Monday, February 29, 2016

মুক্ত বাতাসের খোঁজে ......

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম।


পরীক্ষার মৌসুমে মাথার মধ্যে এত্ত প্রোডাক্টিভ আইডিয়া গিজগিজ করে যে, তার কিছুও যদি কাজে লাগাতে পারতাম , তাহলে হায়!  এতদিনে দুই দশটা নোবেল  নিশ্চিত পেয়ে যেতাম ।  পর্নমুভির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করার জন্য   কোন একটা প্রজেক্ট চালু করা যায় কিনা  সেই আইডিয়াও আসলো  এক  পরীক্ষার মৌসুমেই   তৎক্ষণাৎ শরণাপন্ন হলাম গুরুর কাছে । গুরুর উৎসাহে দ্বিগুণ গতিতে পরীক্ষার পড়া ছেড়ে আদা জল খেয়ে নেমে  পড়লাম ইন্টারনেট ঘেঁটে ঘেঁটে ম্যাটেরিয়ালস বের করার কাজে  ম্যাটেরিয়ালস, নেট থেকে নামিয়ে অনুবাদ করার জন্য ভলান্টিয়ার ভাইদের মধ্যে বিতরও করে ফেললাম কয়েকটা লিখা তৈরিও হয়ে গেল পরীক্ষার মধ্যেই । এই পরীক্ষাগুলোর প্রায় প্রত্যেকটিতেই যে   ডাব্বা মেরেছিলাম সেটা বলাই বাহুল্য। বাসার কেউ অবশ্য কখনো  জানতে পারে নি  তাদের গুণধর পুত্রের এই বিপুল গৌরব গাঁথা ।

প্রচুর  খাটাখাটনি  হল  বেশ কয়েকদিন । পরীক্ষা শেষের কয়েকদিন বন্ধে দেশের বাড়ী যেয়ে কই “বসন্ত বিলাস” করব ,  বাহিরের উঠোনে  নিম গাছের নিচে দড়ির খাটে শুয়ে লিলুয়া বাতাসে উদাস হয়ে যাব – তা না করে ল্যাপটপ খানা কোলে নিয়ে সাবেক পর্ন স্টারের জীবনী অনুবাদ করতে হল । পোড়া কপাল  !      
    
সব কাজ যখন মোটামুটি গুছিয়ে আনা হয়েছে , ব্লগ বা পেইজ খুলে আর্টিকেলগুলো যখন কেবল মাত্র পাব্লিশ করা বাকী , তখন দু’এক জন দ্বীনি ভাই কিছুটা আপত্তি করেছিলেন এই আশঙ্কায় – আমরা  মুসলিম উম্মাহর খেদমত করতে যেয়ে না ক্ষতি করে ফেলি! যেখানে অনেক বাঘা বাঘা , বিশ্ব বিখ্যাত স্কলাররা এটা নিয়ে প্রায় চুপ সেখানে আমরা চুনোপুঁটি  হয়ে কেন পর্নমুভি নিয়ে লিখা লিখি শুরু করছি ? (এর কিছুদিন পর  অবশ্য  বুঝতে পেরেছিলাম যে বিশ্বজুড়েই স্কলাররা  পর্নমুভির ইস্যু নিয়ে  মোটামুটি সোচ্চার ) আমাদের লিখা লিখির মাধ্যমে মানুষ জন না আবার  পর্নমুভিতে আকৃষ্ট হয়ে যায় । যেটা ট্যাবু করে রাখা হয়েছে সেটা ট্যাবু করেই রাখোনা বাপু!

ভেবে দেখলাম, কথা মন্দ না । উৎসাহ , উদ্দীপনায় কিছুটা  ভাঁটা পড়লো । আবার শরণাপন্ন হলাম গুরুর কাছে ।  গুরুর সেদিনের  সেই উপদেশ গুলো এখনো আমার কানে বাজে ।  আবার নতুন উদ্দমে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লাম ।

২০১৫, ৪ঠা এপ্রিল , আমাদের ব্লগের যাত্রা শুরু হয়ে গেল । আলহামদুলিল্লাহ । এখন পর্যন্ত দেড়শোটির মতো আর্টিকেল পাব্লিশ করা সম্ভব হয়েছে । যা কিছু ভালো সব আল্লাহ (সুবঃ) এর তরফ থেকে আর যা কিছু মন্দ তা আমাদের  নিজেদের পক্ষ থেকে। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোন পড়াশোনা নেই পর্নমুভির ইস্যুতে ।  আমাদের কাজে  ভুলত্রুটি আছে অবশ্যই – আমাদের ভুল ত্রুটি গুলো ধরিয়ে দিবেন ; আপনাদের দ্বীনি ভাই হিসেবে সেই দাবি করতেই পারি    যে সব ওয়েবসাইট থেকে আমরা ম্যাটেরিয়ালস কালেক্ট করেছি এবং এখনো করি তাদের প্রত্যেকের কাছেই আমরা কৃতজ্ঞ এবং ঋণী ।   

বেশ কয়েকজন  দ্বীনি ভাই এবং  বোন   শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের ব্লগের জন্য  কাজ করে চলেছেন । আল্লাহ (সুবঃ) আপনাদের প্রত্যেকের কাজ গুলো কবুল করুক । আপনাদের কাজে বারাকাহ দান করুক । দুনিয়া এবং আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দান করুক । আমীন ।

