Saturday, October 29, 2016

আয় কান্না ঝেঁপে …

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম


সন্ধ্যার মরে আসে রোদ চিরকাল আমার মন খারাপ করে দেয় । মাঝে মাঝে  সারাদিন ঝুম বৃষ্টি হয়।  সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টি কিছুটা ক্লান্ত হয়ে টিপ টিপ করে পড়ে বা কখনো সম্পূর্ণ থেমে যায় । ধূসর একটা আলোয় ভরে যায় চারপাশ । কেউ  খেয়াল করে , কেউ করে না ।নারিকেল আর গগনশিরীষের বৃষ্টি ভেজা পাতা সেই ধুসর আলোতেও চিকচিক করে । দূরের আকাশে কালো একটা বিন্দুর মতো সোনালী ডানার চিল ভেসে বেড়ায় । করুন সুরে ডেকে ওঠে মাঝে মাঝে । চিরকাল খামখেয়ালী জীবন যাপন করা আমি উদাস হয়ে যায় । হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ইচ্ছে করে ।

কত বেদনা!
কত বিচ্ছেদ!
কত কথা রাখতে না পারা !

Image result for young man crying in salah

কথা দিয়েছিলাম আমার রব্বকে, ইয়া রব্ব! এবারের মতো মাফ করে দাও । আর কোনদিন একা রুমে ল্যাপটপে বসবনা ।

সেই কথা রাখতে পারিনি বহুবার আমার এই ২৩ বছরের জীবনে ।

বহুবার নির্লজ্জের মতো অন্ধকার জগতটাতে ফিরে গেছি । আর তারপর আক্ষেপের অশ্রু আমাকে ঘুম পাড়িয়েছে। অন্ধকার এত কেন টানে আমায়?

রব্বের কাছে দু’হাত তুলে চেয়েছিলাম, “ইয়া রব্ব! ভালো একটা ভার্সিটিতে  চান্স পাইয়ে দাও”
আমার রব্ব আমাকে নিরাশ করেননি ।

ভার্সিটিতে আসার পর ভুলে গেলাম আমার রব্বকে । বন্ধু, আড্ডা,গান, ফেসবুকিং, চ্যাটিং এর ভীড়ে হারিয়ে ফেললাম আমার রব্বকে ।

আমার রব্ব কিছুই বলেননি আমাকে । কোন শাস্তিও দেননি ।

মনে রঙ লাগার বয়সে মনে ধরেছিল এক বালিকাকে । কালো হরিনী চোখের সেই বালিকা যখন সবুজ ওড়না মাথায় দিয়ে আড়চোখে তাকাতো, আমি তখন অভিকর্ষ বলকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে উড়াল দিতাম আকাশে। ভালোবাসা ছুঁয়ে ফেলতো আকাশ । পৃথিবীর সব সুখ  চলে আসতো আমার দখলে ।

রব্বকে কথা দিয়েছিলাম, কখনো হারাম সম্পর্কে জড়াবো না । হারাম সম্পর্কে জড়ায়নি কখনো সেটা ঠিক , কিন্তু চেষ্টা তো কম করিনি ! রব্ব আমাকে দয়া করে প্রত্যেকবার ফিতনা থেকে বাঁচিয়েছেন ।

দুটো সিজদাহ্‌ কি কখনো দিয়েছি রব্বের এই রহমতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য?

চাইলেই কি রব্ব পারেন না, আমার চোখদুটোর আলো কেড়ে নিতে ?

যে চোখ দিয়ে আমি গোগ্রাসে গিলি এক্সরেটেড মুভি গুলো?

যে চোখ দিয়ে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি বালিকার রাঙ্গা রাজকন্যার মতো মুখটা ?

কোন মুখে দাঁড়াবো আমি আমার রব্বের সামনে, যেদিন আমার চোখ, আমার হাত,আমার পা, আমার কান , আমার ত্বক সাক্ষ্য দিবে আমার বিরুদ্ধে ?  আমাকে এমন আমলনামা পড়তে দেওয়া হবে যেটা্তে আমার করা প্রত্যেকটা কাজ খুটিনাটি সহকারে লিখা আছে ?

সেদিন শুনছিলাম  ইউসুফ (আঃ) এর অসাধারণ কাহিনী । চুড়ান্ত মাত্রার   আল্লাহ্‌ভীতি, পবিত্র থাকার অদম্য ইচ্ছা ! ক্রীতদাস ইউসুফ(আঃ) এর ওপর ক্রাশ খেয়ে ফেললেন তাঁরই মালিকের স্ত্রী । মহিলার অবশ্য করার কিছু  ছিলনা, আল্লাহ্‌,  ইউসুফ (আঃ)কে পৃথিবীর অর্ধেক রূপ যে দিয়েছিলেন । মহিলা,কিভাবে নিজেকে সামলাবে ?  ইউসুফ (আঃ) কে ফাঁদে ফেলার চক্রান্ত আটা শুরু হল । ইউসুফ (আঃ) হাত তুললেন আল্লাহ্‌র কাছে , “ইয়া আল্লাহ্‌ ! এরা আমাকে যেদিকে আহব্বান করে তার চেয়ে কারাগারো আমার অধিক প্রিয়  ...’

 জুলায়খা, ইউসুফ’র(আঃ) মালিকের স্ত্রী ছিল   সুন্দরী,লাস্যময়ী সেই সঙ্গে তাঁর ওপর প্রভাবশীল।  তারপরেও ইউসুফ (আঃ)  ফিরিয়ে দিয়েছেন জুলায়খাকে । কতভাবেই না ইউসুফ (আঃ) কে প্রলোভন দেখানো হয়েছে । তারপরেও তাঁকে ভুলানো যায়নি ।

আর, আমি সামান্য কোন মেয়ের চাহনিতেই কুপোকাত হয়ে  যায় । জুলায়খাদের এসে আমাকে প্রলোভন দেখাতে হয়না । আমি নিজেই ভার্চুয়াল জুলায়খাদের আড্ডায় হানা দেই । ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ে থাকি নীল রঙের সেই জগতটাতে । বাস্তবে উনার মতো অবস্থায় পড়লে কি হাল হতো আমার !

ইউসুফ (আঃ)  তো আমার মতোই রক্ত  মাংসের মানুষ   ছিলেন ।   পুরোপুরি তার মতো হতে নাই’বা পারলাম , কিছুটা যদি হতে পারতাম উনার মতো ! কিছুটা !

জানালার বাহিরের আকাশটা আজ অনেক কালো । মেঘ জমে একাকার  শীতল একটা বাতাসে সজনে গাছের সাদা ফুল গুলো তিরতির করে কাপছে । বোধহয় একটু পরেই ঝুম বৃষ্টি নামবে  ।
ইশ! আমার বুকের মধ্যেও যদি  অনুতাপের  মেঘ জমতো , অশ্রু হয়ে অঝোরে  ঝরে পড়তো ভারী ভারী  সেই মেঘগুলো ! আমার অন্তর তো কঠিন হয়ে গেছে । অনেক কঠিন । পাথরের চেয়েও কঠিন ।
পাথর ফেটেও তো মাঝে মাঝে ঝরনা বের হয়ে আসে । কিন্ত আমার অন্তর তো আল্লাহর ভয়ে আল্লাহর স্মরনে বিগলিত হয় না । শেষ কবে সলাতে কেঁদেছি  মনে আছে ? শেষ কবে ঐ জঘন্য পাপ কাজটা করার পর জায়নামাজে সিজদাহয় লুটিয়ে পড়ে  ক্ষমা চেয়েছি ?

কতটুকু ভালোবাসেন আল্লাহ আমাদেরকে ? কতটুকু ?

এক মায়ের ছেলে হারিয়ে গিয়েছে । অনেক  খোঁজাখুজির পরেও ছেলেকে পাওয়া গেলনা ।  মায়ের পাগল হতে বাকী । এমন সময়  হারানো ছেলেকে পাওয়া গেল । মা পরম মমতায় জড়িয়ে ধরলেন ছেলেকে।  ভালোবাসার অশ্রু তার দুগাল বেয়ে অঝোরে নামছে । রোদ পড়ে চিকচিক করছে মুক্তোর মতো ।  এই মায়ের পক্ষে কি এই অবস্থায় সাত রাজার ধন  এই ছেলেকে  আগুনে ফেলে দেওয়া সম্ভব হবে ?

আল্লাহ আমাদেরকে  এই মায়ের চেয়েও অনেক অনেক গুন বেশি ভালোবাসেন । বাবামার অবাধ্য হলে তাদের কথা না শুনলে, তাদের মনে কষ্ট দিলে সন্তান্দের প্রতি তাদের ভালোবাসায় ভাটা পড়ে যায়
কিন্তু  আল্লাহর ভালোবাসায় কখনো ভাটা পড়ে না । আমি যখন আল্লাহকে   স্মরন করি , আল্লাহও আমাকে  স্মরন করেন । যখন তাকে ভুলে যাই, তার অবাধ্যতা করি তখনো তিনি আমাকে মনে করেন ।  আমার জন্য ক্ষুধার খাদ্য পাঠিয়ে দেন , তৃষনার     পানি  পাঠিয়ে দেন , বুক ভরে   শ্বাস  নিতে দেন মুক্ত  বাতাসে ।

অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন কখন আমি তাকে ডাকবো । মনের অজান্তেই একবার ইয়া রব্ব বলে ডাক দিলেই তিনি আনন্দিত হয়ে সাড়া দেন – ইয়া আবদি! হে আমার বান্দা বলো , বলো তোমার কি চাই ?

আমি যখন আল্লাহর দিকে এক ধাপ এগিয়ে যায় আল্লাহ আমার দিকে দশ ধাপ এগিয়ে আসেন , আমি  আল্লাহর দিকে হেঁটে গেলে তিনি দৌড়িয়ে আসেন । আল্লাহ সুযোগ খোঁজেন আমাকে ক্ষমা করে দেবার । অজুর পানির মাধ্যমে তিনি আমার পাপগুলো ঝরিয়ে দেন, দুই সলাতের মাধ্যমে মাঝের সময় গুলোতে করা পাপ গুলো ক্ষমা করে দেন । তিনি রাতে ক্ষমার হাত বাড়িয়ে দেন দিনের পাপীদের জন্য , আর দিনে ক্ষমার হাত বাড়িয়ে দেন রাতের পাপীদের জন্য ।

তিনি ঘোষনা দিয়ে রেখেছেন কেউ যদি তার সঙ্গে আকাশ সমান উঁচু পাপ নিয়েও দেখা করে কিন্তু শিরক না করে তাহলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন ।  তারপর তিনি প্রবেশ করাবেন এমন এক জান্নাতে [ http://bit.ly/2eXDZPI ]  যা কোন চোখ দেখেনি , কোন  অন্তর চিন্তাও করেনি ।
[http://bit.ly/2f24Adb]

“হে আমার বান্দাগন ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছো তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন । তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুনাময় । [আয-যুমারঃ ৫৩]

আমার সলাত, আমার সিজদাহ, আমার তাসবীহ কোন  কিছুরই কি প্রয়োজন আছে  আল্লাহ’র ?  আমি তো ক্ষুদ্র, অতি  নগন্য এক  সৃষ্টি । এই পৃথিবীর তুলনায় আমি কত ক্ষুদ্র । আমাদের এই পৃথিবীর   তুলনায় সূর্‌য প্রায় তের লক্ষগুন বড় । সূরযের পর আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে  কাছে যে নক্ষত্র রয়েছে  তার নাম Proxima Centauri . পৃথিবী থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৪.৫ আলোক বর্‌ষ ।

আলোর বেগ সবচাইতে বেশী । আলো এক সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে ফেলে । আর পৃথিবীথেকে এই আলোরই  Proxima Centauri তে যেতে সময়  লাগবে ৪.৫ বছর । ভাবা যায় কতদূরে আছে Proxima Centauri!

