্ভব নয়।হায়! প্রাণটা বোধহয় আজকে গেল।
.
পানির আশা ছেড়ে দিয়ে কাছেরই একটা নিম গাছের ডাল লক্ষ্য করে উড়াল দিল। ডালে বসে জিরিয়ে নিল কিছুক্ষন। তারপর আবার পানির খোঁজে উড়াল দিতে যাবে এমন সময় চোখ পড়লো নিম গাছের নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নুড়ি পাথরের ওপর চোখ পড়লো। কিছুক্ষন স্থির হয়ে বসে প্ল্যান করে নিল।"প্ল্যানমতো কাজ করতে পারলে ঐ কলসির পানি পান করা সম্ভব হতেও পারে"। ভাবলো কাক।
.
 ঠোঁটে একটা একটা করে নুড়ি পাথর নিয়ে কাক পানির কলসিতে ফেলতে লাগলো,আর পানির স্তর কলসির মুখের দিকে একটু একটু করে উঠে আসতে লাগলো। যথেষ্ট পরিমান পাথর ফেলার পর পানি কলসির একেবারে মুখের কাছে চলে আসলো আর কাক বাবাজীও জান ভরে পানি পান করলো।
আহ! জীবন শান্তি!
.
দুই.
.
যুদ্ধক্ষেত্রে যে কোন সামরিক অভিযানের পরিকল্পনাগুলো এমন ভাবে করা  হয় যেন খুব কম সময়ের মধ্যে  শত্রুর হেড কোয়ার্টার  দখল করে নেওয়া যায় বা শত্রুর লীডারকে খতম করে দেওয়া যায়। একবার শত্রুবাহিনীর  কমান্ডারকে হত্যা করতে পারলে বা হেড কোয়ার্টারের নিয়ন্ত্রন নিতে পারলে বাকী কাজ পানির মতো সহজ।
.
শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। আল্লাহ (সুবঃ) কুরআনে বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন ," ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। [সূরা বাকারাঃ ২০৮] "
.

হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? এবং আমার এবাদত কর। এটাই সরল পথ। শয়তান তোমাদের অনেক দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা বুঝনি? [সূরা ইয়াসীনঃ ৬০-৬২]
.
মানুষের জন্ম থেকে শুরু করে সাকরাতুল মাউত  পর্যন্ত মানুষের সংগে শয়তানের লড়াই চলতেই থাকে। শয়তান নানা ছলে বলে কৌশলে চেষ্টা চালাতে থাকে মানুষকে পরাজিত করবার।ক্বলব বা হৃদয়কে তুলনা করা যেতে পারে মানুষের হেড কোয়ার্টার হিসেবে। ক্বলব বা হৃদয় দখল করতে পারলেই খেল খতম।
হাদীসের ভাষ্যেও অনেকটা এরকম এসেছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "  মানুষের শরীরে এমন একটি গোশত পিন্ড রয়েছে যা ঠিক থাকলে  পুরো শরীর ঠিক থাকে ; আর তা যদি নষ্ট হয়ে যায় তা হলে পুরো শরীর নষ্ট হয়ে। আর তা হল ক্বলব বা হৃদয়"। (বুখারী ও মুসলিম)
.
ক্বলব বা হৃদয় ঠিক থাকলে ঈমান আমল সবই ঠিক থাকবে আর ক্বলব কলুষিত থাকলে ঈমান আমলের বারোটা বেজে যাবে।
.
শয়তান তাই প্রথমেই আপনার হৃদয়ের দখল নিয়ে নিতে চায়,যেন আপনাকে ইচ্ছেমত নাকে ছড়ি দিয়ে ঘোরানো যায়।  চোখের দৃষ্টি হল শয়তানের তুরুপের তাস।  এর  মাধ্যমে সে আরামসে আপনার হৃদয়ের দখল নিতে পারে।
.
আপনার রব আপনাকে অত্যন্ত ভালোবাসেন।আপনাকে যেন শয়তান তার খেলার পুতুল না বানাতে পারে একারনে তিনি কুর'আনে বেশ কয়েক জায়গায় টিপস দিয়েছেন।
ইরশাদ হচ্ছে,
" মুমীনদেরকে বলে দিন,তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাযত করে"। (সূরা নুর: আয়াত ৩০)
এরপরের আয়াতে আল্লাহ (সুবঃ) বলছেন," ঈমানদার মহিলাদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে"। (সূরা নুরঃআয়াত ৩১)
.

আল্লাহ (সুবঃ) মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে মানুষের নিজের চেয়েও ভালোমতো চেনেন।তিনি জানেন মানুষ চোখের হেফাজত করতে, পর্দা করতে ভুলে যাবে। তাই তিনি কুরআনে বারবার  মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। অনেকটা জিহাদ এবং সাওমের মতো। আল্লাহ (সুবঃ) জানেন যে মানুষকে একবার বললেই মানুষ সাওম পালন করবে। তাই সমগ্র কুরআনে তিনি মাত্র একবার সাওম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। অপরদিকে বেশ কিছু আয়াতে জিহাদের আদেশ দিয়েছেন কারণ মানুষ জিহাদের ব্যাপারে উদাসীন। ইরশাদ হচ্ছে, " আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।''( সুরা নিসাঃআয়াত ৭৫)
.
কুরআনে চোখের হেফাজতের ওপরে এত জোর দেওয়া স্বত্তেও আমরা এই ব্যাপারে চরম মাত্রার উদাসীন। গায়েই লাগাইনা আয়াত গুলো। কিছু মনেই করিনা।
.
 ইনবক্সে প্রায়ই ভাইদের নক পাই। ভাইয়েরা বেশ হতাশ কন্ঠে জানান,"অনেক চেষ্টা করেও পর্ন দেখা বা মাস্টারবেট করা ছাড়তে পারলাম না। আপনাদের দেওয়া সব টিপস ফলো করার পরেও এই জঘন্য পাপগুলো থেকে বাঁচতে পারলাম না। অবস্থার কিছুটা উন্নতি অবশ্য হয়েছে,আগে যেখানে প্রত্যেকদিন করতাম এখন কয়েকদিন গ্যাপ দিয়ে করি"।

"গাইরে মাহরামদের সংগে উঠাবসা আছে? গান শোনেন বা মুভি সিরিয়াল দেখেন?"