খুব অস্থির একটা সময় পার করছে এই পৃথিবী আর তার মানুষগুলো । এক  অদ্ভূত অন্ধকারে আজ ছেয়ে গেছে  এই পৃথিবীর সবকিছু মুল্যবোধ , মানবিকতা, সততা সব কিছুই আজ খড়কুটোর মতো ভেসে গেছে  পুঁজিবাদী ,দেহ সর্বস্ব শয়তানের  সভ্যতার ভয়াল  স্রোতে ।  যাদের গভীর আস্থা আছে আজও মানুষের প্রতি , আজও যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয় মহৎ সত্য  বা রীতি কিংবা শিল্প বা সাধনা – শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাঁদের হৃদয়।

আজকের মতো অসভ্য অশ্লীল কলুষিত বাতাস হয়তো  পৃথিবীর অজস্র বছরের ইতিহাসে আর কখনো প্রবাহিত হয়নি  পর্নমুভির কথা ছেড়েই দিলাম [ টিভির বিজ্ঞাপন  , বিলবোর্ড, ম্যাগাজিন , মুভি , মিউজিক , আইটেম সং , সাহিত্য , কবিতা সবকিছুই আজ হাইপার সেক্সুয়ালাইজড । সব খানেই কেবল নারীকে পন্য করা , নারীর  শরীরকে পূঁজি করা । নারী পুরুষের পবিত্র ভালবাসা আজ  পশুর মতো যতত্রত যার তার সাথে   দৈহিক মিলনে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে । পুরুষরা আজ নারীদের চোখের তারায় ভালোবাসা খোঁজে না , তারা ভালবাসা হাতড়ে বেড়ায় নারীর শরীরের ভাঁজে ।

সমকামিতা, অজাচার (আ’উজুবিল্লাহ) এর মতো জঘন্য বিষয়গুলোও আজ মানবাধিকারের পর্যায়ে পড়ে । এরকম এক প্রতিকূল  পরিবেশে  কী অস্থিরতার মধ্যে  যে কিশোর, তরুণদের জীবন কাটাতে হয় তা আমাদের আগের জেনারেশান কখনো ঠিক মতো বুঝতে পারবে কিনা সন্দেহ !

আমাদের বাবা মারা হয়তো কখনোই জানতে পারবেন না যে তাদের আদরের , নিরীহ , ভদ্র ছেলেটার পিসির হার্ড ডিস্ক শত শত জিবি পর্ন মুভিতে বোঝাই  । বাবা মা’রা কি আদৌ বিশ্বাস করতে পারবেন – আমাদের এই জেনারেশানের  এই ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে জামাত বদ্ধ হয়ে পর্ন মুভি দেখে , বিয়ের আগেই শারীরিক মিলন  এদের কাছে ডালভাত,  গ্রুপ সেক্সও খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার ? যেই ছেলেটার দুধের  দাঁতও সবকয়টা পড়েনি সেও এখন ওরাল সেক্স টাইপের টার্ম গুলোর সাথে পরিচিত ?

একাদশ/ দ্বাদশ শতাব্দীর ঐ সময়টাতে ক্রুসেডাররা (মূলত ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স)  চেয়েছিল ইসলামকে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে ধুলিস্যাৎ করে দিতে । আক্রমণের পর আক্রমণ চালিয়েছিল তারা মুসলিম ভূমিগুলোতে । উম্মাহর সিংহ নুরুদ্দীন যিংকি (রহঃ), সালাউদ্দিন আইয়ুবী’রা (রহঃ) প্রত্যেকবারই ক্রুসেডারদের নাকের জল আর চোখের জল এক করে ছেড়েছিলেন । ক্রুসেডাররা যখন দেখল – মুসলিমদেরকে কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না যুদ্ধের ময়দানে –তখন তারা  কাপুরুষের মতো আশ্রয় নিল  নীচতার । ইহুদীদের সাথে মিলে মুসলিমদের মাঝে ছড়িয়ে দিল ব্যাপক অশ্লীলতার , লাস্যময়ী খৃস্টান , ইহুদী তরুনী এসপিওনাজ এজেন্টদের মাধ্যমে ফাঁদে ফেলতে শুরু করল মুসলিম তরুণদের ,  মাদকদ্রব্যে সয়লাব করে দিল পুরো মুসলিম ভূমি  এই সময়ই সালাহউদ্দিন আইয়ুবী (রহঃ) করলেন তাঁর সেই কালজয়ী উক্তি,‘কোন জাতিকে যদি যুদ্ধ ছাড়াই ধ্বংস করতে চাও , তাহলে তাদের তরুণদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দাও’।