এরকম ১০০ বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে আমরা যে গ্যালাক্সিতে রয়েছি সেই ‘ মিল্কি ওয়েতে’।  মহাবিশ্বে আবার ১০০ বিলিয়নের মতো গ্যালাক্সি রয়েছে ।  ২০০৪ সালে বিজ্ঞানীরা একটি নতুন গ্যালাক্সি আবিষ্কার করতে সক্ষম হন । যার নাম তাঁরা দেন ABEL 135 IR 116 .  এই বাবাজি পৃথিবী থেকে ১৩.২ বিলিয়ন দূরে অবস্থিত ।

আর এই সব কিছুই প্রথম আসমানে  । দ্বিতীয় আসমান প্রথম আসমানের তুলনায় কত বিশাল সেটা ব্যাখ্যা করার জন্য হাদীসে মরুভুমি এবং একটা আংটির কথা বলা হয়েছে । মরুভূমির বিশাল বুকে পড়ে থাকা একটি আংটি মরুভূমির তুলনায় যতটা ক্ষুদ্র । প্রথম আসমান দ্বিতীয় আসমানের তুলনায় ততোটুকুই ক্ষুদ্র । এভাবে  দ্বিতীয় আসমান তৃতীয় আসমানের তুলনায় ক্ষুদ্র , তৃতীয়, চতুর্‌থ আসমানের তুলনায় ক্ষুদ্র । এভাবে চলতে চলতে সপ্তম আসমানে যেয়ে ঠেকে ।

[http://bit.ly/2fpWjUE  ]

সুবহানাল্লাহ্‌! কত বড় এই মহাবিশ্ব । এই মহাবিশ্বের প্রতিটি কোণায়, চিপায় চাপায় সবখানে ফিরিশতারা রয়েছেন  আল্লাহকে সিজদাহরত অবস্থায় । আমার সিজদাহ আল্লাহর কি কাজে আসবে ? হাদীসে কুদসীতে এসেছে ,” আল্লাহ বলছেন, “হে  মানুষ এবং জিন! তোমরা শুনে নাও তোমাদের সবাই যদি সবচেয়ে বিশুদ্ধ হৃদয়ের অধিকারী হয়ে যাও তাহলে আমার রাজত্বের কিছুই বৃদ্ধি হবে না । যদি তোমরা সবাই সবচেয়ে পাপী হৃদয়ের অধিকারীও হয়ে যাও তাহলে আমার রাজত্বের কিছুই বৃদ্ধি হবে না । তোমাদের সবার চাওয়াও যদি পূরন করে দেই, তাহলেও আমার কাছে যা আছে তার কিছুই ফুরাবে না ।
[http://bit.ly/2dQE4XX ]


আমার কোনকিছুরই প্রয়োজন নেই তাঁর। কোনকিছুরই প্রয়োজন নেই । রাজাদের রাজা তিনি, বাদশাহদের বাদশাহ ।  তারপরেও আল্লাহ আমাকে এতোটা ভালোবাসেন , আমাকে ক্ষমা করে দেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন, আমার জন্য আরশের ওপর থেকে প্রতি রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন , আমার জন্য জান্নাতে এত এত নিয়ামত প্রস্তুত করে রেখেছেন ।

আর কতকাল  এই আল্লাহর সঙ্গে  দস্যুতা করে বেড়াবো ? আর কতকাল এই  আল্লাহকে ভুলে থাকবো ? আর কতকাল  নিজের নফসের কাছে পরাজিত হব?

আল্লাহর স্মরনে অন্তর বিগলিত হবার সময়  কি এখনো আসে নি  ?

আবু বকর (রাঃ) ছিলেন,  নবীদের (আঃ) পর এই জমীনের বুকে হেঁটে বেড়ানো সবচেয়ে পুন্যবান মানুষ । আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর কাছে বেশ   কয়েকবার জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন তিনি । তারপরেও সলাতে আল্লাহর ভয়ে তিনি কাঁদতেন । উমারের (রাঃ) মতো ক্ষ্যাপাটে লোকও সলাতে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে শিশুর মতো কাঁদতেন । উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) তো কাঁদতে কাঁদতে নিজের দাড়ি ভিজিয়ে ফেলতেন । দুইজনেই দুনিয়াতে থাকতে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন ।
আমি কি বিশাল এক পাপী।  সন্ত্রাসী , আল্লাহদ্রোহী । তারপরেও আমার চোখ শুষ্ক ।

 অভিশপ্ত আমার দু’চোখ।
 অভিশপ্ত ।

উঠো, হে পাপাত্মা উঠে দাঁড়াও তোমার রব্বের সামনে নতমুখে । সব জানেন তিনি , সব । গোপনে রাতের আঁধারে একা একা তুমি যা করেছিলে সব জানেন তিনি । তারপরেও তিনি অপেক্ষা করে আছেন তোমার জন্য ।তিনি তোমাকে তাঁর সামনে নতমুখে দেখতে চান ।  তোমাকে ক্ষমা করে দিয়ে তিনি তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন । আহ! জান্নাতে ।

হে পাপাত্মা,  উঠে দাঁড়াও । আর একবার তোমার রব্বকে কথা দাও তুমি ভালো হয়ে যাবে । শিশুর মতো অঝোরে কাঁদো , এই চোখের পানি তোমার রব্বের কাছে সব চাইতে প্রিয় ।
 কাঁদো হে পাপাত্মা  কাঁদো ।











 















Tuesday, October 25, 2016

“পাঠক, সাবধান! ভয়ের জগতে প্রবেশ করছ তুমি!!”

