Thursday, December 29, 2016

দু’আ নিয়ে কিছু কথা


বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।
 

সেই পুরনো  অনুভূতিটা আবার ফিরে আসলো; যেই অনুভূতিটা একসময় আমার জীবনকে বিষিয়ে তুলেছিল।
সকালে ফেসবুকে লগইন করার পর দেখলাম একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে । মানুষটা ফেসবুকে কেমন তা দেখার জন্য তাঁর টাইমলাইনে গেলাম । প্রথমেই একটা ছবি পড়লো সামনে । সেটা দেখে আমার ভীমড়ি খাবার জোগাড় । পালিয়ে বাঁচার জন্য স্ক্রল করে নীচে নামলাম । ওরে বাপরে! চাঁদু তো দেখি পুরো টাইম লাইন জুড়েই পর্নস্টারদের মেলা বসিয়েছে । তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসলাম ফেসবুক থেকে ।

অনেক বছর ধরেই আমি পর্নমুভিতে আসক্ত ছিলাম । অনেক চেষ্টার পরে সে আসক্তি কাটিয়ে উঠতে পেরেছি । আলহামদুলিল্লাহ । তারপর অনেক দিন চলে গেছে । পর্নমুভি দেখিনি একবারও। এরকম গ্রাফিক ছবিও না । হার্টবিট কিছুটা বেড়ে গেল  ভেতরে হরমোনের জোয়ার শুরু হল  বিস্মৃতির অতল থেকে বহুদিন আগে দেখা পর্নমুভির টুকরো টুকরো দৃশ্যগুলো মাথার মধ্যে ঘুরতে শুরু করল । আমি বেশ আতঙ্কিত হয়ে গেলাম । আমি জানি এর পর কি ঘটতে চলেছে ।

আমি যখন পর্ন আসক্ত ছিলাম তখন মাঝে মাঝেই  কসম টসম খেয়ে প্রতিজ্ঞা করতাম, ‘আল্লাহ! এবারই শেষ । আমি আর  কখনোই পর্ন দেখবনা” । 

প্রতিজ্ঞার উপর টিকে থাকতাম কয়েকদিন । তারপর আবার যেই কে সেই । যে কয়েকটা দিন ভালো থাকতাম সেই কয়েকটা দিন মাথার মধ্যে  কিছুক্ষণ পরপরই পর্নমুভিতে দেখা কোন দৃশ্য ঘাই মারতো । এমনকি নামাযের মধ্যেও । নিজেকে সামলাতে কষ্ট হতো । ঐগুলো নিয়ে চিন্তা করতাম । তারপর  একটু দুর্বল মুহূর্তে এই পর্ন ইমেজ গুলোর কাছে হার মানতাম । আবার দেখে ফেলতাম পর্ন । মাস্টারবেট করতাম । পর্ন আসক্তির শেষের দিকে যখন দৃশ্যগুলো মাথায় উঁকি মারতো তখন সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতাম । তো আজকে যখন সেই পুরনো অনুভূতি ফিরে আসলো তখন হুট করেই মাথাতে একটা চিন্তা আসলো । আচ্ছা পর্নমুভির ঐ মেয়েগুলোর হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করলে কেমন হয়!
সঙ্গে সঙ্গে দু’আ করলাম –
-      আল্লাহ তুমি ঐ মেয়েগুলোকে হেদায়াত দাও । একান্ত তোমার কাছ থেকে অনুগ্রহ দান করো
-      আল্লাহ তুমি ওই মেয়েগুলোকে ওই নরক থেকে উদ্ধার করো । তাদের হৃদয়ের ক্ষতগুলো সারিয়ে দাও । 
-      আল্লাহ ওই মেয়েদের জন্য তুমি অভিভাবক নির্ধারণ করে দাও

পরের একসপ্তাহ ধরে ফেসবুকে দেখা সেই মেয়েটার ছবি আমার মাথাতে ঘুরতে থাকলো । আমার
ভেতরে একটা চাপ তৈরি হতে থাকলো পর্নমুভি দেখার । প্রত্যেকবারই আমি আল্লাহর কাছে ঐ মেয়েটার হেদায়াতের জন্য দু’আ করতে থাকলাম । একটা সময়ে আমার ফোকাস পরিবর্তন হয়ে গেল। ঐ মেয়েটার কথা আর মাথাতেই আসলো না ।

           

একসময় আমি জানতামই  না পর্নইন্ডাস্ট্রি গুলোতে মেয়েদের ওপর কি জঘন্য নির্যাতন[১,২,৩] চালানো হয় ।ঐগুলো জানার পরে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম ।   আমাদের বিকৃত লালসা চরিতার্থ করার জন্য কত মেয়ের যে জীবন নষ্ট হয় ! আমরা যেমন আটকা পড়েছি পর্ন এর নেশায় , ঐ মেয়েগুলোও তেমনি পর্ন ইন্ডাস্ট্রীর ফাঁদে পড়েছে ।

পাশ্চাত্য নারীদের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলে । অথচ এই পাশ্চাত্য আর তাদের পা চাটা  দেশগুলোতেই বড় বড় সব পর্ন ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে,  যেখানে নারীদেরকে স্লেইভ বানিয়ে রাখা হয়েছে । এটা নিয়ে পাশ্চাত্যের তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই । তাদের সব চিন্তা কেবল মুসলিম দেশের নারীদের বোরখা আর হিজাব খোলা নিয়ে । যেন বোরখা না পড়লে, হিজাব না করলেই নারীরা স্বাধীন হয়ে যাবে ![৪,৫]

ভাই, আপনারো কি পর্ন ইমেজ থেকে মুক্তি মিলছে না ? বারবার চেষ্টা করেও ভুলতে  পারছেন না পর্নমুভিতে দেখা দৃশ্য গুলো ? অস্থির একটা সময় পার করছেন ?  পর্ন দেখার প্রচন্ড ইচ্ছে জাগছে আপনার মনে ?