 নব্য ক্রুসেডাররাও বেশ তৎপর এই  পৃথিবীর বাতাসটাকে অশ্লীলতার  নীল বিষে বিষাক্ত করে ফেলার জন্য । প্রতি ৩৯ মিনিটে আমেরিকা একটা করে নতুন পর্ন মুভি আপলোড করছে , বিশ্বের  মোট পর্ন মুভির শতকরা ৮৫-৮৯ ভাগ বানাচ্ছে আমেরিকা একাই [২]। পর্ন মুভি বানানোয় প্রথম ১০টা দেশের মধ্যে বেশীরভাগই   পাশ্চাত্যের[৩] হলিউড, মিউজিক ভিডিও,  রিয়েলিটি শো, ফ্যাশন শো , সুন্দরী প্রতিযোগিতা, রেসলিং এইগুলার কথা না হয় নাই বললাম ।  রক্ষণশীল পরিবেশে বেড়ে ওঠা মুসলিম তরুণ , তরুণীরা যখন  হুট করেই দুই তিনটা মাউসের ক্লিকের মাধ্যমেই এই বিপুল অশ্লীলতার জগতে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে তখন সমাজটা যে কোন দিকে আগাবে এবং  আগাচ্ছে তা বোঝার জন্য রকেট সায়েন্টিস্ট  হওয়া লাগে না ।

আমরা চাই না,  আমাদের দেশটা আমেরিকার মতো ব্যর্থ একটা দেশ হয়ে যাক – যারা   নারীদের সম্মান করতে জানে না , নারীদের নিরাপত্তা দিতে জানে না , যে দেশে ১০৭ সেকেন্ডে একটা করে ধর্ষণ হয়[৪]  , যেই দেশের তরুনরা এতোটাই পশু যে প্রতি ৪ জন নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন ধর্ষিত হয় তাদেরই পুরুষ ক্লাসমেটদের দ্বারা [৫],  প্রতি ৬ জন নারীর মধ্যে ১ জন এবং প্রতি ৩৩ জন পুরুষের মধ্যে একজন তাদের লাইফটাইমে একবার হলেও  ধর্ষণের শিকার হয়।[৬]  ১৮ বছরে পা দেবার আগেই প্রতি ৪ জন মেয়ে শিশুর ১জন এবং প্রতি ৬ জন ছেলে শিশুর ১ জন যৌন নির্যাতনের শিকার হয় [৭]

আমরা চাই না,আমাদের দেশের মানুষগুলোও পাশ্চাত্যের মানুষদের মতো  ভাদ্র মাসের কুত্তা হয়ে যাক । বাবার হাতে মেয়ে, ভাইয়ের হাতে বোন ধর্ষণের শিকার হোক[৮,৯]    
আমরা চাই না , আমাদের মা বোনেরা অফিসে আদালতে, রাস্তা ঘাটে যৌন নির্যাতনের শিকার হোক[১০,১১,১২]   

আমরা চাই না , সেক্স ইন্ডাস্ট্রীর জন্য  মানব পাচারের শিকার হোক আমাদের কোন  বোন , কোন ছোট ভাই , কোন মায়ের বুক খালি হয়ে যাক । [১৩,১৪,১৫] 
আমরা চাই না , ক্রুসেডারদের নীল নকশায় পা দিক আমাদের ভাই বোনেরা , আমাদের 
ভাইবোনদেরকে বলির পাঁঠা বানাক ।  অশ্লীলতার অন্ধকার জগতে ডুবে যেয়ে ভুলে যাক আল্লাহ (সুবঃ) দুনিয়াতে তাকে কি মিশন দিয়ে পাঠিয়েছেন ।    


ব্লগ বা ফেসবুকে লিখালিখি এই মাস্টারপ্ল্যানের মোকাবেলায় যথেষ্ট নয় । তারপরেও আমাদের কাজ চলবে ইনশা আল্লাহ ।   আর হেদায়াত দেবার মালিক আল্লাহ (সুবঃ) । তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক অবশ্যই থাকা উচিত, যারা মানব জাতিকে কল্যাণের পথে আহবান জানাবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজে বাধা দেবে,  আর যারা এই কাজ করবে তারাই হলো সফলকাম (সূরা আল ইমরান,আয়াত ১০৪)
   
পাশ্চাত্যের বানানো সিস্টেমে আর কালচারে কোন শান্তি নেই , মানবতা প্রতিনিয়ত ধুঁকে ধুঁকে মরে তাদের তথাকথিত “peace”  আর “Freedom” এর আড়ালে । জানি ভাই ,  নফসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে আপনি ক্লান্ত ,অবসন্ন। অশ্লীলতা আর বেহায়াপনার এই বিষাক্ত বাতাসে আপনাদের  হাঁসফাঁস অবস্থা , টিকে থাকা দায় । আর কতকাল জিল্লতের জীবন কাটাবেন?আর কতবার পরাজিত হবেন নফসের কাছে ? মেঘের পরিচালনাকারী,সাত আসমানের স্রষ্টা, আপনার   রবের ওপর ভরসা করে মুক্ত বাতাসের খোঁজে বেরিয়ে পড়ার সময় কি  এখনো আসেনি...... ?

আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্যে যথেষ্ট।” (সূরা আত তালাক: ৩)     

রেফারেন্সঃ




Thursday, February 25, 2016

আইটেম সং

আইটেম সং” খুবই রক্ত গরম করা ২ টা শব্দ অধিকাংশ তরুণ-তরুণীর কাছে।এর প্রবর্তক “শ্রদ্ধেয় বলিউড” ভাইজান।এ ভাইজান হইলেন সেইরাম টাকার মালিক।কিন্তু এই ভাইয়াটা একটু লম্পট ধরণের।কারণ মেয়েদের বা মহিলাদের,বাচ্চাদের বা বুড়িদের,চিকনি চামেলিদের বা পর্নস্টারদের দিয়ে যেইভাবে একের পর এক কোপ দিচ্ছেন আর আমরাও যা কোপ খাচ্ছি তাতে তো বিবেক নামের কিছু একটা কবেই বটি কাবাব হয়ে গেছে! আর পয়সা তো আসছেই আমাদের পকেট ভাঙ্গিয়ে।



আজকাল মুভির স্ক্রিপ্ট নিয়ে কেউ তোয়াক্কা করে না। মাল-মসলাটা  সলিড হলেই হয়। যেই আইটেম গানের lyrics যত কাতুকুতু দেওয়ার ক্ষমতা রাখবে সেই গান তত হিট এবং মুভি দেখে যদি গলির কুকুরেরও বমি আসে।তারপরও আমাদের(ভদ্র প্রাণীদের)ওই মুভি না দেখলে তো রাতের ঘুম হারাম।
অনেক মেয়েই মনে করে যে নিজের অস্তিত্বকে জগতের কাছে চাউর করতে হলে সেক্স আপিল থাকাটা বাঞ্ছনীয়। আর না থাকাটা awkward, তাদের এই ধারণাকে আরও মদত দেয় বেহুদা আইটেম সংগুলো। “রোম্যান্স করতে গিয়ে কিঞ্চিৎ নগ্ন হলে দোষ কী?”-টাইপ মানসিকতা অনেকটাই জনপ্রিয় এসবের কারণে।

ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তো অবস্তা আরও ভয়াবহ। তারা যখন এইসব বেহুদা গান শুনছে তখন বাচ্চাকাল থেকেই  এই অমানবিকতাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নিচ্ছে। বাবা-মারও কোন সমস্যাবোধ করছেননা। বাচ্চা ভাল-মন্দ বিচার করবে কীভাবে যদি তাদের প্রাথমিক শিক্ষকেরাই দিশেহারা হন?  প্রতিবেশী দেশের বিষ আমরাও শুষে নিয়েছি।

কার আউটফিট কতো সেক্সি,কার বাপের কত পয়সা আছে,কোন মেয়ের ফিগার সেই,কোন ছেলে কত ম্যানলি বা কে কত ভাল জব করে- এসব দিয়ে অনেক তরুণ-তরুণী নিজেদের যাচাই করতে পছন্দ করে। বলিউড বলেন আর যেই উডই বলেন এগুলো আমাদের মাঝে এক অসুস্থ ফ্যান্টাসির জগত তৈরি করে যা বাস্তবে ফলাতে গেলে আমাদের বিবেকহীনতার পথে পা ফেলতে হয় যা একজন সভ্য মানুষ কোনদিন কামনা করে না। কিন্তু বাস্তবে  আদৌ আমরা মন থেকে কতটুকু সভ্য হতে চাই 

তারকারা নিজেদের যথেষ্ট স্মার্ট ও সভ্য বলে মনে করেন। তারা তাদের কাজের জন্য মানুষের সম্মান ও প্রশংসা আশা করেন। কিন্তু নিজেদের classy people হিসেবে দাবি করা এই মানুষগুলা পয়সার লোভে যখন নিজেদের মূল্যবোধকে দ্বিধাহীনভাবে নিচুতে নামিয়ে আনেন তখন তারা কি আদৌ সভ্য থাকেন?

নাকি নর্ম বা কালচার বলে উড়িয়ে দিলেই কালো সাদা আর সাদা কালো হয়ে যায়? সবচেয়ে মজার বিষয় হল, যেই দুনিয়া ও পয়সার পূজা করে তারা প্রতিনিয়ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যাচ্ছে সেই দুনিয়াই একদিন তাদের ভুলে যাবে। অশ্লীলতার তেলে গরম হওয়া দর্শকেরা তাদের কোন কাজেই আসবে না আর না তাদের পয়সা তাদের সাথে কফিনে ঢুকবে।
       
 বলিউডে কখনো শিলা জাওয়ান হয়,আবার কখনো মুন্নির বদনাম পুরো দেশ মাতায়। এখন তো আরও কত কি! আসলে পয়সা দিলে ফেভিকল দিয়ে চিপকানো বা বেবিডল পয়দা করা কোন ব্যাপারই না। বলিউডেরই এক বাসিন্দা নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী বলেন,“আইটেম সংগুলো নিষিদ্ধ করা খুব জরুরি।টিভি যদি ফ্যামিলির বিনোদনের জন্যই ব্যবহৃত হয়,তাহলে ফ্যামিলিতে তো বাচ্চারাও থাকে।তারা এসবের বাইরে কোনকিছু শিখতে পারে না।সারাদিন এই অর্থহীন নাচ-গান দেখার পর তারা বাস্তব জীবনে কপি-পেস্ট করার চেষ্টা করে।”[১,২]
  
 অনেক সময় টিভি খুললেই সঙ্কোচে পড়ে যেতে হয় যখন আশেপাশে বাচ্চাকাচ্চা থাকে আর বেমানানসই কিছু পর্দায় লাফিয়ে উঠে। ওদের এই বয়সের কৌতূহল যদি পজিটিভ হয় তাহলে তা উৎসাহ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে কিন্তু যদি তার উলটো হয় তাহলে তা সামলানো মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। এই যুগে বিনোদনের নামে অশালীনতা ও নগ্নতা তাদের নিরীহ প্রাণগুলোকে ঝলসে খাচ্ছে।
     