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম । 



পাঠক, সাবধান!
ভয়ের জগতে প্রবেশ করছ তুমি!!”
.
অপ্রত্যাশিতভাবে অনির্ধারিত কালের জন্য ছুটি পাওয়া গেছে। নানা কারনে নজরদারী নেই, জবাবদিহিতা নেই। চিন্তাহীন এবং আনন্দময় একটা সময়। আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগের কথা। সকাল নটার মতো বাজছে। রোদ মাথায় নিয়ে হাকডাক করতে করতে ওয়ার্কাররা বাসার সামনের আন্ডার-কন্সট্রাকশান বিল্ডিং-এর ছাদ ঢালাইএর কাজ করছে। নাস্তা শেষে এক তলার সামনের বারান্দাতে গল্পের বই নিয়ে বসলেও পুরোটা মনোযোগ বইয়ের দিকে নেই। পড়া ফেলে মাঝে মাঝেই এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। পাহাড়ী এলাকায় বাসা। কিংবা বলা যায় পাহাড় কেটে বানানো আবাসিক এলাকা। বারান্দার ডান দিক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের খন্ডিত ছিটেফোঁটা।
.
বিক্ষিপ্ত ভাবে এদিক ওদিক তাকাবার সময় খেয়াল হল বারান্দার পাশে পাহাড়ের খন্ডিত ছিটেফোটার অংশে দাড়ানো কেউ একজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বই থেকে পুরোপুরি মাথা না উঠিয়ে আড়চোখে তাকালাম। সমবয়েসী একটা ছেলে। জীর্ন-মলিন পোশাক। সম্ভবত পাতা কুড়োতে এই দিকে আসা। মনে হল আমার চাইতে হাতে ধরা বইয়ের প্রতিই দর্শনার্থীর মনোযোগ বেশি। আড়চোখে ছেলেটাকে বার দুয়েক দেখে নিয়ে কায়দা করে বইটাকে ঘুরিয়ে ধরলাম যাতে ছেলেটা পুরো প্রচ্ছদটা দেখতে পায়। মনে মনে এক গাল হেসে নিলাম। স্বাভাবিক। কেনার সময়ই বইটার প্রচ্ছদে চোখ আটকে গিয়েছিল। বইটার গল্প নিয়ে আমি সন্দিহান ছিলাম। তবুও বলা যায় প্রচ্ছদের আকর্ষনেই অন্যান্য বইগুলোকে ফেলে এ বইটাকে বেছে নেওয়া। মনে মনে বারকয়েক নিজের পিঠ চাপড়ে দিলাম। কাজ ফেলে সমবয়েসী একটা ছেলে আমার বইয়ের প্রচ্ছদের দিকে তাকিয়ে থাকা নিঃসন্দেহে আমার সিদ্ধান্তের যথার্থতার অকাট্য প্রমান।
.
বইটা ছিল সেবা প্রকাশনীর জনপ্রিয় কিশোর হরর সিরিযের। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে এক্স-ফাইলস, গুসবাম্পস, রসওয়েল সহ হরর/থ্রিলার/সায়েন্স ফিকশান জাতীয় বিভিন ওয়েস্টার্ন টিভি সিরিয ও সিনেমার জনপ্রিয়তার সময়ে শুরু হয়েছিলকিশোর হররসিরিযের। সেবা প্রকাশনীর নিয়মিত পাঠকদের কাছে, বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়াতিন গোয়েন্দাপাঠকদের কাছে খুব দ্রুতই জনপ্রিয় ওঠে কিশোর হরর সিরিয। হরর সিরিযের জনপ্রিয়তার প্রভাবে কিছুদিন তিন গোয়েন্দা সিরিয থেকেওকিশোর চিলারনামে কিছু বই প্রকাশ করা হয়। আমার হাতে ধরা বইটার নাম ছিল বৃক্ষমানব। প্রচ্ছদে ছিল সবুজ রঙের বিকৃত বিকট এক মুখের ছবি। ৯৭ এ প্রকাশিতবৃক্ষমানবছিল সেবা-র কিশোর হরর সিরিযের প্রথম দিকের বই এবং আমাদের (আমার ও আপুর জয়েন্ট ভেনচার) কেনা কিশোর হরর সিরিযের প্রথম বই। লেখকের নাম, টিপু কিবরিয়া।
.
.
.
সেবার কিশোর হরর সিরিয আর সিরিযের লেখকের নাম নানা কারন প্রায় ভুলতে বসেছিলাম। বই পড়ার নেশা দীর্ঘদিন ভোগালেও ইংরেজি গল্প আর টিভি-শোর মধ্যম মানের নকল পড়ার চাইতে সোর্স ম্যাটেরিয়াল পড়াটাই বেশি লজিকাল মনে হত। এছাড়া স্কুলের দিনগুলোতে সম্পূর্ণ অবসর সময়টা বইয়ের জন্য বরাদ্দ থাকলেও সময়ের সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে বইয়ের জন্য বরাদ্দটা কমতে থাকে। টিপু কিবরিয়ার বিস্মৃতপ্রায় নামটা মনে করিয়ে দেয় ২০১৪ এর জুন থেকে অগাস্ট পর্যন্ত প্রকাশিত বেশ কিছু নিউয রিপোর্ট। প্রায় দুমাস ধরে প্রকাশিত এসব রিপোর্টের সারসংক্ষেপ পাঠকের জন্য এখানে তুলে ধরছি।
.
আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফির ভয়ঙ্কর একটি চক্র বাংলাদেশে বসেই দীর্ঘ নয় বছর পথশিশুদের ব্যবহার করে পর্নো ভিডিও তৈরি করে আসছিল। আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ(সিআইডি)। ২০১৪ এর ১০ জুন ইন্টারপোলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিশু পর্ণোগ্রাফি তৈরির দায়ে সিআইডি গ্রেফতার করে টি আই এম ফখরুজ্জামান ও তার দুই সহযোগীকে। সিআইডির পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম জানান, এ চক্র আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ছেলেশিশুদের দিয়ে পর্নো ছবি তৈরি করতো। এ চক্রের মূল হোতা টি আই এম ফখরুজ্জামান টিপু কিবরিয়া নামে অধিক পরিচিত। তার বাইরের পরিচয় তিনি দেশের একটি খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থার কিশোর থ্রিলার ও হরর সিরিজের লেখক। এছাড়া তার বেশ কিছু শিশুতোষ গল্প উপন্যাসের বইও রয়েছে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে এখন তার অন্ধকার জগতের পরিচয়ই সামনে চলে এসেছে।
.
১৯৯১ সাল থেকে ১০ বছর টিপু সেবা প্রকাশনীর কিশোর পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ২০০৩ সাল থেকে ফ্রি-ল্যান্স আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গড়ে তোলেন একটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটিও। রাজধানীর মুগদায় তার একটি স্টুডিও রয়েছে। এ সময় তার তোলা ছেলে পথশিশুদের স্থির ছবি ইন্টারনেটে বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটারম ফ্লিকারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করতেন। এই ছবি দেখে সুইজারল্যান্ড ও জার্মানির পর্নো ছবির ব্যবসায়ীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে নগ্ন ছবি পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। বিনিময়ে টাকারও প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাবে রাজি হয় টিপু। ফুঁসলিয়ে ও টাকার বিনিময়ে পথশিশুদের সংগ্রহ করে নগ্ন ছবি তুলে পাঠাতে শুরু করেন।
.
কিছু ছবি পাঠানোর পরই পর্নো ছবি পাঠানোর প্রস্তাব দেয়া হয় তাকে। শুরু হয় এই পর্নো ছবি (ভিডিও) তৈরির কাজ। সময়টা ২০০৫ সাল। নুরুল আমিন ওরফে নুরু মিয়া, নুরুল ইসলাম, সাহারুলসহ কয়েকজনের মাধ্যমে বস্তিসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ছিন্নমূল ছেলে শিশুদের সংগ্রহ করেন টিপু। মুগদার মানিকনগরের ওয়াসা রোডের ৫৭/এল/২ নম্বর বাড়ির নিচতলায় দুই রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে জমে ওঠে ফ্রি-ল্যান্স ফটোগ্রাফির আড়ালে পথশিশুদের দিয়ে পর্নো ছবি নির্মাণ ও ইন্টারনেটে বিদেশে পাঠানোর রমরমা ব্যবসা। নয় বছরে কমপক্ষে ৫০০ শিশুর পর্ণোগ্রাফিক ভিডিও তৈরি করে টিপু ও তার সহযোগীরা। ৮-১৩ বছরের এসব পথশিশুদের ৩০০-৪০০ টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে এ কাজে ব্যবহার করা হতো।
.
টিপু এবং তার ওই সহযোগীরা শিশুদের সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হতেন। আর বেশির ভাগই এসব ভিডিও করতেন টিপু নিজেই। একপর্যায়ে এই জঘন্য অপরাধ টিপুর নেশা ও পেশায় পরিণত হয়ে যায়। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে টিপু বলেছেন, তিনি পর্নো ছবি তৈরি করে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের তিন ব্যক্তির কাছে পাঠাতেন। এঁদের একেকজনের কাছ থেকে প্রতি মাসে তিনি ৫০ হাজার করে দেড় লাখ টাকা পেতেন। তবে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি জানিয়েছে, টিপু কিবরিয়া তাঁর তৈরি পর্নো ছবি ১৩টি দেশের ১৩ জন নাগরিকের কাছে পাঠাতেন। এসব দেশের মধ্যে আছে কানাডা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, মধ্য ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। তদন্তে আরো জানা গেছে বেশির ভাগ ছবি ও ভিডিও পাঠানো হতো জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে। এরপর সেখানকার ব্যবসায়ীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসব পর্নো ছবি বিক্রি করতো। প্রতিটি সিডির জন্য ৩শথেকে ৫শডলার পেতেন টিপু। এই টাকা অনলাইন ব্যাংকিং ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে টিপুর কাছে পাঠানো হতো।
.
টিপুর মাধ্যমে শিশু পর্নো ছবি বিক্রির দুই হোতা বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। চলতি বছরের প্রথম দিকে জার্মানির এক পর্নো ছবি বিক্রেতা বাংলাদেশে এসেছিলেন। আর ২০১২ সালে আসেন সুইজারল্যান্ডের আরেক পর্নো বিক্রেতা। তারা ওঠেন ঢাকার আবাসিক হোটেলে। সে সময় টিপু তাদের কাছে ছেলে শিশু পাঠান। তারা ওই শিশুদের নিয়ে বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হন। এজন্য টিপু এবং তার সহযোগীরা পেয়েছেন ৮ হাজার ডলার। 

Image result for stop child porn
.