এরকম সময়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে আপনার জন্য আমার সাজেশান হল,  যখনই কোন দৃশ্য আপনার মাথায় আসবে সঙ্গে সঙ্গে সেই দৃশ্যের মেয়েগুলোর জন্য দু’আ করা। ছেলেদেরকেই বা বাদ দিবেন কেন ? ছেলেদের জন্যেও দু’আ করুন ।

এভাবে দু’আ করাটা খুবই ইফেক্টিভ । 
এর মাধ্যমে  আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাবে ।ঐ মেয়েগুলো আপনার কাছে এখন আর কেবল ভোগ করার সামগ্রী  না  বরং  সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সব মানবীয় অনুভূতি নিয়ে রক্ত মাংশের একটা জলজ্যান্ত  মানুষ  যাদেরও ভালোবাসতে ইচ্ছে করে, ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করে , প্রিয় মানুষটার কাঁধে মাথা রেখে জোস্ন্যা দেখতে ইচ্ছে করে , প্রিয় মানুষটা যখন তার  কপালের অগোছাল চুল সরিয়ে চুমু খায় তখন তাদেরও এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে ।

আপনি আল্লাহর নাম স্মরণ করছেন , তাঁর কাছে দু’আ করছেন । এই সময় শয়তান  খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারবে না ।  আপনার ফোকাস চেইঞ্জ হয়ে যাবে ।
আর আপনার দু’আর কারণে যদি আল্লাহ্‌ সুবঃ কাউকে হেদায়াত দিয়েই দেন তাহলে কি বিপুল পরিমাণ পুরষ্কার আপনার জন্য অপেক্ষা করবে সেটাও ভেবে দেখার বিষয় ।
আমি এভাবে দু’আর  মাধ্যমে এই আসক্তি থেকে বের হয়ে এসেছি । আপনিও পারবেন ইনশা আল্লাহ্‌।    

[লস্ট মডেস্টি অনুবাদ টিম কর্তৃক অনূদিত]
পড়তে পারেন - দু’আ তো করেছিলাম -  http://bit.ly/2g6cw10   
রেফারেন্সঃ




Thursday, December 22, 2016

চোরাবালি (চতুর্থ পর্ব)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।

আপনি হবেন পরাজিত  এক  মানুষঃ 

হস্তমৈথুনের পরের কিছু মুহূর্ত আমরা কিন্তু অবাক হয়ে ভাবি যে আমি আসলে এটা কি করলাম! আমার কাছে একরম একেবারে পরাজিত মনে হচ্ছে কেন? যদি আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী কিংবা একেবারেই অপরিচিত কেউও যদি জানতে পারে যে আমি এরকম পর্ন দেখি ও হস্তমৈথুন করি ,তাহলে তারা আমাকে কত খারাপই না ভাববে! 
যদি কেউ আমাকে হস্তমৈথুন করার সময় হাতেনাতে ধরে ফেলে তাহলে সেটা কতই না লজ্জার ব্যাপার হবে!(আমার বড় ভাই এর কাছে আমি ধরা পড়েছিলাম তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর এবং সেটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে লজ্জাকর ঘটনা)   
হস্তমৈথুন আপনাকে আসলে একটা পরাজিত মানুষে পরিণত করবে কারণ আপনি আসলে ঐ সময়ে আপনি মনে করেন যে স্ক্রিনের লোকটার মত আপনিও একই কাজ করছেন ঐ মহিলার সাথে। কিন্তু আপনি তো আসলে তা না। প্রকৃতপক্ষে আপনি আছেন কোন মোবাইল ,ম্যাগাজিন বা ল্যাপটপের সামনে এবং একজন বিকৃত রুচির অসুস্থ  মানুষের মতো আপনার যৌনাঙ্গ নিয়ে অস্থির হয়ে নাড়াচাড়া করছেন।
এই রকম মানুষ  হওয়া উচিত  না।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে আমি হস্তমৈথুন করেন এটা দেখলে বা জানতে পারলে আপনার প্রতি মেয়েদের একটা বিরক্তিভাব জন্ম নিবে।

আপনি যখন পর্ন দেখেন আপনি আসলে তখন দুই বা ততোধিক লোকের,যাদের আপনি চেনেন না, একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত দেখছেন। তাদের যদি আপনি চিনতেন তাহলে সেটা এত রোমাঞ্চকর মনে হত?
   
তাহলে সেটাও কি আপনার কাছে রোমাঞ্চকর লাগতো যে আপনি জানালা দিয়ে সম্পূর্ণ অচেনা কোন দম্পতির একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত দেখছেন?

আসলে পর্ন দেখা বা কারও জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে সম্পূর্ণ অচেনা কোন দম্পতির একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্ত দেখার মাঝে কি কোন পার্থক্য আছে?
 
পর্ন দেখা মানে হচ্ছে এমন একটা জিনিস দেখা যা অধিকাংশ মানুষ একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে মনে করে। আমি জানি যখন আপনি পর্ন দেখেন তখন আপনার মনে এতকিছু আসে না কিন্তু আপনার আসলে আগেই এটা নিয়া ভাব উচিত ।

আপনি হয়তো আমার সাথে একমত নাও হতে পারেন।
কিন্তু এটা চিন্তা করেন যে, আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে একান্তে সময় কাটাচ্ছেন এবং অন্য কেউ সেটা দেখে হস্তমৈথুন করছে ,তখন আপনার কেমন লাগবে? আমি নিশ্চিত, এতে আপনার চরম বিরক্ত, রাগ লাগবে।

আপনি হয়তো তর্ক করতে পারেন যে পর্ন ভিডিওগুলো যখন তৈরি করা হয় তখন তো তারা জানেই যে তাদের ভিডিও করা হচ্ছে । কিন্তু আপনি কেন সেই বিকৃতকামী ব্যক্তি হতে যাবেন যে অন্যদের একান্ত ব্যক্তিগত সময় দেখে?