উত্তর আসে,"জ্বী"।
"এই গুলো বন্ধ করতে হবে"

"মুভি সিরিয়াল দেখলে কি এমন সমস্যা ভাই? আর রাস্তা দিয়ে কোন ডানাকাটা পরী হেঁটে  গেলে ঘাড় ঘুরিয়ে না হয় একবার দেখলামই।  এতে কি এমন ক্ষতি হল?  আল্লাহর কি অপরূপ  সৃষ্টি, মাশা আল্লাহ!"
.
শুধুমাত্র এই চোখের হেফাজতের ব্যাপারে উদাসীনতার কারনে ভাইয়েরা পর্ন দেখা বা মাস্টারবেশন ছাড়তে পারেননা। বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
.
এই লিখার শুরুতে এক তৃষ্ণার্ত কাকের গল্প বলা হয়েছিল।  মনে আছে কাক কিভাবে কলসির তলানির পানি খেয়েছিল? একটা একটা করে নুড়ি ফেলেছিল আর পানি একটু একটু করে ওপরে উঠছিল। তারপর একসময় কাকের নাগালে পানি পৌঁছে গিয়েছিল।শয়তান আপনার হৃদয়ের দখল অনেকটা এভাবেই নেয়। একবারেই সে দখল করতে পারে না,  ধীরে ধীরে একটু একটু করে সে হৃদয় দখল করতে থাকে। আর তার নুড়ি পাথর হল আপনার চোখের অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি। হাদীসে অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টিকে শয়তানের বিষাক্ত তীরের সংগে তুলনা করা হয়েছে। এটা এমন এক বিষাক্ত তীর, যা আপনার হৃদয়কে এফোঁড়ওফোঁড় করে দিবে।
.
 মনে করুন, আপনি রাস্তায় কোন এক মেয়ের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকলেন, শয়তান আপনার হৃদয়ের কিছুটা দখল পেল, গান দেখলেন শয়তান, হৃদয়ের আরেকটু দখল পেল, মুভি দেখলেন,মুভির নায়িকার ওপর ছোট খাটো একটা ক্রাশ খেলেন শয়তান আপনার হৃদয়ের আরো কিছুটা দখল পেল। এভাবে শয়তান একসময় আপনার পুরো হৃদয় দখল করে নেবে এবং আপনাকে দিয়ে সে তার যা মন চায় তা করিয়ে নেবে।
.
চোখের অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি পর্ন দেখা বা মাস্টারবেশনের ট্রিগার হিসেবে কাজ করে। আপনি  একটা মুভি দেখতে বসলেন বা গান দেখতে,পর্ন দেখা বা মাস্টারবেশনের কোন ইচ্ছেই আপনার ছিল না,  কিন্তু মুভি/ গানের কোন দৃশ্য দেখে আপনি মাস্টারবেট করে ফেলেছেন বা পর্ন দেখেছেন, হয়েছে না এরকম অনেকবার? মাঝে মাঝে এরকমও তো হয় কোন মেয়েকে দেখার সংগে সংগেই  পর্নস্টারের কথা মনে হয়ে যায় বা  পর্নমুভির কোন দৃশ্য মাথায় ঘুরতে শুরু করে, তারপর আর সহ্য করতে না পেরে আপনি পর্ন দেখেন বা মাস্টারবেট করেন,তাইনা?
.
জিএফের সংগে ডেটিং করে আসার পর কিংবা জাস্ট ফ্রেন্ড,কাজিনদের সংগে হ্যাং আউট করার পর গভীর রাতে বা অন্য কোন অলস মুহূর্তে আপনি তাদের নিয়ে সেক্স ফ্যান্টাসিতে ডুবে যাননি, মাস্টারবেট করে নিজেকে শান্ত করেননি? অস্বীকার করে কি লাভ ভাই?
.
একবার চিন্তা করুন, আপনি যদি শুধুমাত্র চোখের হেফাযত করতে পারতেন তাহলে কতো অজস্র বার কতো অজস্র বার আপনি পর্ন দেখা বা মাস্টারবেশনের হাত থেকে বাঁচাতে পারতেন নিজেকে!  আপনার শরীরের এই বিশাল ক্ষতি হয়ে যেত না! ভবিষ্যত জীবন সংগিনীর কথা ভেবে এতো টেনশন অস্থিরতায় ভুগতে হতোনা।
একরাশ বিপদের মাঝখানে বসে পুরোনো দিনের কথা ভেবে আপনাকে হা হুতাশও করতে হতোনা।

আরবের এক কবি যথার্তই বলেছেন,
" আর তুমি কি জানো, কখন শুরু হয়েছিল তোমার দুঃখের কাহিনী?
যখন তোমার চোখ পড়েছিল সেই রূপসীর ওপর।

চলবে ইনশা আল্লাহ.....