এবার আসি একটু কঠিন প্রসঙ্গে। আজকাল টিভি কিংবা পত্র-পত্রিকায় খুবই পরিচিত একটি শব্দ হল “ধর্ষণ”। এত ধর্ষণের কাহিনী আমরা শুনে ফেলেছি যে এখন আর নতুন করে কোন মায়া-মমতা জাগে নানিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপারে বদলে গেছে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিল্লিতে চলতি বাসে গ্যাং রেপ এর যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যায় তা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে।এছাড়াও ২০১৪ সালের মে মাসে ১৪ ও ১৬ বছরের দুই কিশোরীর গাছে ফাঁস দিয়ে ঝুলে থাকা দেহ উদ্ধার করা হয় উত্তরপ্রদেশে।২০ বছরের এক পাকিস্তানি মেয়েকেও প্রায় একই অবস্থায় পাওয়া যায়।এরা সকলেই গ্যাং রেপের শিকার।এরকম আরও অজস্র কেইস হরহামেশাই ঘটে চলছে নিজেদের আশেপাশে।   

NCRB  এর পরিসংখ্যান অনুসারে প্রত্যেকদিন ইন্ডিয়াতে ৯৩ জন মহিলা ধর্ষণের শিকার হন । [৩] ।আরেকটি পরিসংখ্যান অনুসারে ইন্ডিয়াতে প্রতি ২০ মিনিটে একটা করে রেপ হচ্ছে[৪] । বিশ্বের যে দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশী রেপের ঘটনা ঘটে তার প্রথম ১০ টি দেশের মধ্যে ইন্ডিয়া রয়েছে [৫,৬] ।
ইন্ডিয়াতে প্রচুর পরিমান চাইল্ড এবিউজের ঘটনা ঘটে। বিশ্বের অনেক দেশের গনমাধ্যমেই এ ব্যাপারে অনেক রিপোর্ট হয়েছে [৭,,৯] । এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে বেশী  চাইল্ড এবিউজ হয় এমন পাঁচটা দেশের শর্টলিস্টেও রয়েছে ইন্ডিয়ার নাম [১০] 

 এসবের পেছনে কি আইটেম গান গুলোর কোন ভূমিকা নেই?

এগুলো কি ভেতরের পাশবিকতা টেনে বের করছে না?

পিয়ার রিভিউ এক গবেষণাপত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, যেসক আন্ডারগ্র্যাজুয়েট  শিক্ষার্থীরা ‘আগুন গরম’ মিউজিক ভিডিও দেখে , তারা সেক্স ফ্যান্টাসিতে ডুবে থাকে,  সম্পর্কের বড় একটা অংশ জুড়ে থাকে সঙ্গিনীর প্রতি যৌন সহিংসতা ।[১১]

 আইটেম সংগুলোতে যা দেখায় তার সারমর্ম হল এই, একটা মেয়ে টাইট পোশাক পড়ে উন্মাদ নরপশুদের সামনে হাজির হবে। তারপর শুরু হবে বিরক্তিকর এক গান যেটার লিরিক্স এর সাথে মূল ছবির তেমন কোন খাতির নাই। সাথে চলবে নাচ যা হয়তো গাছের বানরেরও হট ফেভারিট হয়ে যাবে এক সময়। মেয়েটা তখনি সফল হবে যখন সে তার ভরা যৌবন দিয়ে উপস্থিত সবাইকে মত্ত করে। এই তো কাহিনী।
  
এসবের পরে মহিলাদের বা মেয়েদের আসলেই কি মা-বোনের চোখে দেখা সম্ভব হয়অথচ আজ থেকে প্রায় ১৩-১৪ বছর আগে ইন্ডিয়ান কিছু চ্যানেলই নারীদের সম্মান ও অবস্থানকে উঁচুতে তুলে ধরতে উদ্যত ছিল। সাধারণ জীবনে নারীদের মর্যাদা বাড়ানো কিংবা নারী-পুরুষ বৈষম্য দূরীকরণেও মিডিয়া সক্রিয়তা দেখিয়ে ছিল।আজ তা দেখা প্রায় দুর্লভ। 

বলিউডের প্রবীণ অভিনেতা ওমপুরিও  মনে করেন ভারতীয় চলচিত্রের আইটেম গানে  অশ্লীলতার  মাত্রা এত বেড়ে গেছে যে এটা ধর্ষণকে উৎসাহিত করে । পদ্মশ্রী পুরষ্কার জেতা এই অভিনেতা বলেন, “এখনকার হিন্দী মুভির  আইটেম গানগুলো খুবই অশ্লীল । এই গানগুলোতে এমন সব ড্যান্স মুভমেন্ট আছে যা  দেখে মনে হয় তারা বোধহয় সেক্সের ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে গেছে । ক্ষমা করবেন এরকম শব্দ ব্যবহার করার জন্য । কিন্তু অবস্থাটা এতটাই ভয়াবহ।  