 আপনি সবসময় অপরাধবোধে ভুগবেনঃ

প্রাথমিক পর্যায়ে, আমাদের ৯৯.৯% জানি যে হস্তমৈথুন হচ্ছে এমন একটা জিনিস যা অন্যদের সামনে করা যাবে না কারণ তারা মনে করতে পারে আপনি একজন বিকৃতকামী লোক। যারা হস্তমৈথুন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না তারা, তারা যেখানেই যাক না কেন সবসময় সেই চিন্তা মাথার মাঝে আসতে থাকে। তারা এটা ভেবেই অনেকটা অস্থির থাকে যে তারা যে এই ধরনের জিনিস করে সেটা পরিবারের অন্যরা, এমনকি বাচ্চাদের কাছেও ধরা পড়লেও তারা কি মনে করবে। এটা আসলে আসলে অনেকটা পাপবোধের কারাগারের মতো যা তাদের তাড়া করে বেড়ায়। এটা তাদের মনে অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি করে। আসলে অনিয়ন্ত্রিত হস্তমৈথুন তাদের জীবন করে তোলে দুর্বিষহ।
এক ব্যক্তির অভিজ্ঞতা দেখা যাক,

“আমি আসলে কীভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। আমি দিনে দুইবার করে হস্তমৈথুন করি। কিন্তু তা করার পরে আমার তা নিয়ে প্রচণ্ড অপরাধবোধ হয় এবং তা আমাকে পরের প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘিরে রাখে। মাঝে মাঝে তা আমার পুরো দিনটাই মাটি করে দেয়। হস্তমৈথুন নিয়ে আমি যা পড়েছি তাতে মনে হয়েছে যে এটা ছেলেদের জন্য সাধারণ একটা ব্যাপার , কিন্তু আমি এই লজ্জা ও অপরাধবোধের অনুভূতি কাটিয়ে উঠতে পারি না। আমি অনুভব করি যে আমার আরও ইচ্ছাশক্তির ব্যবহার করা উচিত হস্তমৈথুন বাদ দিতে কিন্তু পরে বুঝতে পারি যে আমি আসলে এটা পছন্দ করি আর তা বাদ দিতে চাই না। আমার তো মনে হয় যে আমি তো কাউকে আঘাত করছি না, তাহলে কেন তা বাদ দিবো? আমার কি কোন সমস্যা আছে? না হলে যেটাকে স্বাভাবিক বলে মনে করি তাতে আমার এই অপরাধবোধ হয় কেন?”
এখানে শুধু একজনের কথা লেখা হয়েছে কিন্তু এরকম আরও হাজার হাজার লোক আছে। [১]

আপনি হয়ে যাবেন অসামাজিকঃ

হস্তমৈথুন  করে করে ডোপামিনের ভারসাম্য নষ্ট করে ফেললে মন চাইবে সবসময় অন্ধকার ঘরের কোনায় বসে পর্ন দেখে দেখে হস্তমৈথুন  করতে।বন্ধুদের সংগে দেখা করা, আড্ডা দেওয়া, দলবেঁধে ঘুরতে যাওয়া এইগুলো অবধারিতভাবেই বিরক্তিকর লাগবে। পর্ন দেখা বা হস্তমৈথুন  করার উত্তেজনার কাছে মামার বাসায় বেড়াতে যাওয়ার উত্তেজনা নিছকই দুধভাত। 

হস্তমৈথুনের কারণে আসলে আমরা জীবনকে ভালোমতো উপভোগ করার সুযোগটাই হারিয়ে ফেলছি।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি যখন আমি হস্তমৈথুন বাদ দিয়ে দিলাম , আমার একজন সামাজিক মানুষে পরিণত হয়ে গেলাম। আমি আবার আমার বন্ধুদের সাথে মজা করছি , গল্প করছি ,বেড়াতে যাচ্ছি। আমি মনে মনে ভাবতাম “জীবনটা তো আসলেই অনেক মজার।” যখন আমি  হস্তমৈথুনে আসক্ত ছিলাম ,আমার কখনই এই ধরনের অনুভূতি হতো না । আমার কোন উৎসাহই থাকতো না এসবের জন্য ।
[পড়তে পারেন - শান্তি পাব কোথায় গিয়ে  -  http://bit.ly/2gqcbH8 ]  

 জীবনের ছোট ছোট ব্যাপারগুলো থেকে আমি আপনি কম আনন্দ পাবেনঃ

 হস্তমৈথুন  করে যদি আপনি ডোপামিন নিঃসরণকারী স্নায়ুগুলোকে দুর্বল বা একেবারে ধ্বংসই করে ফেলেন এবং আপনার মস্তিষ্ক ডোপামিনের স্বাভাবিক মাত্রা নির্ধারণ করতে না পারে ,তাহলে আপনি নিত্যদিনের সেই সব ছোট ছোট বিষয় থেকে  পুরোপুরি মজা পাবেন না যেসব বিষয়  থেকে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ মজা পেয়ে থাকেন। যেমন ধরুন, ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটানো, ক্রিকেট খেলা, বৃষ্টিতে ভেজা, চাঁদনী পসর রাতে জ্যোৎস্না স্নান করা...  এই  কাজগুলো  আপনার  কাছে মনে হবে  একেবারেই বিরক্তিকর, অপ্রয়োজনীয়,আদিখ্যেতা।

 চলবে ইনশা আল্লাহ্‌ ......
(লস্ট মডেস্টি অনুবাদ টিম কর্তৃক অনূদিত) 