ইন্টারপোলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১০ ও ১১ জুন খিলগাঁও, মুগদা এবং গোড়ানে অভিযান চালিয়ে টিপু কিবরিয়া এবং তার তিন সহযোগী নুরুল আমিন, নুরুল ইসলাম ও সাহারুলকে গ্রেফতার করে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম টিম। স্টুডিওতে আপত্তিকর অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ১৩ বছরের এক শিশুর সাথে টিপুর সহযোগী নুরুল ইসলানকে। টিপুর খিলগাঁওয়ের তারাবাগের ১৫১//৪২ নম্বর বাড়ির বাসা ও স্টুডিও থেকে শতাধিক পর্নো সিডি, আপত্তিকর শতাধিক স্থির ছবি, ৭০টি লুব্রিকেটিং জেল, ৪৮ পিস আন্ডারওয়ার, স্টিল ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা, কম্পিউটার হার্ডডিস্ক, সিপিইউ, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
.
http://bit.ly/2atUZJi
http://bit.ly/2aQzPe9
http://bit.ly/2atZg5N
http://bit.ly/2aPjZjN
http://bit.ly/2aPjTsf
http://bit.ly/2aPkiuM
http://bit.ly/2auZpmn
http://bit.ly/2atZFVN
.
টিপু কিবরিয়ার ফ্লিকার লিঙ্ক - http://bit.ly/2b1ZXiu
টিপু কিবরিয়ার ব্লগ (সামওয়্যার ইন ব্লগ) লিঙ্ক - http://bit.ly/2aHYxuv
.
উপরের তথ্যগুলো ভয়ঙ্কর। তবে বাস্তব অবস্থা এর চেয়ে লক্ষগুন বেশি ভয়ঙ্কর। টিপু কিবরিয়ারা একটা বিশাল নেটওয়ার্কের ছোট একটা অংশ মাত্র। বিশ্বব্যাপী চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি ও পেডোফাইল নেটওয়ার্কের ব্যাপ্তি, ক্ষমতা ও অবিশ্বাস্য অসুস্থ অমানুষিক নৃশংসতার প্রকৃত চিত্র এতোটাই ভয়াবহ যে প্রথম প্রথম এটা বিশ্বাস করাটা একজন ব্যাক্তির জন্য কঠিন হয়ে যায়। আর একবার এ অসুস্থতা ও বিকৃতির বাস্তবতা, মাত্রা, প্রসার, ও নাগাল সম্পর্কে একবার জানার পর এ ভয়াবহতাকে মাথা থেকে দূর করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের চারপাশের বিকৃত অসুস্থ পৃথিবীটার এ এমন এক বাস্তবতা যা সম্পর্কে জানাটাই একজন মানুষের মনকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এ এমন এক অন্ধকার জগত যাতে মূহুর্তের জন্য উকি দেওয়া একজন মানুষকে আমৃত্যু তাড়া করে বেড়াতে পারে।
.
টিপু কিবরিয়ার লেখা কিশোর হরর সিরিযের বইগুলোর ব্যাক কাভারে সবসময় দুটা লাইন দেয়া থাকতো – “পাঠক, সাবধান! ভয়ের জগতে প্রবেশ করছ তুমি!!” এ লাইনদুটো কিশোর হরর সিরিযের ট্যাগলাইনের মতো ছিল। সেবার বইগুলোর পাতায় উঠে আসা অন্ধকারের কল্পিত গল্পগুলোর জন্য লাইনদুটোকে অতিশয়োক্তি মনে হলেও, যে অন্ধকারে বাস্তবর জগতের চিত্র তুলে ধরতে যাচ্ছি তার জন্য এ লাইনদুটোকে কোনক্রমেই অত্যুক্তি বলা যায় না। তাই টিপু কিবরিয়াকে দিয়ে যে গল্পের শুরু সে গল্পের গভীরে ঢোকার আগে টিপুর ভাষাতেই সতর্ক করছি
.
পাঠক, সাবধান!
ভয়ের জগতে প্রবেশ করছ তুমি!!”
.
.
.
টিপু কিবরিয়াকে যদি ম্যানুফ্যাকচারার হিসেবে চিন্তা করেন তবে তার বানানো শিশু পর্ণোগ্রাফির মূল ডিস্ট্রিবিউটার এবং ব্যবহারকারীরা হল পশ্চিমা বিশেষ করে ইউরোপিয়ানরা। শুধুমাত্র চোখের ক্ষুধা মেটানোয় তৃপ্ত না হয়ে টিপুর এ ইউরোপিয়ান ক্রেতাদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশে ঘুরে গেছে। কিছু ডলারের বিনিময়ে টিপু কিবরিয়া তার ইউরোপিয়ান ক্রেতাদের জন্য তৃপ্তির ব্যবস্থা করেছে। দুঃখজনক সত্য হল, পেডোফিলিয়া নেটওয়ার্ক ও চাইল্ড পর্ণোগ্রাফির বিশ্বব্যাপী ধারা এটাই। ঠিক যেভাবে নাইকি-র মতো বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো কম খরচে তাদের পোশাকের চাহিদা মেটানোর জন্য ম্যানুফাকচারিং এর কাজটাতৃতীয় বিশ্বেরদেশগুলোর কাছে আউটসোর্স করে, ঠিক তেমনিভাবে পশ্চিমারা বিকৃতকামীরা শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি এবং শিশুকামের জন্য শিশু সংগ্রহের কাজটা আউটসোর্স করে। টিপু কিবরিয়ার মতো এরকম এ ইন্ডাস্ট্রির আরো অনেক ম্যানুফ্যাকচারার ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে। তিনটি উদাহরন তুলে ধরছি-
.
.
রিচার্ড হাকল১৯৮৬ তে ব্রিটেনে জন্মানো হাকল তারনেশা ও পেশারবাস্তবায়নের জন্য বেছে নেয় দক্ষিন পূর্ব এশিয়াকে। লাওস, ক্যাম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ইন্ডিয়াতে পদচারনা থাকলেও হাকল তার মূল বেইস হিসেবে বেছে নেয় মালয়শিয়াকে। কুয়ালামপুরের আশেপাশে বিভিন্ন দারিদ্র দারিদ্রকবলিত অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীর মাঝে সক্রিয় খ্রিষ্টান মিশনারীদের সাথে সম্পর্কের কারনে সহজেই হাকল মালয়শিয়াতে নিজের জন্য জায়গা করে নেয়। কখনো ফ্রি-ল্যান্সিং ফটোগ্রাফার, কখনো ডকুমেন্টারি পরিচালক, কখনো ইংরেজী শিক্ষক, আর কখনো নিছক খ্রিষ্টান মিশনারী হিসেবে মালয়শিয়া সহ দক্ষিন এশিয়ার বিভিন্ন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিশুদের কাছাকাছি পৌছুতে সক্ষম হয় হাকল।
.
২০০৬ থেকে শুরু করে প্রায় ৮ বছরের বেশি সময় ধরে দক্ষিন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দরিদ্র শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন চালায় হাকল। তার নির্যাতনের শিকার হয় ৬ মাস থেকে ১৩ বছর বয়সী দুইশর বেশি শিশু। গ্রেফতারের সময় তার ল্যাপটপে পাওয়া যায় বিশ হাজারের বেশি পর্ণোগ্রাফিক ছবি। শিশু ধর্ষনের ভিডি এবং ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিক্রি করতো হাকল। ছবি ও ভিডিওর সাথে যোগ করতো বিভিন্ন মন্তব্য, ক্যাপশান। এরকম একটি ওয়েবপোষ্টে হাকল লেখে
পশ্চিমা মধ্যবিত্ত ঘরের শিশুদের চাইতে দরিদ্রদের শিশুদের পটানো অনেক, অনেক বেশি সহজ।
.
তিন বছর বয়েসী একটি মেয়ে শিশুকে ধর্ষনরত অবস্থা ছবির নিচে গর্বিত হাকলের মন্তব্য ছিল – “আমি টেক্কা পেয়ে গেছি! আমার কাছে এখন একটা ৩ বছরের বাচ্চা আছে যে কুকুরের মতো আমার আনুগত্য করে। আর এ নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো কেউ এখানে নেই!”
.
অন্যান্য শিশুকামীদের জন্য পরামর্শ এবং বিভিন্ন গাইডলাইন সম্বলিত"Paedophiles And Poverty: Child Lover Guide"” নামে একটি বইও লিখেছিল রিচার্ড হাকল। হাকলের স্বপ্ন ছিল দক্ষিন এশীয় গরীব কোন মেয়েকে বিয়ে করে একটি অনাথ আশ্রম খোলা যাতে করে নিয়মিত নতুন দরিদ্র শিশুদের সাপ্লাই পাওয়া যায় কোন ঝামেলা ছাড়াই। ২০১৪ সালে রিচার্ড হাকলকে গ্রেফতার করা হয়।
.
http://bit.ly/2ahsaVd
http://bit.ly/2azfNjo
http://bit.ly/2aMBJeb
http://bit.ly/2auZWEM
http://bit.ly/2aAOeXx
.
.
ফ্রেডি পিটসহাকলের জন্মের আগেই হাকলের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছিল ফ্রেডি পিটস। সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে ১৯৯১ পর্যন্ত প্রায় ১৭ বছর, গোয়াতে গুরুকুল নামে একটি অনাথ আশ্রম পরিচালনা করে ফ্রেডি। হাকলের মতো ফ্রেডিও ছিল ক্যাথলিক চার্চের সাথে যুক্ত। এলাকায় মানুষ তাকে চিনতো লায়ন ক্লাবের সিনিয়র সদস্য, নির্বিবাদী সমাজসেবকফাদার ফ্রেডিহিসেবে। টিপু কিবরিয়া এবং রিচার্ড হাকলের মতোই ফাদার ফ্রেডির আয়ের উৎস ছিল পেডোফিলিয়া এবং চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি। তার সাথে সম্পর্ক ছিল ব্রিটেন, হল্যান্ড, অ্যামেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের শিশুকামী সংগঠনের। ফাদার ফ্রেডি তার আশ্রমের শিশুদের ইউরোপিয়ান টুরিস্ট, বিশেষ করে সমকামী ইউরোপিয়ান পুরুষদের কাছে ভাড়া দিতেন। শিশুদের ধর্ষনের বিভিন্ন অবস্থার ছবি তুলে ইউরোপীয়ান ক্রেতাদের কাছে বিক্রিও করতো ফ্রেডি। নিজেও অংশগ্রহন করতো ধর্ষনে। বিশেষক্লায়েন্টদেরমনমতো শিশু সংগ্রহ করে তাদের ইউরোপে পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হতো ফ্রেডিরগুরুকুলথেকে। এভাবে প্রায় দুই দশক ধরে ফাদার ফ্রেডি গোয়াতে গড়ে তোলে এক বিশাল ইন্ডাস্ট্রি।
.
ফ্রেডির এসব কার্যকলাপের সাথে বিভিন্ন বিদেশী ব্যাক্তি এবং আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত এমন প্রমান থাকা সত্ত্বেও গোয়ার রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকার সর্বাত্বক চেষ্টা করে এ বিষয়গুলো চাপা দেয়ার। এমনকি প্রথম পর্যায়ে চেষ্টা করা হয়েছিল দুর্বল মামলা দিয়ে ফ্রেডিকে খালাস দেয়ার। খোদ রাজ্যের এটর্নী জেনারেল এবং ট্রায়াল জাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ফ্রেডির বিরুদ্ধে পাওয়া প্রমান ও নথিপত্র ধ্বংস করার চেষ্টার।
.
উচু মহলের এসব কূটকৌশলের সামনে রুখে দাড়ায় কিছু শিশু অধিকার সংস্থার এবং কর্মী। তাদের একজন শিলা বারসি। রাজ্য সরকার, মন্ত্রী, বিচারবিভাগ এবং মিডিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে ফ্রেডি পিটসের মামলার ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন শিলা। গ্রেফতারকালীন রেইডে ফাদার ফ্রেডির ফ্ল্যাটে পাওয়া যায় ড্রাগস, পেইন কিলার, এবং সিরিঞ্জের এক বিশাল কালেকশান। ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় ২৩০৫ টি পর্ণোগ্রাফিক ছবি। মামলার কারনে শিলা বাধ্য প্রতিটি ছবি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে। ফাদার ফ্রেডির ফ্ল্যাটে পাওয়া ২৩০৫ টি ছবিতে যে অন্ধকার অমানুষিক পৈশাচিকতার জগতকে তিনি দেখেছিলেন তার ভয়াবহ স্মৃতি আমৃত্যু তাকে তাড়া করে বেড়াবে বলেই শিলার বিশ্বাস।
.
ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শিলা বলেন -
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছবিটি ছিলে আড়াই বছর বয়েসী একটি মেয়ের। মেয়েটিকে ছোট ছোট হাত আর পা গুলো ধরে তাকে চ্যাংদোলা করে অনেকটা হ্যামকের মতো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল...একটা বিশালদেহী লোক...লোকটাকে...লোকটার শরীরের আংশিক দেখা যাচ্ছিল...বাচ্চাটাকে ধর্ষন করছিল। বাচ্চাটার কুঁচকানো চেহারায় ফুটে ছিল প্রচন্ড ব্যাথা আর শকের ছাপ। ছবি দেখেও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল বাচ্চাটা সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করছিল।
.