কেউ যদি তার  অবদমিত যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চাই তাহলে এসব গানের সিডি কিনে তা চালিয়ে দেখলেই পারে ।  পুরোনো দিন গুলোতে এরকমটা  ছিল না । ষাট সত্তর এমনকি আশির দশকের মুভি গুলোতে বারনাইটক্লাবে চিত্রায়িত যে গানগুলো দেখানো হতো সেগুলো এতটা অশ্লীল ছিল না ।  পুরোনো দিনগুলোতে এত ধর্ষণের ঘটনাও ছিল না । আমি নিশ্চিত আইটেম গান গুলো ধর্ষণের  ঘটনা বাড়িয়ে দিচ্ছে ।[১২]

 এবারে ধর্ষণ নিয়ে রাজনীতিবিদদের কিছু বক্তব্য পেশ করা হল। রাজনীতিবিদ বাবুলাল গড় বলেন,“এটি একটি সামাজিক অপরাধ যা নারী ও  পুরুষ দুইজনের উপরেই নির্ভর করে। কখনো এইটা ঠিক আবার কখনো না......অভিযোগ না আসা পর্যন্ত কিছুই করা সম্ভব না। যদি সে(মহিলা)না চায় তাহলে কারো সাহস নাই তাকে স্পর্শ করার।তাছাড়াও আইটেম নাম্বারগুলো বাজে পরিবেশ সৃষ্টি করে।” তিনি মনে করেন মেয়েদের ক্যারাটে বা জুডো শিখে রাখা উচিৎ নিজেদের সুরক্ষার জন্যে।[১৩]

 বলিউড আমাদের উচ্চমাত্রার যৌনতা গলধঃকরণ করাচ্ছে। বস্তুতইযারা আমরা এই জিনিসগুলো উপভোগ করছি তারা বলিউডের চেয়ে কোন অংশেই কম দায়ী নয়। গত দশকে এই বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ার একটাই কারণ- তা হল সমাজ তা অনুমোদন দিয়েছে। যখন এই ঝোঁক সমাজে প্রবেশ করেছিল তখনও সমাজ নির্লজ্জের মত চুপ ছিল । এমনকি আজ যখন  মহিলারা নৃত্য পরিবেশনের নামে  পতিতার চেয়েও  জঘন্য নায়িকারা  গায়ের ত্বক এবং শরীরের ভাঁজ প্রদর্শন করে যাচ্ছে আবার নিজেদের অভিনেত্রী হিসেবে দাবি করছে সমাজ তখনও চুপ ই থাকছে।

বলিউড এর এসব আইটেম সং’ গুলোকে ভারত পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান যৌন  নিপীড়নের ঘটনার পিছনে দায়ী করাই যায়। মিডিয়া বিশেষ করে মুভি খুবই শক্তিশালী একটি মাধ্যম ।  আমি আপনি সবাই কম বেশি রুপালী পর্দার বাসিন্দাদের দেখে প্রভাবিত হই অবচেতন মনে হলেও তাদেরকে অনুসরণ করি ।  সালমানের মতো সিক্স প্যাক চাই আমাদের,শাহরুখের মতো রোমান্টিক হতে ইচ্ছে করে।

তো মানুষ  যখন তাদের হিরো ,রোল মডেল  সালমান খান কে দেখে একটি মেয়ের পশ্চাৎ দেশে চড় মারতে, আবার অক্ষয় কুমারকে দেখে একটি মেয়ের কোমরে বাজেভাবে স্পর্শ করতে যে আবার তৎক্ষণাৎ অক্ষয়ের কোলে উঠে যায়। তখন মানুষ কি এতটুকুও প্রভাবিত হবে না ?   

আমাদের ঘরে ঘরে  ড্রয়িং রুমে পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে আইটেম সং দেখার মতো মানসিকতা আমরা অর্জন করে ফেলেছি গায়ে হলুদ বিয়ে বা যেকোন পার্টি  আইটেম সং ছাড়া এখন  আর ঠিক জমে না এমনকি  নিজেদেরকে ধর্মপ্রাণ মুসলিম (?) হিসেবে দাবী করে এমন মানুষে ভরা এই দেশটাতেও এখন আইটেম সং দেদারসে বানানো হচ্ছে । আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি কোন দিকে
 আগাচ্ছি আমরা ?     

(লস্ট মডেস্টি অনুবাদ টিম কর্তৃক অনূদিত)

  রেফারেন্স-
[১১] Jennifer Stevens Aubrey, K. Megan Hopper, and Wanjiru G. Mbure, “Check That Body! The Effects of Sexually Objectifying Music Videos on College Men’s Sexual Beliefs,” Journal of Broadcasting and Electronic Media 55, no. 3 (2011): 360–379.
[১২] http://bit.ly/2naRVu1 
[১৩] http://bit.ly/2DLPo3A
        

Monday, February 15, 2016

নীল রঙের অন্ধকার (চতুর্থ কিস্তি)