রেফারেন্সঃ

পড়ুন- ব্রেক দ্যা সার্কেলঃমাস্টারবেশন থেকে মুক্তি সিরিজ  

প্রথম কিস্তি  http://bit.ly/2i5hJEu  
দ্বিতীয় কিস্তি   http://bit.ly/2hg90mi
তৃতীয় কিস্তি - http://bit.ly/2huVR4I 


চোরাবালি সিরিজের বাকি পর্বগুলো 

চোরাবালি প্রথম পর্ব - http://bit.ly/2dzgf4I
চোরাবালি দ্বিতীয় পর্ব - http://bit.ly/2diRZBJ
চোরাবালি তৃতীয় পর্ব  - http://bit.ly/2h4sMAb
চোরাবালি পঞ্চম পর্ব- https://goo.gl/pJtnxg  
চোরাবালি ষষ্ঠ পর্ব- https://goo.gl/jlHULY



Friday, December 16, 2016

‘অনিবার্য যত ক্ষয়’ (শেষ পর্ব)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম




আমেরিকান আর্মির  মহিলা সদস্যরা শত্রুদের নিয়ে ততোটা বেশী শংকিত থাকে না ,  যতটা বেশী  শঙ্কিত থাকে তাদের পুরুষ সহকর্মীদের হাতে যৌন নিপীড়িত হবার  ভয়ে  ......


একটা গভীর  দীর্ঘশ্বাস ছেড়েই এই কথা গুলো বললেন ডোরা হারনান্দেজ যিনি প্রায় দশ বছরেরও বেশী সময় ধরে কাজ করেছেন আমেরিকান নেভী এবং আর্মি ন্যাশনাল গার্ড এ । ডোরা হারনান্দেজ সহ আরো কয়েকজন প্রবীণ ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা হচ্ছিল যারা  আমেরিকার সামরিক বাহিনীতে  কাজ করেছেন অনেক বছর , ইরাক এবং আফগানিস্থান যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছেন । এই ফ্রন্টগুলোতে  কোনমতে  তারা সারভাইভ করতে পেরেছেন  কিন্তু পুরো কর্মজীবন জুড়ে তাদেরকে আরোও একটি যুদ্ধ করতে হয়েছে  নীরবে-এবং সেই যুদ্ধে তারা প্রতিনিয়তই পরাজিত হয়েছেন । তাদের সেই নীরব যুদ্ধ ধর্ষণের বিরুদ্ধে ।


পেন্টাগনের নিজেস্ব  রিসার্চ থেকেই  বের হয়ে এসেছে যে আমেরিকান সামরিক বাহিণীর  প্রতি চার জন মহিলা সদস্যের একজন তাদের ক্যারিয়ার জুড়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ।
(পড়ুনঃ মুখোশ উন্মোচন -http://bit.ly/2bvqYOz আমেরিকার সামরীক বাহিনীতে চলমান যৌন নির্যাতনের কারণ হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে মিলিটারি ক্যাম্পগুলোতে পরনোগ্রাফিক ম্যাগাজিনের সহজলভ্যতা । যৌন নির্যাতনের হার কমানোর জন্য  মিলিটারি ক্যাম্পগুলোতে এইসব ম্যাগাজিন ক্রয় বিক্রয় করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে । জয়েন্ট চীফ অফ স্টাফ বলেছেন ,“আমাদের বাহিনীতে বিরাজমান এই যৌন নির্যাতনের সংস্কৃতি পরিবর্তন করতেই হবে । আর এজন্যেই সামরিক ঘাঁটি গুলোতে পরনোগাফিক ম্যাগাজিন কেনাবেচা করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে”।
[তবে এই পদক্ষেপ অবস্থার কতটা উন্নতি ঘটাবে তাতে অনেকেই সন্দিহান। কারণ ক্যাম্পগুলো থেকে খুব সহজেই পর্ণসাইটে প্রবেশ করা যায়]


অনেকেই একটা  ভুল ধারণা নিয়ে থাকেন  আমি তো শুধু পর্ণমুভি দেখছি ,ওইগুলো করছি না । কারো কোন   ক্ষতি করছিনা । পর্ণ দেখা  দোষের তো কিছু না । পর্ণ দেখার সঙ্গে ধর্ষণ বা শিশু নির্যাতনের কোন সম্পর্ক নেই ; এইগুলো পর্ণ সহজলভ্য হবার আগেও ছিল এখনো আছে । এই ভুল ধারণাগুলো ভেঙ্গে দেবার জন্য এই লিখাটাই (সিরিজের প্রথম দুটি লিখা পড়ুন এখানে- http://tinyurl.com/heblrdw, http://tinyurl.com/h2uwum2 )  যথেষ্ট ইনশা আল্লাহ্‌ ।
একেবারেই একাডেমিক ধাঁচের লিখা এটি । রসকষহীন । ধৈর্য ধরে পুরোটা পড়ার অনুরোধ রইলো পাঠকদের নিকট ।


শিশু যৌন নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি -ডঃ ডায়ানা ই.এইচ.রাসেল

বারবার চাইল্ড পর্নোগ্রাফি দেখা ও তা দেখে মাস্টারবেট করার ফলে ব্যাক্তির বাস্তবে তা প্রতিফলিত করার ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠতে থাকেএক মানসিক রোগী ছিল যে আসলে ছিল স্যাডিস্টিক সিরিয়াল রেইপিস্ট।৯ বছর বয়স থেকেই মেয়েদের টর্চার করার ফ্যান্টাসি তার মাথায় ঘুরপাক খেতে শুরু করে১২ বছর বয়সে সেসব চিন্তাকে মাথায় এনে শুরু হয় মাস্টারবেশন।তা চলতে থাকে প্রতি মাসে ২০ বার করে।২২ বছর বয়সে সে তার প্রথম স্ত্রী ও অন্যান্য মহিলাদের ধর্ষণ করে।অনেকের কাছে পর্ণ অল্প সময়ের জন্য আনন্দের খোরাক জোগালেও কেউ কেউ এর হাত ধরেই জন্ম দেয় নির্মম বাস্তবতার যা নিষ্পাপ কিছু জীবনকে বিষাদময় করে তুলে অকল্পনীয়ভাবে।