ছবিগুলো দেখার পর শিলা সিদ্ধান্ত নেন যেকোন মূল্যে ফ্রেডির সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার। ১৯৯২ সালে ফ্রেডি পিটসের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়, এবং ৯৬ এর মার্চে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাভগ্রত অবস্থায় ২০০- সালে ফ্রেডি পিটস মারা যায়।
.
http://bit.ly/2aQxJuW
http://ind.pn/2atVuD3
http://bit.ly/2atZDgG
http://bit.ly/2aN0QxZ
.
.
পিটার স্কালিপিটার স্কালির গল্পের মতো এতো বিকৃত, নৃশংস, এতোটা বিশুদ্ধ পৈশাচিকতার কাহিনী খুব সম্ভবত আমাদের এ বিকৃতির যুগেও খুব বেশি খুজে পাওয়া যাবে না। স্কালি অস্ট্রেলিয়ান। নিজ দেশে ব্যাবসায়িক ফ্রডের পর নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে চলে আসে ফিলিপাইনে। কিছুদিন রিয়েল এস্টেট ব্যবসার চেষ্টার পর মনোযোগ দেয় আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি বানানোয়। বেইস হিসেবে বেছে নেয় দারিদ্র কবলিত মিন্দানাওকে। গড়ে তোলে এক চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি সাম্রাজ্য।
.
টিপু কিবরিয়া, হাকল আর ফাদার ফ্রেডির মতো স্কালিও নিজেই ছিল, অভিনেতা, স্ক্রিপ্ট রাইটার ও পরিচালক। তবে বাকিরা শুধুমাত্র শিশুকামের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও, স্কালির বিকৃতিকে নিজে যায় আরেকটি পর্যায়ে। সে শিশুকামের সাথে মিশ্রণ ঘটায় টর্চারের। স্ক্লাইরর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভিডিওতে ধর্ষনের পাশাপাশি মারাত্বক পর্যায়ের টর্চার করা হয়, ১৮ মাস বয়েসী একটি মেয়েশিশুকে। ১২ ও ৯ বছরের দুটি মেয়েকে বাধ্য করা হয় ধর্ষন ও নির্যাতনে অংশগ্রহন করতে। যখন ভিডিও বন্ধ থাকতো তখন বন্দী এ মেয়ে দুটিকে স্কালি তার বাসায় বিবস্ত্র অবস্থায় কুকুরের চেইন পড়িয়ে রাখতো এবং তাদের বাধ্য করতো বাসার আঙ্গিনাতে নিজেদের কবর খুড়তে। পরবর্তীতে এদের একজনকে স্কালি হত্যা করে, এবং নিজের রান্নাঘরের টাইলসের নিচে মেয়েটির লাশ লুকিয়ে রাখে। মেয়েটিকে হত্যা করার ভিডিও স্কালি ধারন করে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিডিওটি বিক্রি করা হয়।
.
স্ক্লালির ভিডিওগুলো দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপিয়ান পেডোফাইল এবং চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি নেটওয়ার্কে। রাতারাতি স্কালি এবং তার সাইট পরিণত হয়সেলেব্রিটি কাল্ট-হিরোতে। শুরুতে তার ভিডিওগুলোর জন্য Pay-Per View Streaming অফার করলেও, চাহিদা ওবং জনপ্রিয়তা বাড়ার ফলে এক পর্যায়ে স্কালি লাইভ স্ট্রিমিং করা শুরু করে। ২০১৫ এর ফেব্রুয়াত্রিতে স্ক্লালি ও তার সহযোগী দুই ফিলিপিনী তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারী অস্ট্রেলিয়ান ও ফিলিপিনো পুলিশের ধারনা বিভিন্ন সময়ে পিটার কমপক্ষে ৮ জন শিশুর উপর যৌন ও শারীরিক নির্যাতন চালানোর ভিডিও ধারন করেছে। তবে প্রকৃত সংখ্যাটা আরো বেশি হতে পারে।
.
http://bit.ly/2ax6AuF
http://bit.ly/2ahqlHI
http://bit.ly/2aPkydq
http://bit.ly/2aMByzz
http://bit.ly/2azf9Co
.
.
.
.
টিপু কিবরিয়া, রিচার্ড হাকল, ফ্রেডি পিটস, পিটার স্কালি। ভিন্ন ভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে, তাদের অপরাধ এবং বিকৃতির মধ্যে বেশ কিছু যোগসূত্র বিদ্যমান। এরা সবাই শিকারের জন্য বেছে নিয়েছিল দারিদ্রপীড়িত এশিয়ান শিশুদের। এদের মূল অডিয়েন্স এবং ক্লায়েন্ট বেইস ছিল পশ্চিমা, বিশেষ করে ইউরোপিয়ান। আর এরা চারজনই চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি এবং গ্লোবাল পেডোফিলিয়া নেটওয়ার্কের সাপ্লাই চেইনের খুব ক্ষুদ্র একটা অংশ। খুব অল্প পুজিতে, এবং অল্প সময় এরা সক্ষম হয়েছিল বিশাল গ্লোবাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে কিংবা এধরনের নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হতে। এ দৃষ্টিকোন থেকে এ চারজনকে সফল উদ্যোক্তাও বলা যায়।
.
এ চার জন ধরা পড়েছে এটা মনে করে আমরা আত্বতৃপ্তি ভোগ করতেই পারি, কিন্তু বাস্তবতা হল একটা বিশাল মার্কেট, একটা বিপুল চাহিদা ছিল বলে, আছে বলেই এতো সহজে এ লোকগুলো তারা যা করেছে তা করতে সক্ষম হয়েছিল। আমাদের কাছে এ লোকগুলোর কাজ, তাদের বিকৃতি, তাদের পৈশাচিকতা যতোই অচিন্তনীয় মনে হোক না কেন বাস্তবতা হল পিটার স্কালি কিংবা টিপু কিবরিয়ারা এ অন্ধকার জগতের গডফাদার না, তারা বড়জোড় রাস্তার মোড়ের মাদকবিক্রেতা। একজন গ্রেফতার হলে তার জায়গায় আরেকজন আসবে।
.
২০১৪ তে রিচার্ড হাকলের গ্রেফতারের পর ২০১৫, সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হয় বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা শিশুকামী ও শিশুনির্যাতনকারী নেটওয়ার্কের হোতা ৭ ব্রিটিশ । ভয়ঙ্কর অসুস্থতায় মেতে ওঠা এই লোকেরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিশুদের উপর তাদের পৈশাচিক নির্যাতনে লাইভ স্ট্রিমিং বা সরাসরি সম্প্রচার করতো। বিশেষ অফার হিসেবে তারা লাইভ চ্যাটের মাধ্যমে অন্যান্য শিশুকামীদের সুযোগ দিতো ঠিক কিভাবে শিশুদেরকে নির্যাতন ও ধর্ষন করা হবে তার ইন্সট্রাকশান দেবার। এভাবে তারা অর্থের বিনিময়ে নিজেদের সহ-মুক্তচিন্তকদের আনন্দের ব্যবস্থা করতেন। ব্রিটেন জুড়ে এরকম আরো অনেক সক্রিয় নেটওয়ার্কের অস্তিত্বের প্রমান মিলেছে।
http://bit.ly/26aoSXO
.
ফ্রেডি পিটসের গ্রেফতারের পরও গোয়ার শিশুকাম ভিত্তিক টুরিস্ট ইন্ডাস্ট্রির প্রসার থেমে থাকেনি। ফাদার ফ্রেডির শূন্যস্থান পুরন করেছে অন্য আরো অনেক ফ্রেডি। তেহেলকা.কমের ২০০৪ এর একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় ১০,০০০ পেডোফাইল গোয়া থেকে ঘুড়ে যায়। গোয়ায় অবস্থানকালীন সময়ে প্রতিটি পেডোফাইল গড়ে আটজন শিশুর উপর যৌন নির্যাতন চালায়।
http://bit.ly/2aPkH0u
http://bit.ly/2aQxpfC
.
২০১৫ তে অস্ট্রেলিয়াতে গ্রেফতার হয় ম্যাথিউ গ্র্যাহ্যাম। ২২ বছর বয়েসী ন্যানোটেকনোলজির ছাত্র ম্যাথিউ নিজের বাসা থেকে গড়ে তোলে এক অনলাইন চাইল্ড পর্ণগ্রাফি এবং পেডোফিলিয়া সাম্রাজ্য। ম্যাথিউ নিজে কখনো সরাসরি যৌন নির্যাতনে অংশগ্রহন না করলেও সক্রিয় পেডোফাইলদের জন্য সে অসংখ্যা সাইট এবং ফোরাম হোস্ট করত। বিশেষভাবে শিশুদের উপর ধর্ষনের সাথেসাথে চরম মাত্রার শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও প্রমোট করা ছিল ম্যাথিউর স্পেশালিটি। ম্যাথিউর নেটয়ার্কের সাথে সম্পর্ক ছিল আরেক অস্ট্রেলিয়ান পিটার স্কালির।
http://bit.ly/2aSy25e
.
১৫-তেই গ্রেফতার হয় আরেক অস্ট্রেলিয়ান শ্যানন ম্যাককুল। সরকারী কর্মচারী শ্যানন কাজ করত সরকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডিলেইড চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে। এ সেন্টারের বিভিন্ন শিশুরা ছিল শ্যাননের ভিকটিম, এবং তাদের অধিকাংশ ছিল ৩-৪ বছর কিংবা বয়সী কিংবা তার চেয়েও ছোট। শ্যানন যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণের ভিডিও নিজের সাইট ও ফোরামের মাধ্যমে আপলোড ও বিক্রি করতো। খুব কম সময়েই শ্যাননের সাইট ও ফোরাম কুখ্যাতি অর্জন করে।
.
http://bit.ly/2ax9gbW
http://bit.ly/2aSBdtP
http://ab.co/1UpMm3Q
.
এভাবে প্রতিটি শূন্যস্থানই কেউ না কেউ পূরন করে নিয়েছে। টিপু কিবরিয়ার রেখে যাওয়া স্থানও যে অন্য কেউ দখল করে নেয় নি এটা মনে করাটা বোকামি। আমরা জানতে পারছি না হয়তো, কিন্তু যতোক্ষন পর্যন্ত চাহিদা থাকবে ততোক্ষন যোগান আসবেই। সহজ সমীকরণ। ইকোনমিক্স ১০১। ২০০৬ এ প্রকাশিত ওয়ালস্ট্রীট জার্নালে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী চাইল্ড পর্ণোগ্রাফিতে প্রতিবছর লেনদেন হয় ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এটা ২০০৬ এর তথ্য। গত দশ বছরে মার্কেটে এসেছে হাকল, স্কালি, শ্যানন, গ্র্যাহামের মতো আরো অনেকউদ্যাোক্তা”, বেড়েছে মার্কেটের আকার। ২০১১ সালের একটি রিসার্চ অনুযায়ী ২০০৮ থেকে ২০১১, এ তিনবছরে অনলাইনে চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি সংক্রান্ত ইমেজ এবং ভিডিও বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৭৭৪%
http://on.wsj.com/2aAOh5I
http://bit.ly/2aPkxpT
.
ইন্ডেক্সড ইন্টারনেট বা সাধারনভাবে ইন্টারনেট বলতে আমরা যা বুঝি তার তুলনায় ডিপওয়েব প্রায় ৫০০ গুন বড়। এ ডিপওয়েবের ৮০% বেশি ভিযিট হয় শিশুকাম, শিশু পর্ণোগ্রাফি এবং শিশুদের উপর টর্চারের ভিডিও ইমেজের খোজে।
http://bit.ly/2aQyq7p
.
.
বিষয়টার ব্যাপকতা একবার চিন্তা করুন। এ বিকৃতির প্রসারের মাত্রাটা অনুধাবনের চেষ্টা করুন। পৃথিবীতে আর কখনো এধরনের বিকৃতি দেখা যায় নি এটা বলাটা ভুল হবে। পম্পেই, বা গ্রীসের কামবিকৃতির কথা আমরা জানি, আমরা জানি সডোম আর গমোরাহর ধ্বংসপ্রাপ্ত সম্প্রদায় কওমে লূতের কথা। কিন্তু বর্তমানে আমর যা দেখছি এ মাত্রার বিকৃতি ও তার বিশ্বায়ন, এ মাত্রার ব্যবসায়ন, এ ব্যাপ্তি মানব ইতিহাসের আগে কখনো দেখা গেছে বলে আমার জানা নেই। কেন এতো মানুষ এতে আগ্রহী হচ্ছে? কেন জ্যামিতিক হারে এ ইন্ডাস্ট্রি প্রসারিত হচ্ছে? কেন এতোটা মৌলিক পর্যায়ে মানুষের অবিশ্বাস্য বিকৃতি ঘটছে এ হারে? কেন মানুষের ফিতরাতের বিকৃতি ঘটছে? আর কেনই এরকম পৈশাচিক ঘটনার পরও এধরনের ইন্ডাস্ট্রি শুধু টিকেই থাকছে না বরং আরো বড় হচ্ছে? শ্যানন-স্কালি-টিপু কিরিয়াদের এ নেটওয়ার্কের গডফাদার কারা? কোন খুঁটির জোরে তারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোয়ার বাইরে?
.
একে কি শুধুমাত্র বিচ্ছিন কোন ঘটনা, কিংবা অসুস্থতা বলে দায় এড়ানো সম্ভব? সমস্যাটা কি চিরাচরিত কাল থেকেই ছিল এবং বর্তমান আধুনিক সভ্যতার যুগে এসে এর প্রসার বৃদ্ধি পেয়েছে? নাকি এর পেছনে ভূমিকা রয়েছে মিডিয়া ও পপুলার কালচারের? বিষয়টি কি মৌলিক ভাবে মানুষের যৌনতার মাঝে বিরাজমান কোন বিকৃতির সাথে যুক্ত? নাকি এ বিকৃতি আধুনিক পশ্চিমা দর্শনের যৌনচিন্তা এবং আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতার মৌলিক অংশ?