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম ।

# “আমার নাম আমান্ডা । আমার মনে হচ্ছে পর্নোগ্রাফি নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা অন্যানাদের জানানো উচিত যাতে তারা   সাবধান হতে পারে। আমার সঙ্গী ছিল মারাত্মক রকমের পর্নআসক্ত। শুরু থেকেই সে আমাকে বুঝাতে শুরু করে যে ,পর্ন   আসলে স্বাভাবিক একটা ব্যাপার আর সবাই কম বেশি এটা দেখে। সে তার বন্ধুদের কথাও বলতো যে, তারাও পর্ন দেখে   থাকে। কষ্টকর হলেও আমি শুরু থেকে তার এই আচরণের সাথে মানিয়ে নিতে চাইতাম কিন্তু দিন দিন এটা অসহ্যকর   পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল। দেড় বছর ধরে নিজের মনের সাথে ক্রমাগত যুদ্ধ করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমার   স্বামী তখন দিনে প্রায় ৩ বার পর্ন ভিডিও দেখতো। তার চিন্তাভাবনা সব কিছু জুড়েই ছিল পর্ন। এছাড়া শারীরিকভাবে সে   আমাকে নির্যাতন করতে শুরু করে। সে আমাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে পর্নমুভির মতো করে  ধর্ষণ করতো।আমার মাথায় গুলি   ভরা পিস্তল তাক করে মেরে ফেলার হুমকি দিত। আমি বুঝতে পারলাম, সে পর্ন এর কল্পনার জগত আর বাস্তব জগত   মিশিয়ে ফেলেছে। সেখানে যা দেখতো, আমার সাথে একই আচরণ করার চেষ্টা করতো। [১] 

# আমার বয়স একান্ন বছর, আমি এক প্রতিবন্ধী কন্যার মা। পর্ন আমার পরিবারকে ধ্বংস করে ছেড়েছে ।
আমি ষোল বছরের বিবাহিত জীবন কাটিয়েছিলাম এমন একজন মানুষের সাথে, যে জানতই না যে একজন নারীর সাথে কীভাবে চলতে হয়।  সে সবসময় হতাশাগ্রস্ত ছিল। তার  সমস্যাটা কী ছিল সে ব্যাপারে আমার কোন ধারণাই ছিল না । অফিস   থেকে ফিরে বিছানার এক পাশে এক ল্যাপটপ নিয়ে শুয়ে থাকত। যখন আমি তার সাথে কথা বলতে যেতাম 
তখন সে ল্যাপটপটা দ্রুত নামিয়ে রাখত আর বলত যে সে বাথরুমে যাবে। এরপর যখন আমি চলে যেতাম তখন সে ফিরে আসত আর আগের মতোই কাজ করত। এক রবিবার সকালে আমার এক ছেলে হাঁটার সময় তাকে ল্যাপটপে পর্ন ডাউনলোড করতে দেখতে পেল। আমার ছেলেই আমাকে জানাতে দেরি করলনা।
.
অবশেষে আমি সমস্যাটা জানলাম। এর এক বছরের মধ্যেই আমরা তালাক নিই। ছয় বছর হল আমাদের বিচ্ছিন্ন হওয়ার।  আমার চিন্তা আমাদের প্রতিবন্ধী মেয়েটাকে নিয়ে, যার দেখাশোনার দিকে ওর কোন নজরই নেই
তালাকের এক বছর পরে আমি আরেকজন মানুষকে পাই যাকে দেখে সত্যিই ভাল মনে হয়, কিন্তু তারও ঠিক একই 
সমস্যা আছে। যখন বাসায় আসে তখন থেকে কাজ করতে বাইরে যাওয়ার  সময় পর্যন্ত সে তার ঘরে থাকে। সে সপ্তাহে 
পাঁচদিন এমন করে  তার কোন বন্ধু নেই; সে হতাশায় ভুগছে; তার আছে পর্নের ১০০টি ডিভিডি আর ২০০টি ম্যাগাজিন 
এমনকি সে এক নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্কেও লিপ্ত   সে আমাদের মাঝে একটা ভাল সম্পর্কের সব সুযোগকে নষ্ট 
করেছে। সে কোন নারীর সাথেই সামাজিক হতে পারে না এবং নারীদেরকে শুধু পণ্য হিসেবেই দেখে। প্রকাশ্যেই স্বীকার 
রে  যে সে কখনো সুখী হবে না কিন্তু তারপরও সে পর্নের প্রতি আসক্তির এতটাই গভীরে গেছে যে সেখান থেকে সে ফিরে 
আসতে পারে না। আমার ভয় হল, যদি তার মা-বাবা(যারা খুব অসুস্থ) মারা যায়, তাহলে সে আরো গভীরভাবে 
পর্নের প্রতি আসক্ত হবে।
.
আমার বোন একটি তের বছর বয়সী ছেলেকে দত্তক নিয়েছিল।ছয় বছর বয়সে তাকে এবং তার  ভাইবোনদের উদ্ধার করে ডিএসএস। এই ছেলেমেয়েগুলোর মা-বাবা পর্ন দেখত। আর পর্ন দেখার সময় তারা বাচ্চাদেরকে শোয়ার ঘরের মেঝেতে  থাকতে বাধ্য করত। টেলিভিশনে যেসব যৌনকর্ম দেখানো হত সেগুলোর অনুকরণ করতে এই দুই, পাঁচ  ছয় বছর বয়সী বাচ্চাদেরকে 
তারা বাধ্য করত। বাচ্চাগুলো এমন করতে অস্বীকার করলে তাদেরকে পেটানো হত। সেখানে থাকত 
বাচ্চাদের এক চাচা- সেও পর্ন দেখত। তার বিকৃত লালসার শিকার হয়   শিকার হয় পাঁচ বছর বয়সী মেয়েটি।
আমি চাই সরকার পর্নমুভি নিষিদ্ধ ঘোষনা করুক   ইন্টারনেট জুড়ে রয়েছে  পর্নমুভির বিশাল ভান্ডার  যা  প্রতিদিন হাজারো জীবন ধ্বংস করছে , যেমনটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে   আমি এখন আরেকটি সম্পর্কে  
জড়াতে ভয় পাই। আমি যে আরো আঘাত সহ্য করতে পারব তা আর বিশ্বাস হয় না। [২]
.
#......... আমি এখনও হাইস্কুলে পড়ি, আর আমি গত চার বছর ধরে পর্নের প্রতি আসক্ত। এর শুরুটা ছিল কৌতুহল, 
প্রথমে আমি শুধু জানতে চাইছিলাম যে এটা কী, তারপর কিভাবে কিভাবে যেন আমি এটাতে আসক্ত হয়ে পড়লাম । আমার অবস্থা এখন এতটাই খারাপ যে এখন আমি খারাপ চিন্তা ছাড়া কোন মেয়ের দিকে তাকাতেও পারি না। 
স্কুলের বাইরে বা শপিংমলে হাঁটার সময় বন্ধুদের সাথে থাকলেও আমি শঙ্কিত থাকি।
আমি পর্ন দেখতে থাকলাম, আর এক বছর পর আমি মানুষকে অশ্লীল মেসেজ পাঠাতে শুরু করলাম, যা আমাকে যৌনকর্মের 
প্রতি আগ্রহী করে তুলল, এর কয়েক মাস পরে আমি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে হারাই, কারণ আমি তার প্রতি কিছু ভুল 
আচরণ করেছিলাম।আর এখন আমি কোন মেয়ের সাথে দেখা করতেও ভয় পাই।আমার কৌতুহলের সাড়ে চার বছর পরে অবশেষে আমি একজনের  কাছ থেকে সাহায্য পেলাম।আমি পর্ন দেখা শুরু করেছিলাম এবং সাহায্য পেয়ে আমি তা বাদ দিয়েছি। আর আমি  নিয়ে গর্বিত। []