 
ভার্নন গিবার্থের সঙ্গে সাক্ষাৎকার (
retired Lieutenant Commander with the NYPD and author of "Sex Related Homicide and Death Investigation: Practical and Clinical Perspectives") যখন এসব ক্রিমিনালদের ঘটনা শুনি মানে তাদের ভিতরকার দুনিয়াটা স্পষ্ট চোখে দেখি, তখন এ বিষয়ে আর সন্দেহ থাকে না যে প্রকৃত নীরব ঘাতক কোনটি।এমন কিছু ফ্যান্টাসি আছে যা কোনদিনই বৈধ বা সভ্য না।কিন্তু এ ফ্যান্টাসিগুলোই কাউকে কাউকে আচ্ছামত পেয়ে বসে।এগুলো নশ্বর ও ক্ষণস্থায়ী।আর পরের ধাপে ব্যাক্তি শরণাপন্ন হয় পর্ণের।এতে করে ধীরে ধীরে নির্দিষ্ট কোন ক্যাটাগরির উপর সে দিনের পর দিন দুর্বল হতে থাকে।ব্যাক্তি ভেদে তা ভিন্ন ভিন্ন।আর এক সময় সে লালসার জোয়ার নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহদের ওপর আর বাস্তবায়ন ঘটায় তার মনের ভেতর পুষে রাখা ফ্যান্টাসির।

ক্যাথারসিস থিওরি বা ক্যাথারসিস ইফেক্ট

এই টার্মটি হয়তো অনেকের কাছেই অজানা।সহজ বাংলায় বলতে গেলে বিশোধন তত্ত্ব বা বিশোধন প্রভাব।মানে এই থিওরি মতে, পর্ণকে ব্যবহার করে আমরা আমাদের বর্বর ফ্যান্টাসিগুলোকে লাগাম দিতে পারি
অর্থাৎ আমাদের মনের ক্ষুধাকে সাময়িকভাবে মিটিয়ে আমরা ধর্ষণ বা যে কোন প্রকার সেক্সুয়াল ভায়লেন্স ঠেকাতে পারি।কারণ ধর্ষণ করার আকাঙ্ক্ষা তো পর্ণই মিটিয়ে দিচ্ছে।আবার কষ্ট করে বাস্তব জীবনে কারো মানহানি করার কি দরকার?

তাহলে এবার দেখা যাক যে এই থিওরি কতোখানি যুক্তিযুক্ত।একটা এক্সপেরিমেন্টের কথা উল্লেখ করবো যা পরিচালনা করেন হাওয়ার্ড, রিফলার ও লিটজিন।২৩ জন পুরুষকে নিয়ে এই এক্সপেরিমেন্ট চালানো হয়। প্রাথমিকভাবে তাদের একটি পর্নোগ্রাফিক মুভি দেখানো হয় এবং তাদের উত্তেজনা পর্যবেক্ষণ করা হয়।এরপর পনেরো দিন প্রতিদিন নব্বই মিনিটের জন্য অ্যাডাল্ট পর্ণ দেখানো হয়।ফলে দেখা যায়, সবার মধ্যে শুরুতে যে উত্তেজনা কাজ করছিলো তা ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

কাঠামোগত দিক দিয়ে দুর্বল এই এক্সপেরিমেন্টে কিছুই প্রমাণ হয় না।প্রথমত, কি ধরণের পর্ণ সাবজেক্টরা দেখতে চায় তার ক্ষেত্রে কোন স্বাধীনতা ছিল না।বাধ্য হয়ে তাদের সবাইকে একই পর্ণ দেখতে হয়েছে।অথচ একেক জনের চাহিদা একেক রকম।তাই অল্পতেই তাদের উৎসাহ ফুরিয়ে গেছে।দ্বিতীয়ত, লম্বা সময় ধরে এবং একটানা চলে আসা যে কোন কাজই মানুষকে একঘেয়েমি করে তুলে।তাদের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই

এর বিপরীতে দেখবো জিলম্যান ও ব্রায়ান্ট এর এক্সপেরিমেন্ট।দুইটা গ্রুপে সাজানো হয় স্যাম্পলদের।প্রথমটা তৈরি করা হয় সমান সংখ্যক তরুণ ও তরুণী নিয়ে।এই আন্ডারগ্র্যাজুয়েটদের ডাকা হয় ২টি মিডওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে
পরবর্তী গ্রুপটাতেও থাকে সমান সংখ্যক তরুণ তরুণীতবে তারা স্টুডেন্ট নয়।

এবার শুরু হয় এক্সপেরিমেন্ট।তাদেরকে অনেকগুলো অপশন দেওয়া হয় মানে কে কী ধাঁচের পর্ণ দেখতে চায়।একটা নির্দিষ্ট সময় পরে দেখা যায়, তারা যখন একটা ক্যাটাগরি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে তখন ঝাঁপিয়ে পড়ছে অন্য আরেকটায় যা আগেরটার তুলনায় আরো বর্বর।মানে যেগুলো খুব অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় বহন করে।