[ইন শা আল্লাহ চলবে]
লিখেছেন :Asif Adnan


Friday, October 14, 2016

সমকামীদের ভ্রান্ত দাবি ও নাস্তিকদের মিথ্যাচার (দ্বিতীয় পর্ব)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।

সমকামীদের ভ্রান্ত দাবি-২:   সমকামীদের ব্রেন বিষমকামীদের ব্রেন থেকে আলাদা


অভিজিত রায় তার ‘সমকামিতা: একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান’  বইয়ে আরেকটি ভুল গবেষণার কথা উল্লেখ করেছেন।


তিনি Dr. Simon LeVay এর একটা গবেষণার কথা বলেছেন যা কিনা পরবতীতে বিজ্ঞানী মহল প্রত্যাখ্যান করেছে |  Dr. Simon LeVay তার এক রিসার্চে বলেছেন যে বিষমকামী পুরুষের হাইপোথ্যালামাসের Cluster cell INAH-3 এর সাথে সমকামীদের হাইপোথ্যালামাসের Cluster cell INAH-3 এর পার্থক্য আছে আর তাই সমকামিতা জন্মগতভাবে লাভ করা সম্ভব। [১]

অথচ তার গবেষণা ছিল দুর্বল। তিনি যে সমকামীদের নিয়ে গবেষণা করেছিলেন তারা আবার এইডসের কারণে মৃত্যুবরণ করেছিল। তাই তার গবেষণার সাবজেক্টগুলোর শুদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। Dr. A. Dean Byrd , LeVay এর গবেষণার সমালোচনা করে বলেন--


" প্রফেসর Breedlove তারা গবেষণার সারাংশে বলেছেন যে, ব্রেন স্থির অঙ্গ নয়। এটি পরিবর্তিত হয় এবং ব্যবহারের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ায়তার রিসার্চ অনুযায়ী এটা বিশেষত যেন ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঘটে। তাই যখন কেউ একটা বিশেষ কাজ বার বার করতে থাকে তখন নির্দিষ্ট একটা নিউরাল পথ শক্তিশালী হয়।যেহেতু ব্রেন একটা ফিজিক্যাল অঙ্গ তাই যখন এই নিউরাল পথগুলো শক্তিশালী হয় তখন এটি ব্রেনের রসায়নে প্রতিফলিত হয় । যে বার বার বাস্কেটবল খেলে তার মস্তিষ্ক এর সাথে রকেট সাইন্স নিয়ে পড়াশুনা করা ব্যক্তির মস্তিষ্কের পার্থক্য থাকবে। তেমনিভাবে, একজন সমকামী ব্যক্তির ব্যবহারও তার মস্তিষ্কের গঠন পরিবর্তন করে দেয়। তাই LeVay এর মত স্টাডি যদি গ্রহণযোগ্যও হয় তাহলেও দেখা যাবে যে এই স্টাডি যা বলছে ব্রেন সম্পর্কে, তা বিজ্ঞান আগে থেকেই জানে" । [২]


অর্থাৎ LeVay এর স্টাডি নতুন কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি। অবশ্য ২০০১ সালে LeVay তার গবেষণার ব্যর্থতা স্বীকার করে বলেছেন--


" আমি যা পাই নি তা বলার প্রয়োজনবোধ করছি।আমি প্রমাণ করিনি যে, সমকামিতা জেনেটিক এবং আমি সমকামিতার জেনেটিক কোন কারণ বের করিনি । আমি প্রমাণ করিনি যে,  সমকামীরা জন্মগতভাবেই এইরকম যা মানুষ আমার কাজের ভুল ব্যাখ্যা করে বলে,  না আমি ব্রেনে কোন সমকামী কেন্দ্রে আবিষ্কার করেছি” । [৩]


অভিজিত রায়ের মত মানুষেরাই এভাবেই বিজ্ঞানের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আসছে। কি আর করার সমকামী নাস্তিকদের মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় তো নেই, সত্য যে তাদের পক্ষ নিবে না!


রেফারেন্সঃ
[১] Simon LeVay, The Sexual Brain (Cambridge, Mass.: The MITPress, 1993), p. xii.
[২] Dr. A. Dean Byrd and Stony Olsen, “Homosexuality: Innate and Immutable?” Regent University Law Review, Vol. 14, pp. 516-517. (Original footnotes omitted.)
[৩]  D. Nimmons, "Sex and the brain," Discover (March 1994), 64-71.


সমকামীদের ভ্রান্ত দাবি -৩:  Animals Do It, So It's Natural, Right?


সমকামীরা প্রায়ই এই দাবি করে যে "পশুরা যেহেতু সমকামী হতে পারে সেহেতু এটা ন্যাচারাল আর তাই মানুষের পক্ষেও সমকামিতা স্বাভাবিক!"
প্রথমত আমাদের এটা জানতে হবে যে, পশুদের মাঝে কোন সমকামিতার প্রবৃত্তি (Homosexual Instinct) নেই। Antonio Pardo, Professor of Bioethics at the University of Navarre, Spain  পশুদের সমকামী হওয়ার বিষয়টিকে অস্বীকার করে বলেন


"সঠিকভাবে বলতে গেলে, পশুদের মাঝে সমকামিতার কোন অস্তিত্ব নেই। বংশবৃদ্ধি করার প্রবৃত্তি থেকে পশুরা সবসময় বিপরীত লিংগের প্রতি আকৃষ্ট হয় ।  তাই একটা পশু কখনোই সমকামী হতে পারে না” [১]


আসলে সমকামীদের এই দাবিটা খুবই হাস্যকর ও অযৌক্তিক ।  সমকামীদের এই দাবি করার আগে বোঝা উচিৎ ছিল যে Human Nature আর Animal Nature এক না। Animal Nature এর সাথে Human Nature এর তুলনা করে তারা প্রমাণ করল যে তারা বিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ । পশুদের মাঝে হোমোসেক্সুয়াল বিহেভিয়ার দেখে তারা ভেবেছে যে "মানুষ এই কাজ করলে কি সমস্যা?"
সমস্যা আছে ৷
প্রথমত,  তাদের এই তুলনা করাই ঠিক হয় নায় ।  আচ্ছা সমকামীদের জিজ্ঞেস করছি,  পশুদের মাঝে "filicide" ও "cannibalism" নামক বিহেভিয়ার দেখা যায় ।  flicide হয় যখন একজন পশু তার সন্তানকে খেয়ে ফেলে আর cannibalism হয় যখন কোন পশু তাদের নিজ প্রজাতির কোন সদস্যকে খেয়ে ফেলে । উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিড়ালদের মাঝে flicide বৈশিষ্ট্যটি দেখা যায় Sarah Hartwell বিষয়টি এইভাবে ব্যাখ্যা করেছেন----


" বেশিরভাগ স্ত্রী বিড়াল তাদের বাচ্চাদের ক্ষতি না করার জন্য নিজেদেরকে "play mode" ও "hunt mode" এ নিয়ে যেতে পারে। পুরুষ বিড়ালে "hunt mode" বন্ধ করার প্রক্রিয়াটা অসম্পূর্ণ এবং যখন তারা খেলার মাধ্যমে উত্তেজিত হয়ে যায় তখন তাদের শিকার করার প্রবৃত্তিটা জেগে উঠে এবং তারা তাদের বাচ্চাদের মেরেও ফেলতে পারে" [২]


মূলত বিড়ালের ছানাদের আচরণের কারণে পুরুষ বিড়াল তাদেরকে শিকার ভেবে ভুল করে এবং এর ফলে পুরুষ বিড়ালের শিকার করার প্রবৃত্তি জেগে  উঠে ।
আর cannibalism এর বিষয়টি Iran Nature and Wildlife Magazine এইভাবে ব্যাখ্যা করেছে ---


"Cannibal is an animal which feeds on others of its own species........ Around 140 different species show cannibalistic tendencies under various conditions." [ ৩]


পশুদের  বিভিন্ন  প্রজাতিকে এই দুইটা কাজ করতে করতে দেখা যায় তো এখন কি এই কাজ করা আমাদের জন্যও স্বাভাবিক হবে ? নরখাদকদের তাহলে মানুষ খাওয়ার বৈধতা দিয়ে দিন সমকামী + নাস্তিকরা হয়তো ভবিষৎ এ বলবে, " জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার নিমিত্তে আমাদের বেশি বেশি মানুষ খাওয়া উচিৎকারণ প্রাণীরা এই কাজ করে !  " Black Widow মাকড়সা যেমন শারীরিক সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলে পুরুষ মাকড়সাকে খেয়ে ফেলে তেমনি সমকামী নাস্তিকরাও হয়তো নিজেদের শয্যাসংগীকেও খাওয়ার দাবি জানাবে !


এইসব দাবি যেমন হাস্যকর লাগছে সমকামিতা বৈধ করার দাবিটিও এইরকম ।  আর কে নাকি সমকামিতাকে বৈধতা দেয়ার পার্থনোজেনেসিসকে টেনে এনেছে ।  সে পার্থনোজেনেসিসের কথা টেনে এনে যে কত বড় বোকামি করেছে তা নিশ্চয় এখন বুঝতে পেরেছেন । সমকামী + নাস্তিক ভায়াদের বুঝা উচিৎ Human Sex ও  Animal Sex  এক জিনিস না । Ethologist Cesar Ades, Human Sex ও  Animal Sex   এর পার্থক্য গুলো বোঝাতে গিয়ে বলেছেন –


"Human beings have sex one way, while animals have it another. Human sex is a question of preference where one chooses the most attractive person to have pleasure. This is not true with animals. For them, it is a question of mating and reproduction. There is no physical or psychological pleasure...... The smell is decisive : when a female is n heat, she emits a scent, known as pheromone. This scent attracts the attention of the male, and makes him want to mate. This is sexual intercourse between animals. It is the law of nature. "[৩]


"মানুষ যৌন সঙ্গম করে একভাবে আর পশুরা করে আরেকভাবে মানুষের সঙ্গম হয় পছন্দের ভিত্তিতে যেখানে একজন সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যক্তিকে পছন্দ করে সঙ্গম করার জন্য। এটা পশুদের ক্ষেত্রে সত্য নয়। তাদের জন্য সঙ্গম করার লক্ষ্য হল বংশবৃদ্ধি করা। শারীরিক বা মানসিক সুখ অর্জন করা তাদের সঙ্গমের লক্ষ্য নয়। " [৪]


Cesar Ades এর দারুণ ব্যাখ্যার পর আর এই বিষয়ে আর কিছু বলার প্রয়োজনবোধ করছি না ।
এখন আসি পশুদের Homosexual behaviour এর বিষয়ে । আগেই বলেছি যে পশুদের সমকামিতার প্রবৃত্তি নেই। পশুদের মাঝে Homosexual behaviour দেখা যায় সেটা "filicide" ও "cannibalism এর মতই এবনরমাল। কারণ পশুরা অনেক সময় যৌন সঙ্গী নির্ধারণ করতে গিয়ে ভুল করে।

কারণ পশুরা আমাদের মত বুদ্ধিমান প্রাণী না এরা যৌন সঙ্গী নির্ধারণ করতে স্বাদ, গন্ধ স্পর্শ ও শব্দ ব্যবহার করে আমাদের মত বুদ্ধি ব্যবহার করে না । উদাহরণ হিসেবে কুকুরের কথা বলা যায় । কোন male dog যদি কোন estrus female dog এর সাথে সঙ্গম করে আসে তাহলে সে male dog অন্য  male  dog কে আকর্ষণ করে , কারণ estrus female dog  এর সাথে সঙ্গম করার ফলে male dog , estrus female dog এর scent  বহন করে যা অন্যান্য male dog দের বিভ্রান্ত করে । কুকুর নিজেরা কিন্তু সমকামী না, তাদের যৌন সংগী নির্ধারণ করার দুর্বলতার কারণেই তারা একই লিংগের কুকুরের দ্বারা আকৃষ্ট হয় যা এবনরমাল বিহেভিয়ার হিসেবেই গণ্য হয়।
কুকুরের ঘটনাটা এইভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে …


"Not surprisingly, the smell of a female dog in heat can instigate a frenzy of mounting behaviors. Even other females who are not in heat will mount those who are Males will mount males who have just been with estrus females if they still bear their scent.... And males who catch wind of the estrus odor may mount the first thing (or unlucky person) they come into contact with." [৫]
তাই পশুদের এইরকম আচরণ দেখে পশুকে সমকামী বলে ভারডিক্ট দেয়া হল চরম পর্যায়ের বোকামি৷
আরো ব্যাখ্যা দিতে পারি । কিন্তু যা দিয়েছি ,তাই যথেষ্ট মনে হয়েছে । আশা করি সবাই বুঝতে পেরেছেন । না  বুঝতে পারলে কোটেশনগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
সবশেষে সমকামী ও নাস্তিকদের একটা কথা বলব ---
"Irrational Animal Behavior is No Blueprint For Rational Man."
চলবে ইনশা আল্লাহ্‌ ……


#stand_aggainst_Lgbt_propaganda
#মিথ্যায়_বসত 
প্রথম পর্ব পড়ুন এখানে - http://lostmodesty.blogspot.com/2016/09/blog-post_29.html

লিখেছেন-  Farhad Hossain
লেখক Faridpur Medical College এ অধ্যয়নরত


তথ্যসূত্রঃ
[1]Sarah Hartwell, Cats that kill kittens
[2]cannibalism in animals (Our emphasis)
[3]]"Cachorro Gay?"
[4]Ibid. (Our emphasis.) |5|Frans B. M. de Waal, "Bonobo Sex and Society," Scientific American, Mar. 1995, pp. 82-88
[6]Antonio Pardo, "Aspectos mZdicos de la homosexualidad,"Nuestro Tiempo, Jul.-Aug. 1995,pp. 82-89



Sunday, October 9, 2016

চোরাবালি (তৃতীয় পর্ব)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।


আলফ্রেড কিনসে নামে কুখ্যাত এক সেক্স রিচার্‌সার ছিল আমেরিকাতে । লোকটা চল্লিশ  পঞ্চাশের দশকে এবং তার কিছু পরে সেক্স নিয়ে চরম ভুল ভাল কিছু গবেষণা করে।পাশ্চাত্যে চার্চের পতনের পর মানুষ ক্রমাগতই বস্তুবাদী হয়ে পড়ে । ইশ্বর, ধর্মের যায়গা দখল করে নেয়  বিজ্ঞান আর দর্শন  বিজ্ঞানকে নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা যাবে না , বিজ্ঞান যা বলবে তা চোখ বন্ধ করে মেনে নিতে হবে । তো তথাকথিত মুক্তমনা, বিজ্ঞানমনস্ক আলফ্রেড কিনসে যখন বিজ্ঞানের অপব্যবহারের মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে চমৎকার কিন্তু একাডেমিক্যালি একেবারেই অগ্রহনযোগ্য সব গবেষণা পত্র নিয়ে আসল তখন সমাজকে বাধ্য করা হল এগুলো মেনে নিতে । আলফ্রেড  কিনসের গবেষণাগুলো কাজে লাগিয়ে মুনাফা লুটতে হাজির হলো কুখ্যাত এক ইরোটিক ম্যাগাজিন, Sexuality Information and Education Council of the United States (SIECUS), শয়তানী সিস্টেমের এজেন্ডা বাস্তবায়নের শক্তিশালী এক হাতিয়ার হিসেবে পেল আলফ্রেড  কিনসের গবেষণাগুলো ।



সমাজের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হল চরমভাবে বিকৃত যৌনাচারগুলো  বলা হল, মানুষ যৌনতার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। এখানে ইশ্বর, সমাজ বা অভিভাবক কারো কোন হস্তক্ষেপ চলবে না । সে যা মন চায়  তা করতে পারবে । হস্তমৈথুন, এনাল সেক্স, ওরাল সেক্স, সমকামিতা,অযাচার,চাইলড সেক্স, পশুকামিতা সব কিছুকেই স্বাভাবিক করে ফেলার কার্যক্রম শুরু হল । আজকের পাশ্চাত্যের বেহায়াপনার শুরুটা শুরু হল এই ভন্ড গবেষকের হাত ধরে ।
(পরবর্তীতে ভন্ড আলফ্রেড কিনসের গবেষণা গুলো বিজ্ঞানী, চিকিৎসকদের কাছে একাডেমিক্যালি চরম মার খেয়েছিল । এগুলো নিয়ে  আমরা এক সময় খুব দীর্ঘ  আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ্‌)
এই  প্রতারক কিনসে চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকে কোমর বেঁধে নেমে পড়ে আমেরিকার ফিজিশিয়ান এবং আমেরিকান সমাজের সমালোচনা করতে ।আমেরিকান সমাজ সংকীর্ণমনা, মৌলবাদী প্রগতির পথে বাঁধা কারণ আমেরিকান সমাজে হস্তমৈথুন করাকে জঘন্য কাজ হিসেবে দেখা হয় । সে 
ফিজিশিয়ানদের  তুলোধুনো করে ছাড়ে কারণ তাঁরা স্কুল গুলোতে বাচ্চাদের শেখান হস্তমৈথুন ক্ষতিকর ।
কিনসের নিজের ভাষায় , “ফিজিশিয়ানরা মাস্টারবেশনের ক্ষতিকারতা নিয়ে হাইস্কুলের বাচ্চাদের সামনে অনেক বকবক করে ; তারা দাবী করে বৈজ্ঞানিক ভাবেই প্রমানিত হস্তমৈথুন নার্ভাস ডিসঅর্ডার এবং নিউরোটিক ডিসটারবেন্স এর জন্য দায়ি। কিন্তু আসলে ঘটনা একটু অন্যরকম । তাদের  এই দাবীর স্বপক্ষে বিজ্ঞানের কিছুই করার নেই । তারা যে সমাজে বড় হয়ে উঠেছে সেই সমাজের নৈতিকতা বোধই  তাদেরকে হস্তমৈথুনকে ক্ষতিকর ভাবতে প্রভাবিত করেছে”
কিনসে চরম মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে জোর গলায় দাবী করে মাস্টারবেশনের কোন ক্ষতিকারতা নেই ।  তার এই মিথ্যা দাবীটাই সেক্স এডুকেশানের বই গুলোতে বার বার খুব বিশ্বাসযোগ্য ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং এটাকে ধ্রুব সত্য বলে মেনে নিতে বাধ্য করা হয়েছে ।
.
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ! অন্য কোন গবেষক নয়, আলফ্রেড কিনসে নিজেই নিজের থিওরিকে মিথ্যা প্রমাণিত করে একসময় । স্বেচ্ছায় নয় অবশ্য; বাধ্য হয়ে । কিনসে ছিল চরমমাত্রায় হস্তমৈথুনে আসক্ত। সে নিজের যৌনাঙ্গের ওপর ভয়াবহ  নির্যাতন নিপীড়ন চালায়, ফলে আক্রান্ত হয়  orchitis নামের এক লজ্জাজনক রোগে । কিনসের টেস্টিকলে অসহ্য ব্যাথা হতো । এই রোগের কারণে অকালেই কিনসে রিটার্ন টিকিট ছাড়াই পাড়ি জমায় জাহান্নামে  [১]
কিনসের গবেষণাগুলো দ্বারা পাশ্চাত্য ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় আগেই বলা হয়েছ । এই গবেষণাগুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনেকেই দাবী করেন হস্তমৈথুন শরীরের জন্য খুব উপকারী । হস্তমৈথুন প্রোটেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, এটা আপনাকে আরো পুরুষালী করে তোলে , দীর্ঘক্ষন বিছানায় পারফর্ম করতে সাহায্য করে আরো কত কি!
.
আমাদের এই চোরাবালি’ সিরিজের প্রথম দুই পর্বে আমরা তুলে ধরেছি মাস্টারবেশনে আসক্ত ভাইদের জীবন নষ্ট হয়ে  যাবার গল্পগুলো । এই পর্ব সহ সামনের কয়েকটা পর্বে আমরা বিজ্ঞান এবং সামাজিক গবেষণার সাহাজ্যে মাস্টারবেশনের ক্ষতিকারতা তুলে ধরার চেষ্টা করব যদি আল্লাহ্‌ তৌফিক দেন ।

হস্তমৈথুন তৈরি করবে নানা ধরণের যৌন জটিলতাঃ

আপনার যৌনজীবনকে বিষিয়ে তোলার জন্য এই এক হস্তমৈথুনই যথেষ্ট। আর যদি এর সাথে যোগ হয় পর্নোগ্রাফি, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। পাশাপাশি হাত ধরে চলা এই দুভাই আপনার জীবনকে লন্ডভন্ড করে দেবে, বুকের যমীনে সুখ স্বপ্নের যে ক্ষেত আপনি বহু যত্নে গড়ে তুলেছিলেন তা নিমিষেই পুড়িয়ে দেবে চৈত্রের খরতাপের মতোই।
.
অকাল বীর্যপাত বা Premature Ejaculation এর অন্যতম কারণ এই হস্তমৈথুন। হস্তমৈথুন করার সময় আপনি চেষ্টা করতে থাকেন কতো তাড়াতাড়ি চুড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছানো যায়, পাওয়া যায় শীর্ষসুখ। দেরি হলে ভালো লাগে না, অসহ্য বিরক্তি এসে ভর করে। এভাবে কিছুদিন হস্তমৈথুন করার পর আপনার মস্তিষ্ক বুঝে ফেলবে খুব তাড়াতাড়ি আপনি চুড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছাতে চাচ্ছেন। সে তখন এভাবেই নিজেকে প্রোগ্রাম করে নেবে। অল্প সময়েই আপনি শীর্ষসুখ পেয়ে যাবেন। স্ত্রীর সঙ্গে স্বাভাবিক অন্তরঙ্গতার সময়েও আপনার প্রোগ্রামড ব্রেইন অল্প সময়েই আপনাকে চুড়ান্ত মুহূর্তে পৌঁছে দেবে। আপনার স্ত্রী থাকবেন অতৃপ্ত।
.
হস্তমৈথুন আপনাকে যৌন মিলনের জন্য অযোগ্য, অক্ষম বানিয়ে দেবে। মেডিক্যাল সায়েন্সের ভাষায় একে বলা হয় Erectile Dysfunction (ED)European Federation of Sexology এর প্রেসিডেন্ট সহ আরো অনেক বিশেষজ্ঞের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে পর্নআসক্তি এবং হস্তমৈথুনের যুগলবন্দী Erectile Dysfunction এর অন্যতম কারণ।
Erectile Dysfunction এর ফলে যৌনমিলনের সময় আপনার লিঙ্গ (Penis)  উত্থিত হবেনা, যতোটুকু কাঠিন্য দরকার ততোটুকু হবে না,অথবা যতোসময় ধরে শক্ত থাকা প্রয়োজন ততো সময় ধরে ধাকবেনা। ফলশ্রুতিতে আপনি হারাবেন স্বাভাবিক যৌনমিলনের সক্ষমতা।[২,৩,৪]
হস্তমৈথুনের কারণে আপনি স্বাভাবিক যৌনক্রিয়ার প্রতি আগ্রহ হারাতে থাকবেন। ২০১৫ সালের একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী হস্তমৈথুন এবং পর্ন দেখার ফলে বিবাহিত পুরুষেরা, তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে অন্তরঙ্গতার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। স্ত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গতা তাদের কাছে একঘেয়ে লাগে। [৫]
 হস্তমৈথুনের কারণে Chronic penile lymphedemaনামের ঘিনঘিনে এক রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে । এই রোগে আক্রান্তদের লিঙ্গ কুৎসিত আকার ধারণ করে।  [৬]
.
দাম্পত্যজীবনে অশান্তিঃ
স্বাভাবিক যৌনমিলন যেখানে সুখী দাম্পত্যজীবন উপহার দেয়, ধুলো কাদামাটির এ পৃথিবীর বুকে জান্নাতী সুখের এক পশলা বৃষ্টি নামায় সেখানে, হস্তমৈথুন, পায়ু সংগম (Anal Sex), ওরাল সেক্স দাম্পত্যজীবনে মিশিয়ে দেয় জাহান্নামের ফ্লেভার। হতাশা,অতৃপ্তি,অশান্তি,ঝগড়াঝাঁটির অন্যতম প্রভাবক এই বিকৃত যৌনাচারগুলো। [৭,৮,৯]
Dr. Harry Fisch, যিনি Cornel University ‘Urrrology এবং Reproductive Medicine এর ক্লিনিকাল প্রফেসর,মাস্টারবেশনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য করেন,
ঘন ঘন মাস্টারবেশনের কারণে একজন মানুষ ইরেকশানজনিত (পেনিস শক্ত হওয়া বা উত্থান) সমস্যায় ভুগতে শুরু করবে। মাস্টারবেশনের সাথে সাথে দেখতে থাকলে একসময় যৌনমিলনের ক্ষমতায় সে হারিয়ে ফেলবে[১০]