# ...... আমার নাম সেলিনা । আমি ইউ.এস.এ তে থাকি । আমি  মনে করি পর্নমুভি পারিবারিক বন্ধন দুর্বল করে ফেলে , আত্মীয়তার সম্পর্কের বাঁধন আলগা করে ফেলে , মাঝে মাঝে ছিড়েই ফেলে । একদিন আমি হুট করেই আবিষ্কার করে বসলাম আমার এক আংকেল (উনি আমাকে ছোটবেলা থেকেই কোলেপিঠে  করে মানুষ করেছেন ) ভয়ংকর রকমের পর্ন আসক্ত । কয়েক বছর আগে উনার ছোট বাচ্চাকে দেখাশোনা করার জন্য আমি কিছুদিন উনার বাসায় ছিলাম । এই সময় একদিন আমি  একটা ক্লজেটে প্রচুর পরিমাণ পর্নমুভির সিডি পেয়ে গেলাম । এই সিডি গুলো ছিল এমন কতগুলো ক্যাটাগরির যা ভাবলে আমার গা ঘিন ঘিন করে ওঠে  ঘৃণায় । ইনসেস্ট, রেপ , টীনিস ... ছি ,ছি । কি জঘন্য । নিমিষেই আংকেলের ওপর থেকে আমার সব বিশ্বাস ,  শ্রদ্ধা উবে গেল  কর্পূরের মতো । সেই সাথে  ছোটবেলায় তার সাথে কাটানো চমৎকার সময়গুলো,  স্মৃতি গুলো আমাকে এক বিরাট প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল । তার সঙ্গে কুস্তি খেলা , তার কোলে বসে টিভি দেখা এগুলো কি শুধু  নিখাঁদ স্নেহ, ভালোবাসার প্রকাশ ছিল  নাকি অন্য কিছু ......?  যেহেতু এর সঠিক উত্তর আমার কাছে নাই তাই আমি তাকে আর বিশ্বাস করতে পারি না । আমার মেয়ে তার আশেপাশে থাকলে আমি অস্বস্তি বোধ করি ।
.
পর্ন আসক্তদের বলতে চাই  তোমরা কি খুশি হবে যদি তোমাদের কোন নিকটাত্মীয় দেখে ফেলে তুমি ইনসেস্ট পর্ন দেখছো ? কেমন লাগবে তোমার তখন ? []
.              
(ভাই, একবার ভাবুনতো  আপনার আদরের ছেলে-মেয়ে ,ভাগ্নে- ভাগ্নী ,  ভাতিজা- ভাতিজি , ছোট বোন  বা অন্য কোণ নিকটাত্মীয় যদি কোণ দিন কোণ ভাবে আপনার পর্ন আসক্তির কথা জেনে যায় তারা কতটা কষ্ট পাবে   আপনাকে তারা হয়তো হিরোর আসনে বসিয়েছিল, আপনাকে পদে পদে অনুসরণ করতো ,আপনার মতো হতে চাইতো , আপনার কাছে তারা নিরাপত্তা খুঁজে পেত । আপনার অন্ধকার জগতের হদিস পাবার পরেও তাদের কাছে আপনি কি আর সেই আগের আপনি থাকবেন ?  তাদের কাছে মুখ দেখাবেন কি করে ? )

চলবে ইনশা আল্লাহ্‌ …।
রেফারেন্সঃ