মাস্টারবেশন এর ফ্যাক্টরটাও এখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা দর্শকদের কামবাসনাকে আরো জোরদার করে। তবে অনেক পুরুষের ক্ষেত্রেই মাস্টারবেশনের চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে তার কল্পনার মানুষটির সাথে বাস্তবে মিলিত হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা।কিন্তু যখন দেখে বৈধভাবে তা হয়তো কোনদিন সম্ভব না, তখনই তাদের কেউ কেউ ভিতরের রাক্ষসটাকে টেনে বের করে আনে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান ঘেটে এর বহু উদাহরণ দাঁড় করানো যায়।

তাই বলা চলে, ক্যাথারসিস থিওরির মূলত কোন ভিত্তি নাই।

অস্ট্রেলিয়ায় সম্প্রতি এক গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে পর্ণাসক্ত বাচ্চাদের 
বাড়তি উগ্রতার কথা।প্রায় সবার কাছেই ইন্টারনেট সহজলভ্য ও এদের ৯০% স্বীকার করেছে যে অনলাইনে পর্ণ দেখার অভ্যাস আছে।এক চতুর্থাংশ জানিয়েছে, বড় ভাই বা বোনের সহায়তায় বা কোন বন্ধুর প্ররোচনায় পড়ে তারা পর্ণের জগতে পা ফেলেছে, অনেক সময় অনিচ্ছা সত্তেও।আরেক চতুর্থাংশ বলেছে, অনলাইনে যাওয়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্যই ছিল পর্ণ দেখা।যখন আলাদাভাবে ডেকে অভিভাবকদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তখন তাদের প্রায় প্রত্যেকে তাদের সন্তানের অনলাইন ব্রাউসিং নিয়ে সন্দেহপ্রবণ মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।       

আচ্ছা! এটা কি হতে পারে যে পর্ণের মাধ্যমে ধর্ষণ রোধ সম্ভব?-রবার্ট পিটারস্

পর্নোগ্রাফির পক্ষে যারা, তারা লম্বা সময় ধরেই বলে আসছে যে যেসব ব্যাক্তি সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স ঘটানোর ইচ্ছা রাখে, পর্ণ তাদের সেই খায়েশকে লাগাম দেয় ও তাদের শান্ত করেঅনেকের ক্ষেত্রে তা সত্য হতে পারে কিন্তু একটু আগে যে পরিসংখ্যান দেখানো হল তাতে কি মনে হয় এতে লোকসানের চেয়ে লাভ বেশি হয়?মোটেই না।আর যদি তাই হতো তাহলে দিনের পর দিন এই অপরাধীদের সংখ্যা বাড়ছে কেনো? কারণ আজকের যুগে আমরা এটাকে বেশ সহজলভ্য করে তুলেছি তা যে ক্যাটাগরির কথাই বলুন না কেনো।
   
সম্প্রতি এক গবেষণায় এসেছে, যারা চাইল্ড পর্নোগ্রাফি দেখে অভ্যস্ত তাদের অর্ধেকের বেশি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে বাচ্চা মেয়েদের উত্যক্ত করার অভিযোগে।সামাজিক গবেষণাগুলো থেকেও প্রতীয়মান হয় পর্ণের সাথে যৌন অপরাধের জোরদার সম্পর্কের কথা।

#অনিবার্য_যত_ক্ষয়
(শেষ)
(লস্ট মডেস্টি অনুবাদ টীম কর্তৃক অনূদিত)  
রেফারেন্স-

Tuesday, December 13, 2016

বিষে বিষক্ষয়

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।


পর্ন আসক্তি ছাড়ার জন্য পর্ন ওয়েব সাইট ব্লক করার সফটওয়্যার বা অ্যাপ্স ইনস্টল করা খুবই জরুরী। পর্ন দেখতে মন চাইলো, হাতের মুঠোয় হাইস্পিড ইন্টারনেট, দুটো ক্লিক, তারপর পর্ন মুভির বিশাল ভান্ডার”, এরকম অবস্থায় থাকলে পর্ন আসক্তি থেকে বের হয়ে আসা দুঃসাধ্য।
এই লেখায় আমরা আপনাদের এমন কিছু সফটওয়্যার, অ্যাপ্সের সন্ধান দেবো যা দিয়ে আপনি অনলাইনের ফিতনা মোকাবেলার রসদ পেয়ে যাবেন ইনশা আল্লাহ্‌। 



K9 সফটওয়্যার:
যতগুলো  পর্ন ব্লকিং সফটওয়্যার আছে তাদের মধ্যে K9 Web Protection সফটওয়্যার আমাদের সবচেয়ে পছন্দের। এ K9 সফটওয়্যার সকল কাজের কাজি। শুধুমাত্র এ একটি সফটওয়্যার ইন্সটল করেই আপনি আপনার পিসিকে পর্নসাইটে প্রবেশের জন্য অভেদ্য করে ফেলতে পারবেন ইন শা আল্লাহ্‌! 

K9 সফটওয়্যার ইন্সটলের টিউটোরিয়াল-  http://bit.ly/2FCWxl3
K9 সফটওয়্যার ডাওনলোড করুন এখান থেকে- http://bit.ly/1lgZmes
K9 সফটওয়্যার ইন্সটল করার পিডিএফ টিউটোরিয়াল পাবেন এখানে - http://bit.ly/2CvZ8LA

এন্ড্রয়েড ফোনে পর্ন সাইট ব্লক করা:

খুবই জনপ্রিয় এক পর্ন সাইট Women and Tech শিরোনামের লেখায় বলেছে, তাদের ভিযিটরদের মধ্যে শতকরা ৭২ জনই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তাদের সাইটে ব্রাউয করে থাকে। ২০১৭ সালে করা জুনিপার রিসার্চ থেকে দেখা যাচ্ছে প্রায় ২৫ কোটি মানুষ মোবাইল ফোন অথবা ট্যাবলেট ব্যবহার করে পর্ন ভিডিও দেখেছে। ২০১৩ সালের তুলনায় যা প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ বেশি।[1]