.
অতিরিক্ত মাস্টারবেশন ও পর্ন ব্রেইনে ডোপামিনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং আসক্তির জন্ম দিতে পারেঃ 

ডোপামিন এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ যা এক স্নায়ুকোষ থেকে আরেক স্নায়ুকোষ স্থানান্তরিত হয়।আমাদের ব্রেইনে এর ভূমিকা কী সেটা নিয়ে 'মাদকের রাজ্যে' শিরোনামের লিখাতে [
১১] আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। হস্তমৈথুন করার পর আমাদের ব্রেইনে ডোপামিন নির্গত হয়, আমরা আনন্দ পাই। আরো  উদাহরণ হিসেবে বলা যায়  ড্রাগস নেওয়া,জুয়া খেলা,খাবার খাওয়া,দৈহিক মিলন ইত্যাদি ইত্যাদির কথা।আমরা যখন এইসবে মত্ত হই তখন আমাদের ব্রেইনে ডোপামিনের বন্যা বয়ে যায় এবং আমরা তৃপ্তি অনুভব করি।আর মাস্টারবেশনের ব্যাপারটা একটু স্পেশাল।মানে ধরুন একটা বাচ্চার হাতে বড়সড় ক্যাডবেরি ধরিয়ে দিলে বাচ্চার অবস্থা যেমন হয় ব্রেইনের অবস্থাও ঠিক তাই হয় যখন এর কারণে ডোপামিন নির্গত হয়।


এই কারণেই আমাদের অনেকেই এতে ড্রাগসের মতন আসক্ত।আমরা চাই বার বার সেই শিহরণ জাগানিয়া অনুভূতিটার স্বাদ পেতে। আর তাই শতোবার করলেও তা যথেষ্ট না।এভাবে ধীরে ধীরে আমাদের ব্রেইনের উপর ডোপামিনের চাঞ্চল্যকর প্রভাব আমাদের কাছে খুব স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।তাই নতুন উদ্দীপনা তৈরি হলেও আমাদের কাছে একসময় তা স্বাভাবিক বলেই মনে হয়।এই ক্যামিকালটা মানে ডোপামিন হল আসলে এমন এক উপাদান যে আপনাকে বলছে, যাও!মন চাচ্ছে যখন তখন একবারে ফাটায় দাও(উদ্দেশ্য হাসিল করেই ছাড়ো)।যৌন-ক্ষুধা,ঝুঁকি নেয়া,উদ্দীপনা,অনুপ্রেরণা,প্রত্যাশা ইত্যাদির সময় এমনটা ঘটে।ডোপামিনের ঘাটতির কারণে যে বিষয়গুলো নজরে আসে সেগুলো হলঃ যৌনক্ষুধা কমে যাওয়া,ঝুঁকি নেয়ার ভীতি কাজ করা,দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি,ঝাঁঝালো প্রতিক্রিয়া,মনোযোগ দেওয়াতে অক্ষমতা,সামাজিকতা,অনুপ্রেরণা ও স্বাভাবিক প্রত্যাশার অভাব ইত্যাদি।আর ডোপামিনের স্বাভাবিক সঞ্চালন এসবের বিপরীত ঘটায়।মানসিক ও শারীরিকভাবে উৎফুল্ল করে তোলে।যারা পর্নের খোলস ত্যাগ করে বেরিয়ে এসেছে তারা এই পজিটিভিটির নির্ভেজাল সাক্ষী।[১২]
.
মাত্রাতিরিক্ত মাস্টারবেশন ডোপামিনের কার্যকারিতা নিঃশেষ করে দেয়ঃ  
আমাদের ব্রেইনে যারা ডোপামিনের উপস্থিতি আমাদের টের পাইয়ে দেয় তাদের বলে রিসেপ্টর।যখন নেশাসক্ত হয়ে কোন কাজ বারবার করা হয় তখন এই রিসেপ্টরগুলোর কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়।তখন ডোপামিনের নিঃসরণে আমাদের ব্রেইন আর আগের মত সাড়া দেয় না বা উদ্দীপ্ত হয় না।
.
তাই ধরেন,যে আগে অল্পকিছু দেখেই উদ্দীপ্ত হতো এবং মাস্টারবেট করে নিজেকে ঠাণ্ডা করতো,তার আর এখন ওইসব সিম্পল জিনিসপত্র দেখে পোষাবে না।সে এখন ধাবিত হবে জোরদার ক্যাটাগরির দিকে যা পর্যায়ক্রমে বর্বর হতে থাকে।কারণ সাধারণ জিনিস দেখে তার উদ্দীপনা প্রায় অনুভূতিহীন।এতে করে তার আত্মতৃপ্তি বজায় থাকে।
কয়েকজন মহিলার সাথে কথা হয়েছে যারা বলেছে তারা যাদের স্বাভাবিক পুরুষ হিসেবে জানত তাদের কেউ কেউ নাকি গে-
পর্ন দেখে নিজেদের পরিতৃপ্ত করে।কেননা এখন আর অন্যকিছুই তাদের ভালো লাগে না।
.
সবচেয়ে ভয়ংকর ও পরিতাপের বিষয় হল এইভাবে যখন পর্ন আমাদের জীবনের সাথে শক্তভাবে গেঁথে যায় তখন এক পর্যায়ে এই রিসেপ্টরগুলোর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।তখন স্বাভাবিকটা অস্বাভাবিক আর অস্বাভাবিকটা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।এজন্য কারো কারো দিনে ১০-২০ বারও মাস্টারবেট
 করতে হয় শুধুমাত্র সন্তুষ্ট হওয়ার জন্য।কিছু কিছু মানুষ আছে যারা এতোটাই পর্নাসক্ত যে তারা তাদের গার্লফ্রেন্ড বা স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়ে এখন আর সুখ পায় না।পর্ন দেখে মাস্টারবেট না করলে অসম্পূর্ণতা থেকে যায়।এই কারণে বেশ কিছু ডিভোর্সও হয়েছে। [১৩,১৪,১৫,১৬]
.
আপনি হয়ে পড়বেন উদ্যমহীন,কুঁড়েঃ

তরতাজা অনুভূতি নিয়ে দিন শুরু করলেন, নতুন সূর্য আর সকালের এক কাপ চা অফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়ে কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ার রসদ দিল আপনাকে। যে কোন কারণেই হোক মাস্টারবেট করে ফেললেন, তারপর আপনার আর কিচ্ছু করার ইচ্ছে করবে না। ঝিমিয়ে,ঘুমিয়ে দিন পার করে দিতে ইচ্ছে করবে। 

কেন এমনটা হয়?

আমরা হয়তো অনেকেই আড্রেনেলিন হরমোনের নাম শুনেছি।আড্রেনাল গ্রন্থিগুলো থেকে এর উৎপত্তি।মূলত যখন ধকল খুব বেশি যায় তখন এই হরমোন নিঃসৃত হয়।এর ফলে ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধি পায়।আর ডোপামিন নিঃসরণের ফলেই এর নিঃসরণ শুরু হয়।অতিরিক্ত ডোপামিন বের হলে অতিরিক্ত আড্রেনেলিনও বের হয় আড্রেনাল গ্রন্থিগুলো থেকে।এর মধ্যে আবার ডোপামিন সংশ্লেষিত হয়ে তৈরি হয় নরআড্রেনেলিন যা আমাদের রক্তে হরমোন হিসেবে থাকে।এদের বাহিনীতে যোগ দেয় আরেক স্ট্রেস হরমোন কর্টিসোল।এই তিনে মিলে আমাদের হার্ট রেট বাড়াতে থাকে,শক্তি সঞ্চয়কারী কোষগুলো থেকে গ্লুকোজ বের করে আনে এবং স্কেলেটাল পেশিগুলোতে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করে।আর এসবই আমাদের শরীরে মারাত্মক ধকল সৃষ্টি করে।

ফলস্বরূপ আমরা অনেক সময় উদ্যমহীন
,ক্লান্ত বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। মাস্টারবেশনের কারণে ঠিক এ ঘটনাগুলোই ঘটে। নতুন কিছু করার আগ্রহ থাকে না।মন চায় ঘুমিয়ে বাকি সময়টুকু কাটিয়ে দিতে।ক্লাসের পড়া জমতেই থাকে, টেবিলে ফাইল স্তূপ হয়ে যায় কিন্তু কিছুই করার ইচ্ছে করে না। [১৭]  

চলবে ইনশা আল্লাহ্‌... 

(লস্টমডেস্টি অনুবাদ টিম কর্তৃক অনূদিত,সংকলিত এবং পরিমার্জিত)

পড়ুন- ব্রেক দ্যা সার্কেলঃমাস্টারবেশন থেকে মুক্তি সিরিজ  
প্রথম কিস্তি  http://bit.ly/2i5hJEu  
দ্বিতীয় কিস্তি   http://bit.ly/2hg90mi
তৃতীয় কিস্তি  - http://bit.ly/2huVR4I 

চোরাবালি সিরিজের বাকী পর্ব গুলো 
চোরাবালি প্রথম পর্ব - http://bit.ly/2dzgf4I

চোরাবালি দ্বিতীয় পর্ব - http://bit.ly/2diRZBJ

চোরাবালি চতুর্থ পর্ব - http://bit.ly/2hePUes

চোরাবালি পঞ্চম পর্ব- https://goo.gl/pJtnxg  

চোরাবালি ষষ্ঠ পর্ব- https://goo.gl/jlHULY

রেফারেন্সঃ
[২] http://www.em-consulte.com/article/1074113        
[৪]http://www.tandfonline.com/doi/abs/10.1080/14681994.2017.1365121
[৫] https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/25189834
[৬]Masturbation: Scientific Evidence and Islam’s View by Sayed Shahabuddin Hoseini, Springer Science+Business Media New York 2013; page-2
[৭]https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/19453891
[৮]https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/21676179
[৯]https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/17541850
[১০]https://yourbrainonporn.com/erectile-dysfunction-and-porn