স্মার্টফোনের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে স্মার্টফোন ব্যবহার করে পর্ন দেখার পরিমান। একটা মোবাইল ফোন সাথে রাখতেই হয়, ল্যাপটপ বা পিসি থাকা ততোটা জরুরী না, দামেও সস্তা। সাইযে ল্যাপটপ বা পিসির চেয়ে অনেক ছোট হওয়ায় যে কোন যায়গাতেই নিয়ে যাওয়া যায়, বাথরুমে, কাথার নিচে,আড়ালে আবডালে, চিপায় চাপায়; সবখানেই। কাজেই পর্ন দেখার মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোন যে পর্ন আসক্তদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকবে তা বলাই বাহুল্য। বাচ্চাকাচ্চাদেরও পর্ন আসক্তির সম্ভাব্য একটা মাধ্যম হচ্ছে স্মার্ট ফোন। বাচ্চা, টিনেইজার থেকে শুরু করে সকল বয়সী মানুষকে পর্ন এর অন্ধকার জগত থেকে দূরে রাখার জন্য ইন্টারনেট ফিল্টারিং সিস্টেমের সাহায্য নেওয়া খুবই জরুরী।

পিসিতে পর্ন সাইট ব্লক করার জন্য K9 নামের অসাধারণ একটা সফটওয়্যার আছে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো যে মোবাইল ফোন দিয়ে সবচেয়ে বেশী পর্ন সাইটে ব্রাউয করা হয়, সেই মোবাইল ফোনে পর্ন সাইট ব্লক করার জন্য তেমন ভালো কোন অ্যাপ্স নেই। যেগুলো আছে সেগুলোও স্বয়ংসম্পূর্ণ না বা ফ্রি না। টাকা দিয়ে কিনতে হয়। টাকাটা বড় কথা না, বড় কথা হচ্ছে অনলাইনে অ্যাপ্স কেনার জটিলতা এবং সেই সাথে অ্যাপ্স গুলোর স্বয়ংসম্পূর্ণ না হওয়া। এ জটিলতা থেকেই স্মার্টফোনগুলোতে আর পর্ন ব্লকিং অ্যাপ্স ইন্সটল করা হয়ে ওঠেনা।

অ্যাপ্স বানানোতে ওস্তাদ এমন ভাইদের কাছে অনুরোধ থাকবে আপনারা এ বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবুন। আল্লাহ্ (সুবঃ) আপনাদের যে যোগ্যতা দিয়েছেন সেটা কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিন্তু অবহেলিত এই ব্যাপারটিতে একটু মনযোগ দিন। সমগ্র মুসলিম উম্মাহ তথা মানবজাতি আপনাদের দিকে চেয়ে আছে। আল্লাহর ওপর ভরসা করে কাজে হাত দিন, আল্লাহ্ সহজ করে দিবেন ইন শা আল্লাহ্। জোড়াতালি দিয়ে কীভাবে এন্ড্রয়েড ফোনে পর্ন সাইট ব্লক করা যায় চলুন,আলোচনা করা যাক  

) ওপেন DNS  Address পরিবর্তনের মাধ্যমে:

কেবল ওয়াইফাই দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে এ পদ্ধতিতে পর্ন সাইট ব্লক করা যাবে। মোবাইল 
ডাটা দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে পর্ন সাইট ব্লক করা যাবে না ।
ভিডিও টিউটোরিয়াল - http://bit.ly/2mwVkD5

) স্পিন ব্রাউযারের মাধ্যমে:

এটি আমাদের  পছন্দের পদ্ধতি। বেশ কার্যকরী। প্রয়োজনীয় এই অ্যাপ্সগুলো নামিয়ে নিন প্লে স্টোর থেকে,  
Spin Browser  - http://bit.ly/2cJ5ufM
App Lock - http://bit.ly/1jjyav2 

ভিডিও টিউটোরিয়াল-   http://bit.ly/2FlCLcI

ইউটিউবের ফিতনা থেকে রক্ষা:

ইউটিউবের ফিতনা নিয়ে আমরা আগেই আলোচনা করেছি। পিসির জন্য K9 সফটওয়্যার ইন্সটল করে নিন। ইউটিউবের অশ্লীল কিংবা যৌন উত্তেজক ভিডিও থেকে রক্ষা পাবার আরেকটি ভালো একটা উপায় হল সাজেস্টেড ভিডিও লিস্ট অশ্লীলতা মুক্ত রাখা। ইউটিউব আপনার সাজেশান লিস্টে যে ভিডিওগুলো দেখায় তা মূলত কিছু জিনিসের উপর ভিত্তি করে দেয়। ওরা চায় যে আপনি যে রুচির লোক আপনাকে সে রকম ভিডিও পরিবেশন করতে। আর এ জন্যই, আপনি যদি বিভিন্ন ইসলামিক ভিডিও বারবার দেখে থাকেন তাহলে তারা ঐ ধরণের টাইপের ভিডিও গুলো সাইডবারে দেখাতে থাকে। অশ্লীল ভিডিও'র ক্ষেত্রেও একই নীতি।

দ্বিতীয়ত, ইউটিউবে অসংখ্য ভিডিও চ্যানেল থেকে যে যে চ্যানেল আপনি সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন সে সব চ্যানেলের ভিডিওগুলো আপনাকে ক্রমাগত দেখাতে থাকবে। এখন আপনার সাবস্ক্রাইব করা চ্যানেলগুলো যদি হয় সব ইসলামিক চ্যানেল তা হলে অশ্লীল ভিডিও আপনার সামনে আসার তেমন কোন সুযোগ পাবেনা। এই পদ্ধতিটা অনেক কার্যকর। পবিত্র রাখা যায় নিজের ইউটিউব পরিবেশ। সাবস্ক্রাইব করতে হলে আগে আপনাকে ইউটিউবে সাইন ইন (লগ ইন) করে নিতে হবে। আর এজন্য একটি জি-মেইল আইডি থাকতে হবে। ইউটিউবে যাবার পর ডানপাশে কোণায় দেখবেন “Sign In” লেখা থাকে। “Sign In” এ ক্লিক করে মেইল আইডি দিয়ে লগ ইন করার পর বিভিন্ন ইসলামিক ভিডিও সার্চ দিয়ে তাদের চ্যানেলগুলো সাবস্ক্রাইব করে নিন। একবারে দশ বারোটা করে নিতে পারেন যাতে করে পরে এগুলোর ভিড়ে অন্য অশ্লীল ভিডিও সাজেশান  লিস্টে জায়গাই না পায়।

এছাড়া http://viewpure.com এ যেয়ে কোন ভিডিওর লিংক পেস্ট করে ভিডিও অ্যাক্সেস করলে কোন সাজেশান লিস্ট আসবে না ইন শা আল্লাহ্। অশ্লীলতা থেকে কিছুটা হলেও নিরাপদ থাকা যাবে।
এন্ড্রয়েড ফোনে ইউটিউবের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবার ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে নিচের দুটি ভিডিওতে। দেখতে ভুলবেন না।

প্রয়োজনীয় অ্যাপ্স ডাউনলোড লিংক-
 Youtuze  - http://bit.ly/2cqx4QM
 App Lock - http://bit.ly/1jjyav2

অনাকাঙ্ক্ষিত অ্যাড ব্লক:

অনলাইনের অনাকাঙ্ক্ষিত অ্যাড  ভয়ংকর সমস্যার কারণ হতে পারে। তাছাড়া এসব অনাকাঙ্ক্ষিত অ্যাড ব্রাউযিং স্পিড অনেক কমিয়ে দেয়।অনলাইনের অযাচিত অ্যাড দূরকরার জন্য addons হিসেবে Adblock ব্যবহার করতে পারেন। Firefox, chrome দুটোর জন্যই পাবেন।
) Google Chrome এর জন্য Adblock - http://bit.ly/1bia3G6
) Firefox এর জন্য Adblock -  https://mzl.la/2CI98om

এন্ড্রয়েড ফোনের জন্য নামিয়ে নিন এ দুটি এপ্স।
AppBrain Ad Detector - http://bit.ly/2dhkPTo
Free Adblocker Browser - http://bit.ly/1PGjcNY

কীভাবে ডাউনলোড এবং ইন্সটল করতে হবে তা ধাপে ধাপে জানার জন্য দেখুন নিচের ভিডিও টিউটোরিয়াল - http://bit.ly/2CHMJrk

এছাড়া ওয়াইফাই রাউটারের অ্যাড্রেস পরিবর্তন করেও পর্নসাইট ব্লক করা যায়।  পাঠকদের অনুরোধ করব আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে (Lost Modesty- http://bit.ly/2Dg7eLR  ) নিয়মিত চোখ রাখতে।

কে, কীভাবে ব্যবহার করবেন:
) আপনি নিজে পর্ন আসক্ত হলে একদম কাছের কোন বন্ধুর সাহায্য নিয়ে এই অ্যাপ্স/ সফটওয়্যার গুলো ইন্সটল করে নিন। শুধু আপনার বন্ধু পাসওয়ার্ড জানবেন,আর কেউ না। এতে চাইলেও আপনি প্রোটেকশান ভেঙ্গে অনলাইনে পর্ন দেখতে পারবেননা।  

) আপনার স্বামী পর্ন আসক্ত হলে তার সঙ্গে আলোচনা করে নিয়ে অ্যাপ্স/ সফটওয়্যার গুলো ইন্সটল করবেন। শুধু আপনি পাসওয়ার্ড জানবেন।

) আপনার সন্তানকে অনলাইন পর্নোগ্রাফি থেকে বাঁচানোর জন্য আপনি অ্যাপ্স/ সফটওয়্যার ইন্সটল করবেন। আপনার সন্তানকে কোনমতেই পাসওয়ার্ড জানতে দেবেন না। অ্যাপ্স/ সফটওয়্যার ইন্সটল করার আগে তার সাথে খোলাখুলি আলোচনা করে নিলে ভালো হয়।
কোন অ্যাপ বা সফটওয়্যার খুঁজে পেতে, ডাউনলোড করতে কিংবা ইন্সটলে কোথাও কোন সমস্যা হলে নিশ্চিন্তে যোগাযোগ করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেইজের ইনবক্সেwww.facebook.com/lostmodesty  
অথবা মেইল করতে পারেন এ ঠিকানায় lostmodesty@gmail.com

সফটওয়্যার/এপ্স ইন্সটল করার সাথে সাথে অন্তরে আল্লাহর ভয় বাড়ানোর জন্যেও চেষ্টা করতে হবে। ইন ফ্যাক্ট অন্যান্য সব কিছুর চেয়ে এটা বেশি জরুরি। নিজের মনে যদি আল্লাহর ভয় থাকে, স্বদিচ্ছা থাকে, তাহলে অন্য কোন উপায় ছাড়াও পর্ন আসক্তি কাঁটিয়ে ওঠা যাবে ইন শা আল্লাহ। কিন্তু অন্তরে ব্যাধি দূর না হলে, যতো অ্যাপ্স-সফটওয়্যার, কিংবা টিপস ব্যবহার করুন না কেন। এক সময় না এক সময় পা ফসকাবেই।  ওয়ামা তাউফিকি ইল্লা বিল্লাহ।

রেফারেন্সঃ
[১] Juniper Research, “250 Million to Access Adult Content on their Mobile or Tablet by 2017, Juniper Report Finds - http://bit.ly/2D0Hq3M